শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

শহীদ জিয়াই প্রকৃত দেশপ্রেমিক

রাকেশ রহমান
শহীদ জিয়াই প্রকৃত দেশপ্রেমিক

জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশের প্রকৃত দেশপ্রেমিক, গণতন্ত্রের প্রবর্তক, একজন খাঁটি মুসলিম, যিনি সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানের রাহীম’ সংযোজন করেছিলেন এবং তাঁর উদ্যোগে বাংলাদেশের সাথে মুসলিম দেশগুলোর সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো। বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৮০ ভাগই মুসলমান। তাই তিনি চেষ্টা করেছিলেন মুসলিম বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে নিজের দেশের ও মুসলিম জাতির একত্বতা তৈরি করতে। তিনি নিজেও একজন নামাজী, খুবই সাধারণ, উদার ও অন্যায়ের প্রতিবাদী ছিলেন।

১৯৭১ সালে একজন স্বার্থপর নেতা যখন পুরো জাতির আবেগ নিয়ে খেলছিলেন, ঠিক তখনই অপরিচিত একজন মেজর একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক দেশ ও জাতির স্বার্থে নিজের জীবনের চিন্তা না করে নিজ উদ্যোগে, নিজ হাতে লিখে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন এবং নিজেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বলে ঘোষণা দিয়ে দেশ ও জাতিকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান।

আমার চিন্তা-চেতনায় সাবেক সফল রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান একজন মহান নেতা ছিলেন, কিন্তু রাজনীতিবিদ ছিলেন না। বাংলাদেশের উন্নয়নে ও মানব অধিকার রক্ষায় আমরা তাঁর মতো একজন মহান নেতা চাই, আর কোনো রাজনীতিবিদ চাই না।

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান একটি দেশপ্রেমের অনুপ্রেরণার নাম। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যেন বাংলাদেশের ইতিহাসে দেশপ্রেমের প্রতিফলনের একটি উদাহরণ।

দেশপ্রেম একদিনে হঠাৎ করে কারো ওপর ভর করে না। এই প্রেমের অনুভূতি ধীরে ধীরে জাগ্রত হয়। তবে এই দেশপ্রেম যখন কারো ওপর জাগ্রত হয় তখন তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে বহুভাবে। যেভাবে জিয়াউর রহমানের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিলো।

প্রথমত তিনি দেশের সেবা করতে অর্থাৎ শত্রুর হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে নাম লিখিয়েছিলেন তৎকালীন সেনাবাহিনীতে। যারা সেনাবাহিনীতে আছেন তারা ভালো বলতে পারবেন, যখন কেউ সুযোগ পায় সেনাবাহিনীতে যোগদানের, তখন তাদের একটি ফরমে মুচলেকা দিতে হয় এই মর্মে যে, যদি তারা যুদ্ধ ক্ষেত্রে শহীদ হন তাহলে তাদের লাশ ফেরত দিতে সেনাবাহিনী কর্তৃপক্ষ বাধ্য থাকবে না। অতএব শুরুতেই জীবনের শেষ অবস্থানের কথা মাথায় রেখে সেনাবাহিনীতে যোগদান করতে হয়। অর্থাৎ দেশপ্রেম ছাড়া কেউই সেনাবাহিনীকে পেশা হিসেবে বাছাই করে না। তারপর জিয়াউর রহমানের পরিবার তৎকালীন সময়ে আর্থিক ভাবে সচ্ছল ছিল। সুতরাং জিয়াউর রহমান জীবিকা নির্বাহের জন্যে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন নি বরং মধ্যপ্রাচ্য থেকে যুদ্ধ ফেরত তাঁর চাচা ক্যাপ্টেন ড. মোনতাজুর রহমানকে দেখে সামরিক বাহিনীর নিয়মণ্ডকানুন-শৃংঙ্খলা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার মহান আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে জিয়াউর রহমান নিজেকে নিয়ে সেনাবাহিনীর স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন।

দ্বিতীয়ত যথেষ্ট মেধাবী এই জিয়াউর রহমান হয়ে উঠেন প্রথম থেকেই তৎকালীন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মধ্যে আলোচিত একটি নাম। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীরা ঐ সময় বাংলাদেশী সেনাবাহিনীদেরকে অবহেলা ও হীনভাবে দেখতো। জিয়াউর রহমানকে এই অবহেলা নাড়া দিতো।

তিনি ভর্তি হন ১৯৫৩ সালে পাকিস্তানের কাকুল মিলিটারি একাডেমীতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে। ১৯৫৫ সালে তিনি সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশন প্রাপ্ত হন। সামরিক বাহিনীতে তিনি একজন সুদক্ষ প্যারাসুটার ও কমান্ডো হিসেবে সুপরিচিতি লাভ করেন এবং স্পেশাল ইন্টেলিজেন্স কোর্সে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। করাচীতে দুই বছর চাকুরি করার পর ১৯৫৭ সালে তিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে বদলি হয়ে আসেন। তিনি ১৯৫৯ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করেন।

১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে একটি কোম্পানির কমান্ডার হিসেবে খেমকারান সেক্টরে তিনি অসীম বীরত্বের পরিচয় দেন। যুদ্ধে দুর্র্ধষ সাহসিকতা প্রদর্শনের জন্যে যেসব কোম্পানি সর্বাধিক বীরত্বসূচক পুরস্কার লাভ করে, জিয়াউর রহমানের কোম্পানি ছিল এদের অন্যতম। এই যুদ্ধে বীরত্বের জন্যে পাকিস্তান সরকার জিয়াউর রহমানকে হিলাল-ই-জুরাত খেতাবে ভূষিত করে। এছাড়াও তিনি সেনাবাহিনীতে যোগদান করার পর থেকেই একের পর এক সুদক্ষ বীরত্বের পরিচয় দেন।

১৯৭১ সালের আগেই জিয়াউর রহমান হয়ে উঠেন পাক-সেনাদের কাছে সুপরিচিত এবং তাদের কাছে জিয়া একটি আতঙ্কের নামও হয়ে উঠে। কারণ তিনি ছিলেন বাংলাদেশী। আর সেই আতঙ্কের নাম জিয়াউর রহমানই এনে দিলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ সময়ের প্রয়োজনে ঘটেছিলো। অবশ্যই '৭১-এর যুদ্ধে বাংলার কিছু অপরিচিত মুখ শুধুমাত্র দেশপ্রেমের টানে এগিয়ে এসে যে ভূমিকা রেখেছিলেন, সেই ভূমিকা যাদের রাখার কথা ছিলো তারা রাখেননি।

১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ রাতে পাকহানাদার বাহিনী যদি বাংলাদেশীদের এপর হানা না দিতো, আর ১৯৭১-এর ২৬ শে মার্চ নিজ উদ্যোগে মেজর জিয়াউর রহমান যদি স্বাধীনতার ঘোষণা না দিতেন এবং পরবর্তীতে শেখ মুজিবর রহমানের দাবিগুলো যদি পাকিস্তান মেনে নিতো, তাহলে আর যাইহোক ঐ যাত্রায় বাংলাদেশ আর স্বাধীন হতো না।

শুধুমাত্র, কেবলমাত্র, একমাত্র উপরে আল্লাহর ভরসায় দেশের ক্লান্তিলগ্নে দেশ ও জাতির ভালোবাসায় ও দেশপ্রেমে পাগল হয়ে মেজর জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।

জিয়াউর রহমান শুধু স্বাধীনতার ঘোষণাই দেন নি বরং ভারতে পলায়ন না করে শত্রুর হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে দেশে থেকে যুদ্ধও করেছেন। এরপরও তাঁর ভূমিকা নিয়ে কেউ বা কারা যদি প্রশ্ন করেন, তাদেরকে সরাসরি রাজাকার বলতে দেরি হবার কোনো কারণ নেই।

একই ভাবে আবার বাংলাদেশে একনায়কতন্ত্রের পতন হওয়ার পর যখন ক্ষমতার পালা পরিবর্তন হচ্ছিলো দিনে রাতে, ঠিক সেই মুহূর্তে ৭ই নভেম্বরে সিপাহী জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে মেজর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসায় উঠে আসেন ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে।

দেশের স্বার্থে জাতির প্রয়োজনে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণায় বলেছিলেন ‘আমি রাষ্ট্রপতি মেজর জিয়াউর রহমান’ এটাই সত্যি আর এটা ছাড়া কোনো উপায়ও ছিলো না । কিন্তু জিয়াউর রহমান আবারো যখন দেশের চরম ক্রান্তিলগ্নে সিপাহী বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতায় এলেন, পারতেন সব মুছে ফেলে নিজের নাম বড়ো করে ইতিহাসের পাতায় লিখে দিয়ে যেতে, তা তিনি করেন নি। জীবনে কখনো বলেনও নি বরং সম্মান প্রদর্শন করেছেন সুবিধাবাদী নেতাদের।

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময়েই মূলত বাংলাদেশ স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের পূর্ণতা অর্জন করে উন্নতির দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। ১৯৭৬ সালের অক্টোবরে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সাক্ষাৎকার নিতে আসলেন এক সাংবাদিক কেভিন র‌্যাফাটি। কেভিন পুরো বাংলাদেশকে দেখলেন, যেই দেশটি মাত্র এক বছর আগে এক দুর্ভিক্ষে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলো। যেই দেশে অর্থনীতি বলতে কিছুই ছিল না। সবই চলতো বিদেশী সাহায্যে। যেই দেশে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার অর্থ হচ্ছে ডেথ স্কোয়াডের সামনে দাঁড়ানো। সেই দেশে এসে তিনি জিয়াউর রহমানের সাক্ষাৎকার নিয়ে জানলেন তাঁর কর্ম পরিকল্পনা। এবং দেশে ফিরে দি নিউ ইয়র্ক টাইমস্ পত্রিকায় প্রতিবেদন করলেন,

‘ইকোনোমিক হোপ ফর বাংলাদেশ’।

-মাত্র এক বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিস্ময়কর অগ্রগতি নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি বাংলাদেশকে 'এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন' আখ্যা দিয়ে বলেন, এই এক বছরে অর্থনৈতিক অগ্রগতির দিক থেকে দেশটি পেছনে ফেলে দিয়েছে জাপান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াকেও। সেই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান অন্য গরীব দেশগুলোর মতো সাহায্যের আশায় বসে থাকে না। তিনি বাংলাদেশের মানবসম্পদ কাজে লাগাতে চান। আরববিশ্বের দেশগুলোতে মানবসম্পদ রপ্তানি করার ব্যবস্থা করেছেন তিনি। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সৌদি আরবসহ বহু আরব দেশে মানবসম্পদ রপ্তানি শুরু করতে সফল হন। বাংলাদেশের মানুষ ভিক্ষা করে নয়, বরং কাজের বিনিময়ে অর্থ আদায় শুরু করে। এই প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ভর করে উন্নতির পথে এগিয়ে যেতে থাকে বাংলাদেশ'।

সাংবাদিক কেভিন র‌্যাফাটি রাজনৈতিক কোনো নেতা ছিলেন না। জিয়াউর রহমান নিজের দল জাতীয়তাবাদী দলকে গড়ে তুলেছিলেন জনপ্রিয় দল হিসেবে। যে জনপ্রিয়তা আজো রয়ে গেছে বাংলাদেশে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে সৎ, আদর্শবান, শিক্ষিত, মেধাবী, ধর্মভীরু, দেশপ্রেমিক হিসেবে জিয়াউর রহমান ছিলেন ও হয়ে থাকবেন অদ্বিতীয়।

আশা করি বর্তমানে ও ভবিষ্যতে বাংলাদেশের তরুণরা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অনুসারী হয়ে দেশ ও জাতিকে উন্নতি বয়ে এনে দিবে।

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশে ফিরিয়ে এনেছিলেন সেই সুবিধাবাদী নেতার কন্যাকে এবং আনার সময় বলেছিলেন নিজের জীবন দিয়ে হলেও সুবিধাবাদী নেতার কন্যার হেফাজত করবেন। সুযোগ করে দিয়েছিলেন ঐ নেতার কন্যাদের রাজনীতি করতে।

এ রকম উদার নেতা কি আর আমরা পাবো?

এর ফলে কী ঘটলো!যেই মাসে ঐ সুবিধাবাদী নেতার কন্যা দেশে এলেন সেই মাসেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হলে জিয়াউর রহমানের হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। জিয়াউর রহমান নিজেও জানতেন চট্টগ্রামে তার জীবনের হুমকি ছিল। তারপরও দেশ ও জাতির স্বার্থে তিনি সেখানে কোন্দল থামাতে যান, গিয়ে শহীদ হন। ৩০ শে মে তাঁকে হত্যা করা হয়।

তাঁর জানাজায় রেকর্ড পরিমাণ মানুষ সমাগত হয়েছিল। তাঁর ১৯ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই বলতে পারি, জিয়াউর রহমানই এখন পর্যন্ত একজন বাংলাদেশের প্রকৃত দেশপ্রেমিক রাষ্ট্রপতি ছিলেন।

রাকেশ রহমান : যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ লেবার পার্টি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়