প্রকাশ : ০৪ জুন ২০২২, ০০:০০
এখনো সকাল হয়নি। চারদিকে ঘোর অন্ধকার। তার মাঝেই আমরা দাঁড়িয়ে আছি গাড়ির জন্যে। রাতে সংগঠনের এক সদস্যের বাসায় থাকি সবাই। সেখানে তারা ঘুম না গিয়ে গল্প-গুজবে মেতে ছিলো পুরোটা সময়। গাড়ি আসলো ঠিক ৪টা ৪০ মিনিটের সময়। আমরা সবাই তাড়াতাড়ি দুই গাড়িতে ভাগাভাগি করে উঠে পড়লাম। গাড়ি এসে দাঁড়াতেই আমাদের আর তর সইলো না। আমরা রওনা হলাম প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে এবং উপভোগ করতে।
প্রাকৃতিক লীলাভূমিতে ঘেরা এ বাংলাদেশ তার উপর পাহাড়-পর্বত, ঝর্ণা যেনো প্রকৃতির এক স্বর্গ নিবাসে পরিণত হয়েছে। গাড়ি চলছে, গাড়ির মধ্যে ফরিদগঞ্জ লেখক ফোরামের সদস্যরা সবাই গান, কবিতা ও আড্ডায় মেতে উঠে। সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ পাহাড়ে গিয়ে পৌঁছলাম সকাল সাড়ে নয়টার সময়। সেখানে সবাইকে সময় নির্ধারণ করে দেয়া হলো দুপুর ১২টা পর্যন্ত। সবাই পাহাড়ে উঠার উদ্দেশ্যে রওনা করলো। কেউ হাতে পানির বোতল ও বাঁশের লাঠিসহ রওনা করলো আবার কেউ এগুলো ছাড়াই। বাংলাদেশের এ সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ে উঠতে আমাদের সময় লেগেছে প্রায় ৭৭ মিনিট। পাহাড় থেকে নেমে এসে আমরা গাড়িতে বসলাম।
তারপর রওনা করলাম খৈয়াছড়া ঝর্ণার দিকে। পথিমধ্যে গাড়ি থামিয়ে আমরা হোটেলে গিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। দুপুরের খাবার শেষে এবার গন্তব্য ঝর্ণা, সেখানে যতোক্ষণে পৌঁছলাম ততোক্ষণে ঘড়িতে দেখি ৩টা ৪০ মিনিট। সেখানকার কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে সময় বেঁধে দিলো বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। কর্দমাক্ত পথে পায়ে হেঁটে চলছি ঝর্ণার খোঁজে। পাহাড়ি রাস্তা এতোটা পিচ্চিল যে পায়ের মধ্যে হ্যাংলেট, আর হাতে লাঠি ছাড়া হাঁটা প্রায় অসম্ভব। আবার ঝর্ণায় যাওয়ার জন্যে কোনো চিহ্নও নেই, যে আমরা সেগুলো দেখে পাহাড়ের কাছে যাবো।
আমাদের সাথে যাওয়া কয়েকজন দলছুট হয়ে মূল ঝর্ণার কাছে না গিয়ে চলে আসে গাড়ির কাছে। আবার সংগঠনের মহাপরিচালক কর্দমাক্ত ও পিচ্ছিল পথে না হাঁটতে পেরে চলে আসে সেখান থেকে। আমরা বাকি সদস্য ঝর্ণা খুঁজতে খুঁজতে কাক্সিক্ষত জায়গায় পৌঁছলাম। সেখানে গিয়ে সবার সেই যে কী আনন্দ! ঝর্ণাতে তাদেরকে দেখে মনে হচ্ছিলো তারা যেনো তাদের হারানো মানিক খুঁজে পেয়েছে। ঝর্ণাতে গোসল করে আমাদের সারাদিনের ক্লান্তি এক নিমিষেই হাওয়ায় বিলীন হয়ে গেছে। পাহাড়ে উঠতে এবং নামতে আমাদের যে কষ্ট হয়েছে সারাদিন যতো কষ্ট পোহাতে হয়েছে তা ঝর্ণায় ভেজার সাথে সাথে সব দুঃখণ্ডকষ্ট লাঘব হয়ে গেছে। অনেকক্ষণ ঝর্ণাতে সময় কাটানোর পর আমরা আমাদের গাড়ির কাছে এসে সবাই তাদের পোশাক পরিবর্তন করে গাড়িতে উঠে বসলাম।
সারাদিন সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ পাহাড়, আর খৈয়াছড়া ঝর্ণাতে কাটিয়ে এবার আমাদের গন্তব্য হচ্ছে বাড়ি ফেরা। অর্থাৎ ফরিদগঞ্জে ফিরে যাওয়া। সন্ধ্যার সময় গাড়ি ছাড়লো ফরিদগঞ্জের উদ্দেশ্যে। পথিমধ্যে আমরা গাড়ি থামিয়ে নাস্তা করে নিলাম সবাই। তারপর আবার গাড়ি যাত্রা শুরু করলো গন্তব্যের দিকে পুরোটা সময় আমরা হাসি, আনন্দ, কবিতা, গানে মেতেছিলাম। এই দিনটি আমাদের স্মরণ করে রাখা দিনগুলোর মধ্যে একটি ছিলো। যাই হোক, দেশের সর্বোচ্চ উঁচু পাহাড় জয় করে, কর্দমাক্ত-পিচ্ছিল রাস্তা বেয়ে ঝর্ণা উপভোগ করে যখন ফরিদগঞ্জ এসে গাড়ি থামলো তখন ঘড়িতে রাত এগারোটা।
* পাঠক ফোরাম বিভাগে লেখা পাঠানোর ই-মেইল : [email protected]