শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

মিজানুর রহমান রানার মুক্তিযুদ্ধের ধারাবাহিক উপন্যাস

এই জনমে

অনলাইন ডেস্ক
এই জনমে

এক.

চারদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ বন্ধ হয়ে গেছে ক’দিন আগে। কিন্তু অধরা বাড়িতে আসতে না পেরে ঢাকার আরমানিটোলায় তার ফুফুর বাসায় চলে গিয়েছিলো। ক’দিন থেকে বাড়িতে আসার জন্যে মনটা ছটফট করছিলো। ফুফুকে বলায় হঠাৎ করে ফুফুর একজন পরিচিত ব্যবসায়ীর গাড়িতে করে বাড়ি চলে আসার সুযোগ হয়।

ঢাকা থেকে কিছুক্ষণ পূর্বেই বাসায় ফিরেছে অধরা। অনেকটা সময় ভ্রমণশেষে বাসায় ফিরে মনটা বিষণ্ণ হয়ে গিয়েছিলো বলে শুয়ে পড়ছিলো সে। এরই মধ্যে হালকা ঘুম এসে পড়েছিলো দু চোখে। ঘুম থেকে উঠে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বিস্মিত হলো, ‘উহ্ রাত দশটা’।

তড়িঘড়ি করে উঠে বাসার বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। পুরো বারান্দাটায় আজকের পরিপূর্ণ চাঁদ ভালোবাসার জোছনা বিছিয়ে দিয়েছে। দূরে তাকালে মনে হয় যেনো জোছনার গভীর সমুদ্র।

চাঁদের পরিপূর্ণ অপূর্ব শোভা অধরা আজই প্রথম উপলব্ধি করলো। সুন্দর কোনো কিছুর হৃদয়ের গহীন কোণে প্রতিফলন ঘটাতে হলে সুন্দর মনে অবগাহন করতে হয়। পরিপূর্ণ জোছনারূপী ভালোবাসায় সে মনের অজান্তে বলে উঠলো, ‘আহ্ কী সুন্দর দৃশ্য!’

‘আপু কী হয়েছে রে!’ ছোট বোন তিরণা পাশে এসে দাঁড়ালো। ‘তুই কার সাথে কথা বলছিস্ আপু?’

‘চাঁদের জোছনার সাথে’। অধরা যেনো একটা ঘোরের মধ্যে থেকে জবাব দিলো।

‘ধুৎ! জোছনা তো কতোই দেখেছি, এটা কি দেখার কিছু আছে?’ বিরক্ত হলো তিরণা।

ওর কথায় ব্যথিত হলো না অধরা। বললো, ‘শোন তিরণা, আমার মাথায় সুন্দর একটা চিন্তা এসেছে। আমরা আজ জোছনার রূপের সাগরে সাঁতার কাটবো। যাবি আমার সাথে?’

অধরার পানে তাকিয়ে আছে তিরণা। ভাবছে, তার বড় বোনটা কি পাগল হয়ে গেলো নাকি!

‘জোছনার রূপের সাগরে সাঁতার কাটবি? পাগল-ছাগল নাকি? ’

‘আরে পাগল-ছাগল নয়। শোন, প্লাবনের সাথে আজ আমার বন্ধুত্বের অবসান হয়ে গেছে। ও আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে। তাই দুঃখ ভুলতে জোছনার প্ল¬াবনে আমরা ভাসবো। সূর্য থেকে ধার করে চাঁদ ভালোবাসার জোছনা পৃথিবীর প্রান্তরে মেলে দিয়ে অপূর্ব জ্যোতি ছড়ায়। সেই ভালোবাসাকে আঁকড়ে সাঁতার কাটবো জোছনার নদীতে। যেখানে কোনো স্বার্থপরতা নেই, আছে শুধু পরের তরে বিলিয়ে দেয়ার আনন্দ, চল যাবি সাথে?’

রাজি হলো তিরণা। দু বোন মিলে নেমে এলো দোতলা থেকে মায়ের চুপিসারে। রাস্তায় মানুষজন নেই। নিরিবিলি পরিবেশ চারদিকে। ওরা হাঁটছে রাস্তায়। পাশে বিরাট মাঠ, অদূরে একটা বটগাছ। সেখানে মানুষজন বসার বেঞ্চ আছে।

‘আপু এই রাত-বিরাতে যদি পাড়ার সেই বখাটে মাস্তানগুলো আমাদের কোনো অঘটন ঘটিয়ে দেয়?’ তিরণা ভয় পাচ্ছে।

‘বখাটে ছেলেরা আমাদের মতো জোছনার রূপে পাগল হয় না। ওরা জোছনার এই রাতে ঘর থেকে বের-ই হবে না। চল্’। বললো অধরা।

দু বোন প্রায় বটগাছটার কাছাকাছি চলে এসেছে। গুণগুনিয়ে গান গাইছে অধরা। এমন সময় একি! বটগাছটার ওপাশ হতে অস্পষ্ট তিনটি ছায়ামূর্তির অবয়ব ভেসে উঠলো। ওরা ক্রমশ এদিকেই আসছে।

ভয় পেলো তিরণা। পিছু হটতে লাগলো। খপ্ করে ওর হাত ধরে ফেললো অধরা। ‘ভয় পাবি না, যারা এমন একটি পবিত্র রাতে ঘুরে বেড়ায় ওরা কারো ক্ষতি করবে না’। অধরা অভয় দিলো।

তিন যুবকের চেহারা স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হলো। অধরা ও তিরণা ওদের চিনতে পারলো। ইরফান, ইমতিয়াজ ও তুষার আহমেদ। পাড়ার সবাই ওদের যমের মতো ভয় পায়। যুবকেরা এক এক করে দু বোনের সামনে হিন্দি ছায়াছবির নায়কের মতো পা দুটো ফাঁক করে বুকের জমিনে হাত রেখে দাঁড়ালো।

তিরণা ভয়ে চলে যেতে চাইলো, কিন্তু বাধা দিলো ইরফান। ‘কোথায় যাচ্ছো তোমরা?’

‘জোছনার সাগরে সাঁতার কাটতে। যাবেন?’ অধরা নির্ভয়ে জবাব দিলো।

হতবাক হয়ে গেলো ওরা। বলে কী মেয়েটা! এতো রাতে, নির্জন মাঠে একটি মেয়ে তিনজন যুবকের সাথে এভাবে নির্ভয়ে কথা বলতে পারে? ওর মনে কি কোনো ভয় নেই?’

‘তুমি কি জানো, কী বলছো তুমি?’ ধমকে উঠলো ইরফান।

‘জানি। চলুন না আমাদের সাথে ওই নদীটার পাড়ে। পাথরের ওপর বসে জোছনাভরা পানিতে পা ছড়িয়ে বসে জোছনার অপূর্ব সুধা উপভোগ করবো।’ অধরা ইরফানের চোখের পানে তাকিয়ে বললো।

‘তুমি কি আমাদের সম্পর্কে জানো না? আমরা এ পাড়ার অত্যন্ত অশান্ত ছেলে। কথায় কথায় মানুষের সাথে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ি। কাউকে ভয় পাই না।’ বললো ইমতিয়াজ।

‘আপনার গায়ে লেখা আছে?’ অধরা জবাব দিলো।

অধরার কথায় উচ্চস্বরে হেসে উঠে যুবকরা। ইরফান বলে, ‘ঠিক আছে, তোমরা কোথায় যাচ্ছো, কোন্ জোছনার রূপের নদীতে?’

‘চলো আমাদের সাথে’। অধরার অতলস্পর্শী আহ্বান।

হাঁটতে হাঁটতে ডাকাতিয়ার পাড়ে এসে থামলো ওরা; যেখানে তিনটি নদী এসে মিলিত হয়েছে। পদ্মা-মেঘনা-ডাকাতিয়া।

সবাই ডাকাতিয়ার পাড়ে বসে পড়লো। এর মধ্যে ইরফান একদম পানির কিনারে। বসলো মাটির জমিনে, নদীর পানির ওপর মুখ রেখে। সে গান গাইছে- ‘আমায় যদি গো ভালোবাস তুমি, প্রেম দিও জোছনা রাতে...।’

ইরফানের দু চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে পানিতে; চাঁদের রূপালি আলোয় সে অশ্রুফোঁটাগুলো মুক্তোর মতো ঝিকমিক করে জ্বলতে জ্বলতে যেনো গড়িয়ে পড়ছে নদীর বুকে। ইরফানের কাছে এসে বসলো অধরা। বললো, ‘তোমার মনে কি খুব দুঃখ?’

ইরফান তার পকেট হাতড়ে একটি চিরকুট বের করলো। তাতে চাঁদের আলোয় রূপালি প্রেমের জন্যে কাগজের বুকে কালির কলম দিয়ে কিছু লিখলো সে। তারপর সেটা মেলে ধরলো অধরার সামনে। অধরা কাগজটা হাতে নিয়ে চাঁদের রূপালি আলোতে দেখলো, তাতে লেখা আছে- ‘যদি ভালবাসো...’।

অধরা বললো, ‘অবশ্যই। এমন জোছনা রাতে শুধু ভালোবাসাই মানায়, দুঃখ নয়।’ সে ইরফানের দু চোখের অশ্রু মুছে দিলো।

ঠিক সেই সময়টাই বিকট আওয়াজে দূরে কোথায় বাজ পড়লো যেনো। সাথে আরেকটি গুলির আওয়াজ হলো। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তিরণা, ইমতিয়াজ ও তুষার আহমেদের মধ্যে ইমতিয়াজ বুকে হাত রেখে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। রক্তে ভেসে যাচ্ছে ইমতিয়াজের দেহ। ধীরে ধীরে সে চোখ বন্ধ করলো।

(চলবে)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়