বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

দেশপ্রেমের চর্চা

ইয়াকুব আলী
দেশপ্রেমের চর্চা

মুহম্মদ শহীদুল্লাহ মনে করতেন, ‘মাতা, মাতৃভাষা আর মাতৃভূমি প্রত্যেক মানুষের পরম শ্রদ্ধার বস্তু। প্রত্যেক মানুষ জন্ম নেয় পৃথিবীর একটা নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে, যা তার কাছে তার স্বদেশ। এই স্বদেশের সঙ্গেই গড়ে ওঠে তার গভীর সম্পর্ক।

স্বদেশের জন্য তার মনে জন্ম নেয় এক নিবিড় ভালোবাসা। স্বদেশের প্রকৃতি ও মানুষের প্রতি গভীর এই অনুরাগ ও বন্ধনের নামই স্বদেশপ্রেম। মা, মাতৃভূমি আর মাতৃভাষার প্রতি মানুষের যে চিরায়ত গভীর ভালোবাসা, তারই বিশেষ আবেগময় প্রকাশ ঘটে স্বদেশপ্রেমের মধ্যে।’

পঞ্চম শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বইয়ে দেশপ্রেমের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এভাবে--‘দেশকে ভালোবাসাই হলো দেশপ্রেম। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য দেশপ্রেম প্রয়োজন।’ সেখানে দেশপ্রেমিকের চারটি বৈশিষ্ট্যের কথাও বলা হয়েছে--১. দেশের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করা। ২. দেশের সব আইনকানুন মেনে চলা। ৩. দেশের সম্পদ রক্ষায় ভূমিকা পালন করা। ৪. রাষ্ট্রের নির্ধারিত শিক্ষা লাভ করা।

তাহলে দেখা যাচ্ছে নিজের দেশ এবং দেশের মানুষকে ভালোবাসাই হচ্ছে দেশপ্রেম। দেশপ্রেম মানুষের স্বভাবজাত গুণ। দেশের প্রতি গভীর মমত্ববোধই হলো দেশপ্রেমের উৎস।

দেশপ্রেমের সংজ্ঞা যাইহোক সেটার চর্চা জরুরি। আধুনিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে আমরা দেখি সবাই দেশপ্রেমিক। কিন্তু রূঢ় বাস্তবতা হচ্ছে ঠিক এর উল্টোটা। কারণ সবাই যদি দেশপ্রেমিক হতো, তাহলে তো আমাদের দেশটা সত্যিকার অর্থে কবেই ‘সোনার বাংলা’ হয়ে যেতো। বাস্তবে কিন্তু সেটা হচ্ছে না বরং দেশ অনেক ক্ষেত্রেই পিছিয়ে যাচ্ছে। দেশে ধনী দরিদ্রের ব্যবধান বেড়েই চলেছে। সময়ের সাথে সাথে বেড়েই চলেছে বেকারত্ব। বর্তমানের পৃথিবীতে জনসংখ্যা মোটেই বোঝা নয় বরং সম্পদ, কিন্তু আমাদের দেশ সেই জনসংখ্যার চাপেই জর্জরিত।

আমাদের বেশি দূরে যাওয়ার দরকার নেই। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বিশাল জনসংখ্যার দেশটির দিকে তাকালেই আমাদের দেশপ্রেমের ফাঁক ফোকরগুলো খালি চোখেই ধরা পড়ে। এমন না যে তাদের দেশে সমস্যা নেই, এমনকি অনেকক্ষেত্রেই তারা আমাদের থেকেও পিছিয়ে আছে। কিন্তু তাদের কাছ থেকে বেশকিছু বিষয় হাতেকলমে শেখার আছে আমাদের। দেশপ্রেমতো বইয়ের কথা, সেটাকে চালু রাখতে হয় দৈনন্দিন জীবনে প্রতিনিয়ত চর্চার মাধ্যমে। আজকে তেমনই কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা এই লেখার মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করবো। এটা কোনো গবেষণামূলক লেখা নয়। তাই এখানে আমি খুবই সতর্কভাবে তথ্যগুলোকে এড়িয়ে গেছি।

দেশপ্রেমের চর্চাটা আসলে তখনই আমাদের জীবনে প্রতিফলিত হয়, যখন আমরা নিজেকে দেশের মালিক মনে করি। ব্যক্তি হিসেবে আমি যখন অনুভব করবো আমার একটা ছোট কাজের মাধ্যমে দেশের মানুষ কতোটা লাভবান হবে বা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তখনই আমার মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত হবে। আমি তখন আমার কর্মের মধ্যে শুধুমাত্র নিজের ব্যক্তিস্বার্থকে প্রাধান্য না দিয়ে দেশকেও প্রাধান্য দেবো।

জাপানের প্রত্যেক মানুষ একে অপরকে তাদের পরিবারের সদস্যদের মতো শ্রদ্ধা করেন, ভালোবাসেন। আর পরিবারের সবার জন্য সবচেয়ে ভালোটাই সবাই দিতে চান। তাই সব ক্ষেত্রেই সব মানুষ তাদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেন সর্বোৎকৃষ্ট মানের কাজই করতে। এটাই তাদের লক্ষ্য।

আমাদের মধ্যে এই বিষয়টা নেই কেনো সেটা নিয়ে অনেক ভেবেছি। সেখান থেকেই কিছু বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করবো। শুরুতেই ভাষার প্রসঙ্গ।--প্রমথ চৌধুরী লিখেছিলেন, ‘ভাষা মানুষের মুখ থেকে কলমের মুখে আসে, উল্টোটা করতে গেলে মুখে শুধু কালি পড়ে’। আমাদের দেশে ভাষার তেমন ব্যবধান নেই, তবুও সামগ্রিকভাবে এটাকে দুইভাগে ভাগ করা যায়--কথ্য আর লেখ্য। লেখ্য ভাষাটার রূপ সবখানে একই, কিন্তু কথ্য ভাষার মধ্যে আবার আছে শহুরে এবং গ্রামীণ। এছাড়াও আছে বিভিন্ন জেলার আঞ্চলিক উচ্চারণ ও শব্দভাণ্ডার। এগুলো আসলে আমাদের হাজার বছরের মণিমাণিক্য। এগুলোর সংরক্ষণ জরুরি।

বাস্তবে এই মণিমাণিক্যগুলোই আবার আমাদের একতার অন্তরায়। কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা এখানে ভাগাভাগি করে নিচ্ছি। আমার জন্ম বাংলাদেশের প্রত্যন্ত চর এলাকায়। সেখান থেকে শহরতলী, তারপর জেলা শহর, সেখান থেকে রাজধানী হয়ে এখন প্রবাসে। গ্রামে যে ভাষায় কথা বলতাম, শহরতলীতে এসে সে ভাষায় কথা বললে সহজেই আমাকে আলাদা করা যেতো। আমার কথা শুনে যেহেতু আমি নদীর অন্যপাড় থেকে এসেছি, তাই ঠাট্টা করে বলতো ‘পাইরু’। এরপর জেলা শহরের কলেজে ভর্তি হবার পর শুনলাম সেখানে ভাষার উচ্চারণ প্রায় সবই বইয়ের মতন। আর তার মধ্যে ইংরেজির অনেক মিশেল। কথায় কথায় দু-একটা ইংরেজি শব্দ না বললেই বোঝা যেতো আমি মফস্বল থেকে এসেছি।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ভর্তি হলাম ঢাকাতে। সেখানে অবশ্য সবাই যে যার জেলার ভাষার স্বরেই কথা বলতো। এতে সহজেই বোঝা যেতো কে কোন্ এলাকার মানুষ। এরপর প্রবাসে এসে শুনলাম সবাই প্রায় বইয়ের ভাষায় কথা বলছে। এগুলো এই যে লোক দেখানো সভ্যতা এটা আমার মোটেও পছন্দ হয়নি। তাই আমি শুদ্ধ ভাষা বলতে পারলেও ইচ্ছে করেই আমাদের গ্রামের স্থানীয় ভাষায় কথা বলি। এটা শুনে অনেকেই বলে, কুষ্টিয়ার ভাষাতো এতোদিন শুদ্ধ বলেই জানতাম। এখন দেখি সেটা আসলে ঠিক না। এর উত্তরে আমি বলি, প্রত্যেক জেলাতেই একটা শহুরে আর একটা গ্রামীণ ভাষা আছে।

এতো বিস্তারিতভাবে বলছি, কারণ যারা শুদ্ধ ভাষায় কথা বলেন বা যারা শিক্ষিত তারাই কিন্তু দেশপ্রেমের সংজ্ঞাটা তৈরি করেছেন বা জানেন। তাই তারাই যেন শুধুমাত্র দেশপ্রেমিক, কিন্তু বাস্তবতা অন্য কথা বলে। দেশের সবচেয়ে বড়ো বড়ো পুকুরচুরিগুলো শিক্ষিত আমলা কিংবা রাজীনীতিবিদরাই করেন। কলমের খোঁচায় তিলকে তাল বানিয়ে দেশের টাকা হাতিয়ে নেন। গ্রামের মানুষ বা গরিব মানুষের কিন্তু এই চুরির সুযোগ নেই। একজন কৃষক কঠোর পরিশ্রম না করলে কখনোই কাঙ্ক্ষিত ফল পাবেন না। একজন শ্রমিক শ্রম না দিলে তার সেদিন আর খাবার জুটবে না। এটাই যখন বাস্তবতা, চুরি সেখানে অমূলক ধারণামাত্র।

এতো গেলো ভাষার ব্যবহার। এইবার আসি আমাদের সংস্কৃতির কাছে। সংস্কৃতি বলতে আমি মোটা দাগে এখানে গান এবং চলচ্চিত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবো। কেন থাকবো সেটাও লেখার শেষে খোলসা করার চেষ্টা করবো। দেশে থাকতে আমাদের সপ্তাহান্তের শুরুটা হতো বাংলাদেশের শিল্পীদের গান দিয়ে। প্রবাসেও এই চর্চাটা ধরে রেখেছি। একেবারে আব্দুল আলীম, আব্বাস উদ্দিন থেকে শুরু করে সৈয়দ আব্দুল হাদী, বশির আহমেদ, খুরশিদ আলম, সুবীর নন্দী, হ্যাপি আখন্দ, ফেরদৌস ওয়াহিদ, ফকির আলমগীর, গুরু আজম খান, সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা হয়ে বর্তমানের অর্নব, সঞ্জিব চৌধুরী, বাপ্পা মজুমদার, হাবিব, হৃদয় খান, কণা, মিলা, বালাম, জুলি, শিরিন, তৌসিফ, ইমরান, আরেফিন রুমি, প্রীতম হাসান, প্রতীক হাসানসহ আরো অনেক শিল্পীর গান শোনা হয়।

সমসাময়িক ব্যান্ডের মধ্যে ছিল বাংলা, লালন, শিরোনামহীন, চিরকুট, মেঘদল, তান, শূন্য। তবে ব্ল্যাক ব্যান্ডের গান শোনা হতো না, কারণ ওদের গানের কথা বুঝতাম না। পাশাপাশি তখনকার সময়ের প্রতিষ্ঠিত ব্যান্ডের গানগুলো তো ছিলোই। আইয়ুব বাচ্চু, জেমস, হাসান তখন আমাদের প্রজন্মের হার্টথ্রব। সম্প্রতি এই তালিকায় যোগ হয়েছে জেনারেশন জি'র র‌্যাপ সংগীত, যেটা বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস লিখলো নতুন করে। অর্ণব, সঞ্জীব চৌধুরী, বাপ্পা মজুমদার থেকে শুরু করে আসলে তখন বাংলা গানের একটা রূপান্তরের সময় চলছিল। ক্লাসিক্যাল কথার গানগুলোকে পরিবেশন করা হচ্ছিল আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের সুরে। এসব শিল্পীর গানের সিডি বসুন্ধরা শপিংমলের সাততলা থেকে কিনতাম, যাদের অনেকেই পরে হারিয়ে গেছেন। আর প্রবাসে এখন এগুলোই বেজে চলে মুঠোফোনের ইউটিউবে বা টেলিভিশনের পর্দায়।

এছাড়াও বাংলা ছায়াছবির নতুন এবং পুরোনো দিনের সব গানই শোনা হয়। বাংলা গানের ভাণ্ডার এতোই সমৃদ্ধ যে, সবটা এক জীবনে শুনে শেষ করা যাবে না। হাল আমলের ‘আইপিডিসি আমাদের গান’ এবং ‘কোক স্টুডিও’ বাংলা গানের ভুবনে একটা নতুন মাত্রা যোগ করলো। এগুলো নিয়ে অনেক আলোচনা, সমালোচনা আছে। আমি যেটা বুঝি সেটা হলো, কোনো কিছুকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সেটার চর্চা জরুরি। আর নতুন প্রজন্মের মননের প্রতিও খেয়াল রাখতে হবে।

প্রযুক্তিনির্ভর এই প্রজন্মকে কোনো কিছুর দোহাই দিয়ে কিছুই গেলানো যাবে না। কারণ পুরো বিশ্ব এখন তার হাতের মুঠোয়। আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, গানের আধুনিক সংস্করণ আসুক। এটার হাত ধরেই নতুন প্রজন্ম আদি গানটাকে খুঁজে নিবে। আর কোনটা টিকে থাকবে সেটা সময়ের হাতে ছেড়ে দিতে হবে। দেশে থাকতে এসব গান শুনতাম বলে আমার রুমমেটরা আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করতো। প্রবাসেও এমনই কিছু মানুষ আছেন।

নায়ক সালমান শাহ'র অকাল মৃত্যুর সাথে সাথে আমাদের চলচ্চিত্রও একসময় মরতে বসেছিল। সেখানে পড়েছিল অশ্লীলতার কালো থাবা। এখন সেটা নেই বললেই চলে। এখন কারিগরি দিক দিয়ে অনেক ভালো মানের ছবি তৈরি হচ্ছে। গল্প এবং অভিনয় নিয়ে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আমাদের শিক্ষিত মানুষেরা আবার সেগুলো দেখবেন না, কারণ এগুলো নাকি মানসম্মত হয় না। হোক বা না হোক আগে তো আপনাকে দেখতে হবে। তাহলে অন্তত লগ্নিকারীর টাকাটা উঠে আসলে সে পরের একটা ভালো ছবিতে সেই টাকাটা বিনিয়োগ করতে পারবেন। বাংলা ছবির জগতের শেষ নাম 'তুফান'। এটা নিয়েও কম সমালোচনা হয়নি। কিন্তু যারাই দেখেছেন তারাই স্বীকার করেছেন, বিশ্ব চলচ্চিত্রে প্রতিযোগিতা করার মতো একটা ছবি তৈরি হয়েছে।

আমাদের দেশে সবকিছুরই একটা স্ট্যান্ডার্ড আছে। আমরা কীভাবে কথা বলবো, কতোটুকু কথা বলবো, কোন্ বই পড়বো, কী পোশাক পরবো, কী গান শুনবো, কোন্ ছবি দেখবো সবকিছুরই একটা উদ্বায়ী মাপকাঠি আছে। আমি ঠিক জানি না এই মাপকাঠির উৎস কোথায়। আমাদের দেশে যখন প্রথম ব্যান্ড সংগীত এসেছিল তখন গেল গেল রব উঠেছিল। সংস্কৃতি রসাতলে চলে যাওয়ার উপক্রম হলো। এরপর হাবিব, ফুয়াদরা যখন আধুনিক বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার শুরু করলো, তখন আরেকবার গেল গেল রব উঠছিল। অবশ্য যারা গেল গেল রব তুলেছিলেন, তারা আর হয়তোবা নেই। কিন্তু নতুন প্রজন্মের গানগুলো রয়ে গেছে। আসলে কোনো কিছুর চর্চা না থাকলে সেটাকে টিকিয়ে রাখা যায় না। আর অধুনা সংগীত শুনেতো কিছু মানুষ কানে তালা দেয়। হয়তোবা মনে মনে দোয়া দরুদও পড়ে বাংলা সংস্কৃতিকে রক্ষার জন্যে।

ভাষার সাথে দেশপ্রেমের বিষয়টা আগেই বলেছি। এইবার সংগীত এবং চলচ্চিত্রের সাথের বিষয়টা বলি। আমাদের বাসায় যখন আগেকার দিনের শিল্পীদের পাশাপাশি আধুনিক সব শিল্পীর গান বাজে তখন আমাদের তিন বছরের ছেলেটা কেন জানি আধুনিক গানগুলো পছন্দ করে ফেললো। সময় সুযোগ পেলেই সে সেগুলোর সাথে নাচতেও শুরু করে দিতো। এখন তার বয়স নয় বছর। এখনও সে আধুনিক গানগুলো খুবই পছন্দ করে। প্রীতম হাসান তার পছন্দের তালিকার শীর্ষে আছে। শূন্য ব্যান্ডের বেহুলা গানটা একসময় অনেক শুনতো। কোক স্টুডিওর সব গানই তার শোনা। তুফান ছবির প্রথম গান উরাধুরা যখন মুক্তি পেলো, তখন সে আমাকে বললো, বাবা ইনিতো দেওরা গানের শিল্পী। আমি খুবই অবাক হয়েছিলাম।

ওকে নিয়ে ছবি দেখতে বসলেই আমি দেশপ্রেমের কোনো একটা বাংলা ছবি খুঁজি, কিন্তু আধুনিককালে তেমন কোনো ছবি তৈরি হয়নি। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ কিন্তু হরহামেশাই তাদের অগাধ দেশপ্রেম নিয়ে ছবি বানিয়ে যাচ্ছে। এসব ছবির প্রভাব চোখে দেখা যায় না, কিন্তু অনুভব করা যায়। এতো বিশাল আয়তনের অদ্ভুত মানচিত্রের একটা দেশ টিকে আছে শুধুমাত্র এই দেশপ্রেমের ওপর ভর করে। কারণ তারা তাদের সংগীতে এবং চলচ্চিত্রে নিয়মিত এটার চর্চা করে। আমাদের চলচ্চিত্রে তো এখনও খরা চলছে। আমাদের জাতীয় সংগীত একটু অন্যরকম করে গাইলেই আমরা আবারও গেল গেল রব তুলি। এখন পর্যন্ত ক্ষ ব্যান্ডের গাওয়া আমার সোনার বাংলা গানটা আমার মনকে সবচেয়ে বেশি ছুঁয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তাদেরকেও এটার জন্য কম খোঁটা সহ্য করতে হয়নি।

পরিশেষে একটা কথা বলেই লেখাটা শেষ করতে চাই। আমাদের ভাষা হোক উন্মুক্ত। আমাদের গান হোক নিরীক্ষাধর্মী। আমাদের চলচ্চিত্র বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতা করার দক্ষতা অর্জন করুক। যাতে করে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যেন কখনও পরিচয় সংকটে না ভোগে। একটা সময় বাংলাদেশের শিশুরা ভিন্ন ভাষার ডোরেমন কার্টুন দেখে সেই ভাষাটা শিখে ফেলেছিল।

সেটার একটা সহজ সমাধান আমার কাছে ছিলো। সেটা হলো, ডোরেমনকে বাংলায় ডাবিং করে দিলেই কিন্তু হয়ে যায়। পরবর্তীতে দেখলাম একটা টিভি চ্যানেল সেটা করেছে। শিশুদের মানস গঠনে ডোরেমন এখন পর্যন্ত বিশাল ভূমিকা রেখে চলেছে। আমি চাই ডোরেমনের মতো কার্টুন বাংলা ভাষাতেও নির্মাণ হোক। যেমন আমাদের ছোটবেলায় ছিল মিনা কার্টুন।

ভাষা, গান, চলচ্চিত্রের দেশপ্রেম আমাদের হৃদয়ের এবং মগজের গভীরে টোকা দেয়। যার ফলাফল আপাত দৃশ্যমান না হলেও সময়ের সাথে সাথে এটা টের পাওয়া যায়। তাই সব মাধ্যমে বাধাহীনভাবে দেশপ্রেমের চর্চা অব্যাহত থাকুক। তাহলে আমরা একসময় প্রকৃত দেশপ্রেমিক হয়ে উঠবো।

লেখক : অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়