রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

বিখ্যাত কায়রো অপেরা হাউজে বাংলাদেশ-মিশর সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা

আফছার হোসাইন ॥
বিখ্যাত কায়রো অপেরা হাউজে বাংলাদেশ-মিশর সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিখ্যাত কায়রো অপেরা হাউজে মিশরের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও কায়রোস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ-মিশর সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৪ পালন।

২৫শে ফেব্রুয়ারি রোববার বিকেল ৫টায় কায়রো অপেরা হাউজের গ্রাউন্ড হলে সুপ্রীম কাউন্সিল অফ কালচারের মহাসচিব প্রফেসর হিসাম আজমির সঞ্চালনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতেই বাংলাদেশ ও মিশরের জাতীয় সংগীত বাজানোর পর প্রদর্শন করা হয় বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সমৃদ্ধ একটি প্রামাণ্যচিত্র।

দেশটির সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ড. নেভিন আল কিলানির পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মিশরের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সুপ্রীম কাউন্সিল অফ কালচারের মহাসচিব প্রফেসর হিসাম আজমি, মিশরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আধ্যাপক, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রিত মিশরীয় অথিতিবৃন্দ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বাংলাদেশী শিক্ষকবৃন্দ, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত বাংলাদেশী কর্মকর্তাবৃন্দ, মিশরে প্রসিদ্ধ বাংলাদেশী ব্যবসায়ী, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশী শিক্ষার্থী, বাংলাদেশী কমিউনিটির সদস্যবৃন্দ ও দূতাবাসের কর্মকর্তা, কর্মচারীগণ।

অনুষ্ঠানটি উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন মিশরের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ড. নেভিন আল কিলানি এবং মিশরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মিস সামিনা নাজ।

রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজ তাঁর বক্তব্যে এই যৌথ আয়োজনের জন্যে মিশরের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সুপ্রীম কাউন্সিল অফ কালচার এবং বৈদেশিক সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন, এই আয়োজনটি একইসাথে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সাথে একীভূত হওয়ায় তা সমৃদ্ধ হয়েছে।

রাষ্ট্রদূত তাঁর বক্তব্যে প্রথমেই সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করেন বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী এবং স্বাধীনতার মহান স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্মরণ করেন রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার সহ সকল ভাষা শহিদকে, যাঁদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা অর্জন করেছি আমাদের মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার।

রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন যে, ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের যে বীজ রোপিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় পথ বেয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মধ্য দিয়ে তা চূড়ান্ত রূপ লাভ করে। একুশে ফেব্রুয়ারি তাই বাঙালির কাছে চির প্রেরণার প্রতীক।

সামিনা নাজ ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান প্রসঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের কথা স্মরণ করেন এবং তিনি জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (ইউনেস্কো)-এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশ ও মিশরের মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ইতিহাস তুলে ধরে তিনি প্রথম আরব দেশ হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান, ওআইসি, জাতিসংঘ সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় বাংলাদেশের সদস্য পদ লাভে সহায়তায় মিশরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

এ সময় রাষ্ট্রদূত মিশরের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আনোয়ার সাদাতের সংক্ষিপ্ত বাংলাদেশ সফরের কথা তুলে ধরেন। একই সাথে তিনি আনোয়ার সাদাতের আমন্ত্রণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৩ সালের এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার ২০০১ ও ২০০৯ সালের মিশর সফরের কথা তুলে ধরেন।

রাষ্ট্রদূত তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি সার্বিক ধারণা প্রদান করেন। তিনি বাংলাদেশের উৎসব, শিল্প, সংস্কৃতি, পরিধান প্রভৃতি বিষয় উল্লেখ করেন। এছাড়া তিনি ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃত ‘ওহঃধহমরনষব ঈঁষঃঁৎধষ ঐবৎরঃধমব’ যেমন-জামদানি, শীতল পাটি ইত্যাদির ওপর আলোকপাত করে উপস্থিত অতিথিবৃন্দকে প্রদর্শিত সামগ্রী দেখার আহ্বান জানান।

তিনি আরো উল্লেখ করেন, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বিমান যোগাযোগ চালু হবার ফলে পর্যটন, ব্যবসা, মানুষের মধ্যে যোগাযোগ আরো বেগবান হচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এর মাধ্যমে আরো বেশি মিশরীয় পর্যটক ও ব্যবসায়ী বাংলাদেশ ভ্রমণে উৎসাহী হবে।

বক্তব্যের শেষে রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন, আমাদের জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত একটি সোনার বাংলাদেশ গড়ার। একইসাথে বঙ্গবন্ধু এমন একটি বিশ্ব ব্যবস্থার স্বপ্ন দেখতেন, যেখানে সকল মানুষের জন্যে শান্তি এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে গত ১৫ বছরে টেকসই উচ্চ প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের ৩৫ তম বৃহত্তর অর্থনীতির দেশ হিসেবে স্বীকৃত। আগামী ২০৩৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৫তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে। বর্তমানে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২,৮২৪ মার্কিন ডলার। রাষ্ট্রদূত তাঁর বক্তব্যে আরো উল্লেখ করেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বর্তমান পরিবর্তনশীল বিশ্ব ব্যবস্থায় দেশসমূহের মধ্যকার সম্পর্ক জোরদারকরণের ওপর নির্দেশনা প্রদান করেছেন। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ দূতাবাস ও কায়রো দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কোন্নয়নের নানা ক্ষেত্র নিয়ে কাজ করছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশ-মিশরের ৫০ বছর কূটনৈতিক সম্পর্কের উদযাপনে এই ধরনের যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে সম্পর্কের ক্ষেত্রে নবদিগন্তের উন্মোচন ঘটবে। তিনি এই যৌথ আয়োজনের জন্যে মিশরের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানান এবং ভবিষ্যতে এ রকম আয়োজন অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানের শেষাংশে রাষ্ট্রদূত দূতাবাসের পক্ষ থেকে মিশরের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ড. নেভিন আল কিলানি এবং মিশরের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সুপ্রীম কাউন্সিল অফ কালচারের মহাসচিব প্রফেসর হিসাম আজমি কে শুভেচ্ছা উপহার তুলে দেন। এছাড়া রাষ্ট্রদূত মিশরের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ৫-১৮ বছর বয়সী শিশুদের নিয়ে অনুষ্ঠিত ‘বিদেশী শিশুদের চোখে মিশর’ শীর্ষক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী বাংলাদেশী শিশুদের আঁকা ফটো নিয়ে অনুষ্ঠিত চিত্রপ্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন এবং দূতাবাসের পক্ষ থেকে পুরস্কার গ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে আমন্ত্রিত মিশরীয় ও বাংলাদেশী অতিথিদের ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশী খাবারে আপ্যায়িত করা হয়।

অনুষ্ঠানটি উপলক্ষে রাষ্ট্রদূতের নির্দেশনায় অত্র দূতাবাস বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, পর্যটন প্রভৃতির ওপর ভিত্তি করে ৯.৪১ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করে। এছাড়া অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণে বাংলাদেশের হস্তশিল্প ও রপ্তানিযোগ্য পণ্যসমূহ প্রদর্শন করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়