শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০

মহাত্মা গান্ধী ও চাঁদপুর : ইতিহাস পরিক্রমার অনন্য পাঠ
জাহিদ নয়ন

‘মহাত্মা’ এই সমাসবদ্ধ শব্দটিকে ভাঙ্গা হলে তার অর্থ দাঁড়ায় ‘মহান আত্মা যাঁর’। সারা বিশ্বের মানুষের কাছে এই নামেই যাঁর পরিচয়, মূলত তাঁর নাম মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। ভারতের জাতির জনক, অহিংস আন্দোলনের প্রবক্তা কিংবা বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা হিসেবেই মহাত্মা গান্ধীকে আমরা চিনি।

বৃটিশবিরোধী আন্দোলন তথা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে কার্যকর ভূমিকার জন্যে তাঁর স্থান অনন্য উচ্চতায়। আবার একজন আধ্যাত্মিক নেতা ও রাজনৈতিক দার্শনিক হিসেবেও বহুল চর্চিত এক নাম মহাত্মা গান্ধী।

বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানেও এই মহান ব্যক্তির আগমন ঘটেছে বিভিন্ন সময় ও প্রেক্ষাপটে। নোয়াখালীতে গান্ধীর আগমন নিয়ে অনেক আলোচনা পাওয়া যায়। তবে নোয়াখালীর পার্শ্ববর্তী জেলা চাঁদপুরের বিভিন্ন স্থানেও গান্ধীজির পদচারণা ঘটেছে একাধিকবার।

ইতিহাসের সামগ্রিক আলোচনায় সবকিছু খুঁজে পাওয়া দুষ্কর ব্যাপার। তেমনই ইতিহাসের কিছু অজানা ঘটনা ও সূক্ষ্ম বিশ্লেষণের উপস্থাপননির্ভর একটি বই মুহাম্মদ ফরিদ হাসানের গবেষণাধর্মী কর্ম ‘চাঁদপুরে মহাত্মা গান্ধী’। চাঁদপুরে গান্ধীজির পদচারণা ও ইতিহাস পরিক্রমার দলিল হিসেবে বইটিতে এসেছে নানা অজানা এবং চমকপ্রদ তথ্য।

বৃটিশ ভারতের স্বাধীনতাণ্ডপূর্ববর্তী সময়ের নানা রাজনৈতিক ঘটনা ও প্রেক্ষাপটে মহাত্মা গান্ধী ছুটে বেড়িয়েছেন ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে। গান্ধী চাঁদপুরে প্রথম আসেন ১৯২১ সালে। এছাড়া ১৯২৫, ১৯৪৬-৪৭ সালেও তিনি চাঁদপুরে এসেছিলেন। এখানে অবস্থানকালে বিভিন্ন সময়ে অনেক সভায় যোগদান করেন এবং বক্তব্য প্রদান করেন।

১৯২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর তিনি প্রথম চাঁদপুরে আসেন। এ সময় তিনি চাঁদপুর ন্যাশনাল স্কুল পরিদর্শন করেন। ১০ মে পুরাণবাজারে এক নাগরিক সভায় গান্ধীকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। তিনি সেখানে হিন্দিতে বক্তব্য রাখেন।

১৯৪৬ সালে নোয়াখালী ও ত্রিপুরায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হলে অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। শান্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পুনঃস্থাপনের লক্ষ্যে গান্ধীজি আবারো এই অঞ্চলে তথা বৃহত্তর নোয়াখালী এলাকায় সফর করেন। তৎকালীন ত্রিপুরা জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল চাঁদপুর। শান্তি স্থাপনের জন্যে চার মাস খালি পায়ে হেঁটে নোয়াখালী ও চাঁদপুরের ৪৯টি গ্রাম পরিদর্শন করেন তিনি। এছাড়া নোয়াখালী ভ্রমণকালে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে গান্ধীজি ভাষণ দিয়েছিলেন বলে জানা যায়। হাজীগঞ্জে মানুষের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘যতদিন না এই প্রদেশের হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির সহিত শান্তিতে বসবাস করিতে শিখিতেছে ততদিন তিনি বাঙ্গলা ত্যাগ করিবেন না’। এই বক্তব্যের অর্থ অনুধাবন করতে গেলেই গান্ধীজির এই অঞ্চলে সফরের তাৎপর্য টের পাওয়া যায়।

চাঁদপুরের হাইমচরে বিভিন্ন গ্রামে দীর্ঘ সময় ভ্রমণকালে একাধিক জায়গায় বক্তব্য রাখেন। তাঁর এসব বক্তব্যে ধর্ম, রাজনীতি, জাতীয়তাবাদ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ইত্যাদি বিষয়ে আলোকপাত করেন। জাতিভেদ ও ধর্মের তুলনা, বিবাহ জাতিভেদ প্রথা বিলোপ, রাষ্ট্রধর্ম, বাল্যবিবাহ, যৌতুক, বিধবা বিবাহ ইত্যাদি নানা প্রসঙ্গ চাঁদপুরের হাইমচর অঞ্চলের বক্তব্যে পাওয়া যায়। বইটিতে ইতিহাসের আরেকটি চমকপ্রদ অধ্যায় এসেছে, তা হলো ‘হাইমচরে মহাত্মা গান্ধী ও শেরে বাংলার ঐতিহাসিক সাক্ষাৎ’।

২৭ ফেব্রুয়ারি শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক হাইমচরে মহাত্মা গান্ধীর সাথে সাক্ষাৎ করেন। এ দু নেতার সাক্ষাৎ নানা কারণেই অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। রাজনৈতিক দর্শন ও মতপার্থক্যের কারণে এই দুজনের সাক্ষাৎকারের বিষয়টি সহজ ছিলো না বলে জানা যায়। গান্ধীর সাথে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের সাক্ষাৎ পর্বটি অবশ্য পরবর্তীতে অনেক ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটাতে সক্ষম হয়।

সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নিরসন ও সম্প্রীতি রক্ষায় গান্ধীজির অনবদ্য ভূমিকার নানা অজানা ঘটনা উঠে এসেছে মুহাম্মদ ফরিদ হাসান সম্পাদিত এই বইটিতে। এছাড়া চাঁদপুরের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ঘটনা ও চাঁদপুর থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির কাছে

গান্ধীজির প্রেরিত চিঠিপত্র, টেলিগ্রাম ও চিরকুটের দালিলিক চিত্রও সমানভাবে তুলে আনা হয়েছে গবেষণাধর্মী এই বইটিতে।

বইটি পাঠ করে একজন পাঠক যেমন ইতিহাসের নানা অজানা ঘটনা জানতে পারবে, তেমনি মহাত্মা গান্ধীর রাজনৈতিক দর্শনের বিভিন্ন দিক সহজেই জানা যাবে।

১২৮ পৃষ্ঠার এই বইয়ের শুরুতেই বরেণ্য সাংবাদিক আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী ভূমিকা লিখেছেন, যা বইটির জন্যে এক অনন্য স্বীকৃতি বলা যায়। বইটি প্রকাশ করেছে চাঁদপুর পৌরসভা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়