প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
বিয়ে বাড়ির সামনে এসে বরের গাড়ি থামলো। একটু আগেও বিয়ে বাড়িটা থমথমে ছিলো। প্রজ্বল এসেছিলো এখানে। বারবার তৃণার সাথে দেখা করতে চেয়েছে। তৃণার বাড়ির লোকজন টেনে-হিঁচড়ে প্রজ্বলকে বাড়ি থেকে দূর নিয়ে গেলো। যাওয়ার সময়ে প্রজ্বল চিৎকার করে বললো, তৃণা একটিবার আমার সাথে দেখা করতে পারতে। কেনো আমার ভালোবাসা বুঝলে না? অর্থটাকেই কেবল বড় করে দেখলে। আমি চিরকাল তোমাকেই ভালোবেসে যাবো, মনে রেখো। প্রজ্বলের বাবা আর মামা ওকে জোর করে বাড়ি নিয়ে গেলো।
জানালার পাশে বসে সবটা দেখলো তৃণা। এমনিতেই পড়াশোনা নিয়ে টানাটানি করে বিয়ে করতে মোটেই ইচ্ছে ছিলো না তার। তার উপর প্রজ্বলের এই প্রেমের পাগলামি। কতো করে ওকে বুঝালাম, সমবয়সী, একই ক্লাসে পড়া বন্ধুদের মধ্যে ভালোবাসা হয় না। তাছাড়া তৃণার পরিবার কখনোই প্রজ্বলকে মেনে নিবে না। যদিও এটা প্রজ্বলকে বলা হয়নি। নয়তো সে অন্য পাগলামি শুরু করতো। প্রজ্বলের এই পাগল প্রেমের কথা সারা স্কুল, কলেজ, পাড়া, এমনকি বাজারের লোকজনও জেনে গেছে। তাই তৃণার বাবা, তার শহরের বড়লোক বন্ধুর ছেলের সাথে তৃণার বিয়ে ঠিক করেছে।
তখনই জানালার পাশে এলো তৃণার আরেক ক্লাসমেট বন্ধু, তিলক। তৃণাদের পারিবারিক আত্মীয়। তিলককে দেখামাত্রই তৃণা বললো,
এই তিলক, প্রজ্বল কি বলে গেলো?
তিলক এক ধ্যানে তৃণার দিকে তাকিয়ে বললো, ওর ভালোবাসার কথা।
শুনো তিলক, আমি ওকে কতো বুঝিয়ে বলেছি, এটা হয় না। ও এখনও পড়াশোনা করছে।
তিলক কিছু না বলে ভেজা চোখে তৃণার দিকে তাকিয়ে রইলো।
একি তিলক তুমি কিছু বলছো না যে? তোমার চোখে পানি কেনো?
ও কিছু না। বাতাসে কিছু একটা পড়েছে চোখে। ঠিক হয়ে যাবে। কয়েক দিনের মধ্যে আমাদের পরিবার ঢাকায় চলে যাবে। বাবা ওখানেই আমায় অনার্সে ভর্তি করাবে। তোমার শ্বশুর বাড়ি তো ঢাকাতেই। তুমি তো ওখানেই পড়বে। তুমি ভালো থেকো। আমি সবসময়ই তোমার সাথে যোগাযোগ রাখতে চেষ্টা করবো।
কলেজে নতুন শিক্ষিকা এসেছে। তাজরিয়ান তৃণা। শিক্ষকরা তাদের পুরানো মেধাবী ছাত্রীটিকে নিজেদের কলেজের শিক্ষক হিসেবে পেয়ে খুবই খুশি। এই স্কুল এন্ড কলেজে তৃণা ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। এটি এখন বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। তৃণা অনার্সের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেছে। আগের শিক্ষকরা অনেকেই অবসর নিয়েছেন। অনেকের চাকরি প্রায় শেষের দিকে। বেশির ভাগ নতুন শিক্ষক। গ্রাম এখন আর আগের মতো নেই। অনেকটাই শহর হয়ে গেছে। তৃণার ক্লাসের অনেক বন্ধুরা তৃণার সাথে দেখা করতে এসেছে।
তৃণার বাড়ির লোকজনও এসেছে, তৃণা কথা বলেনি।
তৃণার যোগদানের তৃতীয় দিন। পিয়ন খবর নিয়ে এসেছে, ফারদিন প্রজ্বল নামে একজন অধ্যক্ষ স্যারের সাথে দেখা করতে চায়। অধ্যক্ষ স্যার নাম শুনেই চিনতে পারলেন। আসতে অনুমতি দিলেন। প্রজ্বল, সালাম করে, তার কার্ড স্যারের সামনে দিলো। এসপি অফিসার ফারদিন প্রজ্বল। স্যার খুব খুশি হলেন, প্রজ্বলের কার্ড দেখে। প্রজ্বল, নিচের দিকে তাকিয়ে বললো, স্যার, আমি তৃণার সাথে দেখা করতে চাই।
প্রজ্বল, তুমি আগের কথা।
স্যারের কথা শেষ না হতেই, স্যার, আমি বড় হয়েছি, আমি ওর সাথেই কথা বলতে চাই।
ঠিক আছে। তৃণা ওর ডিপার্টমেন্টে আছে। তুমি পিয়নের সাথে যাও।
মে আই কামিং, মেম?
ইয়েস, কামিং। ফাইলে মনোযোগ দিয়েই তৃণা বললো, কিছু বলবে?
না মানে, আমি কি বসতে পারি?
স্টুডেন্টর মুখে বসার কথা শুনে তৃণা সামনে তাকালো।
প্রজ্বল! তুমি এখানে?
অবাক হচ্ছ কেন তৃণা? আমি তো এখানে আসতেই পারি। আমার লেখা পড়ার বিদ্যাঙ্গন, আমার গ্রাম আমার জন্মস্থান। আমি কিছুই ভুলিনি। তোমাকে দেখতে এসেছি আমি। এখানে তোমার সাথে কথা বলতে চাই না। তুমি গাছতলায় এসো, তৃণা।
প্রজ্বল, আমি এখানকার শিক্ষক। আমি কি করে তোমার সাথে ওখানে গিয়ে কথা বলি। ছাত্র-ছাত্রীরা কি ভাববে!
তোমার কি মনে হয়, ওরা এখনও আমাদের আগের বিষয়ে না জেনে আছে? সমস্যা নেই, না জানলেও আজ জানবে। নিচে এসো। আমি অপেক্ষা করছি।
তৃণা সংকোচ মনে কলেজের পিছনের গাছের তলে যেতে নিলো। অধ্যক্ষ স্যার বললো, সাবধান তৃণা। প্রজ্বলের আগের পাগলামির কথা তুমি নিশ্চয়ই ভুলোনি।
তৃণা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালো।
স্যার মনে মনে বললেন, এইসবের জন্যে ছেলেটাকে কতো মেরেছি। এতবড় চাকরি করে, এত বছর পরেও সে পরিবর্তন হলো না।
চলো তৃণা, যে গাছটিতে আমি, আমার আর তোমার নাম খোদাই করে লিখেছি, সেখানে যাই।
এতো বছরেও কি সেই খোদাই আছে?
থাকবে না কেনো? আমি চুরি দিয়ে খুব গভীর ভাবে লিখেছি। আমার হাত ও কেটেছে, দেখ সেই দাগ এখনো আছে।
এখন এসবের কি দরকার প্রজ্বল, আমাদের অনেক বয়স হয়েছে। তুমি এসব কথা বন্ধ কর। আমরা অন্য কথা বলতে পারি।
না, তৃণা না, অন্য কথা বলার জন্য এতগুলো বছর পর আমি এখানে আসিনি! আমি জানতে চাই, কেন আমার ভালোবাসা স্বীকার না করে তুমি সেদিন অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিয়েটা করছিলে?
আমি জানি, সেখানে তুমি বেশি দিন ছিলে না। ওখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর, আর শত চেষ্টা করেও তোমার কোন খোঁজ পাইনি। যদি এমনটাই করলে, তাহলে আমি এত বলার পরেও কেন আমার সাথে পালিয়ে যেতে রাজি হলে না? কি দোষ ছিল আমার? আমি ভালোবেসে তোমাকে সাথে নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলাম। আমাকে বারবার বলেছো, আমি ছোট এখনও পড়ালেখা করা শেষ হয়নি। কিভাবে চলব আমরা? কেবল সুখটাকেই দেখেছ বলে পাত্তা দাওনি, আমার কোনো আবেগের। কেনো তৃণা, সেই সুখ কি তুমি পেয়েছ?
দেখ, আজ কিসের অভাব আছে আমার!
কথা শোনাচ্ছ আমায় প্রজ্বল? তোমার প্রশ্নের উত্তর হলো সেদিন আমি বাবা, মায়ের কথা রাখতে বিয়ে করেছি। সুখ আমি পেয়েছি কি না জানি না।
তোমার কাছে ভালোবাসা হলো, পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে, সংসার পেতে একসাথে থাকা। সেদিন যদি তেমনটাই করতাম, তাহলে আজ তোমার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অহংকার থাকতো না।
আমার কাছে ভালোবাসা হলো সবকিছু থেকে আলাদা। ভালোবাসা থাকবে মনের গহীনে, সবার উপরে, যেখানে কোন বাধা থাকবে না, আঘাত লাগবে না, কাছে বা দূরে থাকার প্রশ্ন থাকবে না, বয়স, অর্থ কিছুই তুলনা হবে না। যখন ইচ্ছা ভালোবাসা নিয়ে কল্পনা করতে পারবো, ভাবতে পারবো, স্বপ্ন দেখতে পারবো। সে যত কাছেই থাকুক, আর যত দূরে থাকুক।
আমি তোমাদের দুজনকেই সমান ভালোবাসি। সারাজীবন ভালোবাসবো। কাছে থাকি বা না থাকি।
প্রজ্বল বিরক্ত হয়ে বলল, আবার দুজন?
দেখ প্রজ্বল, আমার নাম মাঝখানে, তোমাদের দুজনের নাম দুপাশে আজও খোদাই করে লেখা রয়েছে।
তিলক! তিলক! তিলক! যেদিন আমাদের দুজনের নাম লিখেছিলাম, সেদিন পেছন থেকে ও এসে ওর নামটা লিখেছিল।
তিলকের প্রতি তোমার এত রাগ কেন?
তুমি সবসময়ই আমাকে ইগনোর করে ওর সাথে কথা বলতে বলে।
তোমাকে ইগনোর করতাম না। তোমাকে বুঝালে তুমি বুঝতে না। এমনকি তিলকও তোমায় নিয়ে আমাকে বুঝাতো। আর তুমি ওর সাথে রাগ করছো?
বিয়ের পর ঐ বাড়ির মানুষের সাথে আমার কোন ভাবেই মিলছে না বলে পালিয়ে আসার পর থেকে আজ পর্যন্ত একমাত্র তিলক আমার পাশে ছিল।
তিলক আমায় আরো সময় নিতে বলেছিল, আমি বলেছি আর সম্ভব না। ডিভোর্স, দুই বাড়ি থেকে পালিয়ে বেড়ানো, আমার পড়াশোনা চালানো সবটা তিলকের জন্যই সম্ভব হয়েছে।
আমার শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নপূরণ এটাও তিলকের জন্য হয়েছে। যদিও এখন সে বড় বিজনেস করে। কিন্তু লেখা পড়ার সময় সে আমার জন্য পার্টটাইম জব করেছে।
কি বলছো, তুমি এসব তৃণা! এই বারো বছর তিলকের সাথে আমার যোগাযোগ ছিল। সে কখনো আমায় বলেনি এসব! সবটা ওর সাজানো, শুধু তোমাকে পাওয়ার জন্য।
মানে?
যেদিন ও আমাদের নামের সাথে ওর নাম লিখেছে, তারপর হাত কেটে জ্বর বাধিয়ে তিনদিন স্কুলে আসেনি, তখন ওদের বাড়িতে গিয়েছি, ওকে দেখতে। জ্বরের ঘোরে তোমাকে ভালোবাসার কথা ও আমায় বলেছিল। ও ভেবেছিল, কেউ জানতে পারবে না, তুমি জানলে আমার মতো ওকে ও ইগনোর করবে, তাই বন্ধু হয়ে সবসময়ই তোমার সাথে থাকতে চেয়েছিলো। কিন্তু আমি জানার পর আর ওকে সহ্য করতে পারি না।
তৃণা চুপ হয়ে আছে। এত বছরে ও কিছু জানতে পারলো না?
বিশ্বাস না হলে আমি তিলককে এখানে ডাকছি।
ডাকতে হবে না, ওর আজ এখানে আসার কথা।
কিছুক্ষণের মধ্যেই তিলক অধ্যক্ষ স্যারের সাথে দেখা করে তৃণার কাছে চলে এলো।
তৃণা তুমি ঠিক আছো তো?
ওয়েলকাম বন্ধু! এতটা হতাশ হসনে। তৃণা একেবারেই ঠিক আছে।
তুই এখানে প্রজ্বল?
কেন? তুই কি ভেবেছিস, আমি কিছুই বুঝতে পারবো না।
মানে?
মুহূর্তেই প্রজ্বল রেগে গিয়ে, তিলকের গলা ধরে বলল, বেঈমান। এই তোর বন্ধুত্ব? বারো বছর ধরে কক্সবাজারে থেকে তৃণাকে কতো সোর্সে খুঁজেছি আমি। নিজেকে কতোবার শেষ করতে চেয়েছি। আর তুই লুকিয়ে রেখেছিস আমার কাছ থেকে ওকে। ওকে পাওয়ার জন্য নোংরা খেলায় মেতেছিস তুই। তোর লুকানো প্রেমের গল্প তো আমি ক্লাস নাইনে জেনে গেছি। বল কেন করেছিস এমনটা।
তিলক কথা বলতে পারছিলো না। গলা বন্ধ হয়ে আসছিলো। তবুও বলল,
তৃণা বারণ করেছিল। কেউ জানতে পারলে ও আমার কোন সহায়তা নিবে না, তাই তোকে বলিনি।
তাই বলে তুই আমায় এত কষ্ট দিলি, শেষ করে ফেলবো, তোকে আজ আমি।
স্টপ ইট, প্রজ্বল? ছেড়ে দাও তিলককে। আমি ওর সাথে কথা বলব। তিলক আমায় ভালোবেসে এতগুলো বছর আমাকে আগলে রেখেছে, আমার পাশে থেকেছে। তুমি কি করেছ, সবসময়ই ভালোবাসার জন্য পাগলামি করে আমায় অসম্মান করে গেছ। আমার পালিয়ে বাঁচার জন্য শুধু তুমিই দায়ী! এখন নিজের বন্ধুকে মারছো?
আমার জন্য তুমি কি করেছ? বারবার কথাটা প্রজ্বলের কানে বাজছিল। তিলকের গলা ছেড়ে ধীর পায়ে গাড়িতে গিয়ে উঠলো সে।
তিলক তৃণাকে বলল, আমায় ভুল বুঝ না তৃণা। ভালোবাসার কথা বলে আমি কখনোই তোমার থেকে আলাদা হতে চাই না। সেটা আমি কখনোই মেনে নিতে পারতাম না। তুমি ভিতরে যাও। আমি কিছু দিন এখানে আছি।
তৃণা ভাবতে লাগলো, ওর বিয়ের দিন, কেন তিলকের চোখে পানি ছিল। তিলকের পরিবারের বিষয়ে একবার জানতে চাইলে সে এড়িয়ে গিয়েছিলো কেন? কেন, তিলক প্রায় সময়ই বলত, বন্ধুত্বের বাহিরে আমার সম্পর্কে কিছু জানলে ভুল বুঝবে না? ভেবে ভেবে তৃণা বারবার তিলকে ফোন করেছিল, কিন্তু ওর ফোন বন্ধ। চিন্তা ও হচ্ছে প্রজ্বল যেন আবার কি করে বসে। একটা সময় কতো সুন্দর ছিল তাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক। একসাথে হাঁটা, গল্প করা, খেলা, লাইব্রেরিতে পড়া, মধ্যাহ্ন বিরতিতে খাওয়া ইত্যাদি। শেষের দিকে এসে তিলকের সাথে আলাদা কথা বললে, প্রজ্বলের রেগে যাওয়া, প্রজ্বলের সাথে আলাদা কথা বললে, তিলকের কষ্ট পাওয়াটাই শেষ পর্যন্ত এসে সত্যি হলো।
ভাবতে ভাবতে রাত শেষ করে সকালে কলেজে এলো তৃণা। একটু পরেই প্রজ্বল এলো।
কি হলো তৃণা বসতে বলবে না? আজ ভালোবাসার দাবি নিয়ে আসিনি। তোমার কাছে যেমন দূরে থেকেও ভালোবাসা যায় সত্যি, তেমনি আমার কাছে ভালোবাসা ছাড়া একটা ছেলে আর মেয়ের মধ্যে বন্ধুত্ব হয় না, সত্যি।
তোমায় ভালোবাসে বলেই তিলক, সব সময়ই তোমার পাশে থেকেছে। আমি কেবল পাগলের মতো তোমাকে ভালোবেসে খুঁজেছি, কিন্তু খুঁজে বের করতে পারি না। তোমার স্বপ্ন পূরণের জন্য আমি যে কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছি, সেখান তোমার শূন্যতা সবসময়ই থেকে যাবে। এত বছর ধরে একটু একটু করে তোমার জন্য যে সুখ সঞ্চয় করেছি, তোমার ভালোবাসার কাছে তা খুবই নগণ্য। কেন যেন মনে হতো একসময় তুমি আমার কাছেই ফিরবে। সব স্বপ্নই আমার মিথ্যা। সত্যি বলতে তোমার জন্য তো আমি কিছুই করতে পারিনি। আজ তোমার জন্যে কিছু করতে চাই, ভালোবাসার অধিকার নিয়ে বলছি, বাধা দিবে না।
তিলক কোথায়, প্রজ্বল? ওকে ফোনে পাচ্ছি না কেন? কি করেছ তুমি ওর সাথে?
ঐ দেখ, কতো টান তোমার তিলকের জন্য! কখনো তো আমার জন্য সেটা হয়নি তোমার!
পরিস্থিতি তেমন হয়নি প্রজ্বল! এই বারো বছর তিলকের সাথেই আমার যোগাযোগ ছিল, তাই!
মুখে যতই বল না কেন, আগে না হোক এই বারো বছরে একটু একটু করে তুমি তিলকেই ভালোবেসেছ। তাই আমি চাই, ‘আমার ভালবাসা চিরকাল তার ভালোবাসার মানুষের সাথে ভালো থাকুক’। চিন্তা করো না, তিলক একদম ঠিক আছে, আমি ওর ফোন বন্ধ রাখতে বলেছি, তোমাকে যাচাই করার জন্য। কাল রাতে আমরা একসাথেই ছিলাম। কখনো কখনো তুমি ওর সাথে আমার কথা বলেছ সেটা তিলক বলেছে আমাকে। ঘৃণা করলেও ভুলে যাওনি এই অধমকে। তোমার জীবনের এই অঘটনের জন্য তুমি আমায় ঘৃণা করলেও আমি একটা চাইনি তৃণা। তিলক তোমাকে ভালোবাসে জানার পর আমি ভয় পেয়ে গিয়েছি। সবসময়ই মনে হতো তুমি আমাকে ইগনোর করে ওর হয়ে যাও কি না। তাই বারবার তোমার কাছে গিয়েছি। সেজন্যে তোমার বাবা যে এমন একটা সিদ্ধান্ত নিবে, আমি কখনো সেটা ভাবিনি।
তিলক আসার সাথে সাথে প্রজ্বল বলল, তুই জিতে গেলি বন্ধু। তিলক আর তৃণার হাত এক করে বলল, সারাজীবন তোরা একে অপরের পাশে থাকিস। তৃণার আঙুলে একটা রিং দিয়ে বলল, তোমাদের মাঝে আমাকে বাঁচিয়ে রেখ, সবসময়। চলি বলে, তাড়াতাড়ি নিচে নেমে গাড়ি চাড়লো প্রজ্বল।
তৃণা প্রজ্বলের যাওয়ার দিকে চেয়ে কাঁদতে লাগলো। তিলক রুমাল বের করে তৃণার চোখের জল মুছে দিল। গাড়ির লুকিং গ্লাসে সবটা দেখে অশ্রুমাখা হাসিতে ধীর গতিতে সামনে এগোলো প্রজ্বল।
তিলক থামাও ওকে। পাগলামির বসে নিজের বড় কোন ক্ষতি করে ফেলবে ও। যতই আমাদের হাত এক করুক, এত বছর পর ও এটা কিছুতেই মানতে পারবে না। ওর কিছু হলে কোনদিন আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না।
তিলক শান্ত কণ্ঠে তৃণাকে বলল, তোমার মন যা চায় তুমি তাই কর তৃণা। যাও প্রজ্বলের কাছে।
নিজের খেয়াল রেখ। সম্ভব হলে জীবনটাকে গুছিয়ে নিও বলে দৌড়ে প্রজ্বলের গাড়ির সামনে দাঁড়ালো তৃণা। হাত বাড়িয়ে বলল, তোমার সাথে পালাতে চাই, প্রজ্বল! নিবে না আমায়?
গাড়ির দরজা খুলে প্রজ্বল নামতে নিলে, তৃণা ভিতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে বলল, এই বারো বছরে একটু একটু করে আমি তোমার শূন্যতা হৃদয় থেকে অনুভব করেছি। নিশ্চয়ই কাল রাতে তিলক তোমায় বলেছে। তাকিয়ে না থেকে গাড়ি ছাড়। সকলে চলে আসার আগে পালাতে হবে তো! তৃণার হাত মুঠোতে নিয়ে গাড়ি ছাড়লো, প্রজ্বল।