প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
সমষ্টির কল্যাণের জন্যে নিজেকে ভালোবাসার দিকনির্দেশনা
সুন্দর পৃথিবী গড়তে এবং মানব জাতির প্রকৃত উন্নয়নের জন্যে, শুধু নিজের কল্যাণ নয়, বরং সামষ্টিক কল্যাণের প্রতিও আমাদের দায়িত্বশীল হতে হবে। অন্যের কথা ভাবা এবং সমাজের জন্যে কিছু করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, এটি করতে গিয়ে নিজেকে অবহেলা করা উচিত নয়। আমাদের মূল দায়িত্ব হলো, নিজেদের ভালো রাখা এবং তার পরেই সমাজের কল্যাণের দিকে মনোযোগ দেওয়া।
নিজের যত্ন নেওয়া এবং নিজেকে ভালো রাখা একটি সুস্থ সমাজের জন্যে অপরিহার্য। যদি আমরা নিজেরাই ভালো না থাকি, তাহলে অন্যকে সাহায্য করার ক্ষমতা আমাদের থাকবে না। নিজের প্রতি যত্নবান হওয়া মানে কেবল নিজের ভালোর দিকে মনোযোগ দেওয়া নয়, বরং এটি সমাজের জন্যেও প্রয়োজনীয়। কারণ, একজন সুখী ও মানসিকভাবে সুস্থ ব্যক্তি সমাজের উন্নয়নে বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
সবার মন জুগিয়ে চলার জন্যে নয়, তবে সহানুভূতি ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে আমাদের সম্পর্ক গড়ে তোলা উচিত। অন্যের কষ্ট ও সমস্যাগুলো বোঝা এবং তাদের পাশে থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যখন আমরা নিজের যত্ন নিতে শিখি, তখনই আমরা অন্যের প্রতি আরও সহানুভূতিশীল হতে পারি। আমাদের মনোবল ও শক্তি অন্যকে সাহায্য করতে এবং সমাজে পরিবর্তন আনতে কাজে লাগাতে পারি।
সুন্দর পৃথিবী গড়ার জন্যে আমাদের সামাজিক দায়িত্ব রয়েছে। এই দায়িত্ব পালনের জন্যে প্রয়োজন একে অপরের প্রতি যত্নবান হওয়া এবং সমাজের কল্যাণের দিকে নজর দেওয়া। শুধু নিজের ভালোর কথা ভাবা নয়, বরং সমাজের সকলের ভালোর কথা ভাবা উচিত। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত এমন একটি সমাজ গঠন করা যেখানে সবাই সুখী এবং নিরাপদে থাকে।
মিছে পিছুটান ঝেড়ে ফেলে নতুনভাবে জীবন শুরু করা আমাদের নিজেকে এবং সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। যখন আমরা নিজেদের বোঝা মুক্ত করি, তখনই আমরা নতুন সুযোগ ও সম্ভাবনার দিকে মনোনিবেশ করতে পারি। এটি আমাদের নিজের উন্নয়ন এবং সমাজের উন্নয়নে সহায়ক হয়।
নিজেকে ভালো রাখতে হলে এবং অন্যের প্রতি যত্নবান হতে হলে আমাদের কিছু প্রতিজ্ঞা নিতে হবে। আমাদের উচিত নিজেদের ভালোবাসা এবং অন্যকে ভালোবাসার মধ্যে একটি সুন্দর ভারসাম্য বজায় রাখা। আমাদের উচিত নিজের উন্নয়ন এবং সমাজের উন্নয়ন দুটোই সমানভাবে গুরুত্ব দেওয়া।
আমি সুইডেনে প্রায় ৪০ বছর ধরে বসবাস করছি। আমি অনেক আগেই বুঝতে পেরেছি যে, আমাদের বাংলাদেশী খাবারগুলো এখানে রোপণ করা সম্ভব। তবে এখানকার মানুষজন জানে না কীভাবে এগুলো রান্না করতে হয়। এতে করে এখানকার মানুষ আমাদের ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। আমি শুরু করলাম সুইডেনে বাংলাদেশী শাকসবজি চাষ করা। আমি শুধুমাত্র নিজেই চাষ করিনি, বরং কমিউনিটির অন্যদেরও শিখিয়েছি কিভাবে এই শাকসবজি চাষ করতে হয়। আমাদের নিজেদের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আমরা স্থানীয় সুপারমার্কেটে এই শাকসবজিগুলো সরবরাহ করতে শুরু করলাম।
এখন, আমাদের কমিউনিটি শুধুমাত্র বাংলাদেশী শাকসবজি পাচ্ছে না, বরং আমরা একে অপরের সাথে একাত্ম হয়ে কাজ করছি। এই প্রক্রিয়ায় আমরা শুধু নিজেরাই উন্নত হচ্ছি না, বরং আমাদের কমিউনিটিতে একটি দৃঢ় বন্ধন সৃষ্টি করছি। এটি একটি সুস্থ ও সমৃদ্ধ সমাজ গড়তে সাহায্য করছে। আমরা নিজেরা ভালো থাকছি এবং অন্যের ভালো রাখার দিকে মনোযোগ দিচ্ছি।
একটি সুন্দর পৃথিবী গড়তে হলে আমাদের নিজেদের ভালো রাখতে হবে এবং অন্যের কল্যাণের জন্যে কাজ করতে হবে। নিজের যত্ন এবং সমাজের প্রতি দায়িত্বশীলতা এই দুটি গুণাবলি একসঙ্গে চর্চা করতে হবে। আমরা যখন নিজেদের ভালো রাখার দিকে মনোযোগ দেব এবং সেই সাথে সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখব, তখনই আমরা একটি সুন্দর ও উন্নত পৃথিবী গড়তে পারব। আমাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং প্রচেষ্টা দেখিয়ে দেয় যে, আমরা যদি নিজের ভালো থাকার সাথে সাথে অন্যের ভালোর জন্যে কাজ করি, তাহলে সত্যিই সমাজে ইতিবাচক মূল্যবোধ তৈরি করতে পারি।
রহমান মৃধা : সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন।