বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০২৩, ০০:০০

সোনালি স্মৃতিগুলো এখনো নাড়া দেয়
এএম সাদ্দাম হোসেন

সময়টা ২০০০ সাল। চাঁদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত তৎকালীন ৪নং (বর্তমানে ১২৩নং) গুয়াখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যায়নকাল থেকেই আমি দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের একজন নিয়মিত পাঠক। পত্রিকাটির কার্যালয় তখন আমার বিদ্যালয়ের সম্মুখে অবস্থিত। ভ্রাম্যমাণ পাঠকের জন্যে চাঁদপুর কণ্ঠ কর্তৃপক্ষ পত্রিকা অফিসের বাইরের দেয়ালে দুটি করে পত্রিকার সাঁটাতো, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে ওয়ান মিনিট-এর সামনে। কাকডাকা ভোর হতেই ভ্রাম্যমাণ পাঠকদের প্রচণ্ড ভিড় লক্ষ্য করা যেতো ওই স্থানটিতে চাঁদপুর কণ্ঠ পড়ার জন্যে। সব বয়সী পাঠকে মুখরিত থাকতো এ স্থানটি। মূলত আমার বিদ্যালয়ের সম্মুখে পত্রিকার অফিস অবস্থিত হওয়ায় দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের নিয়মিত গর্বিত ‘ভ্রাম্যমাণ পাঠক’ হই।

ওই সময়টার (সম্ভবত) কোনো এক সোমবার পত্রিকার তৃতীয় পাতায় আমার চোখ আটকে যায়। শিশুকণ্ঠ নামক পাতাটিতে শিশুদের রচিত লেখা নিয়ে সপ্তাহে একদিন প্রকাশ হতো পাতাটি। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পড়তাম আর ভাবতাম, ছাপা অক্ষরে যদি আমার নামটিও ঠাঁই পেতো দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের শিশু কণ্ঠের পাতায়। লেখার শিরোনামের নিচে লেখকের নাম থাকতো, বিদ্যালয় ও শ্রেণি উল্লেখ থাকতো। ভাবতাম, আবোল-তাবোল লিখে জমা দিলেই বুঝি ছাপা অক্ষরে নিজের নাম দেখতে পাব পত্রিকার পাতায়। লিখলামও আবোল-তাবোল, জমা দিলাম। প্রতীক্ষায় থাকতাম কবে আসবে সোমবার। এক সোমবার যায়, নাম আসে না পত্রিকায়। আবার অপেক্ষা পরের সপ্তাহের জন্যে। এবারও হতাশ। তবে হাল ছাড়িনি। চেষ্টা করেছি ছন্দ মিলিয়ে ছড়া লেখার। লিখেছি, জমা দিয়েছি। অবিশ্বাস্য! কোনো এক সোমবারে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের শিশুকণ্ঠের পাতায় আমার লেখা ছাপা হলো। নিজের চোখকে তখনও বিশ্বাস করাতে পারিনি এটি আমার লেখা। তখনই বিশ্বাস হলো, যখন নামের নিচে বিদ্যালয় ও শ্রেণির নাম দেখতে পেলাম। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই স্কুল থেকে আমার সহপাঠীদের ডেকে নিয়ে এসে আমার আঙুল শিশুকণ্ঠের পাতায় ঠেকিয়ে বন্ধুদের দেখাতে লাগলাম এই দেখ আমার নাম পত্রিকার পাতায়। বন্ধুদের মাঝে সে কি উচ্ছ্বাস আর আনন্দ। শুধু বন্ধুদেরই নয়, বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষার্থীদেরও ডেকে নিয়ে এসে দেখাতে লাগলাম আমার লেখা। এর মধ্যে তো পুরো স্কুলের রটে গিয়েছে সাদ্দামের লেখা চাঁদপুর কণ্ঠে ছাপা হয়েছে। স্কুলের বড় আপা (প্রধান শিক্ষিকা) হাসিনা ইসলাম জরুরি তলব পাঠালেন আমাকে। অনুমতি নিয়ে আপার কক্ষে প্রবেশ করতেই তিনি বললেন, ভালো লিখেছো, কবে থেকে শুরু করলা হুম?

ভয়ে আমার পা কাঁপছিলো। আপা আমাকে তার কাছে হাত ধরে টেনে নিয়ে মাথায় মমতার পরশ বুলিয়ে দিলেন আর বললেন, লিখে যাও। আপার টেবিলে আমার লেখা ছাপানো পত্রিকা। আমার নামের নিচে বিদ্যালয়ের নাম থাকায় বড় আপাসহ অন্যান্য আপারাও সেদিন অনেক খুশি হয়েছিলেন। স্কুলে আপাদের সেদিনের উৎসাহে আমার লেখার পথটি আরো মসৃণ হতে থাকে। তারপর থেকে নিয়মিত লিখতে থাকে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের জনপ্রিয় সাপ্তাহিক আয়োজন শিশুকণ্ঠে। শুধু চাঁদপুর শহরেই নয়, ওই সময়টাতে শিশুকণ্ঠ পুরো জেলাতেই ব্যাপক থেকে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করা একটিমাত্র নাম ছিলো। সোমবার বাদে সপ্তাহের বাকি ৬ দিন তো আমার কাটতেই চাইতো না। আল্লাহর কাছে এমনো প্রার্থনা করেছি, হে আল্লাহ, প্রতিদিনই সোমবার দাও, তাহলে শিশুকণ্ঠ পড়তে পারবো।

খুব সম্ভবত ২০০১ বা ২০০২ সালে ১৭ জুন দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শিশুকণ্ঠ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তমা প্লাজার তৃতীয় তলার কমিউনিটি সেন্টারে জাঁকজমকভাবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করে চাঁদপুর কণ্ঠ। দিনব্যাপী ছিলো সে আয়োজন। ছোট ছোট বন্ধুরা নাচ, গান, আবৃত্তির মাধ্যমে স্মরণীয় করে রাখে সেই দিনটি। বেলা ১১টা কিংবা দুপুর ১২টার কিছু পরে মাইকে ঘোষণা আসে কে কে গান গাইতে চাও? আমিতো ব্যাপক খুশি, সবার আগে আমি হাত তুলে ফেললাম, বললাম আমি গাইবো, আমি গাইবো। আমার স্পষ্ট মনে আছে, আমি গান গাইতে থাকলাম, ‘মে মাসের ২৭ তারিখের কেমনে দিবো বর্ণনা, ওরা আমায় ধরে নিয়ে কেনো দিলো যন্ত্রণা’। গান শেষে উপহার পেলাম হলভর্তি শ্রোতাদের প্রচণ্ড করতালি। কোনো অনুষ্ঠানে এটি আমার প্রথম সংগীত পরিবেশন। তার মানে চাঁদপুর কণ্ঠের মঞ্চেই আমি জীবনে প্রথম সংগীত পরিবেশন করি।

ওইদিন মধ্যাহ্নভোজের পর আমার জীবনে ঘটলো আশ্চর্য ঘটনা! দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশক শ্রদ্ধেয় অ্যাডঃ ইকবাল-বিন-বাশার স্যার মাইকে ঘোষণা দিয়ে বললেন, সাদ্দাম যে গানটি গেয়েছো, সেই গানটি আবারো শুনতে চাচ্ছি, শোনাবে? আমি কোনো কথা না বাড়িয়ে স্যারের হাত থেকে মাইক্রোফোন নিয়ে খালি গলায় আবার গাইতে লাগলাম, ‘মে মাসের ২৭ তারিখের...’। ওই অনুষ্ঠানের সঙ্গীত পরিবেশন করা এবং শিশুকণ্ঠে নিয়মিত লেখার কারণে চাঁদপুর শহরে ‘লেখক’ হিসেবে আমার নামটি বেশ পরিচিতি হয়ে উঠে।

২০০৩ সালের ১৭ জুন দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শিশুকণ্ঠ পরিবারকে নিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠের স্মরণকালের শ্রেষ্ঠ আয়োজনটি ছিলো ‘নৌ বিহার’। মাত্র ১শ’ টাকার টিকিটের বিনিময়ে পুরো জেলা থেকে আগত শিশুকণ্ঠের সদস্যদের মহামিলনমেলার সুযোগ করে দেয় চাঁদপুর কণ্ঠ কর্তৃপক্ষ। ওইদিন সকাল ৭টা থেকে চাঁদপুর চৌধুরীঘাটে নোঙর করা বিলাসবহুল লঞ্চ এমভি তুতুলে এক এক করে প্রবেশ করতে থাকে শিশুকণ্ঠের সদস্যরা ও তাদের অভিভাবকগণ। সেদিন সবাইকে রজনীগন্ধার স্টিক দিয়ে বরণ করে নেয় চাঁদপুর কণ্ঠ কর্তৃপক্ষ। সকাল ৮টায় চাঁদপুর কণ্ঠ পরিবার, শিশুকণ্ঠ পরিবার ও তাদের অভিভাবকদের নিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা মেঘনা পাড়ের নীলাভূমি খ্যাত বালারবাজারস্থ মেঘনার চরের উদ্দেশ্যে চৌধুরীঘাট ত্যাগ করে এমভি তুতুল। সকালের নাস্তা খেতে খেতে পরিচয়পর্ব শেষে, সকলের সম্মিলিত অংশগ্রহণে নাচ, গান, আবৃত্তি ও কৌতুক পরিবেশনের মাধ্যমে অবিশ্বাস্য আনন্দে মেতে ওঠে নৌবিহারে অংশগ্রহণকারীরা। সেখানেও আমার সংগীত পরিবেশনের সুবর্ণ সুযোগ হয়। মেঘনার চরে দিনব্যাপী হই-হুল্লোড় ও আনন্দণ্ডউল্লাসে কাটানোর পর সন্ধ্যায় ফিরে আসি চৌধুরীঘাটে। শিশুকণ্ঠ পরিবারের এই মহামিলনমেলা শেষ হওয়ায় বন্ধুরা অশ্রুসিক্ত হয়েছে, আবেগে আপ্লুত হয়েছে। শিশুকণ্ঠের বন্ধুদের সেটিই ছিলো একসাথে হওয়ার আবেগঘন সর্বশেষ মাহেন্দ্রক্ষণ।

এরপর এক এক করে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পার করেছে চাঁদপুর কণ্ঠ। তবে ২০০৩ সালের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শিশুকণ্ঠ পরিবারকে নিয়ে ‘হৃদয় নাড়া দেয়া’র মতো আয়োজন আর হয়নি।

শেষ কথা, যতোদিন চোখের পাতা খোলা থাকবে, শিশুকণ্ঠ পরিবারকে নিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সেই আয়োজন জ্বলজ্বল করে জ্বলবে। স্মৃতির ঘরে এখনো হাতরে বেড়াই শিশুকণ্ঠের প্রতিটি প্রাণকে। ভালোবাসার শিকলে আমার হৃদয়ে বেঁধে রাখি চাঁদপুর কণ্ঠকে। কারণ, তুমি আমার কৈশোরকালের সোনালি স্মৃতিগুলো এখনো নাড়া দাও শিশুকণ্ঠ হয়ে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়