প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
আমরা কুয়েত প্রবাসী বাংলাদেশ কমিউনিটি
আমরা প্রবাসী বাংলাদেশী। কুয়েতের তপ্ত মরু প্রান্তরে বসবাস করছি। এখানে একে অপরের খুব কাছের বন্ধু ও স্বজন। ‘বাংলাদেশ কমিউনিটি কুয়েত’ প্রায় তিন লক্ষ প্রবাসীর হৃদয়ের কথা বলে। কুয়েতে বসবাসকারী বাংলাদেশীদের কৃষ্টি- কালচার, বিনোদন, উৎসব ও প্রবাসীদের এই দেশের নিয়ম কানুন ও আইন শৃঙ্খলায় সচেতন করা এবং প্রবাসীদের সুখে-দুঃখে পাশে থাকা ও সহোযোগিতা করা ‘বাংলাদেশ কমিউনিটি’র মূল উদ্দেশ্য।
কুয়েতে বসবাসকারী বাংলাদেশীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত অনেক সামাজিক, সাংস্কৃতিক, স্বেচ্ছাসেবক, কবি- সাহিত্যিক-লেখক ও ক্রীড়া সংগঠন বিদ্যমান আছে। কুয়েত ব্যবসায়ীদের বৃহৎ সংগঠন 'বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল' বাংলাদেশী পণ্য বিপণনে ভাল ভূমিকা রাখছে। অঞ্চলভিত্তিক সামাজিক ও উন্নয়নমূলক সমাজসেবা সংগঠনগুলোও প্রবাসে বসে দেশের উন্নয়নে ভাল কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ কোরআন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কুয়েত ইসলামী আদর্শ বাস্তবায়নে এবং কোরআন প্রশিক্ষণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে প্রশংসিত হচ্ছে। এ সকল সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে সমন্বয় করে যাচ্ছে ‘বাংলাদেশ কমিউনিটি কুয়েত’। এখানে বিদ্যমান অন্য সংগঠনগুলো হচ্ছে : বাংলাদেশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন কুয়েত, বাংলাদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন কুয়েত, বাংলাদেশ সাংবাদিক ইউনিয়ন, ফ্যামিলি ফোরাম, বাংলাদেশ প্রেসক্লাব কুয়েত, ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া ফোরাম (আইএমএফ) ও জালালাবাদ সমাজকল্যাণ সংগঠন।
আমরা কুয়েতে বসবাসকারী বাংলাদেশী জনগণ কুয়েতের আইন কানুনের প্রতি যথেষ্ট সচেতন ও শ্রদ্ধাশীল। আমরা বাংলাদেশ কমিউনিটির মাধ্যমে কুয়েতে বাসবাসকারী বাংলাদেশীদের সহোযোগিতায় সর্বদা পাশে থাকি। প্রবাসীদের মৃতদেহ বাংলাদেশে প্রেরণে বাংলাদেশ কমিউনিটি সর্বাত্মক সহোযোগিতা করে থাকে। রেমিটেন্স প্রেরণকারী যোদ্ধা হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে কুয়েত অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আছে এবং বৈধ পথে রেমিটেন্স প্রেরণে বাংলাদেশ কমিউনিটি প্রবাসীদের সচেতন করে আসছে।
কুয়েতে বসবাসকারী বাংলাদেশীদের অনেক সংগঠন থাকা সত্ত্বেও এখানে বাংলাদেশী একটা স্কুল নেই। কুয়েতে জন্মগ্রহণকারী বাচ্চারা আমাদের দেশের মাতৃভাষায় শিক্ষা অর্জন করতে পারছে না এবং আমাদের কৃষ্টি- কালচার ও বাংলাদেশ সম্পর্কিত ভাষা জ্ঞান হতে বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা এ ব্যাপারে কুয়েতের মান্যবর রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে আমাদের সরকারকে কুয়েতে একটা বাংলাদেশী স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্যে জোর দাবি জানাচ্ছি, যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে একটা স্কুল প্রতিষ্ঠা করে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাংলা ভাষা শিক্ষা দিয়ে শক্তিশালী জাতি গঠনে ভূমিকা রাখতে পারি।
পিঠা পার্বন, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান,খেলাধুলা, কবিতা সন্ধ্যা, ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান, বার্ষিক বনভোজন, বসন্ত উৎসব ইত্যাদি উৎসব পালন ও আয়োজনে বাংলাদেশ কমিউনিটি কুয়েত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। গত কিছুদিন আগে আকস্মিক বন্যায় ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লার বন্যা দুর্গতদের সাহায্যার্থে বাংলাদেশ কমিউনিটি অর্থ দিয়ে বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছে।
সারা বছরব্যাপী বিভিন্ন খেলাধুলা আয়োজনেও বাংলাদেশ কমিউনিটি কুয়েত সদা তৎপর থাকে। আয়োজনের মধ্যে রয়েছে : স্বাধীনতা কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট, প্রবাসী ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা (আর্ট কম্পিটিশন), স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন, বাংলা নববর্ষ- এসো হে বৈশাখ ও পিঠা উৎসব, স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস প্রবন্ধ রচনা প্রতিযোগিতা।
এতো অর্জনের মধ্যেও প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে অনেক দুঃখ ও হতাশা বিরাজ করে। এর মধ্যে অন্যতম হলো--যে সকল প্রবাসী শ্রমিক ভাই লা-মানা ভিসায় সাত-আট লাখ টাকা খরচ করে কুয়েতে আসে এবং যখন তাদের আকামা নবায়ন হয় না বা আকামা নবায়ন দীর্ঘায়িত হয়, তখন তাদের মানসিক যন্ত্রণা বেড়ে যায়। এই দেশে আসার সময় যে ঋণ করে দেশ থেকে পাড়ি দিয়েছিল সেই ঋণ বা ধার করা টাকা ফেরৎ দেওয়ায় অপারগ হয়ে মানসিক চাপের কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে থাকে। ঐ সকল ভাইয়ের এই ধরনের চাপে যাতে পড়তে না হয় সে জন্যে আমাদের দেশের বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে আরো বেশি সচেতন থাকতে হবে, যাতে করে প্রবাসে আসার সময় অতিরিক্ত টাকা দিতে না হয় এবং প্রবাসে আসার জন্যে সহজ ও কম সময়ে তারা যাবতীয় কাজ-কর্ম ও মেডিক্যাল সম্পন্ন করতে পারে তার ব্যবস্থা করা।