রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

জামায়াতই কি তাহলে প্রকৃত দেশপ্রেমিকের দল?

রাকেশ রহমান
জামায়াতই কি তাহলে প্রকৃত দেশপ্রেমিকের দল?

কেউ চলে গেলেন পৃথিবী থেকে আবার কেউ জন্ম নিবেন বা ঐ দিনই জন্মলাভ করেছেন পৃথিবীতে-- এটাই স্বাভাবিক। তবে কারো মৃত্যু দিবসে কেউ জন্মাতে পারবে না বা ঐ দিন জন্মালে কেউ আনুষ্ঠানিক ভাবে বলতে পারবে না--এইটা তো স্বাভাবিক না বরং এটা মৌলবাদিতা বা একেই বলে মৌলবাদ। এখন জানার বিষয়, মৌলবাদটা আসলে কি যেই মৌলবাদের দোহাই বার বার চাপিয়ে দেওয়া হয় জামায়াত ও বিএনপি’র উপর সেটা? মৌলবাদ হচ্ছে কারো ওপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া বা বাহুবলে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। সততা হচ্ছে এইটাই যে, আমি আমার নিজেকে খুব ভালো চিনি, কোনটা আমার ভালো কোনটা আমার খারাপ তা আমি ভালোই জানি। কিন্তু আমার খারাপ দিকগুলো খুব সুন্দর করে অন্যের ওপর প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে চাপিয়ে দিয়ে আমার বিরোধী শক্তিকে দমন করার মাধ্যমই হচ্ছে এক ধরনের মৌলবাদ । সত্যি কথা বলতে, ভালো মানুষ কখনো জোর করে ভালো হয়ে সম্মান আদায় করে না--এটা পরীক্ষিত। মানুষ সম্মানিত হয় তার কর্মের মধ্য দিয়ে। কর্ম যেমন নির্ধারণ করবে মৃত্যুর পরে ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা কোথায় যাবে বেহেস্ত না দোযখে, ঠিক অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষও বিশ্বাস করে যে, কর্মের ফলেই পৃথিবীতে হয়তো সেই মানুষ আলোচনা ও স্মরণে থাকবে হাজার বছর। অথচ কর্ম যদি আমাদের সেই জায়গাগুলো করে দিতে না পারে, আমরা যতোই চেষ্টা করি না কেন বা যতোই বাহুবল প্রয়োগ করি না কেন, লাভ হবে না বরং ক্ষতি হবে, যা পূরণ করা সম্ভব নয়। যার বাস্তব উদাহরণ আমরা দেখতে পেরেছি আওয়ামী লীগের শাসনামলে। বহু ইতিহাস বিকৃতি ঘটিয়েও শেষমেষ থামাতে পারলো না ছাত্র , জনতা ও দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীদের কারণে ।

রাজনীতি হচ্ছে মানুষের জন্যে, নিজের জন্যে নয়। এই কথাগুলো যাদের বোধগম্য হতে কষ্ট হয় বা যেসব রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শুধুমাত্র নিজের জীবনে রাজনীতির ফসল প্রতিফলন করতে পেরেছেন বা করিয়েছেন, সেসব রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ইতিহাসের পাতায় ঘৃণিত এবং সময়ের পরিবর্তনে তারা আলোচিত থেকে সমালোচিত হয়ে রয়েছেন এবং হচ্ছেন। যার প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই আমাদের দেশ বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল গুলোর ভিতরে, যারা বিশেষ করে বার বার ক্ষমতায় বা সরকারে এসে দেশ পরিচালনা করছেন বা করছেন। অপর দিকে একটি রাজনৈতিক দল বাংলাদেশে রয়েছে, যারা বার বার ক্ষমা চেয়ে অথবা ভিন্ন কৌশলে ক্ষমতায় এলে বার বার ক্ষমতার অপব্যবহার করে দেশ ও জাতির সাথে বেঈমানি, অন্যায়, অত্যাচার জুলুম করে পেছন পথ অবলম্বন করে ক্ষমতায় জোর করে একনায়কতন্ত্র ব্যবস্থা করে। একনায়কতন্ত্র বা বাকশালী প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় যারা ব্যাকুল, তারাই হচ্ছে আওয়ামী লীগের স্বৈরাচার সরকার অর্থাৎ মৌলবাদী দল।

আমার রাজনীতি থেকে পাওয়ার কিছু নেই, শুধু সাধারণ জনগণের অন্তরের অন্তঃস্থলের কষ্টের সমাধানের চেষ্টায় নিজেকে সামিল করা ছাড়া। আমি সত্যি কথা বলি বা লিখি, এতে কারো পক্ষে গেলেও আমার করার বা সুবিধা নেওয়ার কিছু নেই। কারণ, নিজের চিন্তায় মগ্ন আমি নই। যেখান থেকে আমাকে বাধা দেওয়া হবে, সেখান থেকেই আমি সুন্দর সমাধানের মাধ্যমে জনগণের জন্যে ভালো কিছু করার চেষ্টা করেই যাবো ইনশা'ল্লাহ।

জামায়াতে ইসলামী কেন মৌলবাদের ঊর্ধ্বে তা সংক্ষেপে জেনে নেই। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দল। যেই দলের পরিকল্পনা সুদূর মেয়াদী। তাদের কর্মের বাস্তবতা যুগ থেকে যুগান্তরের ফসল। জামায়াতে ইসলামীদের মূল উদ্দেশ্য একটি, সেটা হচ্ছে শুধুমাত্র, কেবল মাত্র, একমাত্র ইসলামের মূল্যবোধের আলোকে ও দ্বীন প্রচারের মাধ্যমে অগ্রগতি। সব রাজনৈতিক দলের একটি দর্শন রয়েছে, তেমন জামায়াতে ইসলামীর দর্শন হচ্ছে ইসলামী দর্শন। যেই দর্শনে পরিপূর্ণতা রয়েছে ইসলামী বিধান। ইসলামী বিধানের বাইরে জামায়াতের কর্মীও হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। সেখানে শীর্ষ পর্যায়ের নেতা হওয়ার তো কোনো প্রশ্নই উঠে না। সত্যি বলতে, আমি আমার জানার ইচ্ছে থেকেই জেনেছি। তাই সত্যি কথা তুলে ধরতে আমি উপর আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পাই না। জামায়াতে ইসলামের একজন কর্মী সম্পর্কে আমরা জানি, তাহলে বুঝবো তেমন আদর্শবান ছাড়া জামায়াতের শীর্ষে উঠে আসা সম্ভব নয়। বাংলাদেশে বহু রাজনৈতিক দল রয়েছে, কিন্তু জামায়াতে ইসলামী তাদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেই কারণেই ধীর গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে তাদের লক্ষ্যপানে। বাংলাদেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক নেতা- কর্মী রাজনীতি করে পেশা হিসেবে আর জামায়াতের রাজনীতি করতে নিজেকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আসতে হয় এবং পাশাপাশি আত্মত্যাগ, উদারতা ও উচ্চ মানের মন মানসিকতা অত্যাবশক, অবশ্য ব্যতিক্রম কিছু চারিত্রিক বিকলাঙ্গ লোক ছাড়া।

জামায়াতে ইসলামী যদি মৌলবাদের দল হয়, তাহলে তারা এতোদিনে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থাকে উত্তপ্ত করে ফেলতো। বরং তা না করে জামায়াতে ইসলামীর নেতা- কর্মীরা নিজের জীবনের আত্মত্যাগের মাধ্যমে যে নিদর্শন বাংলাদেশের মাটিতে বপন করে যাচ্ছে, তা ভবিষ্যতে ঠিকই জেগে উঠবে সর্বত্র বিজয়ের মাধ্যমে। জামায়াতের নেতা- কর্মীরা গত ১৭ বছর ধরে যেভাবে নিশ্চুপ ভাবে নির্যাতিত, গুম খুন হয়েছে, তার কিঞ্চিৎ যদি বহিঃপ্রকাশ ঘটাতো, তাহলে আওয়ামী লীগের সরকার এতো দিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারতো না। বরং সেই বহিঃপ্রকাশ জামায়াতে ইসলামী দেখায়নি বা দেখাবেও না। কারণ জোর করার রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামী বিশ্বাসী নয়। জামায়াতের কর্মী থেকে শুরু করে শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত একটি শিক্ষা তারা দিয়ে থাকেন, সেটা হচ্ছে : যেমন মানুষের শরীর, যদি কারো হাত-পা বা অন্য কোনো অঙ্গ পতঙ্গে কেটে যায়, তাহলে আমরা সরাসরি মাথায় ব্যথা অনুভব করি, তেমনি জামায়াতের কোনো নেতা-কর্মীর কিছু হলে সরাসরি জামায়াতের শীর্ষ নেতারাও একই কষ্ট বা ব্যথা অনুভব করেন। এই অনুভূতির কারণেই জামায়াতের একতা কেউ ভাঙ্গতে পারবে না। শুধু তাই নয়, নির্যাতিত নেতা- কর্মীদের ক্ষয়ক্ষতির সাহায্য-সহযোগিতা জামায়াত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। জামায়াতের উদ্দেশ্য হচ্ছে, বাহুবলে নয়, বরং মন জয়ের মাধ্যমে দলকে সুসংগঠিত করে জাতির কাছে তুলে ধরা। তাদের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে দ্বীন প্রচারে মানুষের উপকার করে আত্মার সম্পর্ক গড়ে তোলা। জামায়াতের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার ছাড়া বাস্তবে তাদের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। আন্তরিকতা ছাড়া জামায়াতের ভেতরে কোনো রকম অহংকার স্বার্থপরতার বহিঃপ্রকাশ একেবারেই নগণ্য। জামায়াতের আরও একটি বড় আকর্ষণ হচ্ছে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা বাছাই করা।

আওয়ামীলীগের শুরুটা ভালোই ছিলো। কিন্তু বাস্তবতা খুবই কঠিন, যা স্বার্থপরতা ও মৌলবাদিতায় পরিপূর্ণ। দলের ভেতর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া একেবারেই নেই। দলটির প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে ক্ষমতায়ন। প্রথম থেকেই ৭১’এর পরবর্তী চার বছর সময়কার চিত্র পরিষ্কার করে দেয় আওয়ামীলীগের অবস্থান। ক্ষমতায় টিকে থাকতে যা করার প্রয়োজন এই দলটি তা-ই করে থাকে। যেমন– নীতিগতভাবে বহু দেশপ্রেমিক, মুক্তিযোদ্ধারা ও ৭১’এর মুক্তিযুদ্ধের সময়কার প্রভাবিক ব্যক্তিত্বরা দেশের স্বার্থে আওয়ামীলীগ বর্জন করতে বাধ্য হয়েছে। এমনকি আদর্শবান নেতা সিরাজ সিকদার সহ অসংখ্য দেশপ্রেমিকের জীবন দিতে হয়েছিল ৭১’এর পরবর্তী সময়ে। স্বাধীন দেশে পরাধীনতায় নিমজ্জিত হতে হয়েছিল গোটা জাতিকে। তাই ৭৫’এ শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হলে গোটা জাতি নফল নামাজ ও রোজা রেখে মুক্তির স্বাদ গ্রহণ করেছিলো। এই মুক্তির স্বাদের প্রতিফলন হিসেবেই বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হবার পর ফের আবার যখন ‘ কাদেরীয়া বাহিনী ‘ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল, তাদের অর্থাৎ কাদেরীয়া বাহিনীর সদস্যের প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হাতে হস্তান্তর করে প্রতিহত করেছিলো। শুধুমাত্র বাকশাল প্রতিষ্ঠা ও শেখ মুজিবুর রহমানের মৌলবাদিতার কারণেই ৭৫’এ জনপ্রিয়তাশূন্য অবস্থায় বিদায় নিতে হয়েছিল শেখ মুজিবুর রহমানকে। যার পর দীর্ঘ ২০ বছর পর আওয়ামীলীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতায় এসেই শুরু করে দিলো আবার তাদের পুরানো ঐতিহ্যের পথে চলা। যার মাশুল দিয়েছিল ২০০১-এর নির্বাচনে। এই নির্বাচনে ভরাডুবিতে আবার ভাবতে শুরু করে এবং সফল হয় ১/১১’এর নীল নকশায়। তারপরের কালো অধ্যায় দীর্ঘ ১৭ টি বছরে মানুষ বিন্দু বিন্দু করে বুঝতে পেরেছে আওয়ামী লীগের প্রকৃত উদাহরণ । বিএনপি ও জামায়াতের জোট ভাঙ্গার জন্যে মৌলবাদী ভূমিকায় পুরোপুরি সক্রিয় আওয়ামীলীগ সরকার। বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বকালের জঘন্য সময় মানুষ দীর্ঘ ১৭ টি বছর অতিবাহিত করে বুঝতে পেরেছে আওয়ামীলীগ আসলে কেমন দল ।আমি নিজ জীবনে যা দেখার দেখেছি খুব কাছ থেকে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারকে। এখন দেখা ও উপলব্ধি করার পালা দেশবাসীদের, যা যথারীতি দেখছে ও ফল ভোগ করছে।

আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও বাস্তব চিত্র বলে, আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার ভেতরে পরিপূর্ণ মৌলবাদের ও মৌলবাদিতার সম্পূর্ণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

লেখক : রাকেশ রহমান (কলামিস্ট ও যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ লেবার পার্টি)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়