প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০
রাষ্ট্রদূত (Ambassador) একজন উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবিশেষ, যিনি কোনো নির্দিষ্ট দেশের সরকারের পক্ষ থেকে অন্য কোনো স্বাধীন দেশ, সরকার কিংবা আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে কূটনৈতিক কার্যসম্পাদনের উদ্দেশ্যে প্রেরিত হন।
একজন রাষ্ট্রদূত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো দেশের প্রতিনিধিত্ব করে যাবতীয় রাষ্ট্রীয় কার্যাদি সম্পন্ন করেন। সাধারণত তিনি নিজ দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য কাজ করেন। কর্মরত দেশের সরকারের নিকট নিজ দেশের কূটনীতি সম্পর্কিত বিষয়গুলো তুলে ধরেন এবং দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি বাস্তবায়নে সদা তৎপর থাকেন।
বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নয়ন ঘটায় সরাসরি কিংবা মুহূর্তের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভবপর। তারপরও এটি সত্য যে, অনেক সমস্যা রয়েছে যেখানে সরাসরি যোগাযোগ অবশ্যই রক্ষা করতে হয়। এখানেই রাষ্ট্রদূতের উপযোগিতা ও প্রয়োজনীয়তা বিদ্যমান।
একজন রাষ্ট্রদূতকে বৈদেশিক রাষ্ট্রে অনির্ধারিতভাবে কয়েক বছর অবস্থান করতে হয় এবং তিনি ওই রাষ্ট্রের যাবতীয় আইন-কানুন, রীতি-নীতি, সমাজব্যবস্থা ইত্যাদি সম্পর্কে যথেষ্ট অবগত থাকেন। তিনি যেখানে কাজ করেন তা দূতাবাস নামে পরিচিত। সাধারণত দূতাবাস বৈদেশিক রাষ্ট্র কর্তৃক বরাদ্দকৃত এবং তা দেশটির রাজধানী এলাকায় অবস্থিত। তাকে কূটনৈতিক কর্মকাণ্ড ও কর্তব্য কাজে সহযোগিতার জন্য একদল প্রশিক্ষিত ব্যক্তিকে নিয়োগ করা হয়। কিছু উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তি দূতাবাসের কর্মকর্তা নামে পরিচিত।
সচরাচর উভয় দেশের রাষ্ট্রদূত এবং অনেক দূতাবাস কর্মী ব্যাপক কূটনৈতিক সুবিধাদি ভোগ করে থাকেন। বিদেশে অবস্থানকালীন সময়ে তারা গ্রেফতার কিংবা বিচারের মুখোমুখি হন না। শাস্তি হিসেবে তাদেরকে কেবলমাত্র নিজ দেশে ফেরৎ পাঠানো হয়ে থাকে। কমনওয়েলথভুক্ত দেশসমূহের রাষ্ট্রদূতরা হাইকমিশনার নামে পরিচিত। রাষ্ট্রদূত নামেই হোক আর হাইকমিশনার নামেই হোক, দায়িত্ব তাদের একই।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো সুইডিশ দূতাবাসের দায়িত্ব এবং কর্তব্য সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করতেই হুড়হুড় করে সব পেয়ে গেলাম। সুইডেনের বাইরে বসবাসরত সুইডিশদের সমস্ত দায়ভার, ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত বিষয়ে সাহায্য করা, নাগরিকের নিরাপত্তার দিকে নজর রাখা, সাংস্কৃতিক এবং শিক্ষা প্রশিক্ষণের সুযোগ সুবিধাসহ অন্যান্য বিষয়ের ওপর নজর রাখা এবং সকল ধরনের সাহায্যের হাত বাড়ানোই সুইডিশ দূতাবাসের কাজ।
সুইডেনের মত বাংলাদেশেরও অনেক দূতাবাস রয়েছে। কতগুলো দূতাবাস বিশ্বের বিভিন্ন দেশজুড়ে আছে জনগণ সেটা সঠিকভাবে জানতে চায়। জানতে চায় দেশের কী পরিমাণ অর্থ এদের পেছনে প্রতিবছর খরচ হয় এবং তাদের কাজ কী। যদিও বাংলাদেশ দূতাবাসের একই ধরনের দায়িত্ব এবং কর্তব্য থাকা উচিত বলে আমি মনে করি।
আমি নিজে রাজনীতি করি না, যদিও রাজনৈতিক পরিবারে আমার জন্ম। আমার নানা বাড়ি নড়াইল এবং দাদা বাড়ি মাগুরা। দুইজনই প্রতিবাদমুখর, বিদ্রোহী রাজনীতিবিদ ছিলেন। ব্রিটিশ তাড়ানো থেকে শুরু এবং শেষে পাকিস্তান, যদিও দাদা আমার জন্মের আগেই পৃথিবী ছেড়েছেন। কিন্তু তার অসমাপ্ত বিদ্রোহের চেতনার ঢেউ শেষ হয়নি আজও।
স্বাভাবিকভাবেই ভাসানী থেকে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির ধারা বয়ে চলেছে, যা আজ আওয়ামী লীগ নামে পরিচিত। স্বাধীনতার চেতনা ছিল জীবনের গতি, সেই গতির ধারাবাহিকতা এখনও হৃদয়ে চলমান রয়েছে। দেশের বাইরে বসবাস, সে কারণে দেশের জন্য সব সময় হৃদয়-মন-প্রাণ দিতে কৃপণতা কখনও হয়নি হবে না এ বিষয় নিশ্চিত। অনেকে বলে দেশের এই দুর্দিনে কেন আমি এবং আমার পরিবার নীরব? শুধু সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণই কি সবকিছু? না, দেশকে ভালোবাসতে, দেশকে গড়তে নানাভাবে সাহায্য করার সুযোগ রয়েছে, আমি এবং আমার পরিবার সেটাই বেছে নিয়েছি। আমি মনে করি, দূরে থেকেও অনেক কিছু করা সম্ভব যার প্রমাণ আমি নিজেই। দেশের কুৎসিত রাজনীতি আমাকে এবং আমার পরিবারকে ইদানীং বেশ ভাবাতে শুরু করেছে, যার ফলে লেখালিখির মধ্য দিয়ে অনেক সময় সীমাহীন দুর্নীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নৈতিকতার অবক্ষয়, জনগণের ওপর জুলুম বা অবিচার এসব বিষয়ের উপর চেষ্টা করি শালীনতা এবং সৃজনশীলতার মধ্য দিয়ে লিখতে। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে চাই, রাজনৈতিক দলগুলো সত্বর একটি গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক এবং গণতান্ত্রিক অবকাঠামো গড়ে তুলবে।
আজ আমার বড় ভাইও বেশ দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে একটি চিঠি লিখেছেন। চিঠিখানা সুইডেনের বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে সম্বোধন করলেও আমার চোখে এ চিঠি বিশ্বের সকল বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের জন্যে প্রযোজ্য। বড় ভাইয়ের চিঠি পরিষ্কার বার্তা বহন করেছে। দূতাবাস কর্তৃপক্ষ শুধু নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত। তারা কীভাবে নিজ নিজ পরিবারকে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দিবে সেটাই তাদের প্রধান কাজ-- এমন কথাও উঠেছে।
আমি এও জানতে পেরেছি, অনেকে দূতাবাসের বাসা-বাড়ি ভাড়া দেয়ার কারণে ধরা খেয়েছে, যা সুইডেনের খবরের কাগজে পড়েছি। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কি জানে না দূতাবাসের দায়িত্বের গাফিলতির কথা? তা যদি না জেনে থাকে, তবে দয়া করে তদন্ত করুন এবং যে কাজের জন্যে তাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে তা যেন তারা সঠিকভাবে পালন করেন সে বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করতে নির্দেশ দিন। দূতাবাসের কাজ তারা তাদের মূল্যবান সময় ব্যয় করবেন দেশ ও জাতির স্বার্থে। আমি বিনীতভাবে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং তার মন্ত্রণালয়ের আশু দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। কূটনৈতিক চর্চার উপর বেস্ট প্র্যাক্টিস না করে যদি শুধু চামচামি করা হয়, তবে অভাগা দেশের হবে কী? বড় ভাইয়ের চিঠিখানা জাতি এবং রাষ্ট্রের অবগতির জন্য তুলে ধরলাম পরিবর্তনের সুবাদে;
“Dear Ambassador,
First time, I saw the father of the nation as school boy in 1963, at Gopalganj and I greatly admired him and was deeply inspired by him.
Last time, I met, shook hand and talked to him in 1973, in Jhenaidah as a cadet of Jhenaidah Cadet College, and felt very fortunate and proud.
In 1974, I left Bangladesh with a scholarship for higher studies.
During the years as a student and professor of Biomedical Engineering, BME in Polnd, UK nd Sweden, Japan, US, UK, Italy, India and SE Asia, Africa, I have worked for Bangladesh with the development and education of clinical engineering, including starting BME programme at BUET., Telemedicine and e-health and e-education.
With the cooperation of my class friend Ambassador Azizul Haque in Stockholm, we at KTH could enhance our R&D work to promote ICT for rural development in Bangladesh.
When Sheikh Hasina visited Stockholm during Sweden EU-presidency in 2009, I was introduced to her by the Ambassador then, and had a chance for brief discussions with her about our work in Bangladesh. Those ambassadors were truly active to serve the people of Bangladesh!
With all deep and due respect for Bangabandhu, I feel sad that, presently, our embassy far too often engages in organizing activities related to celebrating his and his family members, rather than to greater causes of the nation.
Sheikh Mujib struggled to emancipate all the people of BD, and not only his own family members, who are often misruling the country as Mayors and MPs.
I hope, you will kindly inform my opinion to the Government of Bangladesh.
With best wishes and kind regards,
Dr. Mannan Mridha M.Sc. Eng., M.Ed. Ph.D.
Fellow of the Royal Swedish Academy
Fellow of the Royal Eng. Society,
Fellow of the Japan Society for Promoting Sciences
Former WHO consultant
Former Swedish coordinator of EU Research project Horizon 2021”
আমি বহু বছর বাংলাদেশের বাইরে। শুনেছি মাঝে মধ্যে তাদের অনুষ্ঠান হয়, কিন্তু কোনোদিন আমার সঙ্গে তারা যোগাযোগ করেননি। কথা হয়েছিল কয়েক বছর আগে আমার ছেলে-মেয়ে বাংলাদেশের হয়ে টেনিস খেলতে আগ্রহ প্রকাশ করায় আমি সরাসরি বাংলাদেশে টেনিস ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করি। পরে বাংলাদেশ থেকে স্টকহোম দূতাবাসে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে নির্দেশ দেয়ার ফলে তাদের সঙ্গে আমার প্রথম যোগাযোগ হয়।
দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। যার ফলে আমি গত কয়েক বছর আগে একটি আর্টিকেল লিখি। আমার লেখা যারা পড়েছে তাদের থেকে যে সমস্ত কমেন্টস এসেছে তা জেনে অবাক হয়েছি। গোটা বিশ্বে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের আচরণ প্রবাসীদের ক্ষেত্রে খুবই মর্মান্তিক। বাংলাদেশ দূতাবাসের দায়িত্ব, কর্তব্য এবং দূতাবাসের অমানবিক ব্যবহারের কথা জেনে আমি কষ্ট পেয়েছি।
একই সঙ্গে আমার বিবেকে যে রিফ্লেকশনের উদয় হয়েছে সেটা হলো বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা প্রবাসে পড়াশুনা করতে কী করণীয় বা বর্জনীয় সেটা কেন তারা সব সময় আমার থেকে জানতে চায়? কেন তারা বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করে না? কেনই বা ব্যবসায়িক বিষয়ে আমাকে সুইডেন এবং ইউরোপের বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করে? তাহলে দূতাবাস এসব দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ নাকি তাদের টু ডু লিস্টে এ কাজ পড়ে না?
পাসপোর্ট ইস্যু ছাড়া আর কী কী দায়িত্ব তাদের রয়েছে সেটা অনেক চেষ্টা করেও সঠিক তথ্য জানতে ব্যর্থ হয়েছি। শুধু পাসপোর্ট ইস্যুর কাজে যদি এতগুলো কর্মী নিয়োগ হয় এবং তাও যদি সঠিকভাবে কাজটি করতে ব্যর্থ হয়, তবে কী দরকার দেশের অর্থ এভাবে নষ্ট করার?
দেশকে সোনার বাংলা করতে হলে শুধু রিকশাওয়ালা, দূরপরবাসী, জেলে, মুচি, মেথর, কুলি এবং কৃষকদের শোষণ আর শাসন করলে হবে না; সবাইকে সক্রিয়ভাবে মন প্রাণ দিয়ে কাজ করতে হবে। মেহনতি মানুষের জীবনের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে। সেই স্বাধীনতার বিনিময়ে রাষ্ট্রদূত হয়ে আজ বাংলাদেশের দায়িত্ব নেবার সুযোগ হয়েছে। তাদের প্রতি এত বড় অবিচার, আর যাই হোক, জাতির পিতার কন্যা মেনে নিবেন না এ বিশ্বাস আমি করি।
লেখক : রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। [email protected]