প্রকাশ : ১৯ জুলাই ২০২৩, ০০:০০
ভুমধ্যসাগরের বিস্তীর্ণ উপকূল জুড়ে মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা পর্যটন শহর বার্সেলোনায় অনুষ্ঠিত হলো ঐতিহ্যবাহী ‘বাংলার মেলা ২০২৩’।
আশির দশক থেকে বাংলাদেশিদের বসবাস শুরু হয় স্পেনের এই বার্সেলোনা শহরে। বর্তমানে বসবাস করা প্রায় ১৮ হাজার বাংলাদেশির প্রাণের উৎসব হিসেবে খ্যাত এই বাংলার মেলায় প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি ও বিদেশিরা অংশগ্রহণ করেন।
শনিবার (১৫ জুলাই) শহরের প্রাণকেন্দ্রে প্লাসা মাকবায় এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশি সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন কুলতুরাল ই উমানিতারিয়া দে বাংলাদেশ এন কাতালোনিয়ার সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং বাংলাদেশি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত মেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্পেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সারোয়ার মাহমুদ। মেলা কর্তৃপক্ষের আমন্ত্রণে মেলায় গান পরিবেশনের জন্যে আমন্ত্রিত অতিথি শিল্পী হিসেবে বাংলাদেশ থেকে আসেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী আঁখি আলমগীর, প্রিয়াঙ্কা বিশ্বাস ও পুলক অধিকারী।
গত দুই সপ্তাহ ধরে মেলার আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়ে বার্সেলোনা শহরের বাংলাদেশিদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য, উৎসাহ-উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হয়। প্রবাসে জন্ম নেয়া বাংলাদেশি শিশু শিল্পীসহ অন্য শিল্পীরা মেলামঞ্চে বাংলার ঐতিহ্যময় গান ও নৃত্য পরিবেশনের জন্যে দুই সপ্তাহ আগে থেকেই রিহার্সেলের কাজ শুরু করেন।
স্পেনের কাতালোনিয়া অঙ্গরাজ্যের বিভিন্ন শহরসহ যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের অন্যন্য দেশ থেকে বাংলাদেশি শিল্পী ও কলাকুশলী মেলায় উপস্থিত হন।
মেলার দিন দেশীয় ঐতিহ্যবাহী শাড়ি, চুড়ি, সেরোয়ানী, পাঞ্জাবিসহ বিভিন্ন বাংলাদেশি ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সজ্জিত হয়ে উপস্থিত হয় বাংলাদেশি নারী, পুরুষ ও শিশুরা। তাদের উৎসাহ ও আনন্দ এবং বাংলা গানের সুরের মূর্ছনায় মেলা প্রাঙ্গণ হয়ে উঠেছিলো এক চিলতে বাংলাদেশ।
বার্সেলোনা শহরসহ কাতালোনিয়ার অন্যান্য শহর থেকে মেলায় আসে বাংলাদেশিরা। মেলা চলে বিকেল ৬টা থেকে শুরু হয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত। পুরো সময় জুড়ে মেলার মঞ্চে ছিল দেশীয় নৃত্য, গানসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
সন্ধ্যা ৭টার পর কানায় কানায় ভরে উঠে মেলা প্রাঙ্গণ। মেলা উপভোগ করতে বাংলাদেশিদের সঙ্গে দেখা মেলে অনেক বিদেশির। বিদেশিদের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়েছে বাংলার মেলার আনুষ্ঠানিকতা দেখার বিপুল আগ্রহ। মেলায় উপস্থিত থেকে তারা জানতে ও বুঝতে চেয়েছে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে।
দেশীয় পণ্য ও ঐতিহ্যময় বাংলাদেশি খাবারে সজ্জিত ছিলো মেলা মাঠের স্টলগুলো। নানান স্বাদের বাংলার ঐতিহ্যময় খাবারের স্বাদ উপভোগ করতে স্টলগুলোতে ছিলো উপচেপড়া ভিড়। দেশি খাবারের স্বাদ নিতে অনেক স্প্যানিশের সাথে আরো অনেক বিদেশির উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। স্টলগুলো সাজানো হয়েছিল বাংলার ঐতিহ্যময় হরেক রকমের পিঠাপুলি, ফুচকা, চটপটি, ঝালমুড়ি, বিরিয়ানি, কাবাব, সমুচা-সিঙ্গারা, ঝাল চানাচুর ও হালুয়াসহ পান-সুপারি দিয়ে।
মেলার আয়োজক সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন কুলতুরাল ই উমানিতারিয়া দে বাংলাদেশ এন কাতালোনিয়ার সভাপতি আলাউদ্দিন হক নেসার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে স্পেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সারওয়ার মাহমুদ সন্ধ্যা ৭টায় ফিতা কেটে মেলার উদ্বোধন করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেনেরালিদাদ দে কাতালুনিয়া ও বার্সেলোনা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ। এ সময় উপস্থিত অতিথিবৃন্দ সংক্ষেপে বাংলার মেলার তাৎপর্য তুলে ধরে ও মেলাকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়ে বক্তব্য রাখেন।
সম্মিলিত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে মেলা শুরু হওয়ার পর আয়োজক সংগঠনের পরিচিতি পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সাঈদ স্বপন, মিতা, নিগার, মুন্নি ও শারমিনের উপস্থাপনায় শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব।
বার্সেলোনা শহরের স্থানীয় শিল্পীসহ আমন্ত্রিত অতিথি শিল্পীদের দিয়ে সাজানো আনুষ্ঠানিকতায় মেলা মঞ্চ জমজমাট ছিলো মধ্যরাত পর্যন্ত। সংগীত পরিবেশন করেন বাংলাদেশ থেকে আগত অতিথি শিল্পী আঁখি আলমগীর, প্রিয়াঙ্কা বিশ্বাস, পুলক অধিকারী, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আগত নব্বইয়ের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ইমতিয়াজ বাবু। তাদের মন মাতানো গানের পাশাপাশি স্থানীয় শিল্পী অহনা দিবা, রাজু গাজি, তন্ময়, জিনাত শফিক, মঞ্জু স্বপন, ওমি রহমানসহ অন্যান্য শিল্পীর পরিবেশনায় চলে নানা স্বাদের বাংলা গান।
মেলার আয়োজক সংগঠনের সভাপতি আলাউদ্দিন হক নেসা ও মেলা পরিচালনায় সার্বিক তত্ত্ববধানে নিয়োজিত থাকা সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শফিক খান বার্সেলোনায় ঐতিহ্যবাহী এ মেলা অনুষ্ঠানের জন্যে আর্থিকভাবে ও শারীরিকভাবে সহযোগিতা ও শ্রম দেয়ার জন্যে বার্সেলোনা ও সান্তাকলমার বাংলাদেশি কমিউনিটির সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
তারা বলেন, বছর ঘুরে প্রবাসের মাটিতে এই ঐতিহ্যবাহী বাংলার মেলা মঞ্চায়নে আমাদের মূল উদ্দেশ্য আমাদের প্রবাসে বাংলাদেশি প্রজন্মকে বাংলার ঐতিহ্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া। এই ঐতিহ্যবাহী বাংলার মেলার কারণে প্রবাসে বড় হওয়া শিশুরাসহ প্রবাসী বাংলাদেশিরা বছরে অন্তত একদিন বাঙালিয়ানা উৎসবে মেতে উঠতে পারে এবং আমাদের দেশীয় ঐতিহ্যকে স্মরণ করতে পারে। আর সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতেই আমরা প্রতি বছর মেলার আয়োজন করি।