প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০
আজকালের কড়চা
খুনিরা ধমক দিয়ে যাচ্ছে পুত্রহারা পিতামাতাকে
কালোটাকার স্ফীতি নিঃশেষ করে দিচ্ছে ঘামেভেজা অর্থের মূল্য
লাগামহীন চাকার নিচে প্রতিদিন পিষ্ট হচ্ছে তাজা-প্রাণ
চাল-তেলের ঊর্ধ্বমূল্যে নিঃস্ব আজ নিম্ন আয়ের মানুষ!
একদিকে হাড়ঝিরঝিরে দেহ
অন্যদিকে মাংসের উত্তাল ঢেউ
একপাশে জাল-জুয়ো, কাম ও প্রমোদণ্ডবিকার
অন্যদিকে ধার-দেনা, ভীতি ও মানব-শিকার!
এবং এসব প্রাত্যহিক বিষয়ে ক্ষমতার কোনো হস্তক্ষেপ নেই
নেই প্রতিরোধ বন্ধন কিংবা অনুভূতি শাসকের!
স্বামীবাগ, ঢাকা। ১৯ নভেম্বর ২০২২
***
সংবেদ-ছত্র
১.
সিন্ধুকে স্বর্ণ রেখে সব গৃহী মেতে উঠে পাহারায়
প্রহরীর ছড়ি পেতে চুপচাপ ফন্দি আঁটে কিছু লোক!
২.
হঠাৎ দর্শনে স্পষ্ট হলে প্রসাদের নির্মাণকলা
ঘাম-রক্তে গড়া সুষমারা সব বদলে ফেলে রূপ;
হয়ে পড়ে- বিষাদ ও অনুতাপে নীল!
৩.
বরং শিউলিরা কোলে বসো, একে একে খুন-ধর্ষণ করি যাকে তাকে
আর বিচারক লোকচক্ষু উপেক্ষা করে-
আশীর্বাদ হিসেবে মুর্হুতে হাত বুলাক!
৪.
শুধু একবার ভালোবাসা পেলে
এই বাউলা বসন্ত দিনে উড়িয়ে দিতাম দেহযান- সুদূর-শূন্যে-নীলিমে
আমি ঊর্ধ্ব-অভিলাষী পাখিরাজ!
৫.
সহজে পড়ে না চোখে ফুল ও ভ্রমর-যুগল
বসন্ত মেখেছে ধূলো, শুদ্ধশ্বাস পাই না বাতাসে
ভুল কাতুকুতু দিস্ না গোলাপী!
৬.
শরীর-সোহাগী ফুল খুলে দেয় বুকের কপাট
বিশ্বাসের মালীরা যেনো সমূহ-স্বার্থক
ভ্রমর ছেঁকে দিলে সার, ক্ষতি কার!
৭.
প্রেমিকার বুকের মধ্যে প্রজ্বলিত অগ্নি
তেমনি আমি শুকনো কাঠ
তাই চিরদিন ছুটি ও’বুকে অশ্ব-ধাবমান
হতে দহনে দহনে ভস্মমান!
৮.
ধেয়ে আসছে মৃত্যু সর্পিল কালাজ্বর
অতলান্ত হিমে
অধিমার্গ নাম নিয়ে- জীবনের লোভে-পাপে!
৯.
বৃথা ছলনা ও চিৎকারে ফিরে গেছে সুখ সুধা-ঋতু!
অন্তত বসন্তকক্ষ হোক এ হৃদয়নগর-
অবিরাম কুকিলার পুষ্পস্নানে!
১০.
যেভাবে মৃত্যুকে সহগামী-
সদা পিছে পিছে
তার আবার ভয় কিসে
বন-গুহা, হাঙ্গরের হা
তার কাছে সব ছার-
সব মিছে জুজুর কাহিনি
দেখে তাকে পালায় পাতক!
***
ইনটিউইশন
একান্ত সংবেদনায় শামুক এগিয়ে চলে পূর্বে ও পরে কাম, ছলাকলা
তার পিঠে অবগত-শীস, সে কেবল ছুটে আর ছুটে- অগম প্রান্ত-পরিধি!
বোধ করি, ত্রিকাল-বোধন শেষে ফিরে গেছে জাগর পাখিরা-
সিক্ত-সানুতে বসে শৈলমেয়েরা তোলে তান!
বোধ করি, জলের উছল গেছে থেমে- লব্ধ-নিনাদ ভুলে শান্ত ছিল পূর্ণ-পাথার
দহন ভুলেছো প্রভা-
জ্বালা নেই, নেই রাস, ধোঁয়ার মিছিল নাচে-
এ কেমন বিরল প্রতাপ!
বোধ করি গোধূমের ক্ষেতে আজ ঊষার-আগুন
উজানের কাদা ভাটির কিনারে খায় পাক্
পালের জাহাজে ধুম পারের-পিপাসা
জলে-জোসনায় রমণীয় রাতের ক্ষরণ জ্বলে দশদিক;
অহং স্বরূপে নাচে
বজ্রছুটে-
শকুনীরা ছড়ালো ইঙ্গিত!
শিল্পকলা একাডেমি, চাঁদপুর। ১০.১০.২০১৭
***
বসন্ত গান
আগুন রাগে ফাগুন এলো
সঙ্গে নিয়ে ফুলঝুরি
ফুলে ফুলে উঠলো রেঙে
কৃষ্ণচূড়ার ডালগুলি
গুনগুনিয়ে গান গেয়ে যায়
পিয়াল বনের বুলবুলি
গান শুনে তার উঠলো দোলে
প্রেমবাগিচার ফুলগুলি
ফুলের সুবাস বইছে বাতাস
দখিন দুয়ার গেছে খুলি
এসো প্রিয় এসো প্রাণ খুলে আজ
চিরপ্রেমের গান-তুলি!
চাঁদপুর। ০২.০৩.২০১৪
***
পুষ্পগুঞ্জন
খুলে যেতে দাও এবার বাহিরে
এবার গহনে দাও যেতে
যেতে দাও শৈল-সুধীর কাছে
ঘুম ও ঘামের বিন্দু যেখানে
আর না দীর্ঘশ্বাস ফেলে...
পাখি ও পুষ্পগুঞ্জন রথে
যেতে দাও গহীন বনানী পথে
মৃদু নদী, একা হেঁটে সুদূর সৈকত
যেতে দাও বাজিয়ে মাদল
তারে তারে জোসনা ঝরুক
যেতে দাও রাখি-
গন্ধবকুলমালা
এবার যেতে দাও...
কোর্টস্টেশন, চাঁদপুর। ১৮.১২.২০১৩
***
এখানে
জীবনের সম্ভাবনা ভুলে এখানে থাকতে হয় আপদের আশঙ্কায়
স্বপ্ন ভুলে, প্রিয়তির চুম্বন ভুলে বাঁচতে হয় অপঘাত-অন্বেষায়
কখন মৃত্যু আসে, জাপটে ধরে কখন সন্ত্রাস
কখন উগ্র-নাচে, বজ্র-ফাটে কখন ঈশানে
দক্ষিণে অগ্নি-রাস
উত্তরে বান সারামাস
পশ্চিম গেল রসাতলে
পূর্বেও নীতি নেই
নেই শুভ রীতি নেই
নেই নেই প্রীতি কোনোখানে!
আশা নেশা দিশা ভুলে কোনোমতে দিনজপে-
অযতনে, আছি যেনো বানভাসি...
গুলিস্তান। ১৮.০৬.২০২২
***
খেপা শহিদুলের মৃত্যু
সুতো জট পেকেছিল- খুলে দেবে সাধ্য ছিল না কারো।
যদিও সে জানতো না এতসব জাল-জুরি তাই দিনেদিনে
বেড়েছিল আরও খাত
জল-ঘোলা হয়েছিল আরও
তার ওপর ভুরি ভুরি হিসেবের জটা;
এক জীবনের সামান্য পুঁজিতে-
কখনও যা ফুরবে না
তাই সে হেসে উড়িয়েছে সবকিছু
বারবার নিষেধের বেড়ি ভেঙে করেছিল চৌচির!
এবং দিনান্তে দেখা গেলো- লোকারণ্য
আমোদিত অঙ্গনজুড়ে নীল-অপছায়া!
আবারও সে অবাক করেছে চারপাশ:
পড়ে, ব্যাহত ভাঁড়ারির মতো ঘাড়গুঁজে-
নিঃশব্দে, নিহত হবার ভানে!
১১ সেপ্টেম্বর ২০২২, শূন্যরেখা, ছাগলনাইয়া বর্ডার।