রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

কিয়ার স্টারমারের লেবার পার্টির নতুন মন্ত্রিসভা

বঙ্গকন্যাদের ডাক পড়েনি

আজিজুল আম্বিয়া, লন্ডন ॥
কিয়ার স্টারমারের লেবার পার্টির নতুন মন্ত্রিসভা

৪ জুলাই বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ব্রিটেনের হাউজ অব পার্লামেন্টের সাধারণ নির্বাচন। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হলো এই ভোট উৎসব। নিরঙ্কুশ জয় পেল কিয়ার স্টারমারের লেবার পার্টি। ব্রিটেনের মানুষ পরিবর্তনের পক্ষেই রায় দিয়েছে। এই নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়ে সরকার গঠন করেছে লেবার পার্টি। ভরাডুবি হয়েছে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির। ঋষি সুনাক ছাড়া এই দলের হেভিওয়েট বা শক্তিশালী প্রার্থীদের মধ্যে বেশির ভাগই হেরে গেছেন। পরাজিত প্রার্থীর মধ্যে লেবার পার্টির সাবেক চার প্রধানমন্ত্রীও আছেন। এর মধ্যে বর্তমান উইটনি আসনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ও মেইডেনহেড আসনে থেরেসা মে হেরে গেছেন। দুটি আসনেই জয় পেয়েছেন লিব-ডেমের প্রার্থীরা। আর উক্সব্রিজ অ্যান্ড সাউথ রুইস্লিপ আসনে বরিস জনসন ও সাউথ ওয়েস্ট নরফোক আসনে লিজ ট্রাস লেবার পার্টির প্রার্থীদের কাছে হেরে গেছেন। কনজারভেটিভ পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতা প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্র্যান্ট শ্যাপস ও বিচারমন্ত্রী অ্যালেক্স চকও লেবার পার্টির প্রার্থীদের কাছে হেরেছেন। শিক্ষামন্ত্রী গিলিয়ান কিগান হেরেছেন লিবারেল ডেমোক্র্যাটস (লিব-ডেম) প্রার্থীর কাছে। আরেক জ্যেষ্ঠ নেতা পেনি মর্ডান্টও নির্বাচনে হেরে গেছেন। অভিবাসনমন্ত্রী টম পার্সগ্লোভ লেবার পার্টির প্রার্থীর কাছে হেরেছেন। ডানপন্থী রিফর্ম ইউকে পার্টির আলোচিত-সমালোচিত নেতা নাইজেল ফারাজ জয় পেয়েছেন। আটবারের চেষ্টায় তিনি প্রথমবারের মতো পার্লামেন্টে যাচ্ছেন। লেবার পার্টির সাবেক নেতা জেরেমি করবিন জয় পেয়েছেন। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়েন। এসবের মধ্যে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনে চার বাঙালি কন্যার বারবার বিজয়ে ব্রিটিশ বাঙালিরা গর্বিত। এখানে প্রায় ১০ লাখ বাঙালি রয়েছেন। তারা এই জয়ের জন্য আনন্দ করছেন। এই ব্রিটিশ বাংলাদেশি আবারো বিজয়ী হয়ে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। বিজয়ীদের অন্যতম হলেন রুশনারা আলী, যিনি পঞ্চমবারের মতো এবার বিজয়ী হলেন। লেবার পার্টি থেকে ১৫ হাজার ৮৯৬ ভোট পেয়ে তিনি এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুশনারা আলী টাওয়ার হ্যামলেটসের বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসন থেকে জয়লাভ করেছেন। তিনিই যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি। লেবার পার্টির মনোনয়নে হ্যাম্পস্টেড এবং হাইগেট আসন থেকে বঙ্গবন্ধুর নাতনি টিউলিপ সিদ্দিক চতুর্থবারের মতো বিজয়ী হন তাঁর নিকটতম প্রার্থীকে বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে। তিনি মোট ভোট পেয়েছেন ২৩ হাজার ৪৩২টি। ড. রুপা হক চতুর্থবারের মতো বিজয়ী হয়েছেন। লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল এবং অ্যাক্টন আসন থেকে লেবার পার্টির মনোনয়ন নিয়ে ২২ হাজার ৩৪০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন তিনি। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির জেমস উইন্ডসর-ক্লাইভ পেয়েছেন ৮ হাজার ৩৪৫টি ভোট। লেবার পার্টির মনোনয়নে আপসানা বেগম পপলার ও লাইমহাউস আসন থেকে বিপুল ভোট পেয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে বিজয়ী হয়েছেন। তিনি মোট ভোট পেয়েছেন ১৮ হাজার ৫৩৫টি। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রিন পার্টির নাথালি সিলভিয়া বিনফাইট পেয়েছেন ৫ হাজার ৯৭৫ ভোট। রুশনারা আলী ও টিউলিপ সিদ্দিক এবং রুপা হক পূর্বে ছায়া মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ কারণে তাঁদের অভিজ্ঞতার কমতি নেই। এবার লেবার পার্টির সরকার গঠনে তাঁদের ক্যাবিনেটে মন্ত্রী হওয়ার জন্যে ডাক পড়তে পারে এমনটি অনেকেই ভেবেছিলেন। আর এটি হলে আরেকটি নতুন ইতিহাস তৈরি হতো ব্রিটেনে বাঙালিদের।

ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনে লেবার পার্টির জয়ের পর রাজা চার্লস আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছেন দলটির নেতা স্যার কিয়ার স্টারমারকে। শুক্রবার ৫ জুলাই প্রধানমন্ত্রী ও সরকার গঠনের দায়িত্ব পাওয়ার পর নতুন মন্ত্রিসভা গঠন শুরু করেন তিনি। স্কাই নিউজের খবর অনুসারে, নতুন মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়া মন্ত্রীদের মধ্যে অ্যাঞ্জেলা রায়নার ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী, র‌্যাচেল রিভস চ্যান্সেলর, জন হ্যালি প্রতিরক্ষামন্ত্রী, ডেভিড ল্যামি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ইভেট কুপার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, জনাথন রেনল্ডস বাণিজ্যমন্ত্রী, ব্রিজেপ ফিলিপসন শিক্ষামন্ত্রী, ওয়েস স্ট্রিটিং স্বাস্থ্যমন্ত্রী, লিজ কেন্ডাল কর্মসংস্থান ও পেনশন মন্ত্রী, পিটার কাইল বিজ্ঞানমন্ত্রী, লুইস হেই পরিবহনমন্ত্রী, শাবানা মাহমুদ আইনমন্ত্রী ও এড মিলিব্যান্ড জ্বালানি মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। অনেক প্রত্যাশা সত্ত্বেও লেবার পার্টির নতুন মন্ত্রিসভায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত চার এমপির কাউকে ডাকা হয়নি। তাই বাঙালিরা খুশি হতে পারেননি।

ব্রিটেনজুড়ে এবার সর্বোচ্চ সংখ্যক ৩৩ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিভিন্ন আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গত নির্বাচনে বিজয়ী সেই চারজন ছাড়া আর কেউ জয়ী হতে পারেননি। ব্যালটে প্রমাণ হয়েছে, এবারের নির্বাচনে নতুন কোনো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী এমপি হতে ব্যর্থ হয়েছেন।

বাঙালি কমিউনিটিতে এবার আশা ছিল, লেবার পার্টির মন্ত্রিসভায় প্রথমবারের মতো অন্তত একজন বাংলাদেশি ঠাঁই পেতে পারেন। তবে এই বাঙালি কন্যাদের ক্যাবিনেটে জায়গা না হলেও সংসদীয় কমিটিতে থাকবেন বলে ধারণা করছেন অনেকে।

এবার হাউজ অব কমন্সে প্রবেশের জন্যে লড়ছিলেন রেকর্ড সংখ্যক বাঙালি। তাঁরা বিভিন্ন দল থেকে এ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানা যায়, ৩৩ জন বাঙালি প্রার্থী ব্রিটিশ এমপি হতে ভোট চেয়েছিলেন। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ থেকে ২ জন, স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি থেকে একজন, লিবডেম থেকে একজন, লেবার পার্টি থেকে ৮জন এবং স্বতন্ত্র হিসেবে ৮জন নির্বাচন করছিলেন। অন্য ৫জন নির্বাচন করছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টি অব ব্রিটেন, রিফর্ম ইউকে এবং গ্রিন পার্টি থেকে।

এদিকে সান নিউজ আয়োজিত এক বিতর্কে যুক্তরাজ্যে অবৈধভাবে প্রবেশ করা অধিবাসীদের নিয়ে কথা বলার সময় বাংলাদেশকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে লেবার পার্টির প্রধান কিয়ার স্টারমার বলেছিলেন, তিনি ক্ষমতায় আসলে এসব মানুষদের ফেরত পাঠাবেন দেশে। তাঁর এই বক্তব্যে কেউ কেউ মনে করেন একটি জাতিকে আঘাত করা হয়েছে। তাই সাথে সাথে তাঁর দলের এমপি রুশনারা আলী এবং আপসানা বেগমসহ অনেকে প্রতিবাদ করেন। পত্রিকায়ও এরকম শিরোনাম আসে 'বাংলাদেশী অভিবাসী নিয়ে লেবার নেতার কাণ্ডজ্ঞানহীন মন্তব্য। সব মিলিয়ে লেবার পার্টি বেকায়দায় পড়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশিদের মনে প্রশ্ন জাগে, ব্রিটেনে অনেক জাতির মানুষ থাকা সত্ত্বেও তিনি কেন বাংলাদেশিদের কথা বললেন। এ কারণে রুশনারা আলী বলেন, তিনি ভুল করেছেন, আপসানা বেগম বলেন, আমি কোনোদিন আমার দেশের মাইগ্রান্টের বিরুদ্ধে যাব না। তিনি এর তীব্র প্রতিবাদ করেন। এদিকে বিষয়টি কিয়ার স্টারমার যখন জানতে পারেন, তখন অন্য একটি সাক্ষাৎকারে বিষয়টি পরিষ্কার করে বলেন বাংলাদেশের সাথে তাঁর দলের মজবুত সম্পর্ক রয়েছে। তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশিদের মর্মাহত করতে চাইনি। আমরা কাজ করছি বাংলাদেশী কমিউনিটির সাথে এবং তিনি জানান, তাঁর এ রকম কোনো ইচ্ছা নেই। তিনি জানান, তাঁর এ কথার উদ্দেশ্য বাংলাদেশি ছিল না। অন্যান্য দেশের অধিবাসীদের কথা বলেছেন, যারা অবৈধভাবে এ দেশে প্রবেশ করেছেন। এরপর থেকে আবার মানুষের সমর্থন লেবার পার্টির দিকে ফিরে আসে। মূল ধারার রাজনীতিতে বাঙালিদের সম্পৃক্ততা তুলনামূলকভাবে কম বলা যায়। কিন্তু দিনদিন এই সংখ্যা বাড়ছে। অনুমান করা হয়, প্রায় ১০ লাখের কাছাকাছি বাংলাদেশি ব্রিটেনে বিভিন্ন কারণে বসবাস করছেন। এবার ৩৩ জন বাঙালি প্রার্থী লড়েছেন এই ভোট যুদ্ধে। তাঁদের মধ্যে লেবার পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন নুরুল হক আলী (গর্ডন এবং বুকান), রুমি চৌধুরী (উইথাম), রুফিয়া আশরাফ (দক্ষিণ নর্থহ্যাম্পটনশায়ার), নাজমুল হোসাইন (ব্রিগ এবং ইমিংহাম), রুশনারা আলী (বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো), আপসানা বেগম (পপলার ও লাইমহাউস), ড. রূপা হক (ইলিং সেন্ট্রাল এবং অ্যাক্টন) এবং টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক (হ্যাম্পস্টেড এবং হাইগেট)। লিবড্যাম থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন রাবিনা খান (বেথনাল গ্রিন এবং স্টেপনি)। একই আসন থেকে গাজা ইস্যুকে সামনে নিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করেছিলেন আজমল মাসরুর, ব্যারিস্টার শাম উদ্দিন ও মোঃ সুমন আহমেদ। অন্যদিকে পপলার লাইম হাউসে বর্তমান লেবার পার্টির এমপি আপসানা বেগমকে স্বতন্ত্র হিসেবে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন তাঁরই একসময়ের ঘনিষ্ঠজন এহতাশামুল হক। আপসানা বেগম বাঙালি ইস্যু নিয়ে সব সময় সরব থাকেন। বর্তমান লেবার পার্টির লিডার, সব জরিপে যিনি ভবিষ্যৎ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী সেই স্যার কিয়ার স্টারমারকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন ব্রিটিশ বাংলাদেশি ওয়াইস ইসলাম (হলবর্ন এবং সেন্ট প্যানক্রাস)। এখানে গাজা ইস্যু নিয়ে কথা বলে ভোটারদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা ছিল তাঁর। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন আতিক রহমান (টটেনহ্যাম) ও সৈয়দ শামীম আহসান (ইলফোর্ড দক্ষিণ), স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি-এসএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন নাজ আনিস-মিয়াহ (ডানফার্মলাইন এবং ডলার)।বাংলাদেশি অধ্যুষিত বো-স্ট্রাটফোর্ড আসনে ব্যারিস্টার ওমর ফারুক ও হালিমা খাতুন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। এ ছাড়া ইলফোর্ড সাউথ থেকে গ্রিন পার্টির মনোনয়ন পেয়েছিলেন সৈয়দ সিদ্দিকী। একই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন নূর জাহান বেগম। একই আসনে জর্জ গ্যালওয়ের ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে নির্বাচন করেছিলেন গোলাম টিপু। একই পার্টি থেকে হ্যাকনি সাউথ শোরডিচে মোহাম্মদ শাহেদ হোসেন নির্বাচন করেছিলেন। এছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে বেডফোর্ডে নির্বাচন করেছিলেন প্রিন্স সাদিক চৌধুরী। এর আগে তিনি লেবার পার্টি থেকে নির্বাচন করেছিলেন ২০১৫ সালের নির্বাচনে। হঠাৎ করে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে চরম রক্ষণশীল দল রিফর্ম ইউকে থেকে ইলফোর্ড সাউথ থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন রাজ ফরহাদ। ওল্ডহাম ওয়েস্ট, চ্যাডারটন এবং রয়স্টন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন রাজা মিয়া, স্ট্রাটফোর্ড এবং বো থেকে নিজাম আলী (স্বতন্ত্র), বেক্সহিল এবং বেটল থেকে আবুল কালাম আজাদ (স্বতন্ত্র), ফয়সাল কবির (ওয়ার্কার্স পার্টি), আলট্রিনচাম এবং সেল ওয়েস্ট থেকে সৈয়দ সামসুজ্জামান শামস (গ্রীন পার্টি), ওল্ডহ্যাম ওয়েস্ট, চ্যাডারটন এবং রয়স্টন থেকে মোহাম্মদ বিলাল (ওয়ার্কার্স পার্টি), ম্যানচেস্টার রুশোলমে থেকে হাবিব রহমান (স্বতন্ত্র), নিউক্যাসল সেন্ট্রাল এন্ড ওয়েস্ট থেকে মমতাজ খানম (সমাজবাদী, ফোকস্টোন)। বেশির ভাগ স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচন করেছিলেন মূলত গাজা ইস্যুতে মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকাকে সমালোচনা করে। এতে বেশ চাপে ছিলেন চারবারের নির্বাচিত এমপি রুশনারা আলী। তিনি গাজায় যুদ্ধ বন্ধের ইস্যুতে পার্লামেন্টে ভোটদান থেকে বিরত থাকায় তার এলাকার ভোটাররা বেশ নাখোশ ছিলেন। এ কারণে এবার তিনি খুব কম ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেন। রুশনারা আলীর ক্যাম্পেইনে তিনি বলেছিলেন, ২০০০ সালে প্রথম ব্রিটিশ বাঙালি নির্বাচিত সাংসদ হিসেবে আমি গর্বিত। আমার সংসদীয় কর্মজীবনে আমি যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধন জোরদার করার জন্যে কাজ করেছি। আমি বাংলাদেশ সর্বদলীয় সংসদীয় গ্রুপের সভাপতিত্ব করেছি এবং বাংলাদেশের জন্যে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য দূত হিসেবে কাজ করেছি।

জানা যায়, বিগত দিনে যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্সে সংখ্যালঘু জাতিগত পটভূমি থেকে আনুমানিক ৬৫ জন সংসদ সদস্য (এমপি) ছিলেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক এশিয়ান বংশোদ্ভূত। এই পরিসংখ্যানে লেবার এবং কনজারভেটিভ উভয় দলের এমপিরাই রয়েছেন। এঁদের একজন দাদাভাই নওরোজি (১৮২৫-১৯১৭)। তিনি ছিলেন প্রথম ভারতীয় যিনি যুক্তরাজ্যের সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি ১৮৯২ সালে সেন্ট্রাল ফিনসবারি নির্বাচনী এলাকায় লিবারেল ডেমোক্রেট পার্টির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। এই ধাবাহিকতায় যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে এশিয়ান এমপিদের প্রতিনিধিত্ব বিশেষভাবে কয়েক বছর ধরে বেড়েছে। এর মধ্যে ভারতীয়, পাকিস্তানি এবং বাংলাদেশি এমপিরা উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে ৪ জন বাংলাদেশি এমপি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন হাউজ অব কমন্সে। যুক্তরাজ্যে ব্রিটিশ বাংলাদেশি জনসংখ্যার আকারের তুলনায় এই প্রতিনিধিত্বকে খুব বড় করে দেখতে অনেকেই নারাজ। প্রথম থেকেই বিভিন্ন সেক্টরে বাঙালিরা কাজ করে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে যাচ্ছেন। সেই তুলনায় বাঙালিরা তেমন সুযোগ-সুবিধা লাভ করতে পারছেন না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ১৯৭০ এবং ১৯৮০-এর দশকে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে যুক্তরাজ্যের মূলধারার রাজনীতিতে ব্রিটিশ বাংলাদেশীদের প্রথম দিকের উল্লেখযোগ্য সম্পৃক্ততা শুরু হয়। এখন তারা অনেকটা সফল হয়েছেন। ব্রিটিশ বাংলাদেশীদের প্রথম উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক অগ্রগতি হয় স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে। প্রথমে ব্রিটিশ বাংলাদেশী স্থানীয় কাউন্সিল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। বিশেষ করে পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেট হলো বাঙালিদের এলাকা। এখানকার প্রায় ৯৫ শতাংশ সিলেটি। এই এলাকার রাজনীতিবিদরা তাদের সম্প্রদায়ের সমস্যা এবং সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করেন। শিক্ষা এবং বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনে তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তার প্রমাণ আলতাফ আলীর মৃত্যুর পর এখানকার বাঙালিরা আন্দোলন করার কারণেই আজকের এই বাংলা টাউন আর ভাষার শহীদ মিনার বাংলাদেশের কথা বলছে।

যুক্তরাজ্যে প্রথম বাংলাদেশী ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য (এমপি) হলেন রুশনারা আলী। তিনি ২০১০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো-এর জন্যে লেবার এমপি নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস রচনা করেছিলেন। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের সিলেট জেলার বিশ্বনাথে জন্মগ্রহণকারী মিসেস আলী সাত বছর বয়সে তাঁর পরিবারের সাথে যুক্তরাজ্যে চলে আসেন। তিনি পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস-এ বড় হয়েছেন।

রুশনারা আলীর সাফল্যের পর অন্যান্য ব্রিটিশ বাংলাদেশীও ব্রিটিশ রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছেন। হ্যাম্পস্টেড এবং কিলবার্নের লেবার এমপি হিসেবে ২০১৫ সালে নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধুর মেয়ে শেখ রেহানার কন্যা টিউলিপ সিদ্দিক এবং একই বছর ইলিং সেন্ট্রাল ও অ্যাক্টনের লেবার এমপি হিসেবে নির্বাচিত রুপা হক। উভয় সংসদ সদস্যই সামাজিক ন্যায়বিচার, সমতা এবং সম্প্রদায়ের সংহতির জন্যে সক্রিয় ছিলেন। এছাড়া আপসানা বেগম ২০১৯ সালে পপলার ও লাইমহাউস আসনের এমপি নির্বাচিত হন। এই এমপিদের বাইরে এখন ফয়সল হোসেন চৌধুরী এমবিই ২০২১ সালের মে থেকে লোথিয়ান অঞ্চলের স্কটিশ সংসদের (এমএসপি) সদস্য হন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্রিটিশ বাংলাদেশী এই রাজনীতিবিদরা যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে তাঁদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে বিশেষ স্থান দখল করে রয়েছেন। বলা যায়, সংসদীয় কমিটি এবং ছায়া মন্ত্রিসভার ভূমিকাসহ বিভিন্ন পদে তাঁরা কাজ করছেন। বিভিন্ন কারণে এবারের নির্বাচন ছিল বাঙালিদের জন্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। বাঙালিদের জন্যে সবচেয়ে বড় আনন্দের বিষয় হতো যদি এই দেশে কোনো একজন বাঙালি মন্ত্রী হওয়ার নতুন ইতিহাস গড়তে পারতেন। এই স্বপ্ন আগামীতে বাস্তবায়ন হবে এই আশা নিয়ে বাঙালিরা কাজ করবেন বলে সুশীলরা মনে করেন। আগামীতে হয়তো বাঙালিরা এই দেশের বড় কোনো পদে আসীন হবেন- এখন সেই প্রত্যাশা করছে বাঙালিরা।

ড. আজিজুল আম্বিয়া : কলাম লেখক ও গবেষক।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়