মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০

দেখা হোক ওপারে
অনলাইন ডেস্ক

আমার প্রিয়া বেঁচে নেই। কথাটা শুনেই স্তম্ভিত হয়ে যাই। যখন হুঁশ ফিরলো তখন আমার গাল বেড়ে পানি পড়ছে। একটা ষোল বছরের তরুণী পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেছে, এটা কতটা কষ্টের বোঝানো যাবে না। তাকে ভালোবাসতে শুরু করেছি মাত্র তিন মাস। আর ও আমার জন্যে অন্তরে গোপনে প্রেম লালন করছিলো দেড় বছর। আর এই দেড় বছরে বান্ধবীদের কত কত ব্যঙ্গ, হাস্যোরস, কত যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে এটা সে-ই একমাত্র জানে। আজকে বড্ড বেশি অপরাধী মনে হচ্ছে নিজেকে।

দেড় বছর আগের কথা। অনেক রাতে বাসায় ফিরলাম। দেখি মা এখনো ভাত নিয়ে বসে আছেন। সচরাচর এমন হয় না। অবাক হলাম। কিছু বললাম না। মা খুশিমনে ভাত বেড়ে দিলেন। হঠাৎ মা বলে উঠলেন, একটা কথা জিজ্ঞেস করবো, সত্যি বলবি। ভাতপাতে মায়ের সাথে মিথ্যা বলবি না। হাসিমুখে বললাম, বলেন সমস্যা নাই।

-তোর কোনো পছন্দ আছে? কারো সাথে কথা বলছ?

-হঠাৎ এমন কথা বলছো কেনো?

-আর বল সমস্যা নাই।

-বললাম, কেউই নেই। মিথ্যা বললাম।

আমি ভালো করেই জানি যার কথা বলবো তাকে মা ভীষণ অপছন্দ করেন। ওর পরিবার অহঙ্কারী, এটা মায়ের ভালো করেই জানা। আবার ওর পরিবারও আমাকে শুধু আর্থিক কারণেই অপছন্দ করে। তাই পছন্দ অনুযায়ী পারিবারিকভাবে বিয়ে ম্যানেজ করা দুজনের পক্ষেই অসম্ভব।

-তোর খালু প্রস্তাব পাঠিয়েছে। তোর পরীক্ষার পর ওনার মেয়ের সাথে তোর বিয়ে দিতে চায়। আমি কথা আগাই। তোর মত কী?

-আপনার মন চাইলে আপনি করেন। আমি আপাতত পরীক্ষা ছাড়া কিছু ভাবতে পারছি না। এগুলো এতো তাড়াতাড়ি মাথায় আনছি না।

-আমি তাহলে কথা দিয়েই রাখি। দ্বিমত করার সাহস পেলাম না।

চাঁদনীর সাথে পরদিন দেখা করলাম। ও সান্ত¡না দিলো এখনো দেড় বছর সময় আছে। চিন্তা করো না। আমি আছি তো। তবুও আমি বিয়ের জন্য জোর করলাম। বললাম বিয়েটা করে রাখি। বলল, আমাদের শেষ বিষয়টা পরীক্ষা দিয়েই পালাবো। তার আগে পরিবারে অনাক্সিক্ষত কিছু ঘটলে তখনোই করবো যাও কথা দিলাম।

আমি খুশি মনে বাড়ি ফিরলাম।

বেশ কিছুদিন ভালোই চললো। একদিন চাঁদনীর চিঠি মায়ের হাতে পড়লো। ধরা খেলাম। মা উঠে পড়ে লাগলেন। আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য। বারবার আমাকে চাপ দেয়া হচ্ছে খালতো বোনকে দেখতে যাওয়ার জন্য। তাকে সেই ছোট্ট বেলায় দেখেছি। গত দশবছর ঐ বাড়িতে যাইনি। যাওয়ার ইচ্ছাও নাই।

বাসা থেকে তাড়াতাড়ি বের হয়ে গেলাম। কলেজে গিয়ে চাঁদনীর সাথে দেখা করলাম। সব খুলে বললাম। সে অনুমতি দিলো দেখা করার জন্য। কিন্তু আমি পরিষ্কার ভাবে বলে দিলাম। যাকে আমি বিয়ে করবো না। তাকে দেখতেই যাবো কেনো। আর আন্টি বদল করবোই কেনো! তারচেয়ে বরং চলো আমরা কোর্ট ম্যারেজটা সেরে ফেলি। সে রাজি হলো না। বললো, এখন না পরে করবো। জানতে চাইলাম কোন্ পরে? ঠিকঠাক দিবসের কথা বলল না। আশানুরূপ উত্তর না পেয়ে আমি রাগ করে চলে আসলাম। সেই রাতে মায়ের সাথে ঝগড়া হলো। রাতে ঘুমাতে পারিনি। মনকে প্রশান্তি দিতে কক্সবাজার চলে আসলাম। কয়েকদিন সেখানেই কাটালাম। মন সতেজ হলো। সমুদ্রের বিশালতা দেখে আর রাতে শীতল বাতাস অনুভব করে অনেক শিক্ষা পেলাম। তাই ধৈর্য, উদারতা ও বিনয় নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। কিছু ঝিনুকের নূপুর, মালা ও হাতের বালা উপহার হিসেবে নিয়ে চাঁদনীর সাথে দেখা করতে গেলাম। দেওয়ার আগে সে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিলো আমাদের সম্পর্ক শেষ। আমার সাথে আর কথা বলতে চায় না।

ঠিক কী কারণে ব্রেকাপ করলো। জানতে চাইলাম। বললো, কোনো কারণ নেই। কোনো সদুত্তর পেলাম না। শত কষ্ট নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। উপহারগুলো অন্যদের দিয়ে দিলাম। শুধু একটা মালা মা রেখে দিলেন। তিনি গলায় দিলেন।

করোনা হানা দিলো বাংলাদেশে। সরকার ঘোষণা দিলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ! তাই পরের দিন থেকে সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলো। ওর সাথে তবুও অনলাইন-অফলাইনে যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে চেষ্টা করলাম। সব কিছুতেই ব্লক রাখছে। এমনকি ওর বন্ধু-বান্ধবীরাও আমাকে ব্লকে রাখলো! এক বছর অপেক্ষা করার পর জানতে পারলাম। এ জীবনে আমাদের সম্পর্ক জোড়া লাগবে না। এইদিকে মা, খালুর কাছে ঐ মেয়েটার গুণ, ভদ্রতা, আচার-আচরণ শুনতে শুনতে না দেখেই নতুন করে প্রেমে পড়লাম। চাঁদনীর সাথে ব্রেকাপের দেড় বছর পর সিদ্ধান্ত নিলাম খালতো বোনকেই বিয়ে করবো। এইদিকে অটোপ্রমেশন পেলাম।

বেশ কিছুদিন ধরেই ভাবছি মেয়েটার সাথে দেখতে যাবো। অতীত খুলে বলব। আমার সব কিছু জানার পর ও রাজি থাকলে বিয়ে করবো।

অতঃপর যাওয়া হয়নি! এ জীবনে তাকে আর দেখা হয়নি। কথাটা ভাবতেই ভিতরটা রক্তাক্ত হয়ে গেল। সব যেনো অন্ধকার দেখছি। পায়ের তলা থেকে যেনো মাটি সরে যাচ্ছে। আমি যেনো তলিয়ে যাচ্ছি গভীর অন্ধকারে!

যাকে দেখেনি। কখনো কথা হয়নি। তার জন্যে এতো আবেগ, মায়া, ভালোবাসা কেনো বুঝতে পারলাম না। মা যখন ওই বাড়িতে যান। তখন খালা নাকি ঐ ঝিনুকের মালার গল্প করেন। আর শুধু কাঁদেন। মাঝে মধ্যে বলে উঠে তোর ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছি দেখেই আমার মেয়েটা মরে গেছে।

সে চলে যাওয়ার অনেকদিন পর সেই বাড়িতে গেলাম। তার বান্ধবীদের কাছে আমার বিষয়ে অনেক কিছু জানতে পেরে অবাক হলাম। সে এতো ভালোবাসতো আমাকে! ঐ যে আম্মায় যে ঝিনুকের মালা গলায় দিয়ে ঐ বাড়িতে দেখতে গিয়েছিলো। সে নাকি স্বর্ণের আন্টির বদলে ঐ মালাটা পছন্দ করেছে। আমার হাতের জিনিস বলে সে মার কাছে মুখ খুলেই চেয়ে নিয়েছে। আর এজন্যই নাকি ওকে ওর বান্ধবীরা মজা করে কতো কথা বলেছে। কতো তিক্ত কথা সহ্য করতে হয়েছে। ও নাকি একটা কথাই বলতো তাদের কাছে সব সময় আমি আসবোই ওর কাছে। ওকে ভালোবাসতেই হবে।

আসলেই আমি তার কাছে এসেছি। তাকে ভালোবাসতে এসেছি। কিন্তু তারে আমি পেলাম না। অভিমান করে চলে গেছে ওপারে। আমিও এখনও অপেক্ষা আছি দেখা হবে ওপারে।

* লেখা পাঠানোর ই-মেইল : [email protected]

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়