প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৩, ০০:০০
এক.
আজ যে মাঠে তুমি খেলো একদিন এ মাঠ আমাদের ছিল
যে তেঁতুল-তলে বসে গল্প করো তুমি, ঘুরো দিঘিপাড়জুড়ে
গানে-আড্ডায় যে পথ মাতিয়ে তোলো
সেই পথে উড়োউড়ি আমাদেরও ছিল
হে বন্ধু আজ তুমিই নায়ক, তোমারি সময় আজ
আমরা গিয়েছি চলে অতীতের অনাদরে;
এখানে একদিন প্রাণমন ছিল ভেবে-
আমাদের রেখো স¥রণে...
দুই.
এ শুধু শৈশব-কৈশোরের নিষ্প্রাণ স্মৃতি নয়
এ আমার স্বপ্নের প্রাণপীঠ!
আমাদের হাসিখুশি আজও প্রতিধ্বনিত হয় এখানে দেয়ালে দেয়ালে
আমাদের ফুটবল, ব্যাট-বল ছুটোছুটি হুড়োহুড়ি আজও এই মাঠে তুমি পবে
বার্ষিক প্রতিযোগিতার মঞ্চে কিংবা প্রভাতফেরির শ্লোগানে আমরাও ছিলাম সারথি
আমাদের উদাসী মন, প্রেম প্রেম চাওয়া আজও তুমি শুনতে পাবে দক্ষিণের মেঠোপথে
আমরাও ভেসেছি একদিন রাখালের গানে
শিক্ষাগুরুর স্নেহসুধা আমরাও কেড়েছি যতনে
ঈদে কোলাকুলি হতো বন্ধু-সুজনের সাথে
আমণ্ডকাঁঠালের বন ঘুরে ঘুরে গেছে কত সুখীদিন
এ শুধু শৈশব-কৈশোরের নিষ্প্রাণ স্মৃতি নয়
এ আমার স্বপ্নের প্রাণপীঠ!
তিন.
স্কুলে আসার সময় দেখেছি কৃষকেরা মাঠে কাজ করছে
দুপাশে তিল-তিষি, গমণ্ডকাওন আরও কত বাহারি ফসলের ক্ষেত
ছুটি শেষে ফেরার সময় শুনেছি পথফিরতি মানুষের গল্প কখনওবা হাটুরের গান
ফসলের সবুজ শরীরে ঢেউ খেলে সেই গল্প-গাঁথা কোন্ দূরে ভেসে যেতো
পশ্চিমে ঢলে সূর্যের সোনালি আলো পড়তো ঠিক কপালের উপর
সেই স্বপ্নিল আভা আর মেঠোসুরের চেয়ে মহার্ঘ্য কিছু পাইনি জীবনে!
চার.
পাহাড় ডিঙ্গাতে শুরু করে যে মেঘদল
পেরুতে পারেনি বাধা, অকালেই ঝরে গেছে বৃষ্টি হয়ে
তবু পথে যেতে আজও তুমি দেখবে ওদের হাসিখুশি
ওরাই প্রহরী হলো- ছড়িয়ে রয়েছে মাঠে
মাচা বুনে, ছড়ায় ফসলের বীজ
গোলা ভরে ধান ও প্রাণের আহ্লাদে
হাসি মুখে থাকে ওরা সদা
প্রিয় এ প্রাঙ্গণের প্রতিবেশে!
টিকাটুলি, ঢাকা। ১১ জানুয়ারি ২০২৩
উত্তরাধিকার
(এক)
পেছনে ফেলেছি রাত্রি, লক্ষ লক্ষ দিনান্ত-প্রহর
সমুদ্র লহরী আর অমানিশা প্রত্নগুহার
আমার নেই কোনো দেশ সবিশেষ ঠিকানা নিশানা-
আদিম ভ্রমণে যারা বন ছেড়ে এসেছিল পার হয়ে করাল হিমানী
যূথরথে পেরিয়ে এসেছে মরু, পথে পথে তুমুল তটিনি
পায়ে দলে পেরিয়ে এসেছে কাঁটা
যারা জলে-কর্দমে একাকার নেমেছিল হারপুন হাতে এই তৃণদলে, এই জলাঞ্চলে-
আমি সেই শ্রান্ত অভিবাসীদের উত্তরাধিকার!
(দুই)
মাতৃজঠর থেকে উত্তোলন করে একটি ফুল তোলা কোমল কাঁথা জড়িয়ে
প্রভাতে সূর্যের প্রতি ইশারা করেছে যে আমার আগমন, আমি তার কাছে ঋণী!
সেইসব আদি নরনারী যাদের নিশিডাক শুনে পালাতো পশুরা
যাদের হাড় মিশে আছে পুরোনো পাহাড়ের তলে- কঠিন শিলায়
শিকারের কালে ক্ষিপ্রবেগে পাথরে পাথরে যারা ছড়িয়ে যেতো অগ্নিপুলক!
আলোহীন শ্বাপদণ্ডশঙ্কুল রাতে ভোলেনি যারা সন্ততির কথা-
সেইসব সহৃদয় প্রবীণের কাছে আমি ঋণী!
ঋণী আমি পিতৃপুরুষের কাছে যে রক্তধারা বইছে শিরায়
ঋণী আমি শস্যক্ষেত, নদনদী আর শত সহ্যশীল রমণীর কাছে-
চিরঋণী আমি, এই জল এই মাটি- মাতৃকার কাছে...
কে. এম দাশ লেন, টিকাটুলি, ঢাকা। ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২