প্রকাশ : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশীরা
প্রবাসী বাংলাদেশী তাদেরকে বলা হয়, যারা বাংলাদেশে জন্ম গ্রহণ করার পর অন্য কোনো দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। ভালো পরিবেশে বসবাস করা এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও পরিবারকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার আশায় বাংলাদেশীরা প্রবাসে পাড়ি জমান। প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বসবাস করেন, তাদের সংখ্যা প্রায় ১.২ মিলিয়ন। সৌদি আরব ছাড়াও আরব বিশ্বের আরো কয়েকটি দেশে যেমন : কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কাতার ও বাহরাইনে প্রচুর পরিমাণে বাংলাদেশী বসবাস করেন। সেখানে বাংলাদেশীদেরকে বিদেশি কর্মী হিসেবে ধরা হয়।
মধ্যপ্রাচ্য : সারাবিশ্বে যতজন প্রবাসী বাংলাদেশী বসবাস করেন, তাদের সিংহভাগই মধ্যপ্রাচ্যে বসবাস করেন। প্রায় ২৮ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশী মধ্যপ্রাচ্যে বসবাস করেন, যাদের অর্ধেক সৌদি আরবে এবং চার ভাগের এক ভাগ আরব আমিরাতে বসবাস করেন। বাংলাদেশীরা সাধারণত টেকনিশিয়ান, গৃহস্থালি কর্মী, শ্রমিক, ব্যবসায়ী এবং চাকরিজীবী হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যে যান। এছাড়া বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী ইঞ্জিনিয়ার এবং চিকিৎসক রয়েছেন।
সৌদি আরব : সৌদি আরবে ২০ লাখেরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশী সম্প্রদায় গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক যোগান দেয়। সৌদি আরবে ২০০৭ সালে ১৫ লাখ ভিসার মধ্যে প্রায় ২৩.৫০ শতাংশ ভিসা বাংলাদেশিদের দেওয়া হয়।
সংযুক্ত আরব আমিরাত : ২০১৩ সাল পর্যন্ত ১ মিলিয়নেরও বেশি বাংলাদেশি সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাস করেন।
কাতার : ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৪ লাখের বেশি বাংলাদেশী কাতারে বসবাস করে।
কুয়েত : জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো বিএমইটি তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৬ থেকে ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত ৫ লাখ ৫ হাজার ৪৭ জন বাংলাদেশি গেছেন কুয়েতে। এর মধ্যে ১৯৭৬ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত গড়ে প্রতি বছর ১০ হাজার লোক কুয়েতে গেছেন। ১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধে কুয়েতের পক্ষে অবস্থানের কারণে দেশটিতে বাংলাদেশের সুনাম বেড়ে যায়। এরপর ১৯৯১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত গড়ে ২৫ হাজার লোক দেশটিতে গেছেন। ২০০১ সালের পর তা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে এবং প্রতি বছর ৩০ থেকে ৪০ হাজার লোক কুয়েতে যেতে থাকেন। ২০০৭ সালের শেষে বাজারটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০০৮ সালে মাত্র ৩১৯ জন, ২০১০ সালে ৪৮ জন, ২০১১ সালে ২৯ জন, ২০১২ সালে মাত্র ২ জন ও ২০১৩ সালে ৬ জন কর্মী যান দেশটিতে। ২০১৪ সালের শেষ দিক থেকে আবারও কর্মী যাওয়া শুরু করে। গত বছর ১৭ হাজার ৪৭২ জন কর্মী গেছেন দেশটিতে। জনশক্তি রফতানিকারকরা বলছেন, ২০০৫ সালেও ৪৭ হাজার কর্মী গেছেন দেশটিতে। বাজার পুরোপুরি চালু হলে বছরে ৫০ হাজারেরও বেশি কর্মীর কর্মসংস্থান হতে পারে।
ওমান : ওমানে বাংলাদেশী প্রবাসী শ্রমিকদের সংখ্যা প্রায় ৪.৬%। পরিসংখ্যান বলছে, ওমানের মাটিতে বাংলাদেশী প্রবাসী শ্রমিকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি এবং সুনামেও তারা সবার শীর্ষে। ফলে অন্য যে কোনো দেশের শ্রমিকদের তুলনায় ওমানে বাংলাদেশী শ্রমিকদের রয়েছে বিশেষ চাহিদা।সবশেষ ‘ন্যাশনাল সেন্টার অ্যান্ড ইনফরমেশন’ (এন সি এস আই)-এর তথ্য মতে, ডিসেম্বর, ২০১৬-এর শেষের হিসাব অনুযায়ী ওমানে বাংলাদেশীদের সংখ্যা ৬ লাখ ৯৮ হাজার ৮৮১। ভারতীয়রা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, তাদের সংখ্যা ৬ লাখ ৮৯ হাজার ৬০০।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজারে এটি একটি বড় উদাহরণ হতে পারে। যেখানে অন্যান্য দেশে বাংলাদেশি কর্মীদের নিয়ে নানা নেতিবাচক ইমেজ বা ধারণা ছড়ানো হচ্ছে, সেখানে ওমানের প্রবাসী বাংলাদেশীরা নিজেদের ইতিবাচক ভাবমূর্তিতে অটল। তারা অন্যান্য অভিবাসী শ্রমিকদের তুলনায় বেশি পরিশ্রমী। আর এজন্যে তারা যথেষ্ট মূল্যায়নও পাচ্ছেন।
জনশক্তি বিশ্লেষকরা বলছেন, গত ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ এনএসআই- এর হিসাব অনুযায়ী ওমানে বেসরকারি খাতে ১৫ লাখ ৪ হাজার ৯৩৬ জন, সরকারি খাতে ৬০ হাজার ১৯৬ এবং গৃহকর্মী ও ড্রাইভার হিসেবে যাওয়া ২ লক্ষ ৮৩ হাজার ৪৩ জনসহ মোট কর্মী সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৪৮ হাজার ১৭৫-এ।এদিকে ওমানের সরকারি হিসাব অনুযায়ী ,গত বছরের জানুয়ারিতে মোট জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪,৫৬,৮,০০৩-এ। যেখানে এনএসআইয়ের হিসেব মতে, মোট প্রবাসীর সংখ্যা ২,০৯৪,৬১৬। অর্থাৎ ওমানের মোট জনসংখ্যার ৫৪.১ শতাংশই হচ্ছে প্রবাসী বাংলাদেশী।যুক্তরাজ্যের ২০০১ সালের আদমশুমারির তথ্যমতে, প্রায় ৩০০,০০০ জন ব্রিটিশ-বাংলাদেশি (৫০০,০০০ জন ২০০৯ আদম শুমারি) পূর্ব লন্ডন (টাওয়ার হ্যামলেট ও নিউহ্যাম)- এ বসবাস করে। যাদের বেশিরভাগই সিলেট বিভাগের অধিবাসী। তথ্যমতে, ব্রিটিশ বাংলাদেশীদের মধ্যে ৯৫% ই সিলেটের অধিবাসী।শুধুমাত্র যুক্তরাজ্য এবং মধ্যপ্রাচ্য নয়, যুক্তরাষ্ট্র বিশেষ করে নিউ ইয়র্ক শহর, নিউজার্সি ও অন্যান্য প্রদেশে বিপুল পরিমাণের প্রবাসী বাংলাদেশী বসবাস করেন। এছাড়াও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান এবং পশ্চিমা দেশগুলো যেমন, ইতালি, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াতেও প্রচুর প্রবাসী বাংলাদেশী বসবাস করেন।