রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

বিশ্বের ৯০% মানুষের সময় সমস্যা তৈরিতে আর শুধু ১০% সময় সমাধানে

রহমান মৃধা
বিশ্বের ৯০% মানুষের সময় সমস্যা তৈরিতে আর শুধু ১০% সময় সমাধানে

কোনো ব্যক্তি যদি ভালো কাজ করে এবং তার তারিফ করার যখন কেউ না থাকে বা মন্দ কাজ করলে কেউ ধিক্কার না দেয়, তখনই বুঝতে হবে পৃথিবীর মানুষের অবক্ষয় চলছে। মানব জাতি সম্পর্কে এতবড় একটি খারাপ মন্তব্য করার হিম্মত আমি কীভাবে পেলাম, এমনটি প্রশ্ন আমাকে করা হয়েছে গত কয়েক দিন আগে সুইডেনের একটি জনসমাবেশে। আমি তৎক্ষণাৎ আমার ওপরের মন্তব্যের পেছনে একের পর এক যুক্তি দাঁড় করাতে শুরু করলাম। যেমন বললাম : সুইডেন দুইশো বছরের বেশি সময় নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে চলছে, হঠাৎ কি হলো যে ন্যাটোতে যোগ দিতে হবে এবং কেনই বা বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্যে বিশাল অর্থ ব্যয় করার পরিকল্পনা নিতে হবে? দেশের জনগণ সব শুনছে, দেখছে এবং জানছে, তারপরও কোনো প্রতিবাদ নেই, নেই হা-হুতাশ। ইউক্রেন- রাশিয়া যুদ্ধ চলছে, ইজরাইল- হামাস সঙ্কট চলছে, বিশ্বের বহু গরীব দেশের মানুষ না খেয়ে মরছে তো? চোখের সামনে দুর্নীতি, অনীতি হচ্ছে, আমরা নীরবতা পালন করে চলছি ইত্যাদি ইত্যাদি। সবাই চুপ হয়ে গেল, নতুন কোনো প্রশ্ন নেই। ভাবলাম, যাক তাহলে যা বলেছি তা ভুল কিছু না। আমার পরবর্তী মতামত ছিল—বিশ্বের মানুষের ৯০% সময় ব্যয় হয় প্রব্লেম মেকারে বাকি ১০% সমাধানে। হঠাৎ একজন তরুণ প্রজন্মের মেয়ে হাত উঁচু করে বললো, একটু বিশ্লেষণ করবা কী বোঝাতে চাচ্ছো তুমি? বাকিটা সময়ে আমি যে আলোচনা করেছিলাম সেটা ছিল নিম্নরূপ : সারাদিন সমস্যার সমাধান করাই মানুষের কাজ নাকি সমস্যা তৈরি করা মানুষের কাজ? আমরা কি সমস্যা তৈরি করি নাকি সমস্যা নিজ থেকে আমাদের ওপর চেপে বসে? আমাদের লোভ, লালসা, চাওয়া, পাওয়া, আশা, প্রত্যাশা এবং দরকারই মূলত সমস্যার কারণ। মানুষের কারণে কি তাহলে সমস্যা নাকি সমস্যার কারণে মানুষ? আমরা স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে শিক্ষা গ্রহণ করি সে শিক্ষায় কী শিখি মূলত? সমস্যার সমাধান করা এবং সমস্যার সৃষ্টি করা। সমস্যা এবং সমাধান---এর বাইরে আসলে আমরা তেমন কিছু করি না। এখন যদি সমস্যা না থাকতো, তাহলে আমরা কী করতামণ্ড-ভেবেছেন কি কেউ? আমি ভাবতে শুরু করেছি। আমার সেই ভাবনার জগৎ থেকে আজকের এই লিখা।

> আমি দূরপরবাসে চল্লিশ বছর বসবাস করছি। এই দীর্ঘ সময়ে আমি সমস্যার সমাধানের চেয়ে সমস্যা তৈরি করেছি বেশি। যখনই দেখি এটা নেই, সেটা নেই তখনই শুরু হয় সমস্যা এবং সেই এটা সেটা না পাওয়া অবধি সমস্যার পর সমস্যা তৈরি করতে থাকি। কখনও সমাধান করি, কখনও সমাধান করতে গিয়ে এক বা একের অধিক সমস্যার সৃষ্টি করি— তার মানে আমি ৯০% সময় ব্যয় করি প্রব্লেম মেকারে এবং ১০% সময় ব্যয় করি সমাধানে। এখন কথা আছে সেটা হলো অনেক সময় আমরা জানিনে সমস্যাটা কী, সেটাও একটা বড় সমস্যা। বহু গবষণার পর হয়ত জানতে পারলাম সমস্যা, এখন সেই সমস্যার সমাধান করতে হবে। যখন সমাধান পেয়ে গেলাম, তখন কিছু সময় স্বস্তি, শান্তি, আনন্দ-ফুর্তি এসে হাজির হলো। এবং ঠিক সেই মুহূর্তে নতুন চিন্তার উদয় হলো মানে শুরু হলো নতুন সমস্যা। ধরুন সখ হলো শিক্ষামন্ত্রী হবেন। শিক্ষামন্ত্রী নতুন কোনো উদ্ভাবন না, তবে আপনি শিক্ষামন্ত্রী হবেন এটা একটি মিশন ইমপসিবল চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে গিয়ে দেখা গেল আপনার সব গেল সাথে আপনিও, তারপরও আপনি সমস্যার সমাধান করতে পারলেন না। মাঝখানে জীবনের বাকি সময় ব্যয় করলেন একটি সমস্যার সমাধান করতে। এই ভাবে বিশ্বের মানুষ প্রতিদিন তার সময়ের ৯০% সময় ব্যয় করে চলছে সমস্যার মধ্য দিয়ে। আমরা আমাদের ধ্যানে যে সময় ব্যয় করি সেই সময়টি যদি সমস্যা যুক্ত না হয়ে সমস্যা মুক্ত হতো তবে আমরা পৃথিবীকে সুন্দর পরিপাটি করে গড়ে তুলতে পারতাম, পারতাম নিজেদেরকে সুখি ও সমৃদ্ধ করতে। আমরা মনে করি যে, প্রতিদিন আমরা যে সকল কাজকর্ম করি তার একটা ভ্যালু রয়েছে, কথা সত্য। কিন্তু ভাবুন মূলত আমরা কী করি। যেমন উকিলরা কী করেন? একজন অপরাধীকে বিচারের কাঠগড়ায় হাজির করে ন্যায়-অন্যায়ের পক্ষে বা বিপক্ষে লড়েন। যারা অপরাধ করে বা অপরাধের শিকার তারা সেটা জানে, তারপরও উকিল নিয়োগ করে শাস্তি থেকে মুক্তি পেতে বা শাস্তি দিতে। এখন মিথ্যাকে সত্য অথবা সত্যকে মিথ্যা প্রমাণিত করা এবং সমস্যার সমাধান করা মূলত উকিলের কাজ। যত খারাপ, অন্যায়, মিথ্যা, অপকর্ম, অবিচার, অত্যাচার, দুর্নীতি, অনীতি কাজের পেছনে আমরা সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় করি এবং এর জন্যে সমাজের বলতে গেলে সকল মানুষ কাজ করে। অথচ ভালো কাজের জন্যে উকিল, পুলিশ, বিচার কোনো কিছুর মূলত দরকার হয় না। তার মানে কী দাঁড়ালো, অকাম-কুকামের জন্যে মানুষ সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় করে। অকাম-কুকাম শেখার জন্যে মানুষ শিক্ষিত হয়। এর নাম সভ্যতা নাকি অসভ্যতা? যাই হোক না কেন, এই হলো আমাদের পৃথিবী, এই পৃথিবীর পরিবর্তন যদি সত্যিই আমরা চাই, তবে আমাদেরকে উদ্ভাবিত হতে হবে নতুন উদ্দীপনা এবং ক্রিয়েটিভ চিন্তার মধ্য দিয়ে। শুধু সমস্যা সমাধান না করে আসুন নতুন চিন্তার উদ্ভাবন করতে শিখি।

লেখক : সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়