প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
ব্রাগানসা ও অতৃপ্ত হৃদয়ের অসম্পূর্ণ ভালোবাসার গল্প
।। তৃতীয় পর্ব।।
স্কুল জীবন থেকে রাশিয়ার ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি আমার আকর্ষণ ছিল। ইংরেজি কিংবা ফরাসি ভাষার সাহিত্যের মতো রুশ ভাষার সাহিত্যও অত্যন্ত সমৃদ্ধ। লিও তলস্তয়, ম্যাক্সিম গোর্কি, সেতলানা আলিক্সিয়েভিচ, বরিস পাস্তেরনাক, নিকোলাই গুমিলিউভ, অসিপ মান্দেলস্তাম, সের্গেই ইয়েসেনিন, ভ্লাদিমির মায়াকোভস্কি ও ফিওদর দস্তয়েভস্কিসহ বিভিন্ন রুশ সাহিত্যিকের লেখা পড়ছি বিভিন্ন সময়। নিজের থেকে রুশ ভাষা শেখার চেষ্টা করেছি। প্রথম দিকে আমি ভেবেছিলাম পলিনা হয়তো রাশিয়ান হবে। কেননা, ‘পলিনা’ নামটি রাশিয়াতে বেশ জনপ্রিয়। রাশিয়াতে ফেসবুক হিসেবে পরিচিত ভিকেতে অ্যাকাউন্ট খুললে এমন অনেক মেয়েকে খুঁজে পাওয়া যাবে যাদের নাম পলিনা। তাই আমি তাঁকে তৎক্ষণাৎ জিজ্ঞেস করি, "আর ইউ ফ্রম রাশিয়া?"
পলিনা উত্তর দেয়, "বেলারুশ।”
আমি তখন তাঁকে রাশান ভাষায় জিজ্ঞেস করি, "তি গোভোরিশ পো রুস্কি?”
ইংরেজিতে অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, "ডু ইউ স্পিক রাশান?”
পলিনা আমার কথা শুনে কোনো উত্তর দেয় না, শুধু হাসতে থাকে। এতো সুন্দর হাসি আমি আগে খুব কম দেখেছি। ছোটবেলায় মনস্টারস ইনকরপোরেটেড নামক একটি অ্যানিমেটেড সিনেমা দেখেছিলাম। সিনেমায় বু নামক এক ছোট্ট শিশুকে দেখানো হয়, যার হাসির মাধ্যমে জেমস সুলিভান ও মাইক নামক দুই মনস্টার তাঁদের শহর মনস্ট্রোপোলিসে বিপ্লব এনেছিল। অতীতে ছোট্ট শিশুদেরকে ভয় দেখানোর মাধ্যমে তাদের শহরে সমস্ত শক্তির চাহিদা পূরণ হতো, কিন্তু পরবর্তীতে বাচ্চাদেরকে হাসানোর মধ্য দিয়ে এ শহরে তার প্রয়োজনীয় শক্তির চাহিদা পূরণ করতে শুরু হয়। বু নামক ছোট্ট শিশুটি একদিকে এ দুই মনস্টারের মনে ভালোবাসা সৃষ্টি করেছিল, অন্যদিকে বু-এর মিষ্টি হাসি মনস্ট্রোপোলিস শহরে বসবাস করা সকল মনস্টারের মাঝে একটি সত্যকে সামনে নিয়ে আসে যে, কোনো বাচ্চাকে ভয় দেখানোর পরিবর্তে তাকে যদি হাসানো যায় তাহলে সে হাসিতে যে পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয় সেটা পরিমাণগতভাবে অনেক বেশি। অর্থাৎ ভালোবাসার শক্তি সব সময় সকল কিছুর ঊর্ধ্বে।
পলিনার হাসি আমাকে বারবার বু-এর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিলো। আমার মধ্যাকার সকল বিষাদ, হতাশা ও বেদনা তাঁর হাসির কাছে ক্ষণিকের জন্যে পরাজয় বরণ করলো। তাঁর সেই হাসিতে যেন মুক্তো ঝরে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় বলতে গেলে,
“ফুল সে হাসিতে হাসিতে ঝরে
জোছনা হাসিয়া মিলায়ে যায়
হাসিতে হাসিতে আলোকসাগরে
আকাশের তারা তেয়াগে কায়।”
পলিনা আমার থেকে জানতে চাইলো, "তুমি রাশিয়ান শিখলে কীভাবে?" সে আমাকে ইংরেজিতে প্রশ্ন করলো। আমি তাঁর কাছে রুশ ভাষা, সংস্কৃতি ও সাহিত্যের প্রতি আমার ভালোবাসার কথা তুলে ধরলাম। পলিনা আমার থেকে কয়কেজন রুশ সাহিত্যিকের কথা জানতে চাইলো, যাঁদের লেখা আমি পড়েছি। আমি লিও তলস্তয়, ম্যাক্সিম গোর্কি ও বরিস পাস্তেরনাকের কথা বললাম। পলিনা আমাকে জিজ্ঞেস করলো, "লিও তলস্তয় কিংবা ম্যাক্সিম গোর্কির কোন্ কোন্ বই তুমি পড়ছো?"
আমি লিও তলস্তয়ের লেখা উপন্যাস 'ওয়ার অ্যান্ড পিস' আর ম্যাক্সিম গোর্কির লেখা উপন্যাস 'মাদার'-এর কথা বললাম। পলিনা আমার উত্তরের প্রেক্ষিতে বললো, "মনে হয় তুমি রাশান ভাষায় এখনও পুরোপুরি দক্ষ নয়, তারপরেও এ বইগুলো কীভাবে পড়লে?"
আমি বললাম যে, ''আমি এগুলোর অনুবাদ পড়েছি ইংরেজিতে।'' পলিনা আমার কথা শুনে বললো, ''রাশান ভাষায় এ বইগুলো শেষ করলে যে অনুভূতি আসতো, সেটা কি ইংরেজি অনুবাদে পাওয়া সম্ভব?"
আমি উত্তরে জানালাম, “অবশ্যই না। এজন্য তোমার ভাষা আমি শিখতে চাই।” (চলবে)