প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
নিখোঁজের সাড়ে ৪ বছরেও সন্ধান মিলেনি মালয়েশিয়াপ্রবাসী মিরাজুল মন্ডলের
নিখোঁজের সাড়ে ৪ বছর হয়ে গেলো। সন্ধান মিলেনি মালয়েশিয়াপ্রবাসী মিরাজুল মন্ডলের। বাবা-মা পথ চেয়ে আছে ছেলে আসবে বলে। ছেলের খোঁজে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়, জনশক্তি ব্যুরো, মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রশাসনসহ বিভিন্ন জায়গায় ধর্ণা দিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না নিখোঁজ ছেলের পিতা-মাতা।
২০২৩ সালের ১৪ অক্টোবর, পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার একদন্ত ইউনিয়নের কাজিপাড়া গ্রামের নিজ বাড়িতে ছেলের সন্ধানে সংবাদ সম্মেলন করেন মিরাজুলের বাবা দুলাল হোসেন ও মা রিতা খাতুন।
অচল সংসারকে সচল করতে একমাত্র ছেলে মিরাজুল মন্ডলকে মালয়েশিয়ায় পাঠিয়েছিলেন বাবা-মা। কিন্তু সংসারের চাকা সচলতো দূরের কথা, ছেলেকে হারিয়ে এখন নিঃস্ব বাবা-মা।
২৭ এপ্রিল শনিবার ফোনে কথা হয় মিরাজের বাবার সঙ্গে। মিরাজুল মন্ডলের বাবা দুলাল হোসেন জানান, ২০১৮ সালের মার্চ মাসে ঢাকার মেসার্স ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর পর ‘ইয়াংসিং ইন্ডাস্ট্রিজ-ইপু এসডিএন. বিএইচডি’ কোম্পানিতে সাধারণকর্মী হিসেবে যোগ দেয় মিরাজুল (৩২)।
প্রায় দেড় বছর ভালোই চলছিল। হঠাৎ একদিন ছেলে মিরাজুল ফোনে আমাকে বলে তার রুমমেট পাবনার মিলন, কুমিল্লার ফরহাদ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সজীব নামে তিনজন তাকে নির্যাতন করত। টাকা-পয়সা জোর করে কেড়ে নিতো। এমনকি তাকে মেরে ফেলার হুমকিও দিতো তারা।
এর এক পর্যায়ে ২০১৯ সালের নভেম্বর মাস থেকে ছেলের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে আমি এজেন্ট স্বপন এবং স্থানীয় দালাল মজনু বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা আমার ছেলের সন্ধান দেওয়ার কথা বলে ৪ লাখ টাকা নিয়েছে, কিন্তু আমার ছেলের কোনো সন্ধান দিতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, ‘এজেন্ট স্বপন এবং স্থানীয় দালাল মজনু আমাকে সমঝোতার জন্যে অনৈতিক প্রস্তাব দিতে থাকে। কিন্তু আমি আমার ছেলেকে মৃত অথবা জীবিত পাওয়ার দাবি জানাই। এরপর থেকে তারা আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিতে থাকে। বিষয়টি নিয়ে আমি প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো, মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনার, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং মানবপাচার দমন ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করি। এরপরও আমি কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। আমরা গরিব ও অসহায় পরিবার। ছেলেকে বিদেশ পাঠাতে এবং স্ত্রীর ক্যান্সারের চিকিৎসা করাতে জমিজমা বিক্রি করে পথে বসে গেছি। ছেলের সন্ধান পেতে বিভিন্ন জনের দ্বারে দ্বারে ঘুরে কোনো খোঁজ পাচ্ছি না।
কোম্পানির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা বলে, বাংলাদেশ থেকে যে এজেন্ট পাঠিয়েছে তার সাথে এবং মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে যোগাযোগ করুন। এ কথা বলে ফোন কেটে দেয়।
ক্যান্সারে আক্রান্ত মিরাজুলের মা রিতা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি আমার সন্তানের সন্ধান চাই জীবিত অথবা মৃত অবস্থায়। ছেলের নিখোঁজের সঠিক কারণ জানতে চাই। আমরা গরিব মানুষ, অনেক জায়গায় ঘুরছি, আর কোথায় গেলে আমার সন্তানের খোঁজ পাবো? আমরা সরকারের কাছে সাহায্য চাই।
সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় কর্মরত বিভিন্ন ইলেক্টনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরা, দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোঃ শামীম আহসানের সঙ্গে এক মতবিনিময়কালে মিরাজুল মন্ডলের নিখোজেঁর বিষয়টি উত্থাপন করা হলে হাইকমিশনারের নির্দেশে কর্মকর্তারা সম্ভাব্য সকল প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তার সন্ধানের চেষ্টা করে কোনো তথ্য উদ্ঘাটন করতে না পেরে, ২৩ এপ্রিল হাইকমিশনের ফেসবুক পেজে মিরাজুল মন্ডলের ছবিসহ তার সন্ধানে এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মোহাম্মদ মিরাজুল মন্ডল (পাসপোর্ট নং-বিআর ০৩৯৪৯৭৩)। পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী তার স্থায়ী ঠিকানা-চকি বাড়ি, একদন্ত, আটঘরিয়া, পাবনা।
কেউ যদি তার সম্পর্কে কোনো তথ্য অথবা অবস্থান জেনে থাকেন তাহলে হাইকমিশনের প্রথম সচিব (শ্রম) সুমন চন্দ্র দাশরর মোবাইল ন ফোন নম্বরে (+৬০১২৪৩১৩১৫০) অথবা ([email protected]) ই-মেইলে, মালয়েশিয়ায় বসবাসরত সকল নাগরিকের প্রতি অনুরোধ করা হয়।