প্রকাশ : ২৬ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
বিশ্বজুড়ে মানসিক অশান্তি, দুঃখের দহনে করুণ রোদনে তিলে তিলে ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে অসংখ্য তরুণ-তরুণীর জীবন। নির্জনতা, ধৈর্য, নির্মমতার ব্যথা বুকে চাপিয়ে ধুঁকে ধুঁকে একাকীত্বের জীবন পার করছে মানুষ জাতি। ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে মানসিক ভারসাম্য এবং নিজের উপর বিশ্বাস হারিয়ে করছে অনেকে আত্মহত্যা পর্যন্ত। ঠিক একই সময় অন্যদিকে একই বিশ্বের এক প্রান্তে চলছে লুটপাট, দুর্নীতি, রাহাজানি, হয়রানি এমনকি ডাকাতি। জাতির দুর্দিনে অবৈধ অর্থের প্রাসাদ গড়ছে অনেকে। মানব জাতির এই দুর্দিনে যারা কুণ্ডকর্মে লিপ্ত, তাদেরকে যদি আমরা সঠিক পথ দেখাতে ব্যর্থ হই, তবে জাতি হিসেবে আমরা সবাই হবো নির্লজ্জ, বেহায়া এবং বেশরম। অনেকে পেটের দায়ে অন্যায় করে। এমন লোকের অভাব নেই মেনে নিলাম, কিন্তু যারা লোভণ্ডলালসা এবং বিলাসের জন্যে অন্যায় করে কীভাবে মেনে নিবো তাদেরকে? এরা পেটের দায়ে নয় এরা অন্যায় করে চলছে এদের পাশবিক ও বিকৃত রুচির তৃপ্তি মিটাতে।
> কিন্তু এই তৃপ্তিটা কতক্ষণ রাখতে পারবে সেটার জন্যও কি ভাবা হচ্ছে? এই কাজগুলো যারা করছে, তারা মনেই করে না যে এটা অন্যায়, কারণ সমাজের সব অন্যায় এদের কাছে এখন ন্যায়সঙ্গত। তাদের ধারণা, তারা সৃজনশীল কর্মের মধ্যেই আছে। তাদের চোখে এখন আঙ্গুল দিয়ে জানাতে হবে যে, এ কাজগুলো সৃজনশীল বা বাস্তবসম্মত নয়। একই সাথে জানতে হবে কেন তাদেরকে এটা আকর্ষণ করছে। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, সমাজ এখন আপদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। এটার সীমাহীনতা কঠিন হয়ে আরও গভীর সীমাহীনতায় ছড়িয়ে পড়েছে। সর্বজনীন দুর্নীতি হচ্ছে, যা সর্বজনীন নয়। কারণ দুর্নীতি কখনো চিরস্থায়ী হতে পারে না।
> আসলে কোথাও এর তেমন শক্ত জবাবদিহিতা নেই। আমি মনে করি, সুশাসনের মূলনীতি হচ্ছে জবাবদিহিতা বা দায়বদ্ধতা। এটি প্রতিষ্ঠা না করা গেলে সুশাসন আসবে না। এটা আসতে হবে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে।
> দুর্নীতির সব সঞ্চয় জমা হয় শেষে ব্যাংকে, আসুন জেনে নেই কী হচ্ছে সেখানে। দেখা যাচ্ছে, সরকার কর্তৃক একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়ার পর ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ৮০ শতাংশ, আগে যা ছিল ১ দশমিক ৫ শতাংশ। শুধু একজন চেয়ারম্যান ও এমডির কারণে ব্যাংকটির এমন অবস্থা হয়ে গেল! ৮০ শতাংশ ঋণ যখন খেলাপি হয়ে গেল, তখন তো সরকারের উচিত কাউকে না কাউকে দায়ী করা। আর এত ঋণ যে খেলাপি হয়ে গেল, তা তো কোনো শাখা ব্যবস্থাপকের জন্যে হয়নি। চেয়ারম্যান-এমডি ছাড়া একটি ব্যাংকে এত খেলাপি হতে পারে না। কিন্তু চেয়ারম্যান দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তার মানে চেয়ারম্যানকে যারা রক্ষা করছেন, তারা দুদকের চেয়ে শক্তিশালী। এ কারণে তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
> মূলত ব্যাংক খাতকে রাজনীতিকরণ করতেই এমন পরিবর্তন। কিন্তু ব্যাংক রাজনীতির জায়গা না। একটি ব্যাংকের শতকরা ১০ ভাগ টাকা মালিকের বা সরকারের। বাকি টাকা পুরোটাই জনগণের আমানত। এই আমানতের টাকা সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর যত চাপ, যাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমানতকারীদের স্বার্থ না দেখে যারা লুটপাট করে তাদের স্বার্থ দেখে। এটা বলতে ভালো না দেখালেও বাস্তবটা এটাই।
> সমস্যা হচ্ছে আমানতকারীদের স্বার্থ দেখার জন্যে যারা আছে তারাও দুর্নীতিগ্রস্ত। তাই বলতে হয়, অভাগা দেশের মানুষের চোখ থাকতেও তারা অন্ধ। নাহলে এ সকল ব্যাংক চেয়ারম্যানদের কিছু হতো। সবকিছু জানার পর মনে প্রশ্ন উদয় হয়েছে, যেমন এদেরকে কারা রক্ষা করছে, কিসের বিনিময়ে রক্ষা করছে? আমার প্রশ্ন, দুর্নীতি কি তাহলে অর্থনীতি, পৌরনীতি, রাজনীতির মতই একটি নীতি? নাকি সবকিছুর সমন্বয়ে গঠিত এই নীতি, যাকে ধরতে গেলে যায় না ধরা, ছুঁতে গেলে যায় না ছোঁয়া। নাকি এটা জাতির হৃদয়ে লতার মতো জড়িয়ে পড়েছে!
> আমার পরের প্রশ্ন অভাগা তরুণ প্রজন্মের কী হবে?
> দেশভরা নেতা আছে, কিন্তু নেতার অনুসারী নেই। নেতা তার মনুষ্যত্ব, লজ্জা-শরম এবং বিশ্বস্ততা হারিয়েছে। নেতা বলছেন কী করতে হবে, কিন্তু কে কার কথা শোনে। জনগণ বুঝে গেছে, নেতার নেতৃত্বের সুযোগ করে দিলে সে করবে পরিবর্তন নিজের এবং পরিবারের।
> সেক্ষেত্রে জনগণের কী হবে? হয়ত সবাই বলবে, তাহলে মিটিংয়ে নেতার বক্তৃতা শুনতে এত লোক জড়ো হয় কেন? মাওলানার ওয়াজ শুনতেও জনগণ যায়, তার অর্থ এই নয় যে, তিনি যা বলছেন জনগণ সেভাবে কাজ করছে। জনগণ স্ট্রিট স্মার্ট, তাই তারা চোখ কান খোলা রেখে সব শুনছে, দেখছে এবং তারপর তাদের সিদ্ধান্তে উপনীত হচ্ছে।
> লন্ডন বা ঢাকার লাক্সারি পরিবেশে বসে যেসব নেতা অর্ডার করছে কী করতে হবে তাদের কথা কেউ আর শুনছে না। বর্তমানে ক্ষমতায় যে সরকার তার কথাও হয়তো জনগণ শুনছে না। তবে সরকারের বেতনভুক্ত কর্মচারীরা তাদের রুটিন অনুযায়ী কাজ করে চলছে। দেশের রাজনীতিতে শুধু ধান্দাবাজি, যার কারণে নেতার পেছনে কোনো অনুসারী নেই, আছে শুধু চামচারা। অনেকেই সরকারের সমালোচনা করে বলেছে, দেশে আজ ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জনগণের মধ্যে একটা ঐকমত্য গড়ে উঠেছে। তাদের এগিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সরকার যেভাবে দেশ চালাতে চাচ্ছে, সেটা আর পারবে না। মানুষ একদিন দাঁড়িয়ে বলবে, এটা একেবারে অসহ্য হয়ে গেছে। এর পরিবর্তন আনতে হবে। এখন কথা বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? জনগণ? কে সেই জনগণ? বিদেশিরা নাকি দেশের ১৭ কোটি মানুষ?
> জনগণ তো এখন আগের মত বোকা নয়, যখন যার যা খুশি বলবে আর তারা ঝাঁপিয়ে পড়বে। ও দিন গুজার গেয়া। একটি গানের কলি মনে পড়ে গেলো “দয়াল বাবা কলা খাবা গাছ লাগাইয়া খাও।” কই দেশের প্রতি যদি সত্যিই এত দরদ তাহলে আগের সেই শহিদ ভাইদের মত করে কেন আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ছি না? কারণ আমরা জনগণ বার বার শুধু জর্জরিত, শোষিত, নিপীড়িত এবং নির্যাতিত। আমাদের ভালোবাসা ঘৃণায় পরিণত হয়েছে। হতাশায় নিমজ্জিত আমাদের সমস্ত শরীর।
> মন বলে শোষণ, শাসন আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠে সোচ্চার হই আর ঝাঁপিয়ে পড়ি, কিন্তু না তা করব না। কারণ আমরা শান্তিপ্রিয় শান্ত জনগণ।
> আমরা এখন ভীত হয়ে গেছি, প্রতিবাদ করতে ভুলে গেছি আর অপমান সইতে শিখেছি। নীতিহীন এবং পথভ্রষ্ট নেতার নেতৃত্বের কারণে আমরা এখন নিজের দেশে পরাধীন। আমাদের নেতা আছে তবে নেই নেতৃত্ব। আমরা এখন স্বাধীন দেশে পরাধীন, কিছু হলেই বিভিন্ন দূতাবাসে গিয়ে নালিশ করি। অতীতেও এমনটি ছিল এখন আরো বেড়েছে। এমন একটি ক্রাইসিস সময় আমাকে লিখেছে একজন তরুন এবং ভবিষ্যতের লিডার যে ভাবছে তার স্বপ্নীল সোনার বাংলার কথা। লিখাটির পুরোটাই আমি তুলে ধরলাম সকলের অবগতির জন্য।
“প্রিয় স্যার,
খোলা চিঠি দিলাম আপনার কাছে--
আমি মোঃ গোলাম সারোয়ার সাইমুম, কম্পিউটার বিজ্ঞান প্রকৌশল বিভাগের একজন সাধারণ ছাত্র। সাম্প্রতিক সময় আমি একটা বই (দ্যা কেমিস্ট্রি অফ সিভিলাইজেশন-ম্যাসেজ ফ্রম ২০২৩) লিখেছি মানব সভ্যতার উপর। যেখানে আপনাকেও উল্লেখ করেছি, যেহেতু আপনি অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন বিভিন্ন ভাবে। তো সেই বইয়ে একটা সভ্যতা কীভাবে বিকশিত হয় এবং কীভাবে ধ্বংস হয় এ বিষয়গুলোকে রাসায়নিক বিক্রিয়ার সমীকরণের মাধ্যমে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। বইটি প্রকাশ করার অর্থনৈতিক ক্ষমতা আমার এখন নেই। আমি আমার বইয়ে এ ধরনের অনেক অনেক বিষয় ব্যাখ্যা করেছি, কিন্তু প্রকাশ যেহেতু এখন হচ্ছে না তাই আমার দেশের প্রতি কিছু বার্তা আলাদাভাবে পৌঁছে দিতে চাই।
> হে আমার প্রিয় বাংলাদেশ, একটু চারদিকে দেখো, কী দেখতে পেরেছো? শক্তিশালীরা কীভাবে দুর্বলদের অত্যাচার করছে, দেখতে পেরেছো কি? দেখো যে মিয়ানমার যখন রোহিঙ্গাদের উপর গণহত্যা চালালো, কেউ কিছুই করতে পারেনি। ইউক্রেনে আন্তর্জাতিক রাজনীতির নোংরা খেলায় সাধারণ মানুষ মারা যাচ্ছে, কেউ কিছুই করতে পারেনি, পারবেও না। ফিলিস্তিনে গণহত্যা চলছে, কেউ কিছু করতে পারছে না। তো এসব দেখে কী মনে হচ্ছে?
> আমরা মানব সভ্যতার এমন এক পর্যায়ে আছি, যেখানে ধ্বংসযজ্ঞ, যুদ্ধ বা প্রাকৃতিক বিপর্যয় যেন অনিবার্য। আমরা যেন ধ্বংসের খুবই কাছাকাছি আছি। আর সামাজিক পরিস্থিতি দেখলে বোঝা যায় যে, আমরা অনেক আগেই ধ্বংসের মধ্যে পতিত হয়েছি।
> এখন এই সময়ে আমাদের দেশের এই রাজনৈতিক বিপর্যয়, আবার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ তাহলে কোথায় যাবে? আমি অতীতে ধৈর্য শব্দটিকেই ঘৃণা করতাম, শুনতেই পারতাম না। এখন বুঝি যে এর গুরুত্ব কতটুকু। এখন সারাবিশ্বে ধ্বংসযজ্ঞ চলছে, কোথাও কেউই যেন ভালো নেই এমন অবস্থা। বন্যা, ভূমিকম্প, তাপমাত্রা বৃদ্ধি, তীব্র শীত, যুদ্ধ সহ সবকিছু পুরো বিশ্বকে ব্যস্ত করে রেখেছে। তো এমন এক সময়ে আমাদের ধৈর্য ধারণ করা ছাড়া কোনো উপায় নাই।
> আমার বইয়ে সভ্যতার এই পর্যায়টিকে উপস্থাপন করেছি ‘ধ্বংসের সমীকরণ’ হিসেবে। তো এই পরিস্থিতির মধ্যে আমরা যদি নিজেদের দেশের ভিতর কৃত্রিম সংকট নতুন করে তৈরি করি, তাহলে আমরা যেন নিজেদেরকে সেই ধ্বংসের সমীকরণে ঠেলে দিচ্ছি, ধ্বংসের দিকে নিজেদের গতিবৃদ্ধি করে এগিয়ে যাচ্ছি। এই সময়ে না মানবতার দোহাই, না কোনো ধর্মের দোহাই, না কোনো রাজনৈতিক দলের দোহাই, না বর্ণের দোহাই কাজ করবে। ধ্বংসযজ্ঞ ঘটলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটা যেনো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরু। তো আমরা কি পারবো নিজেদের দেশকে রক্ষা করতে, কেউ যদি আমাদের দেশের দিকে কুদৃষ্টিতে তাকায়? কারণ তারা তো শক্তিশালী, হুটহাট সুযোগ পেলেই যেকোনো
দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাইতে পারে। তারপর সে দেশ পরিপূর্ণভাবে লুট করে চলেও যেতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যে একটু নজর দিন।
> ভালোভাবে বিবেচনা করুন, বিষয়টি এমন হচ্ছে যেন ‘ভূমি দখলের প্রতিযোগিতা!’ যার যত শক্তি সে তত বেশি জায়গা দখল করছে বা করবে। রোহিঙ্গারা ভূমি হারিয়েছে, ভারত হারিয়েছে চীনের কাছে, ইউক্রেন হারাচ্ছে, ফিলিস্তিন হারাচ্ছে, এসবের পরিবর্তী শিকার কে হতে চলেছে? আর আমাদের লক্ষ্য এখন কী হওয়া উচিত?
> নিজের দেশের সম্পর্কে, পরিস্থিতি সম্পর্কে অনেক কিছুই অনেকেই বলছে, কোনো কাজ হচ্ছে না, খবরের কাগজে লেখালিখির শেষ নেই, তবুও কাজ হচ্ছে না। তবুও এসবের মাঝেই আমার দেশের প্রতি শেষে আমার একটাই আবেদন, দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকটের সমাধান করুন এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির উপর লক্ষ্য রাখুন! এই পরিস্থিতি খুবই ভয়ঙ্কর। আমরা অন্যের কোনো কিছুই ছিনিয়ে নিতে চাই না বা দখল করতে চাই না, তবে কেউ যেন আমাদের দেশের মাটিতে পা রাখার আগে হাজার বার ভাবে এই রকম শক্তিশালী হতে চাই। যুদ্ধ তো বহুমুখী, যুদ্ধের ময়দানে যুদ্ধ তো আছেই, এর বাইরেও আছে তথ্যের যুদ্ধ, মিডিয়ার যুদ্ধ। আবার একে অপরকে ‘টেরোরিস্ট অর্গানাইজেশন!’ বা জঙ্গিগোষ্ঠী প্রমাণ করার প্রতিযোগিতা, মানসিক বিপর্যয় ঘটানোর চেষ্টা। তো এজন্যেই বললাম, এমন শক্তিশালী হতে হবে যেনো দেশের মাটিতে পা ফেলার আগে হাজার বার ভাবে।
ইতি-
মোঃ গোলাম সারোয়ার সাইমুম, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।”
> সাইমুমের চিঠি পড়ার পর কিছুক্ষণের জন্য অতীত ভ্রমণ করলাম। এক সময় বিদেশিরা এসে আমাদের সম্পদ লুটে নিয়ে যেত, এখন আমরা নিজেরাই লুট করে বিদেশে পাচার করছি, তাদের আর কষ্ট করে লুটপাট করা লাগছে না। তবে তারা জনগণের ভূমিকা পালন করছে এবং বলছে কী করতে হবে আর কী না করতে হবে, এ লজ্জা কোথায় ঢাকি? আমিও সাইমুমের মত স্বপ্ন দেখি, আমিও চাই বিদেশিদের পদচারণা সোনার বাংলায় হোক, কিন্তু নাগরিকের দায়ভার নাগরিকের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকুক। আজ আমরা যদি সত্যিই নিজ দেশে পরাধীন হয়ে যাই, তাহলে আমাদের অস্তিত্ব, আমাদের ব্যক্তিত্ব, আমাদের কর্তৃত্ব, সবই তিলে তিলে ধ্বংস হয়ে যাবে, সেটা তো মেনে নেওয়া সম্ভব না। জাগো বাংলাদেশ জাগো, আরেকটিবার ভাবো।
> কিছু কথা মনে রাখতে হবে, এই দেশটাকে আমরা কীভাবে পেয়েছি, এই দেশের মানুষ কারা? আমাদের জাতীয় পরিচয় কী, কীভাবে আমরা তাকে সোনার বাংলা করতে পারবো-- ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ভাবা দরকার। দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ পেতে ডিজিটালকরণ করা আশু প্রয়োজন, যেমন ক্যাশ টাকা তুলে নিতে হবে দেশ থেকে। আমাদের সীমার বাইরে, আকাশের ওপরে গিয়ে সাংঘাতিক কিছু কল্পনা করলে তো লাভ হবে না।
> ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই দেশে সম্পদের সীমাবদ্ধ থাকা সত্ত্বেও আমরা সারাবিশ্বের মধ্যে নিজেদের প্রচারিত ও প্রসারিত করতে শুরু করেছি। পজিটিভভাবে সবাইকে ভাবতে হবে। এখন শুধু দুর্নীতি, অনীতির কারণে যে ভালো আবেগটুকু, তার সঙ্গে প্রাপ্তির কোনো সম্পর্ক নেই। অথচ তৃপ্তিটাই বড় হয়ে ওঠার কথা। কিন্তু ইদানীং অনেকেই তৃপ্তির চেয়ে প্রাপ্তির পেছনে বেশি দৌড়াচ্ছে।
> যার কারণে সেই প্রাপ্তিটা উপযুক্ত পরিমাণে তাদের কাছে আসছে না, তারা নিজেদের কিছুটা ব্যর্থ মনে করছে। আমি বিষয়টি কিছুটা অন্যভাবে মনে করি। আমি মনে করি, সৃজনশীল ব্যক্তিদের দরকার হলো সৃজন করা। সৃজন যখন মানুষের কাছে আদৃত হবে, মানুষের কাছে যখন প্রতিষ্ঠিত হবে, মনে হবে আমার জীবনে না চাইতেও আমি অনেক কিছু পেয়ে গেলাম।
> আমাদের সব থাকতেও কেন যেন মনে হচ্ছে অনেক কিছুই নেই। যেমন স্বামী তার স্ত্রীকে বলছে, বেবি, আমি তোমাকে ভালোবাসি। স্ত্রী উত্তরে বলছে, কোথায় কীভাবে এবং কখন, আমি তো কিছুই বুঝতে, দেখতে, শুনতে বা অনুভব করতে পারছি না। ঘটনাটা তাহলে কোথায় গিয়ে দাঁড়ালো, মনে হচ্ছে ছুটির ঘণ্টা বাজতে শুরু হয়েছে।
> পৃথিবীটা বড্ড মায়ার জায়গা, ছেড়ে যেতে কষ্ট হবে, তবুও ছেড়ে যেতে হবে। ভাবছি, জীবনে শুধু নিয়েই গেলাম, কিন্তু দিতেও যে হবে এটা কেনো ভুলে গেলাম? সময় কি আছে সুদ আসলে ফেরত দেবার, নাকি সে ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেছে চিরতরে? বিবেক কি তাড়া করছে না? আমাদের সকলের একটু সহানুভূতি দিতে পারে একটি জাতির পরিবর্তন। আসুন সবাই মিলে কিছু করি, সার্থক আমরা হবই।
লেখক : রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। [email protected]