মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০

বাবাহীন দশ বছর
অনলাইন ডেস্ক

মহান আল্লাহর বিধান অনুযায়ী আমরা জন্মগ্রহণ করি এবং তাঁর হুকুমেই আমাদের দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হয়। তারই ধারাবাহিকতায় চলছে সব কিছু। তবুও হঠাৎ করে প্রিয় বাবার চলে যাওয়াটা অনেক বেদনার। সেই কষ্ট আমি কিছুতেই ভুলতে পারিনি আজও।

দীর্ঘ ১০ বছর বাবার আদর পাই না। বাবার ছায়াও দেখি না। বাবা আমার ঘুমিয়ে আছেন শাহরাস্তি উপজেলাস্থ পৌরসভা ১১নং ওয়ার্ডের আলোকিত কৃষ্ণপুর পাটোয়ারী বাড়ির মসজিদের পাশেই। দু চোখে দেখি বাবা মাটির দেয়ালের মধ্যে আছেন, তবুও বাস্তবে নেই বাবা।

২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ বাবার ১০তম মৃত্যুবার্ষিকী। বাবার সাথে স্মৃতিময় সময় নিয়ে কবিতা ‘বাবা’। যদি হুট করে একা হওয়া যেতো,/আকাশের মতো,/আমি চুপ করে চোখে জল নিতাম,/ইচ্ছে যত/আমি এখনও ভুলের ঘোরে খুঁজি/চেনা পথের বাঁকে/যদি ভুল করে ফের শোনা হতো/প্রিয় সে ডাক আয় বাবা আয়।/আজও অনুতাপে ধুকছে সব/বোবা হাহাকারে চোখ নীরব/বলা হয়ে ওঠেনি তাকে ‘বিদায়’/আজও মন বলে সেই হাত কাঁধে/ছায়ায় জড়িয়ে বাবা/আর শাসনে-বারণে তার কথা,/সময়ে সময়ে।/আজও উৎসবে কোলাহলে,/খুঁজে যাই চেনা স্বর।/আমি মানতে পারি না আজও বাবা নেই/আলো আঁধারের মাঝে বাবাকে খুঁজে ফিরি/তবুও তাকে পাইনা-/আট বছর ধরে বাবার খোঁজে /স্মৃতি সব কেঁদে মরে।

২০১২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর প্রিয় বাবা দুনিয়ার সকল মায়া ত্যাগ করে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। প্রতিটি মুহূর্তে বাবার কথা মনে পড়ছে, বাবার স্মৃতিগুলো চোখের মাঝে ভেসে ওঠে।

একটি পরিবারের সুখ, শান্তির জন্য বাবা নামক মানুষগুলো ছুটে চলেন ক্লান্তহীন, আয়-রোজগার করে এনে তা তুলে দেন সংসারের মূল চালিকাশক্তি সুখণ্ডদুঃখের প্রধান মা নামক নারীর হাতে, যিনি সন্তানের লেখাপড়া, আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সবাইকে মোকাবিলা করেই সংসার এগিয়ে নেন। সেই মা-ও নেই এতিম করে ১০ জুন ২০২০ চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

স্মৃতিময় মুহূর্তগুলো

আমাদের পরিবারে আমরা ৩ বোন, ৫ ভাই, বাবা, মামাসহ ১০ জন তার সাথে আত্মীয়স্বজন সবাইকে সুখে রাখার জন্য বাবা একাই লড়াই করে চালিয়েছেন, সরকারি একজন কর্মকর্তা ছিলেন, মাস শেষে বেতন আর যে রেশন পেতেন তাই দিয়েই কাটিয়েছেন জীবন অনেক আনন্দে।

বাবার সাথের অনেক বন্ধু রাতারাতি বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন, অনেকেই সম্পদের মালিক হয়েছেন, বাবার সাথে চট্টগ্রামে টেকনিক্যাল সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারে ছিলাম আমি, আমার বাবা সবসময় বলতেন, আদর্শ গত শিক্ষা জীবন, অন্যের উপকার, সততার সাথে জীবন-যাপন, হালাল ইনকাম, নামাজ, রোজাসহ সকল ভালো কাজের সাথে থাকার নামিই জীবন।

তুমি অসৎ উপায়ে হয়তো অনেক কিছু করতে পারবে, তবে তা মনের সুখ এনে দিবে না, যত পাবে, মন চাইবে আরও কিছু করি। আর তুমি যদি সৎ উপায়ে আয় করে মানুষের কল্যাণে কাজ করে যেতে পারো তবেই তুমি সফল।

মনে রাখবে, ফুল ঝরে রেখে যায় বৃতি, আর মানুষ মরে রেখে যায় স্মৃতি।

ক্ষণিকের জীবনে ভালো কাজের বিকল্প কিছুই নেই। বাবার শেখানো কথাগুলো পুঁজি করেই আমরা ভাই, বোন সবাই চলছি সেই পথে, আজ সবাই যার যার জায়গায় আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। অনেক টাকা, বা অনেক সম্পদ নেই, আমাদের সকলের মাঝে আছে একে অন্যের প্রতি সম্প্রতি, ভালোবাসা আর আন্তরিকতা।

বাবা ছিলেন বটবৃক্ষের ছায়া, নিজের জন্য কিছুই কিনতেন না, তখন আমরা কেউ বুঝতে পারিনি বাবা নিজের জন্য না কিনে, শুধু নতুন জামা কাপড় আমাদের কিনে দিয়েছেন, আমরা নতুন জামা হাতে পেয়ে আনন্দে ভুলে গেছি সব, কেউ বলিনি বাবা তোমার জন্য কি কিনেছো। মা জিজ্ঞাসা করলে মুচকি হেসে বলতেন আমার আছে, আমাকে নিয়ে তোমাদের ভাবতে হবে না।

বাবা সবিই করেছেন, সবিই বলেছেন, সবই দিয়েছেন, বাবাকে যখন আমরা একটু সুখ শান্তিতে রাখার চিন্তা করেছি, সেই অবস্থান হয়েছে, তখনই মহান আল্লাহর হুকুমে বাবা চলে গেলেন না ফেরার দেশে, যেখান থেকে আর ফিরে আসবে না। আজ চিৎকার দিয়ে কান্না করতে ইচ্ছে করে বাবা, বাবা বলে।

আজ বাবাকে নতুন জামা ক্রয় করে দেয়ার ক্ষমতা হলেও, কিছুই করতে পারছি না, অথচ বাবা আমাদের পাশের বাড়িতে ঘুমিয়ে আছে নিঝুম নিরালায়, ডাকলেও ঘুম ভাঙবে না।

বাবাহীন জীবন যে কত কষ্টের তা আমার মত যারাই বাবাকে হারিয়েছেন, শুধু কেবল তারাই বুঝবেন, বাবা হলেন একটি পরিবার ও সন্তানের জন্য মাথার ছায়া।

যে সকল সন্তান বাবাকে অন্তর থেকে ভালোবাসতে পারেনি তারা বুঝবেনা বাবা কি। আজ নিজেও বাবা হয়েছি, সন্তানের কথা প্রতিটি মুহূর্তে দূরপ্রবাসে বসে মনে পড়ে।

বাবাকে নিয়ে লিখলেও শেষ হবে না, আর মায়ের কথা তো বলে লিখেও শেষ করা যাবে না। শুধু সকলের প্রতি একটিই দাবি ও অনুরোধ বাবাকে, ভালোবাসুন, মায়ের খেদমত করুন, তাদের সম্মান দিন, তাদের যত্ন নিন, সন্তানের জন্য তারাই পীর, ঘরে পীর রেখে অন্যকে পীর মেনে অভিশপ্ত জীবন পরিহার করুন। বাবা, মায়ের চাইতে বড় আপন আর কেউ হবে না, হয় না, হতে পারেও না।

হে আল্লাহ আমার মতো যাদের বাবা দুনিয়ায় বেচে নেই তাদের জান্নাতবাসী করুন। আমিন।

* লেখা পাঠানোর ই-মেইল : [email protected]

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়