মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০

রোদে পোড়া পালিশ
অনলাইন ডেস্ক

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

ছেলেকে একজন বাবার অসহায়বোধ বুঝতে না দিয়ে স্বাভাবিকভাবে বিদায় নেয় ফজলুল হক। লকাপের আড়লে এসে চোখ মাথা নিচু করে চোখ মুছে। তারপর থানা থেকে বেরিয়ে সোজা বাড়ি চলে আসে ফজলুল হক। সারা রাত না ঘুমিয়ে এক প্রকার ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন তিনি। স্ত্রী দৌড়ে এসে ছেলের খবর জানতে চায়। ঘরে ঢুকে কান্নায় ভেঙে পড়েন ফজলুল হক।

-কী হয়েছে? তুমি কাঁদছো কেনো? ছেলেকে কি ছাড়বে না?

-না। জানি না কী পাপ করেছি? আমার সন্তানের ওপর এমন মিথ্যা অপবাদ কেনো আসবে? একটা হিন্দু মেয়ে হত্যা মামলায় আমার ছেলে অযথাই আজ বিপদে। পুলিশ আমার কোনো কথা শুনতে চায় না। বলেছে দশ লাখ টাকা দিতে। আর না হয় কোর্টে মামলা ফেস করতে। একদিনের মধ্যে দশ লাখ টাকা আমি কোথায় পাবো?

-কী কও?

-হ। তা-ই তো ওসি সাব কইলো। একদিনের মধ্যে জমিও বেচতে পারুম না। এখন কই পামু এতোগুলান টাকা।

শুভর মা আরো হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে। এখন কে কাকে শান্ত¦না দেবে? পাশের বাড়ির কাউকে আপাতত কিছু বলা যাবে না। তাছাড়া বলেও কোনো লাভ হবে না। শোলকাসহ পুলিশের যে পরিকল্পনা সে পরিকল্পনায় শুভ কিভাবে মুক্তি পাবে? একজন বিশেষজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ ছাড়া আপাতত কোনো পথ নেই বললেই চলে শুভর পরিবারের কাছে। কারণ এ মুহূর্তে দশ লাখ টাকা জোগাড় সম্ভব নয়। তাছাড়া ধার-দেনা করে এতো টাকা এখন দিলেও যদি পুলিশ শুভকে না ছাড়ে। তাহলে পুলিশের কাছে ধর্ণা দিয়ে আপাতত কোনো লাভ নেই। মামলা ফেস করার জন্যে কোর্টে চলে যাওয়াই ভালো। একসাথে এতোগুলো টাকা পুলিশকে না দিয়ে কোর্টে ধীরে ধীরে কিছু টাকা খরচ করলে কাজে আসবে। এবার ফজলুল হক সিদ্ধান্ত নেয় কোর্টেই মামলা ফেস করবে। একজন দক্ষ সিনিয়র আইনজীবী ধরতে হবে। তিনি বিষয়টি সম্পর্কে সুস্পষ্ট আইনি পরামর্শ দিতে পারবেন। পুলিশ দুপুরেই শুভকে কোর্টে চালন করে দেয়। কোর্ট শুভকে কারাগারে প্রেরণ করে। শুরু হয় শুভর কারাগারে বন্দী জীবন।

বার.

শুভ কারাগারে চলে যাবার খবরে শান্তিপুর গ্রামের মানুষের মাঝে আফসোস আর মায়াকান্নার আওয়াজ ওঠে। শুভ সোনাইপুর ওই গ্রামের হলেও এ গ্রামের ঘটনায় সে বিপদে পড়েছে। কিন্তু তাদেরই কী করার আছে? শুভ হোক আর যেই হোক কেউ কোনো ঘটনায় বিপদে পড়ুক তা অন্তত এ গ্রামের মানুষ চায় না। তবে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের শ্যামল বৈদ্য বিষয়টি কিছুটা ঘোলা করার চেষ্টা করছেন। অবশ্য তার কথারও যৌক্তিকতা আছে। কারণ ঘটনার দিন শুভই নুপুরের লাশ নিয়ে আপত্তি তুলেছিলো। যেনো কোনো ভাবেই লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়া পরিবারের কাছে না দেয়। এ নিয়ে পুলিশের সাথে সে আলাদা কথা বলেছে। একপ্রকার তার কথার উপর ভিত্তি করে পুলিশ লাশ ময়নাতদন্তের জন্যে বেশি সুযোগ পেয়েছে। না হয় ময়নাতদন্ত ছাড়াই নুপুরের লাশ দাহ করলে আজ বিপদ হতো না। ঝামেলও বাড়তো না। শুভ তার নিজের বিপদ নিজেই ডেকে এনেছে। তারপরেও শ্যামল বৈদ্য গ্রামের মানুষের সাথে কথা বলে অবিলম্বে শুভর মুক্তি চেয়ে মানববন্ধনের আয়োজন করছে। এ ব্যাপারে শুভর বাবা ফজলুল হক শ্যামল বৈদ্যর সাথে কথা বলেছেন। মিডিয়া কভারেজের জন্যে বা আয়োজনের জন্যে যা অর্থ-কড়ি খরচ হবে সব যোগান দেবেন ফজলুল হক। শুভ নির্দোষ দাবি তোলে গ্রামের সব মানুষ একত্রিত হবে। দিনক্ষণও নির্ধারণ হয়ে গেছে। খবর পেয়ে শোলকা ওসির কাছে ছুটে যায়। গ্রামের মানুষের পরিকল্পনার কথা জানায়। ওসি শোলকার কথায় বিরক্ত হয়। এমন বিরক্তি ভাব আর কোনো দিন দেখাননি তিনি। কিন্তু শোলকাও নাছোড়বান্দা। শোলকা ওসির কাছে দাবি করে বসে, নিপুর সাথে তার বিয়ের আয়োজন করতে। না হয় এতোদিন যা যা হয়েছে সব মিডিয়ার কাছে বলে দেবে। ওসি ভাবে, এ মেয়ে অভিযোগ করলে চাকুরি যাবে। জীবন বিপন্ন হবে। সংসার থাকবে না। মেয়েটিকে কোনো ভাবেই ক্ষেপানো যাবে না। বরং বিষয়টি সু-কৌশলে সমাধান করতে হবে।

ওসি বলে, আরে মেয়ে তুমি শান্ত হও। এতো দ্রুত ক্ষেপে গেলে কিভাবে হবে? আচ্ছা ঠিক আছে, আমি আজই নিপুকে ডেকে আনবো। তার সাথে কথা বলবো। প্রয়োজনে তোমার বাবাকেও ডেকে আনবো। বিষয়টি আমি সুরাহার চেষ্টা করছি। এখন তুমি যাও।

- স্যার, আমি আপনার সব কথায় রাজি হয়েছি। আপনা সব শর্ত মেনে নিয়েছি। আমার সাথে তালবাহানা করবেন না। কারণ আমি নিপুর জন্যে সব করতে পারি। আর করতে পারি বলেই আপনার কাছে নিজেকে বির্সজন দিয়েছি।

- আরে মেয়ে ঠিক আছে। আমি সব দেখছি। (চলবে)

[পরের পর্ব আগামী সংখ্যায় প্রকাশিত হবে]

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়