বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২৩, ০০:০০

পরিবারের প্রতি দায়
কাজী আব্দুল্লা হিল আল কাফী

শ্রদ্ধা জানাচ্ছি সকল পিতা-মাতার প্রতি, যারা আমাদের স্বশিক্ষায় শিক্ষিত করে সুন্দর সঠিক পথে চলতে শিখিয়েছেন। পরিবারের বাবা-মায়ের পরে পরিবারের দায়িত্বভার নিমেষেই চলে আসে বড় ছেলে ও বড় মেয়ের কাছে। মেয়ের কাছে কম আসলেও ছেলেদের কাছে এই ভার পরে এটাই বাস্তব।

একদা এক পরিবার বসবাস করতো। সেই পরিবারে পাঁচজন সদস্য ছিলো। বাবা ছিলেন বিদ্যালয় শিক্ষক। মাস ছয়েক আগে অবসর নিয়েছেন। মা ছিলেন গৃহিণী, পাশাপাশি এক একটু সেলাইয়ের কাজ করতেন। এখন বয়স হওয়ার কারণে এইসব সেলাইয়ের কাজ করতে পারেন না।

দুই ছেলে ও এক মেয়ে ছিলেন। বড় ছেলের নাম অনিক, ছোট ছেলের নাম অয়ন ও একমাত্র মেয়ের নাম কানন, মেয়ের ঘরের একমাত্র নাতনি কথা।

অনিক পড়ালেখা শেষ করে বেকার ছিলেন। তবে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিসে চাকরি খুঁজে বেড়াচ্ছেন। চাকরি খোঁজার পাশাপাশি তিনি প্রাইভেট পড়াচ্ছেন। আর ছোট ছেলে অয়ন তো এখনো পড়ালেখায় মনোযোগ দিচ্ছেন। ঘুরে ফিরে খাচ্ছেন পড়ালেখার পাশাপাশিই খেলাধুলা ও বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেন।

একমাত্র মেয়ে বিয়ে হওয়ার পরে স্বামীর বাড়ি থেকে এসে বাবার বাড়িতে আছে। স্বামীর সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছে বলে রাগ করে বাবার বাড়ি চলে এসেছেন।

বাবার পেনশনের টাকায় চলছে পরিবার। ছোট ছেলের পড়ালেখা ও বড় ছেলের চাকরি খোঁজার খরচ বহন। ধীরে ধীরে সব টাকা ব্যয় হয়ে যায়। তখন চাপ পড়ে যায় বড় ছেলে অনিকের উপরে, অনিকের উপর নির্ভর করে চলবে এখন পরিবার। পড়ালেখা ও বিভিন্ন যাবতীয় কাজ। বাবার ঔষধ কেনার জন্য প্রতি মাসে অনেক টাকার প্রয়োজন হয়। ছোট ভাইয়ের লেখাপড়ার ব্যয়, বোনের মেয়ের কেনাকাটা, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি। বড় ছেলে অনিক চেষ্টার পর চেষ্টা করে যাচ্ছেন কোনো চাকরির আশায় আজ-ও।

জামাল সাহেব অনিককে বললেন, আমি আমার পুরানো এক বন্ধুর সাথে কথা বলেছি তুমি তোমার সকল কাগজপত্র নিয়ে সেই পুরানো বন্ধুর কাছে যাও। আমার মনে হচ্ছে নিশ্চয় চাকরি হয়ে যাবে। এই বলে অনিককে যাবতীয় শিক্ষাগত যোগ্যতার কাগজপত্র নিয়ে জামাল সাহেব তার বন্ধু কামরুল সাহেবের অফিসে পাঠিয়ে দিলেন।

অনিকের বাবা জামাল সাহেবের কামরুল সাহেবের উপর আত্মবিশ্বাস ছিলেন যে তার ছেলের চাকরি হয়ে যাবে। তবে সেই আত্মবিশ্বাস আর রইলো না।

কারণ অনিক তার বাবার কথামতো বাবার বন্ধুর অফিসে গেলেন। পরিচয় দিয়ে কথা বললেন তার সাথে তিনি বললেন, কয়েকদিন পর আমার সাথে দেখা করো। এভাবেই কয়েকদিন কেটে গেলো। আবার অনিক তার বাবার বন্ধু কামরুল সাহেবের অফিসে গেলেন। সালাম দিয়ে কথা বললেন বসো অনিক বসলেন এবং কামরুল সাহেব সকল কাগজপত্র দেখলেন এবং বললেন, দেখি কী করা যায়?

তখন অনিক সকল কাগজপত্র নিয়ে চলে আসতে দরজা থাকতেই কামরুল সাহেব বললেন, আগের মানুষ তো অনেক আছে তাতে আর নতুন মানুষ নিবো। আবার নতুন ফকিরের আগমন। লোকজন বর্তমান টাকা দিয়ে চাকরি নেয় এ আসছে এমনি চাকরি করতে। এই কথা অনিক শুনতে পেলেন বরং না শোনার ভান করে চলে গেলেন।

বর্তমান যুগে মনে হয় টাকা ছাড়া আর কিছুই নেই। অনেক কষ্ট শ্রম সাধন করে লেখাপড়া করে যোগ্যতা অর্জন করার পরেও আমাদের মতো কতো বেকার চাকরি পায় না। ঘুরে বেড়ায় শুধু চাকরির আশায়।

অনিক অফিস বের হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামার সময় হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো। ফোন বের করে দেখলেন তার বাবার কল। প্রথমে তো অনিক ফোন কেটে দিল। আবারো বাবা ফোন দিলেন। অনিক তো ফোন ধরে কী বলবে বাবাকে? অফিসে এইসব কথা হয়েছে বললে তো বাবা অনেক কষ্ট পাবে। সে একটু চিন্তায় পরে গেলো। তারপরে ফোন রিসিভ করে বললেন, বাবা আমি এখানো অফিসে আছি। পরে কথা বলি বলে ফোনটি কেটে দিলেন। কথা বলতে বলতে নিচে নামলেন, নামতে না নামতেই হঠাৎ ছোট ভাই অয়নের ফোন সে বললো ভাইয়া আসার সময় আমার জন্য খাতাপত্র দ্রব্যসামগ্রী নিয়ে আসিও। পাশেই দেখতে পেলেন স্টেশনারির দোকান সেখান থেকে ছোট ভাইয়ের জিনিসপত্র ক্রয় করলেন।

এবার হাতের ঘড়িটা দেখলেন ৪টা বাজে। কখন দুপুর পেরিয়ে গেছে বলতে পারেন না অনিক। ৫টায় আছে তার প্রাইভেট, কিছুদূর রাস্তা রিকশা না নিয়েই হেঁটে হেঁটে গেলেন অনিক। সেই বাসায় অনিক ক্লাস এইটের মেয়ে কাজল কে পড়াতেন। পড়ানোর সময় হঠাৎ ফোন বেজে উঠল অনিকের ফোন বের করে দেখলেন তার মার ফোন রিসিভ করলেন না। কাজলের পড়ানোর শেষে বেরিয়ে এসে ফোন দিলেন তার মাকে। মা ফোন ধরতেই বললো, বাবা কই আছিস? অনিক বললো রাস্তায় আসার সময় তোর বাবার ঔষধ শেষ হয়ে গেছে নিয়ে আসিস ও আর একটা কথা আজ বাড়িতে কোনো বাজার নেই। কিছু বাজারও আনিস বলে ফোন কেটে দিলেন। অনিকের পকেটে তখন হাতেগোনা শ পাঁচেক টাকা। এখন চিন্তায় পড়ে যায়। কী করবে? ঔষধ নিবে তার বাবার না-কি বাজার।

তখন ভেবে ভেবে সামান্য কিছু পরিমাণ বাজার ও ঔষধ নিয়ে বাসায় ফেরার পথে অনিকের বন্ধু শান্তর বড় ভাইয়ের সাথে দেখা হয়। তিনি বললেন, কী খবর অনিক দিনকাল কেমন চলছে? ভালো না ভাইয়া এখনো একটা চাকরি জোগাড় করতে পারলাম না, আপনি যদি একটু সাহায্য করতেন তবে আমার পক্ষে একটু ভালো হতো। তিনি বললেন, দেখি কি করা যায় কিছুদিন সময় দাও।

কথায় আছে ভালো সময়ে সকল বন্ধুবান্ধবদের পাশে পাবেন। দুঃসময়ে নয়। এটাই চিরন্তন বাস্তব।

দুঃসময়ে কোনো বন্ধু দেখেও তোমাকে না দেখার ভান করে চলে যাবে। বর্তমান যুগে এটাই বাস্তব। কারণ তোমার যখন অনেক টাকাণ্ডবাড়ি-গাড়ি থাকবে দেখবে তখন তোমার পেছনে অনেক লোকের ভিড়। যখন তোমার কাছে কিছুই থাকবে না তখন তোমার কাছে আসা তো দূরের কথা তোমার দিকে চোখ তুলে তাকাবে না।

এভাবেই সুখে-দুঃখে অনিকের পরিবার চলে। অনিকের একমাত্র বোন কানন ও তার স্বামীর ঘরে চলে যায়। এবং সুখের ঘর বাঁধে। অনিক এভাবে চাকুরির খোঁজে বেড়াতে বেড়াতে চাকরি পেয়ে যায়। বহুদিন পর সুখের সংসার চালায়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়