প্রকাশ : ২২ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
দক্ষিণ কোরিয়াতে অবস্থানরত বাংলাদেশী অভিবাসীদের জন্যে নিবেদিতপ্রাণ, সিউলের গিম্পু সিটিতে অবস্থিত বিদেশীদের সহায়তা কেন্দ্রের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের প্রধান সমন্বয়ক রনেল চাকমা ননী কর্তৃক কোরিয়ান ভাষায় লিখিত 'চিটাগং অনডক বার্গী হানগুক-উল নালদা কোরিয়াতে ওড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের বার্গী'-এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে উদ্বোধনী টক শো, বুক কনসার্ট গত ৭ নভেম্বর শনিবার ২০২৩ যথাযথভাবে সম্পন্ন হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যথাক্রমে কোরিয়ান সংসদ সদস্য ও লোকাল এমপি সেং হিয়োক পার্ক, রাজধানী সিউলের গিম্পু সিটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও সাংস্কৃতিক কর্মীবৃন্দ। এ ছাড়াও কোরিয়াতে অবস্থানরত পাহাড়ি-বাঙালি সহ মোট দুশতাধিক লোক এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বিকেল সাড়ে তিনটায় অটোগ্রাফ গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে কনসার্ট শুরু হয়। বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ছিলো শুভেচ্ছা বক্তব্য, আলোচনা, লেখকের সাথে সরাসরি কথোপকথন পর্ব । ৫টা ৩০মিনিট থেকে ৬টা পর্যম্ত 'কোরিয়া জুম্ম শিল্পীগোষ্ঠী' ও কোরিয়াতে অবস্থানরত জুম্ম শিশুদের নাট্যদল 'বার্গী'-এর নৃত্য পরিবেশন, নিখিল চাকমার লাইভণ্ডগান পরিবেশন সহ মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠিত হয়।
পরে বহু সংস্কৃতি বিষয়ক গবেষক ও বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. গিয়ংসকের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন লেখক রনেল চাকমা ননী ও কো-লেখক (মি ইয়ং), প্রবাসী বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ড. ইয়ঙ ইল, মানবাধিকার কর্মী জেহুন, শরণার্থী বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আব্রাহাম লি।
লেখক রনেল চাকমা ননী তার বক্তব্য বলেন, আমি জাতির একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব নই এবং এই বই কোনো গবেষণামূলক কিছু নয়, যদিও যথাসম্ভব আমার সিনিয়রদের লেখা ও নির্ভরযোগ্য সংগঠনের প্রকাশিত উপাত্ত ব্যবহার করতে চেষ্টা করেছি। জুম্ম জাতির পরিচয়, সমাজ-সংস্কৃতি, ধর্ম ও রাজনৈতিক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, আমার দেখা জাতীয় আন্দোলনের ধারাবাহিক বিবর্তনের প্রেক্ষাপট এবং যেসব বিষয় বা ঘটনা প্রবাহের সাথে আমি নিজেই সরাসরি জড়িত ছিলাম, সেসব বিষয়ে আলোকপাত করতে চেষ্টা করেছি।
তিনি আরো বলেন, জাতি ও সংস্কৃতি নিয়ে বর্ণনা করতে গিয়ে চাকমা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়ের কথা বারবার এসেছে, এমনকি রাজা বাবুর দু-একটা গানও অনুবাদ করে বইয়ে স্থান দিয়েছি। আমার ছোটবেলার রেশ টানতে গিয়ে লক্ষণ মামু (কবি সুহৃদ চাকমা)-এর বার্গী কবিতাও অনুবাদ করে বইয়ে স্থান দেয়া হয়েছে।
কোরিয়াতে কেন কিভাবে আসা হলো এই প্রশ্নে তিনি বলেন, কোরিয়াতে জুম্মদের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার হাসি-কান্নার গল্প, আমার স্বপ্ন ইত্যাদি বিষয়ে যতটুকু সম্ভব তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি, যাতে করে আমাদের দ্বিতীয় প্রজন্ম সহজভাবে তাদের জাতি-সমাজ-ধর্ম সম্পর্কে বুঝতে পারে । কোরিয়ানরাও এই প্রকাশনার মাধ্যমে জুম্ম তথা পার্বত্য-চট্টলার বিষয়ে বিশদভাবে অবহিত হবে বলে আমার বিশ্বাস।
২৯২ পৃষ্ঠার এই বইয়ের প্রথমার্ধেই উল্লেখ করা হয়েছে, “এই বই কোনো জাতি-গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল ও বিশেষ রাজনৈতিক মতামতের প্রতিনিধিত্ব করছে না, সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে নিজের অভিজ্ঞতা প্রকাশের অভিপ্রায় মাত্র।'' বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী জয়দেব রোয়াজা তার আঁকা ছবি দিয়ে বইটার শ্রীবৃদ্ধি করতে সহযোগিতা করেছেন, সমাজকর্মী এনভিল চাকমা তাঁর তোলা আলোকচিত্র ব্যবহার করার অনুমতি দিয়ে বইটা সমাপ্ত করতে সহযোগিতা করেছেন।
উল্লেখ্য যে, এই বই প্রকাশ করতে কোরিয়ার বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ অনেকেই নিজ নিজ বলয় থেকে সহযোগিতা করেছেন।
শেষে লেখক তার পরিবার ও দক্ষিণ কোরিয়ার জুম্ম সমাজ ও উপস্থিত সকল বাংলাদেশী এবং কোরিয়ানদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।