প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০
সময়
সময় চিরকাল নবীন
কখনো পুরানো হয় না
সেই আবহমানকাল থেকেই
সময়ের কোন ব্যয় নেই, জরা নেই, ব্যাধিও নেই
সময় সতত সদ্যোজাত, সময় সতত জায়মান।
যে শিশু জন্ম নেয় মায়ের গর্ভ ছেড়ে
সে পুরানো হতে হতে একদিন বার্ধক্যে উপনীত হয়
কিন্তু সময় পুরানো হয় না, সময়ের কোন বার্ধক্য নেই
বহমান সময়কে যে দর্শন করে
কেবল সেই দর্শক পাল্টায়
সময় আসলে অটুট থাকে নিজের রূপে
সময় অটুট থাকে নিজের জীবন নিয়ে।
গুহাবাসী মানুষকে পুরানো করে তুলেছে সময়
আগুনবহ মানুষের অভিযাত্রাকে পুরানো করেছে সময়
সময় পুরানো করে তুলেছে আণবিক বোমার মানুষকে
কেউ বলতে পারে না, সময় কখন পুরানো হয়।
যে ক্লিওপেট্রার সৌন্দর্যে বিমোহিত ছিল জগৎ
সময় তাকেও পুরানো করে তুলেছে
সময় ওয়েস্ট মিনিস্টার অ্যাবেতে লুকিয়েছে রানিকে
মায়া সভ্যতাকে আপন উদরে গিলে ফেলেছে সময়
রাজা মান্ধাতাও ঘুমিয়ে গেছে সময়ের কোলে
সময় তবুও পুরানো হয়নি অতীত কিংবা বর্তমানে।
সময় এক আদিহীন অন্তহীন পথিক
যে পুরানো করে জীবন ও জগৎকে
নিজে রয়ে যায় অবিকৃত অনন্তকাল
এক একটি জীবনের নির্যাস পান করে সময় হয়ে উঠে
নিত্য নূতন, হয়ে উঠে অক্ষয় অজর অনিবার।
হাঁটা
যে হাঁটে সে জানে হাঁটার কষ্ট
যে হাঁটে হাজার বছর কী গভীর সে বেদন!
জেনেছে জীবনানন্দ দারুচিনি দ্বীপ শেষে
হাঁটতে হাঁটতে ভাগ হয় পৃথিবী
আলগা হয় মানচিত্র, মহাদেশ
হাঁটতে হাঁটতে দূরত্ব হয় আঙুলে-করতলে
যে হাঁটে সে জানে হেঁটে বিচ্ছিন্ন হয় আর কত কী!
হাঁটতে হাঁটতে বিভেদ হয় সাদা আর কালোয়
ভাগ হয় পূর্ব-পশ্চিম, বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী
ভাগ হয়ে যায় পিতা-পুত্র, ভিটে-মাটি
ভাগ হয় রীতিনীতি, নিয়ম আর কায়দা-কানুন
হাঁটায় ভাগ হয় রামণ্ডরহিমণ্ডআনন্দণ্ডঅ্যান্টনি।
হাঁটতে হাঁটতে মেঘ হয় বিচিত্র রমণীর মুখ
ইলোরার লীলাবতী আকাশ রাঙায়
অজন্তার গুহা হতে উঠে আসে জীবন্ত চিত্রকলা
পরিযায়ী মেঘ হয়ে মিশে যায় কালের ধূলায়।
হাঁটতে হাঁটতে জীবনের প্রান্ত-জনপদে
ক্লান্ত পথিক মিলায় দিগন্তের কোলে
হাঁটতে হাঁটতে স্তব্ধ হয় জীবন আঁধারের খাঁচায়
যে হাঁটে সে জানে ভালো হেঁটে কী হারায়! কী হারাতে হয়!
আলো-আঁধার
দীর্ঘকাল অন্ধকারে থেকে থেকে
আলোর ঝলকানি হয়ে উঠে মারণাস্ত্র
অতি আলোর চোখজ্বালা স্রোতে
আঁধার আপন হয়ে উঠে অবিকল্পভাবে।
সকল আলোয় আনে না কল্যাণ
যেমন আনে না কল্যাণ বিজলি বা মাইগ্রেন-চকমকি
কিংবা বন্দুকের নল উদ্গীরণে বিচ্ছুরিত ফুলকিমালা
আঁধারও তাই কখনো কাঙ্ক্ষিত হয় জীবনের কাছে।
অপারেশন সার্চ লাইটের আলোয়
আসেনি কল্যাণ বরং বয়ে গেছে রক্তগঙ্গা
নির্যাতন-ক্যাম্পে মুক্তিসেনার চোখে তীব্র ঝাঁঝালো আলো
তাকে মুক্তির পথ দেখায়নি বরং দিয়েছে নরক-যন্ত্রণা
সকল আলো তাই আলো নয়, আলো কখনো মরীচিকাণ্ডমায়া, কখনো হন্তারক।
যে আঁধারে জন্ম নেয় আলো
যে কৃষ্ণবিবরে স্বনিত হয় মহানাদ
যে আঁধারে মৌনী তাপস লাভ করে নির্বাণ
সে আঁধারই অনন্ত আলোকনের বিমুক্তি।
আলো ও আঁধার এক অমীমাংসিত দ্বন্দ্বসূত্র
মায়ের গর্ভে সমাধির আঁধারে আসে দেহান্তর
প্রতিটি দেহান্তর আনে মুক্তির উল্লাস
আঁধারও তাই চির ঈর্ষণীয় আলোকের কাছে।
জীবন এক পাইথন
বুকে হেঁটে গড়ানো দিন আস্ত এক পাইথন
যা পায় সব গিলে খায়
আঁধারের অনিদ্রিত রাত চুয়ে
সদ্যোজাত ঊষাকে সে হনন করে চোখের
পলকে। এরপর ক্রমশ তার
অতল পেটে গেছে সম্ভাবনার সকাল
আশার রোদেলা দুপুর
বিনোদনের কোমল বিকেল ।
প্লবগ দিন এক আস্ত পাইথন
দুপুরের সমস্ত আলো চুমুকেই পান করে
ঝুপ করে টেনে আনে রাত
সন্ধ্যার অকাল মৃত্যু ।
অজস্র পাইথনে সঙ্কুল মর্ত্য-জীবন
হা করে মুখিয়ে থাকে
গিলে নিতে সকল সম্ভাবনা
করুণা বা মৈত্রী, মমতা বা সম্প্রীতি
সব উবে যায় পলকে-ঝলকে
জীবন-পাইথনের দীর্ঘশ্বাসে
আশা আর আয়ুর ক্ষয় অবিরাম
ক্ষয় হয় অতীত কিংবা অনাগত সুন্দর।
জীবন এক বুভুক্ষু পাইথন
আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে তিলে তিলে
গিলে খায় আস্ত মানুষ।