প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২৩, ০০:০০
আমার ভিতরকার লেখকসত্তার অনুরণ, কল্পলোক বৃত্তে বন্দী পাখির মতন ছিলো। নৌকায় পাল উড়ে কত গান গেয়েছি। উদাসী হাওয়ার কানে কত কথা বলেছি। আকাশের ঠিকানায় লিখছি গীত। আর সমুদ্র মন্থনে প্রেম দিয়েছি ঢেলে অঞ্জলি খুলে। তবুও কেউ কথা রাখেনি। শুনিনি আমার আর্দ্র কণ্ঠ। বেদনা ও দিন যাপনের গ্লানি। কোনো পাথর খণ্ড লিখিনি আমার কাব্য ভাষা।
চাঁদপুর কণ্ঠ আমার কল্পলোক, কল্পতরু আমার অন্তরের অব্যক্ত, অগোছালো ভাবনাগুলো বিস্তীর্ণ করেছে। যোজনা দিয়েছে আমার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের ভাবনাগুলোর মধ্যে। আমার ভিতরকার লেখকসত্তার আকাঙ্ক্ষা, বিনীত ভাবনার পরিস্ফুটন করেছে জনপ্রিয় দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ।
প্রথমত, চাঁদপুর কণ্ঠের সাহিত্য সম্পাদকের সাথে আমার পরিচয় হয়। যিনি পাঠক ফোরাম ও সাহিত্য বিভাগ সম্পাদনা করেন। তিনি মুহাম্মদ ফরিদ হাসান। আমার জন্য তার সাথে পরিচয় ছিল মধুর ও রোমাঞ্চকর। তার সাথে পরিচয় পর্বের সূত্র ধরেই চাঁদপুর কণ্ঠের পাঠক ফোরামে নিয়মিত লেখা পাঠানো শুরু করি। সত্যিই একদিন দেখি আমার কবিতা ছাপা হল। সে কি আনন্দ! বলে বুঝানো যাবে না। আমার ভিতরকার লেখক সত্তার বাস্তব পরিস্ফুটন দেখলাম। আমি শিহরিতো ও রোমাঞ্চিত হলাম। কোন কিছু না ভেবে সকল স্বজনদের জানালাম। এমনকি চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদককেও ধন্যবাদ জানানোর জন্য মনস্থির করলাম। তখন পত্রিকা অফিস ছিল প্রেসক্লাবের পূর্ব পাশে। আমি একজন অচেনা মানুষ। পত্রিকা অফিসের কাউকে তেমন চিনি না। একদিন বিকেলবেলা সাহস করে পত্রিকা অফিসে ঢুকে পড়লাম। ভয়ে ভয়ে পত্রিকার প্রধান সম্পাদকের রুমে চলে গেলাম। তিনি কাজ করছিলেন। সবিনয় তাকে সালাম প্রদর্শন করলাম। তিনি সালাম গ্রহণ করে, আমার পরিচয় জানতে চাইলেন। আমি কোন কিছু না বলেই শুধু বললাম। আপনার পত্রিকায় আমার প্রথম লেখা কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। তাই ধন্যবাদ জানাতে এসেছি। তিনি মৃদু হাসলেন এবং আমাকে বসতে বললেন।
সাহিত্য চর্চার বিষয়ে তিনি আমাকে বেশি বেশি পড়ার তাগিদ দিলেন। তাৎক্ষণিক কয়েকজনের নাম বলে উদাহরণ দিলেন যারা সাহিত্যে সফল হয়েছেন। অল্প সময়ের পরিচয় পর্ব শেষ করে আমি বের হয়ে আসলাম। তারপর সাহিত্য একাডেমি, প্রেসক্লাব শিল্পকলা একাডেমিতে তার বহু বক্তৃতা শুনেছি এবং অনুপ্রাণিত হয়েছে। সাহিত্য চর্চা ও পাঠে নিমগ্ন হয়েছি।
প্রথম লেখা প্রকাশিত হওয়ার পর। আমি নিয়মিত পাঠক ফোরামে কবিতা, গল্প ও নিবন্ধ লিখিছি। বাংলা গদ্যে কিংবা বাংলা বাক্য তৈরিতে যতটুকু দক্ষতা তৈরি হয়েছে তা কেবল চাঁদপুর কণ্ঠের সাহিত্য বিভাগের সম্পাদক মুহাম্মদ ফরিদ হোসেন এর হাত ধরেই। তিনি আমাকে ধরে ধরে শিখিয়েছেন।
আমি নিয়মিত জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিককে লিখছি। সম্পাদনা করেছি শিল্প সাহিত্যের ছোট কাগজ 'চন্দ্রদ্বীপ' কবিতার পা-ুলিপি ' পাখিদের অনশন', প্রবন্ধ গ্রন্থ : 'চিত্রকলায় রেনেসাঁর উত্তরণ ও অন্যান্য প্রবন্ধ ' আমার যা কিছু অর্জন তার পিছনে চাঁদপুর কণ্ঠের ভূমিকা রয়েছে অনস্বীকার্য। চাঁদপুর কণ্ঠে লেখালেখির কারণে জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে গুণীজনের সাথে আমার পরিচয় হয়েছে। তাদের ভালোবাসা পেয়েছি। সম্পাদক কাজী শাহাদাত, কবি ও প্রাবন্ধিক পীযূষ কান্তি বড়ুয়া ও মুক্তা পীযূষ (যারা আমাকে খুবই স্নেহ করতেন ও ভালোবাসতেন), প্রবীণ কবি তছলিম হোসেন হাওলাদার, কবি ইকবাল পারভেজ, গল্পকার কাদের পলাশ। লেখক - তৃপ্তি সাহা নিভা, গল্পকার মইনুল হাসান, কবি রফিকুজ্জামান রনি, গীতিকবি কবির হোসেন। চাঁদপুর কণ্ঠে লেখালেখি ও সাহিত্যচর্চার কারণে জীবনকে উপলব্ধি করতে পেরেছি। উপলব্ধি করতে পেরেছি আমার লেখক সত্তার। সাথে সাথে সাহিত্য সমাজের বরেণ্য মানুষের যে স্নেহ ও ভালোবাসা পেয়েছি তা কেবল চাঁদপুর কণ্ঠের জন্যই। এজন্যই আমি চাঁদপুর কণ্ঠের কাছে চির ঋণী। তাই চাঁদপুর কণ্ঠের কণ্ঠের সকল পাঠক ও লেখক এবং প্রকাশককে আমার পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।
আবদুর রাজ্জাক : শিল্প সাহিত্যের ছোট কাগজ
চন্দ্রদ্বীপের সম্পাদক।