রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ১৯ জুলাই ২০২৩, ০০:০০

মাদ্রিদে মসজিদকেন্দ্রিক সেবা কার্যক্রমে প্রশংসিত বাংলাদেশিরা
কবির আল মাহমুদ ॥

কয়েক দশকে ইউরোপীয় দেশগুলোতে অগণিত মানুষ শান্তির ধর্ম ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। তারা এসব দেশে নির্মাণ করেছেন বহু সুন্দর সুন্দর মসজিদ। ইউরোপে মসজিদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইসলামের বিরুদ্ধে শত্রুতাও বেড়েছে। কোনো কেনো দেশে আক্রমণসহ নতুন করে মসজিদ স্থাপনের বিরোধিতা করা হচ্ছে তীব্রভাবে।

ইউরোপের অন্যতম পর্যটন নির্ভর দেশ স্পেন। স্পেনেও রয়েছে অনেক মসজিদ ও ইসলামী মক্তব-কমপ্লেক্স। এসব মসজিদের অন্যতম হলো রাজধানী মাদ্রিদে বাংলাদেশিদের ধারা পরিচালিত বায়তুল মোকাররম বাংলাদেশ মসজিদ। এটি মাদ্রিদের সবচেয়ে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর বৃহত্তম উপাসনালয়ের পাশাপাশি আশ্রয় এবং সেবা কেন্দ্রও বটে।

বিগত করোনার সময় লকডাউন চলাকালীন অভাবগ্রস্তদের সহায়তার জন্যে বাংলাদেশী মানবাধিকার সংগঠন আসোসিয়েশন ভালিয়েন্তে বাংলার সহযোগিতায় ধারাবাহিক ত্রাণ এবং মসজিদকে উন্মুক্ত করে দেয়ায় বাংলাদেশীসহ মুসলিম সম্প্রদায়ের পাশাপাশি অমুসলিমদের কাছে প্রশংসিত হয় মসজিদ পরিচালনা কমিটি।

কোভিড-১৯ দুর্যোগকালে মুসলিম কমিউনিটির সহায়তা নিয়ে এই কমিটির জরুরি সেবা কার্যক্রম, দাফন কার্যক্রম, খাবার সরবরাহ, স্বাস্থ্যকর খাবারের ফ্যাসিলিটি, ওষুধ সরবরাহ ও পরামর্শ স্পেনের সর্বত্র প্রশংসিত হয়। পরবর্তীতে স্পেন সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা মসজিদ পরিদর্শন করেন। তারা কোভিড-১৯-এর কঠিন সময়ে কঠোর পরিশ্রমের জন্যে কমিটির সবাইকে অভিনন্দন জানান।

ইতিমধ্যে বাংলাদেশীয়দের দ্বারা পর্যটন নগরী বার্সেলোনা এবং মাদ্রিদের নিকটবর্তী স্থানে মসজিদণ্ডমক্তব নির্মাণ করলেও স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী এবং জাতীয় থিয়েটার, রানী সুফিয়া জাদুঘর, জাতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, পিকাসোর ‘গুয়ের্নিকা’ বা প্রাণবন্ত মারকাডো দে সান ফার্নান্দোর মতো আধুনিক শিল্পের মাস্টারপিসের জন্যে বিখ্যাত চিজ, বই এবং ক্রাফ্ট বিয়ার নিয়ে সাংস্কৃতিকভাবে বৈচিত্র্যময় এলাকাগুলোতে বাঙলি পাড়া নামে খ্যাত লাভাপিয়েস এলাকায় ৯০% ব্যবসা-বাণিজ্য বাংলাদেশিদের দখলে। এ যেন মাদ্রিদের বুকে এক টুকরো বাংলাদেশ। চমৎকার পাবলিক ট্রান্সপোর্ট নেটওয়ার্ক রয়েছে এখানে। রাজধানীর প্রবেশদ্বার খ্যাত (পুয়ের্তা দে আতছা)-এ মেট্রো রেল, বাস এবং শহরতলির ট্রেন উভয়ই, যা সমগ্র রাজধানীর যাতায়াতের পাশাপাশি পুরো ইউরোপের যোগাযোগের অনন্য সংযোগস্থল। মাদ্রিদ মিউনিসিপ্যাল সিটি, স্কুল কলেজ এবং ২টি বিশাল পার্ক শিশু-কিশোর এবং শিক্ষার্থীদের জন্যে আদর্শ স্থান।

৪৯২ সালের ১ এপ্রিল। একটি গোষ্ঠীর বিশ্বাসঘাতকতার বলি হয় গ্রানাডার হাজার হাজার মুসলিম নারী-পুরুষ। নিরাপত্তার জন্য মুসলমানরা আশ্রয় নেয় মসজিদে। কিন্তু বিশ্বাসঘাতকরা মসজিদে তালা লাগিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। মুহূর্তেই পুড়ে ছাই হয়ে যায় মুসলমানরা। চিরতরে হারিয়ে যায় তাদের আটশত বছর স্পেন শাসনের গৌরবময় স্মৃতি।

স্পেনে মুসলিম শাসনামলকে প্রায়ই জ্ঞানচর্চার স্বর্ণযুগ বলা হয়। যেখানে গ্রন্থাগার, বিদ্যালয় ও হাম্মামখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, আর সেই সঙ্গে বিকাশ লাভ করেছিল সাহিত্য, কবিতা এবং স্থাপত্যকলা। মুসলিম এবং অমুসলিম উভয়ই এতে অবদান রেখেছিল ব্যাপকভাবে।

দাওয়াত ও তবলিগের কল্যাণে বর্তমানে স্পেনের মানুষ ইসলামের সুশীতল ছায়ায় ক্রমেই আশ্রয় নিচ্ছে। দিন দিন তাদের সংখ্যা বাড়ছে। এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, বর্তমানে স্পেনের সাড়ে চার কোটি জনসংখ্যার ৪.৫ ভাগ মুসলিম। ২০২৭ সালে স্পেনে মুসলিম জনসংখ্যা ৭ লাখে দাঁড়াবে, যা হবে জনসংখ্যার প্রায় ১৪ ভাগ। মুসলমানদের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধির ফলে সেখানে নির্মিত হচ্ছে মসজিদণ্ডমাদ্রাসা। সরকার থেকেও পাচ্ছে সুযোগ-সুবিধা আর নিরাপত্তা।

স্পেনে বাংলাদেশিদের আগমন ১৯৯৯-২০০০ থেকে। ২০০০ সালে আসা শুরু করার ৫ বছরের মাথায় ২০০৬ সালে বাংলাদেশি সবার প্রচেষ্টায় মাসিক ভাড়ার বিনিময়ে যাত্রা শুরু হয় বায়তুল মোকারম বাংলাদেশ মসজিদ। দীর্ঘ ১৬ বছর যাবৎ বাংলাদেশী মুসলিমদের পাশাপাশি আফ্রিকা, সেনেগাল, আলজেরিয়া, তিউনিশিয়া ও মরক্কোর মতো দেশগুলোর মুসলমানদের আর্থিক অনুদানের মাধ্যমে মসজিদটি পরিচালিত হয়ে আসছে। অবশেষে বাংলাদেশি অধ্যুষিত লাভাপিয়েসে ৪৪০ মিটার আয়তনের বর্তমান মসজিদ ভবনটি এক মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে গত বছর জুলাই মাসে ক্রয় করা হয়।

মসজিদটি অনেকটা মুসলমানদের ধর্মীয় সামাজিক কাজে জড়িত। বিবাহ, তালাক, আইনি পরামর্শ, সারাদেশের জুমা ও ঈদের নামাজ পরিচালনা, হজে লোক পাঠানো, হালাল উপায়ে পশু জবাইয়ের প্রতি নজরদারি, মৃতদের দাফন, এতিম শিশু ও অসহায় পরিবারগুলোকে সহায়তা প্রদানসহ এ ধরনের আরো অনেক সেবামূলক কাজ করে এই মসজিদ।

মসজিদের উদ্যোগে এখানে স্থাপিত হয়েছে একটি বিশাল লাইব্রেরি। সেই সঙ্গে ইসলামকে অমুসলিমদের সামনে তুলে ধরার জন্যে মসজিদের অডিটোরিয়ামে মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন সভা ও সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া ইসলাম সম্পর্কে অমুসলিমদের ভুল ধারণা দূর করতে এখানে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ সেমিনার।

অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ইবাদত-বন্দেগী ও ইসলামের প্রচার, প্রসার ও উন্নয়নে এবং ইসলামের ভ্রাতৃত্ব ও মূল্যবোধ সহ ইসলামের প্রকৃত মর্মবাণী প্রচার করার লক্ষ্যে মসজিদটি শুধু নামাজ আদায়ের জন্যে নয়, ইসলাম ধর্মের সুমহান আদর্শ সমাজে ছড়িয়ে দিতে তিন বছর মেয়াদী মসজিদ কমিটিতে সভাপতি হিসেবে পুনরায় দায়িত্ব পেয়েছেন বর্তমান সভাপতি, কমিউনিটির ঐক্যের প্রতীক হিসেবে খ্যাত খোরশেদ আলম মজুমদার। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ইন স্পেনের সদ্য সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং বাংলাদেশী অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান ঢাকা ফ্রুটাসের কর্ণধার আলআমিন মিয়া। অঞ্চলভিত্তিক হারে ১২ সদস্যের কার্যকরী পরিষদসহ ২১ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি করা হয়েছে। নবগঠিত কমিটির উদ্যোগে মসজিদের যাবতীয় সংস্কার-উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে মাদ্রিদে বাংলাদেশিদের পক্ষে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে মসজিদ কমিটি-এই প্রত্যাশা কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়