প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০
রঞ্জন বিয়ে করেছে মাত্র এক সপ্তাহ হলো। এখনো গ্রামের বাড়িতে বউকে নিয়ে মা-বাবার কাছে যায়নি। চিন্তা করলো, আরও এক সপ্তাহখানেক পড়ে বউকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যাবে। কিন্তু মনে মনে নিজেকে অপরাধী ভাবে। কারণ, সে মা-বাবাকে না জানিয়ে বিয়ে করেছে। তাদের কোনো রকম তোয়াক্কা না করেই হুট করে বিয়ে করাটা তার জীবনের জন্যে চরম ভুল হয়েছে বলে তার কাছে মনে হয়। তার ওপর শহরের মেয়েকে বিয়ে করাটা তার জীবনের জন্যে দ্বিতীয় ভুল হয়। এখন এই বউ গিয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকতে পারবে কি না, সেটাই তার চিন্তার বিষয়। তবু অনেক মোটিভেশন দিয়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেছে।
এসব ভাবতে ভাবতে রঞ্জন রুমে ঢুকে। ওই সময় তার বউ শিউলী মোবাইল নিয়ে নিয়ে ব্যস্ত ছিলো। রঞ্জন খাটের ওপর বসে বললো, মোবাইলটা একটু রেখে দাও। আমি একটু কথা বলি।
শিউলী : জরুরি ম্যাসেজ লিখছি। একটু সময় অপেক্ষা। হুম, এখন বলতো পারো
রঞ্জন : ভাবছি, আগামীকাল আমরা গ্রামের বাড়িতে যাবো।
শিউলী : কী বলছ এসব! আগামীকাল সকালে যাবো? আর কটা দিন অপেক্ষা করলে হয় না? তারপর না হয় আমরা যাবো!
রঞ্জন : আরে! আমি তোমার মতো একটা সুন্দরী, আধুনিক শিক্ষিত মেয়ে বিয়ে করেছি, শিক্ষিত পরিবারের স্মার্ট মেয়ে বিয়ে করেছি, সেটা গ্রামের মানুষকে দেখাতে হবে না?
শিউলী : আর এটা মনে রেখো, আমি কিন্তু শহরের ভদ্র পারিবারের মেয়ে। আর একটা আলাদা মর্যাদা আছে। সেটা যেনো গ্রামে গিয়ে নষ্ট না হয়।
রঞ্জন : সেটা আমি সবই জানি। তুমি দেখো, গ্রামের বাড়িতে গেলে মানুষজন তোমাকে দেখার জন্যে ভিড় করবে। সেটা কি তোমার কাছে ভালো লাগবে না? ওরা তোমাকে দেখার জন্যে ছুটে আসবে! তখন তো আমার খুবই গর্ব হবে। আমি তোমার মতো সুন্দরী আধুনিক শিক্ষিত মেয়ে বিয়ে করেছি।
শিউলী : কিন্তু গ্রামের পরিবেশ যে আমার ভালো লাগবে না। আমি যে মানিয়ে নিতে পারবো না।
রঞ্জন : তোমার কোনো সমস্যা হবে না। তোমার যা কিছু লাগে, সবই আমি ব্যব্যস্থা করবো। এ নিয়ে তুমি কোনো চিন্তা করো না।
শিউলী : ঠিক আছে। তাহলে আমি সবকিছু গুছিয়ে নিচ্ছি।
রঞ্জন : সবকিছু গুছিয়ে নাও।
২.
সকালে রঞ্জন তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে নিজেকে প্রস্তুত করে যাওয়ার জন্যে। এদিকে শিউলীকেও জাগিয়ে তোলে। রঞ্জন বারান্দায় পায়চারী করছিল তখন। আর শিউলী প্যান্ট-শার্ট পরে বারান্দায় এসে রঞ্জনকে বললো, এবার চল, আমি প্রস্তুত!
রঞ্জন হা করে শিউলীর দিকে তাকিয়ে থাকে। আর বললো, তুমি এ পোশাকে বাড়িতে যাবা?
শিউলী : তুমি একেবারে হা করে তাকিয়ে আছ কেন? আর তাছাড়া অবাক হওয়ার তো কিছু নেই। এই পোশাকে গেলে সমস্যা কোথায়? আমি তো ছোট বেলা থেকেই এভাবেই বড় হয়েছি।
রঞ্জন : আমাদের গ্রামের মানুষ দেখলে তো আরও অবাক হয়ে যাবো। সবাই হা করে তাড়িয়ে থাকবে। গ্রামে এসব চলে না। এভাবে গ্রামে যেতে হয় না। তুমি পোশাক পরিবর্তন করে আসো।
শিউলী : আমি তো আর অন্যদের মতো নই। আমি শহরের মেয়ে তো। আর তাছাড়া শিক্ষিত। ওরা অবাক হলে আমার তো যায় আসে না।
রঞ্জন : এ অবস্থায় আমার মা বাবা দেখলে তারা কী মনে করবে? এটা তো ওরা কোনোভাবেই ভালো চোখে দেখবে না। তুমি শাড়ি পরে আসো।
শিউলী : তুমি জান না, আমি শাড়ি পরতে পারি না।
রঞ্জন : যদি সেটাও না হয়, তাহলে স্যলোয়ার কামিজ পড়ে আসো। অন্তত সেটাও মন্দ হবে না।
শিউলী : আমি স্যালোয়ার কামিজও পরতে পারি না। কিন্তু তোমার কথায় আমি পড়ছি। জানি না, কেমন হবে!
রঞ্জন : তবু ভালো হবে। সেটাই পরে আসো।
দুজনে রাস্তায় বের হতেই রঞ্জন একটা রিকশা ডাকলো। তারপর রিকশায় চড়ে বাস স্টেশনের দিকে রওনা হলো। স্টেশনে পৌঁছালে শিউলী বললো, এখানে কী জন্যে আসলাম?
রঞ্জন : বাসে করে গ্রামের বাড়িতে যাবো।
শিউলী : আমি কেনো বাসে যাবো। তুমি গাড়ি ভাড়া করোনি?
রঞ্জন : ওই ক্ষমতা আমার নেই। তাছাড়া আমার গ্রামে যেতে হলে বাসই যথেষ্ট।
শিউলী : বাসে এসি আছে তো!
রঞ্জন : এসি বাস নেই। লোকাল বাসেই গ্রামে যেতে হবে।
শিউলী : তুমি আমাকে লোকাল বাসে করে নিয়ে যাবা? তারপর কিভাবে যেতে হবে?
রঞ্জন : আমাদের বাজারে গেলে সেখান থেকে ভ্যানে করে বাড়িতে যাবো।
শিউলী : ভ্যানে করে কেনো? ভ্যানে তো মালামাল বহন করে মানুষ। সেটাতে আমি উঠবো কেনো?
রঞ্জন : আমাদের গ্রামে সকলে ভ্যানে করে যাতায়াত করে। খরচ কম।
শিউলী : হায় হায়, তুমি এটা কী বলছ? আমি একটা ভদ্র পরিবারের শিক্ষিত মেয়ে।
রঞ্জন : আমিও তো আধুনিক শিক্ষিত ছেলে। আমাদের গ্রামে সবাই ভ্যানে চলাচল করে। গ্রামের পরিবেশ দেখতে দেখতে হাওয়া খেতে খেতে আমরা যাবো।
শিউলী : আহা করে আমি ভ্যানে উঠলে লোকে কী বলবে। আমি একজন শিক্ষিত মেয়ে; আর তুমিও শিক্ষিত একজন। তোমার তো এসব বোঝা উচিত।
রঞ্জন : সব জায়গায় পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়াটাই শিক্ষার ধর্ম হওয়া উচিত। আর আমাদের গ্রামেও শিক্ষিত মানুষ রয়েছে। তাড়াও ভ্যানে উঠে যাতায়াত করে।
শিউলী : আচ্ছা, ঠিক আছে এখন চল। কী আর করা যায়, তোমার পাল্লায় পরেছি যখন, তখন তো যেতেই হবে।
যেতে যেতে গ্রামের এক যুবক সাজু, রঞ্জনকে চিনতে পেরে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো, ও রঞ্জন দাদা, কখন শহর থেকে আসলেন? আর আপনার পাশে যে আছে সে কে?
রঞ্জন : আমার বউ! তোমার বৌদি হবে।
সাজু : কবে বিয়ে করলে গো দাদা। ইস! কী সুন্দর বৌদি! একেবারে চাঁন্দের মতো দেখতে গো। এত সুন্দর মেয়ে আমি জীবনে দেখিনি। আমাদের গ্রামে এ রকম মেয়ে নেই। বৌদির সঙ্গে যদি একটা সেলফি উঠাতে পারতাম।
রঞ্জন : পরে উঠাতে পারবা। এখন ঘরে যাই। ক্লান্ত হয়ে গেছি। বিকেলে তুমি আমাদের বাড়িতে এসো। তারপর তোমার সঙ্গে কথা হবে। (চলবে)
[পরের পর্ব আগামী সংখ্যায়]