রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

আবেগ, বিবেক, মাথা তারপর হোক কথা

রহমান মৃধা
আবেগ, বিবেক, মাথা তারপর হোক কথা

পৃথিবীর সকল জন্তুর মধ্যে যে জন্তুগুলো বেশিদিন মাতৃগর্ভে থাকে তার মধ্যে মানুষের গর্ভাবস্থার সময়কাল ৯ মাস। তবে এমন আরো কয়েকটি প্রাণী রয়েছে, যারা ১৫-২২ মাস পেটে তার সন্তানকে লালন-পালন করে। এমন ৫টি প্রাণী যারা তাদের সন্তানদের গর্ভে রাখে সবচেয়ে বেশি সময়---জিরাফ ১৪-১৫ মাস, গন্ডার ১৫-১৬ মাস, ওয়াসরাস ১৫-১৬ মাস, তিমি মাছ ১৫-১৬ মাস এবং হাতি ২২ মাস। তিমি মাছ জন্মের পর প্রায় ১০ বছর তাদের মায়ের সঙ্গে থাকে এবং কখনও কখনও তারা তাদের বাকি জীবনটাও মায়ের সঙ্গেই থেকে যায়। দীর্ঘ সময় মাতৃগর্ভে থাকা জন্তুগুলোর সঙ্গে মানুষের তেমন কোনো মিল আছে কিনা আমার জানা নেই। তবে মানুষের ৯ মাস মাতৃগর্ভে থাকার সময় এবং পরবর্তী জীবনের বাকি সময়, বিশেষ করে আমার নিজের সময় যে সময়ে আনন্দ আসে আবার ফুরিয়ে যায়, বেদনা আসে ভুলে যাই, আবার অনেক বেদনা যা আজীবন থেকে যায়। কিন্তু কেন এমনটি হয়, এ নিয়ে ভাবনা ঢুকেছে আমার মাঝে। মূলত সেই কারণে আমার অনুভূতি থেকে এই লেখা।

প্রেমের আনন্দ সীমিত, কিন্তু বেদনা অনেকের ক্ষেত্রে সারাক্ষণ থেকে যায়। সুখ কিছুক্ষণের নিয়ামত, কিন্তু দুঃখ চিরস্থায়ী হতে পারে। অথচ আমাদের চেষ্টা সারাক্ষণ কীভাবে সুখ- আনন্দ ভোগ করবো, অথচ দুঃখ-বেদনা বেশিরভাগ সময় সারাজীবন বাসা বাঁধে। কারণ কী?

চলমান যানবহন যেমন তেল বা ইলেকট্রিক চার্জ ছাড়া অচল, সে যত দামি বা নতুন হোক না কেন, ঠিক পজিটিভ কিছু ছাড়া আমরা মানুষ জাতি অচল। তাই সারাক্ষণ আমাদের ভালো কিছু করার দরকার। যতো ভালো ততো আনন্দ--এটাই আমার ব্যক্তিজীবনের অভিজ্ঞতা। জীবনটা এমনভাবে তৈরি যেন ভালো কিছু করা মানে ভালো, আর মন্দ কিছু করা মানে মন্দ।

এখন শরীরের মধ্যে যে একটি অনুভূতির সৃষ্টি হয় সেটাই আমাদের ভালো বা মন্দের মাপকাঠি, মানে অনুভূতিই ভালো বা মন্দের দিক নির্দেশনা করে।

আসলে আমরা নিজেরাই একটি কারখানা, যেখানে রীতিমতো ঘটনা ঘটে চলছে, শুধুমাত্র দক্ষ বা পরিপক্ব দিকনির্শনার অভাবে আমাদের কারখানা ভালো চলছে না। আমরা সঠিকভাবে আমাদেরকে ম্যানেজ করতে পারছিনে, এটাই আমাদের সমস্যা। যদিও আমরা সবাই ম্যানেজার আমাদের নিজের জীবনের। এই ভালো না চলার পেছনে আমরা নিজেরা ছাড়াও পারিপার্শ্বিকতা কিন্তু জড়িত। কারণ আমরা সামাজিক জীব এবং আমরা পরস্পর পরস্পরেরের ওপর নির্ভরশীল। এখন একটি গ্রহণযোগ্য নির্ভরশীল পরিবেশ তৈরি করতে দরকার ভালোবাসা, আবেগ, সহনশীলতা, দয়া, বোধগম্যতা, অনুভূতি, জ্ঞান, প্রতিশ্রুতি এবং যোগাযোগ। এখন পারস্পরিক সম্পর্ক সঠিক এবং সৃজনশীল হতে হলে দরকার যোগাযোগের একটি চমৎকার ব্যবস্থা এবং সেটা যেন সহজ ও সরল হয় সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া। অতীতের জীবনব্যবস্থার দিকে সময় ব্যয় না করে বর্তমানকে কীভাবে সুন্দর করে সামনের দিকে অগ্রসর করানো যায় সেদিকে নজর দিতে হবে এবং তার জন্যে দরকার কথা বলতে শেখা।

কথা কী?

কথা তুমি পারো না, কথা তুমি করো না, কথা তুমি বলো না, কথা তুমি শোনো না, কথা তুমি দাও, কথা তুমি নাও, কথা তুমি রাখো না, কথা তুমি কিনো, কথা তুমি বেচো, কথা তুমি মিথ্যা, কথা তুমি সত্য, কথা তুমি দুষ্টু, কথা তুমি মিষ্টি, কথা তুমি তিতা, কথা তুমি মিঠা, কথা তুমি ভাষা, কথা তুমি আশা, কথা তুমি প্রেম, কথা তুমি ধিক্কার, কথা তুমি ঘৃণা, কথা তুমি ভরসা, কথা তুমি ভালোবাসা, কথা তুমি মরণ, কথা তুমি জীবন।

এতোদিন মনে করেছি, টাকা পয়সা, ক্ষমতা, শিক্ষা, শক্তি, জ্ঞান এসব জীবন চলার, জীবনে বেচেঁ থাকার, জীবনে প্রভাবশালী হওয়ার চাবিকাঠি। ভুল সবই ভুল।

এই জীবনে প্রতি মুহূর্তে যা বলি, সে ভুল, সবই ভুল। প্রশ্ন করি নিজের কাছে, কে আমি? কোথায় ছিলাম, কোথায় যাবো এই আমি? কথার ফাঁকে একটু যদি করি ভুল, ধরা খাই সবার কাছে সেই আমি।

যদিও একটি কথা বলতে মন, প্রাণ, ভাবনা, চিন্তা, বিবেক, আবেগ, ব্রেন সবাই শতভাগ জড়িত। তারপরও ভুল, তারপরও ভ্রান্তি? কারণ কী? ভেবেছেন কি কখনও? আমি ভাবতে শুরু করেছি। তাইতো আজ এতো কথা। আমার দেহের মধ্যে সমস্ত উপাদান রয়েছে, তারপরও আমি একটি সহজ কথা, একটি সত্য কথা সুন্দর করে বলতে পারি না, কী কারণ এর পিছে, এটা নিয়ে আমার ভাবনা থেকে কিছু কথা, যা আমার একান্ত নিজের কথা।

আমি অনেক সময় বেশ আবেগের বশবর্তী হয়ে দেখা গেল নিজের অত্যন্ত কাছের একজন প্রিয়জনকে কিছু কথা দিয়ে ফেললাম। পরে সেই প্রিয়জন সেটা চেয়ে বসলো। আমি বললাম, আরে সেদিন ওটা কথার কথা বলেছিলাম, আমি তোর মন খারাপ দেখে এটা সেটা বলেছিলাম। ওটা আমার মনের কথা ছিল না। আবার এমনও সময় আছে, বিবেকের তাড়নায় অন্য কোনো কিছু না জেনে বা শুনে যেটা সত্য সেটা বলে নিজের খুব কাছের একজনের মনকে ভেঙ্গে চুরে ছারখার করে দিলাম। এমনটি আমাদের সবার ক্ষেত্রে কিন্তু হয়। কারণ কি জানেন? আমাদের দেহে যে উপাদানগুলো রয়েছে, যাকে বলা হয় আমাদের ইনার এঞ্জিনিয়ারিং, সেগুলো যদি যৌথভাবে কাজ না করে এবং আলাদা আলাদা ভাবে কাজ করে তখনই আমরা ভারসাম্য হারিয়ে ফেলি এবং যা খুশি তাই বলি, যা খুশি তাই করি, যা খুশি তাই ভাবি অথবা অখুশি হয়ে উল্টোপাল্টা আচরণ করি। কিন্তু যখনই দেখবেন বিবেক এবং আবেগ দুটোই কাজ করছে, তখনই আমাদের আচরণ সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা পায়, আমরা নিজেরাও যেমন স্বস্তি পাই, ঠিক অন্যরাও তেমনটি পায় আমাদের থেকে। আমাদের আবেগ এবং বিবেক যখন একত্রিত হয়ে কাজ করে, তখন আমরা মানুষ, বাকি সময় আমরা বনের পশুর চেয়েও জঘন্য। এখানে একটি শক্ত ভাষায় আমি আমার মনের কথা ব্যক্ত করলাম, কী মনে হয়? আবেগ এবং বিবেকের সমন্বয়ে কি এটা করলাম নাকি রাগের মাথায়? হুট করে কিছু বলা, কিছু করা সবার সম্মতি ছাড়া। সবার বলতে আমাদের শরীরের মধ্যকার সমস্ত সেন্সের কনসেন্সাস ছাড়া যখন কিছু করি তখনই সমস্যা, তখনই কেওয়াস, তখনই বিপদ, তখনই বিরহ, তখনই বিচ্ছেদ ইত্যাদি ইত্যাদি। আর এর জন্যে দায়ী হচ্ছে মুখের কথা। আমি বেশ ভেবেচিন্তে একটি সারাংশে উপনীত হয়েছি, আর সেটা হলো, কথা বলার আগে শতভাগ নিশ্চিত হতে হবে যে, আমার আবেগ, বিবেক এবং মাথা এরা সবাই আমার সঙ্গে সারাক্ষণ অ্যাক্টিভলি কাজ করছে কিনা। যদি সেটা জানার যোগ্যতা আমার না থাকে তাহলে চুপ থাকা শ্রেয়। জীবনে বহু মনীষীর আসা-যাওয়া হয়েছে পৃথিবীতে অথচ সবাই কথা বিক্রি করে যেতে পারেনি, মুষ্টিমেয় কিছু মনীষী ছাড়া। তবে সত্য-মিথ্যা দিয়ে আমরা চালিয়ে যাচ্ছি ঠিকই, কিন্তু এর ভরণ-পোষণ নিতে আমাদের জীবন কেমন চলছে তা আর নাই বা বলি। তবুও দেখুন একটি কথার কারণে কারো জেল, কারো সংসার ভেঙ্গে চুরমার, কারো জীবনের একটি বিরাট পরিবর্তন হতে পারে, হয়ে থাকে। এটা আমরা জানি, তারপরও আমরা সুন্দর এবং সহজ করে সেই কথাটিও ঠিক মতো বলতে শিখিনি আজ অবধি। আমরা চাকরি জীবনে, শ্রেণিকক্ষে, অফিসে, আদালতে, রাজনীতিতে কথা বিক্রি করেই কিন্তু বেঁচে আছি। তাহলে কেন সেই কথাগুলো বলার আগে ভেবে-চিন্তে বলিনে! আজ এ পর্যন্ত থাক। তবে বিদায় বেলা আবারও বলি, আবেগ, বিবেক, মাথা তারপর হোক কথা।

লেখক : সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়