প্রকাশ : ১১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
ইতালিতে সুস্থ ধারার বাংলা সংস্কৃতিচর্চার আহ্বান বিশ্ব সংগীত কেন্দ্রের
সুস্থ ধারার বাংলা সংস্কৃতিচর্চা ও বিকাশে ইতালির রোমে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশ্ব সংগীত কেন্দ্রের ১১ বছর পূর্তি এবং আন্তর্জাতিক সম্মেলন ২০২৩। কেননা সুস্থ সংস্কৃতির মাধ্যমে একটি সুন্দর সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব। সম্প্রতি রোমের একটি হল রুমে জাঁকজমকপূর্ণভাবে বর্ণাঢ্য আয়োজনে এই সম্মেলন সম্পন্ন হয়। এতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অতিথি শিল্পী ও সংগঠনের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন। দিনব্যাপী এই আয়োজনে ছিল বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পিঠা উৎসব, নকশিকাঁথার প্রদর্শনী, গুণীজন সম্মাননা ও বহুজাতিক সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
প্রবাসে থাকা শিল্পীদের ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াসে ২০১২ সালে ইতালির রোমে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন বরেণ্য সংগীত শিল্পী কাজী জাকারিয়া। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে শিল্পীদের সুস্থ ধারার বাংলা সংগীতচর্চায় নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনটি। পাশাপাশি প্রবাসে বসবাসরত নতুন প্রজন্মের মাঝে বাংলা গানের চর্চা ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে আলোচিত আন্তর্জাতিক মানের এই সংগঠনটি। ইতিমধ্যে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে চলছে সংগঠনটির কার্যক্রম। এরই ধারাবাহিকতায় আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক সংগঠন বিশ্ব সংগীত কেন্দ্রের ১১বছর পূর্তি উৎসব অনুষ্ঠিত হয় ইতালির রোমে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মনিরুল ইসলাম। নানা আয়োজনে সাজানো এই অনুষ্ঠান দুপুর থেকে শুরু হয়ে চলে রাত পর্যন্ত।
বিশ্ব সংগীত কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও বৈশ্বিক সমন্বয়ক জাকারিয়া কাজীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে, যুগ্ম প্রধান সমন্বয়ক অনুপ কুমার ঘোষ ও লন্ডন শাখার যুগ্ম প্রধান সমন্বয়ক সুমনা সুমির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইতালি আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইকবাল আহমেদ বাবু, বিশ্ব সংগীত কেন্দ্র এরিজোনা শাখার প্রধান সমন্বয়ক এম এ শোয়েব, যুগ্ম প্রধান সমন্বয়ক রাশিদুল মনসুর পলাশ ও সমন্বয়ক সচিব আশফাক আনসারী।
অনুষ্ঠানে সদস্য সচিব ফারিয়া আঁখির সার্বিক তত্ত্বাবধানে প্রবাসী নারীদের পরিবেশনায় ছিল পিঠা উৎসব। প্রবাসের শত ব্যস্ততা ভুলে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী নানা রকমের বাহারি পিঠা দেশি-বিদেশি অতিথিদের সামনে তুলে ধরা হয়। শীতের আমেজে প্রবাসী নারীদের দেশীয় পিঠার এই পরিবেশনার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সম্মেলনে বাংলা ভাষা, শিল্প ও সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদান রাখায় প্রফেসর ফ্রান্সেসকো জান্নি, কাতিউশা কার্না, সারা রোসেতৎ স্টেফানো রোমানো ও স্ভেতলানা চেললিকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
সাংস্কৃতিক পর্বে বাংলাদেশীসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষাভাষী নাগরিকগণ এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন ও সংগীত পরিবেশন করেন। সংগীত পরিবেশন করেন ভারতের রাশ্মি ভাট, আনন্দী চক্রবর্তী, ইতালির জুলিয়া দান্তে, ইগর ওরিফিচি, সিরিয়ার সালেহ তাওউইলসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আগত ও স্থানীয় শিল্পীরা।
আয়োজকরা জানান, সমগ্র পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা সংগীতপ্রেমীদের মধ্যে একাত্মবোধ ও সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন তৈরিতে ভবিষ্যতেও এভাবেই কাজ করে যাবে ‘বিশ্ব সংগীত কেন্দ্র'। এ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সবার সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি মনে করেন, সবার সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে বিদেশের মাটিতে বাংলা ভাষাকে যথাযথ সুউচ্চ স্থানে পৌঁছানো সম্ভব।
বিদায় ২০২৩
রহমান মৃধা
সুইডিশ ভাষায় ‘ফেস্ট‘ শব্দের ইংরেজি অর্থ ‘পার্টি’, বাংলা ভাষায় পার্টি শব্দটি বেশ পরিচিত। ইউরোপের পার্টি, বিশেষ করে সুইডিশ পার্টির ওপর কিছু তথ্য আজ তুলে ধরব। জানুয়ারি মাস বছরের প্রথম মাস। সব কিছুতে বেশ নতুনত্বের ভাব, যার কারণে মাসটি পার হয়ে যায় স্বল্প সময়ের মধ্যে। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে ঠিক পার্টি নয়, তবে সুইডেনে ‘স্পোর্টলোভ’ বা শীতকালীন ছুটি পালিত হয় এক সপ্তাহ ধরে। এ সময় স্কুল এক সপ্তাহের জন্যে ছুটি থাকে। ছোট-বড় সবাই তুষারে স্কী থেকে শুরু করে স্কেটিংয়ে সময় কাটায়। নানা ধরনের অ্যাক্টিভিটিসের মধ্য দিয়ে সময়টি বেশির ভাগ সুইডিশরা পার করে এবং অ্যাক্টিভিটিসগুলো বলতে গেলে পার্টির মধ্যে পড়ে। যেমন একসঙ্গে স্কী করা, সাওনাতে গরম এবং ঠাণ্ডা পরিবেশে গোসল করা, তুষারের মধ্যে দৌড়াদৌড়ি করা, এক সঙ্গে ডিনার করা, সব কিছুই ছোট-বড় সবার জন্যে ছুটির একটি আনন্দময় বিশেষ সময়।
মার্চ মাসে অকেশনালি তেমন কিছু ঘটে না। তবে এপ্রিলে যিশুখ্রিস্টের বেঁচে ওঠা তথা পুনরুত্থানের অলৌকিক ঘটনাটিকে স্মরণ করার জন্যে পালিত হয় ইস্টার হলিউডে। এটি খ্রিস্টিয় বর্ষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব। খ্রিস্টান ধর্মে বিশ্বাসীদের কাছে এটি পুরাতন জীবন অবসানের পরে নতুন জীবন শুরুর প্রতীক। এ সময় স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকে। ছুটিতে অনেকেই সুইডেন বা ইউরোপের বাইরে গরমের দেশে সময় কাটাতে পছন্দ করে। এপ্রিলের শেষের দিন বা মে মাসের প্রথম দিনে ‘ঠধষনড়ৎমংসব্ধংংড়ধভঃড়হ’ শীতের বিদায় দিতে জঙ্গলের কাঠ জমা করে আগুন জ্বালিয়ে ‘সধলনৎধংধ’ গরমকে বরণ করে, সঙ্গে নাচগান ও হৈহুল্লোড়ের মধ্যে সুইডিশ জাতি দিনটিকে পালন করে থাকে।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায়ই নানা ধরনের অনুষ্ঠান বা পার্টি হয়ে থাকে। আবার ডরমিটরির ফেস্ট বা ডরমিটরি পার্টি বেশ মজাদার সময় শিক্ষার্থীদের জন্যে।
জুন মাসে সুইডেনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পার্টি হলো মিডসামার পার্টি। এ সময় সুইডিশরা বিশ্বের যেখানেই থাকুক না কেন বাড়িতে আসবেই। সবাই মিলে আনন্দ ফুর্তি এবং নাচগানের সঙ্গে ভালো খাবার, প্রচুর ড্রিঙ্ক করা, কিছুটা ব্যতিক্রম ট্রেডিশন বললে ভুল হবে না। সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর মাসে এরা ‘হোস্ট পার্টি’ বা ‘অক্টোবর পার্টি’ পালন করে। জার্মানিতে প্রতি সপ্তাহে এ সময় বিশাল পার্টি হয়ে থাকে, যা দেখতে এবং এ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পৃথিবীর নানা দেশের লোকের ভিড় দেখা যায়।
সুইডেনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজকীয় পার্টি ডিসেম্বরের দশ তারিখ, আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকী। যদিও মৃত্যুবার্ষিকী, তবে দিনটি পালিত হয় আনন্দ ফুর্তির মধ্য দিয়ে। কারণ এ দিনে সারা পৃথিবীর মধ্যে সেরা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সফল এবং অনন্যসাধারণ গবেষণা ও উদ্ভাবন এবং মানবকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের জন্যে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়। নোবেল পুরস্কারকে বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পদক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ডিসেম্বর মাসেই খ্রিস্টানদের বড়দিন উদ্ যাপিত হয়। সুইডেনে ‘বড়দিন পালনের’ সময়টিও বেশ আনন্দের।
বড় দিন পালন শেষ হতেই শুরু হয় নতুন বছরকে বরণ করার প্রস্তুতি পর্ব। নববর্ষ উদ্ যাপন বা দিনটিকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরের নতুন দিনটিকে বরণ করার জন্যে কত কিছুই না ঘটে। দিনের শেষে বরফের দেশে ঘরে বাইরে সবখানেই প্রতীক্ষা, অপেক্ষা, চাওয়া, পাওয়া, দেয়া নেয়ার পালা। কখন ঘড়ির কাঁটায় রাত বারোটা বাজবে, কখন ঘণ্টা বাজবে আর কখন শ্যাম্পেনের বোতল খুলে নববর্ষ দিবসে চিয়ার্স বলতে হবে, সেজন্যে আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা। হঠাৎ যখন সেই সময়টি এসে হাজির হবে, ঠিক তখনই ডিস্কটেকে বিখ্যাত আব্বার গান বেজে উঠতেই বন্ধু তার বান্ধবী, প্রিয় তার প্রিয়ার, স্বামী তার স্ত্রীর গা জড়িয়ে ধরে গাইতে শুরু করবে— ‘ঘড় সড়ৎব পযধসঢ়ধমহব / ঐবৎব বি ধৎব, সব ধহফ ুড়ঁ / ঋববষরহম ষড়ংঃ ধহফ ভববষরহম নষঁব / ওঃ'ং ঃযব বহফ ড়ভ ঃযব ঢ়ধৎঃু / অহফ ঃযব সড়ৎহরহম ংববসং ংড় মৎবু / ঝড় ঁহষরশব ুবংঃবৎফধু / ঘড়'িং ঃযব ঃরসব ভড়ৎ ঁং ঃড় ংধু— ঐধঢ়ঢ়ু ঘবি ণবধৎ’. এভাবেই বিদায় হয় ২০২৩, তোমাকে আর পাবো না, তোমার সঙ্গে যাবো না। কী দিলে বা না দিলে সে বিষয়ে ভাববো না। রাত কখন শেষ হয়ে সকাল হয় সে খেয়াল আর থাকে না। কখন, কে, কোথায় এবং কীভাবে ঘুমিয়ে আছে তাকি জানার দরকার আছে? পয়লা জানুয়ারি সুইডেনে ছুটির দিন। দোসরা জানুয়ারি সকালে ঘুম থেকে উঠে কাজে যেতে হবে।
কী প্রত্যাশা হ্যালো ২০২৪ সাল, তোমার থেকে?
পুরানো সেই ২০২৩ সালকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাবে নতুন বছর নতুন প্রত্যাশায়। আমরা যূথবদ্ধ হয়ে বিশ্ব ফোরামের বন্ধুরা নতুন দিগন্তের দ্বার খুলে দেই শুভ ও মুক্ত চিন্তায়, নতুন বছরের প্রত্যাশায়।
একটি শান্তি ও স্বস্তিপূর্ণ সময়, একটি দুর্নীতি ও অনীতিমুক্ত সমাজ, একটি সুস্থ ও অভাবমুক্ত জীবনের এক নতুন পথচলা হোক আমাদের সকলের প্রত্যাশা, সেই সাথে স্বাগত নতুন ইংরেজি নববর্ষ ২০২৪। সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা, অভিনন্দন ও ভালোবাসা জানাচ্ছি।
লেখক : সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। ৎধযসধহ.সৎরফযধ@মসধরষ.পড়স