বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০

স্বর্ণস্মৃতি : ভবিষ্যতের জন্যে অতীতঋদ্ধ বর্তমান
অনলাইন ডেস্ক

স্মৃতি মানুষের শেকড়। এ শেকড়ের টানেই মানুষ ফিরে যায় অতীতে। অতীতে এ বিচরণ সময়কে পিছিয়ে নিয়ে নয়। বরং মনের ক্যানভাসে অতীতকে প্রক্ষেপণ করেই শেকড়ে ফিরে যাওয়া। এ পিছুটানে উঠে আসে কিছু অমূল্য মুহূর্তের রত্নসম্ভার। এ রত্নসম্ভার হতে ঠিকরে পড়ে স্বর্ণময় দ্যুতি। এই দ্যুতিই হয়ে উঠে দিনশেষে স্বর্ণস্মৃতি। আজকের স্বর্ণস্মৃতি ভবিষ্যৎকে বিনির্মাণের আবশ্যকীয় সোপান।

সময় বহতা নদী। সে নদীর ¯্রােতে তৈরি হয় কালের কীর্তি। এরকম এক অনন্য ও কালজয়ী কীর্তির নাম ‘চাঁদপুর সরকারি কলেজ।’ এ কীর্তির গৌরব কীর্তনে যে দলিল জন্ম নিয়েছে ‘স্বর্ণস্মৃতি’ নামে, তা-ও ভাবীকালের কাছে ‘স্বর্ণকীর্তি’ হয়ে থাকবে কালজয়ীরূপে।

আধুনিক পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা সর্বার্থেই অনপনেয় ও অকল্পনীয়। যুদ্ধ কল্যাণ না আনলেও চাঁদপুরের ইতিহাসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যেন হয়ে উঠেছিল বিপরীতে হিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণেই কর্তৃপক্ষ শঙ্কিত হয়ে সমূহ ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের বাণিজ্য বিভাগকে স্থানান্তর করে চাঁদপুরে। এর আগে এই পদ্মা-মেঘনা-ডাকাতিয়া বিধৌত অঞ্চলে কোন কলেজ ছিল না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বদৌলতে চাঁদপুরে একটি অস্থায়ী কলেজ ক্যাম্পাস স্থাপিত হওয়ায় অত্র এলাকার মানুষের মধ্যে শিক্ষার প্রতি প্রকৃত পিপাসা তৈরি হয়। এ কারণে যুদ্ধ থেমে গেলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের বাণিজ্য বিভাগটি ফেরত নেওয়া হলেও চাঁদপুরে একটি কলেজ নির্মাণের কর্মযজ্ঞ শুরু হয়। এগিয়ে আসেন মুক্তহাতে পুরাণবাজারের বদান্য ব্যবসায়ী সমাজ হতে শুরু করে আরো অনেকেই। এভাবেই শুরু হয় কালের একটি কীর্তির জন্মণ্ডইতিহাস। ঊনিশশো ছেচল্লিশ সালের পহেলা জুন 'চাঁদপুর কলেজ' নামে এ বিদ্যানিকেতনটির জন্মশিলা স্থাপন করেন অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। সেই মহাজন্মের পঁচাত্তর বছর পরে দুহাজার একুশ সালে এসে অনুভূত হলো প্লাটিনাম জয়ন্তী উদযাপনের অনিবার্যতা। কিন্তু সে সময় চলছিল আরেক ইতিহাস। করোনা নামের অতিমারিতে বিশ্ব হয়ে উঠে পর্যুদস্ত। ফলে অতি সঙ্গত কারণেই সেই উদযাপন পিছিয়ে আসে অনুকূল সময়ের প্রতীক্ষায়। কালিক হিসেবে সাতাত্তর বছর বয়সে 'চাঁদপুর সরকারি কলেজ' অভিষিক্ত হয় পঁচাত্তর বছর অতিক্রমের জয়ন্তীতে। দুহাজার তেইশ সালের চব্বিশ ও পঁচিশ ফেব্রুয়ারিতে চাঁদপুর সরকারি কলেজের পঁচাত্তর বছর পূর্তি উদযাপনের বড় সার্থকতা ছিলো 'স্বর্ণস্মৃতি' নামের নান্দনিক ও অপরিহার্য প্রকাশনা, যা শতবর্ষ উদযাপনের এক অবিচ্ছেদ্য দলিল হিসেবে পরিগণিত হবে ভাবীকালে। যে গতিতে আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশ ছুটে চলেছে স্মার্ট ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বাংলাদেশের দিকে, তাতে এ কথা অনুমান করা অসঙ্গত হবে না মোটেই, শতবর্ষের প্রকাশনা হয়তো বা দুই মলাটে সীমাবদ্ধ কোন প্রকাশনা হবে না। বরং তা হয়ে উঠতে পারে পেপারলেস পৃথিবীর কোনো অনুষঙ্গে তৈরি। সেই নিরিখে পঁচাত্তর বছর পূর্তি উদযাপনের 'স্বর্ণস্মৃতি' এক অবিস্মরণীয় কালের কথক হিসেবেই অমর হয়ে থাকবে জীবনসুধাপাত্রে।

অনেক দোলাচল আর চড়াই উৎরাই পেরিয়ে দুদিনব্যাপী যে দক্ষযজ্ঞ সম্পন্ন হলো, তার সবচেয়ে স্পর্শকাতর অংশ ছিলো 'স্বর্ণস্মৃতি' সম্পাদনা। কেননা, বাঙালি নিজে কোন কাজে অংশ না নিলেও পান থেকে চুন খসলেই সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠে এবং এসব ক্ষেত্রে দূর হতে সবাই নিজেকেই অধিক যোগ্য মনে করে। বাঙালির এই আত্মচরিত্রের বৈশিষ্ট্যের কথা মাথায় রেখেই বলতে হয়, প্রকাশনা সম্পাদনাই ছিল এ উৎসবের সবচেয়ে স্পর্শকাতর কাজ। নিরালায় নিরূপদ্রব সময়ে 'স্বর্ণস্মৃতি' হাতে নিয়ে বলতেই হয়, কালের পথ পরিক্রমায় কাজটি কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হবে নিঃসন্দেহে। প্রকাশনা উপ-পরিষদের আহ্বায়ক দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাত, সমন্বয়ক পুরান বাজার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার ও সদস্য সচিব তরুণ গবেষক ও লেখক মুহাম্মদ ফরিদ হাসানের নেতৃত্বে এ উপ-কমিটি তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব নামের প্রতি সুবিচার করেই সম্পন্ন করতে পেরেছেন। সম্পাদনা পর্ষদে আরো ছিলেন মোঃ সাইদুজ্জামান (সহকারী অধ্যাপক, চাঁদপুর সরকারি কলেজ), প্রবীণ বিশেষজ্ঞ ও লেখক হাসান আলী এবং কবি ও কথাশিল্পী প্রণব মজুমদার। তাদের যোগ্য সহযোগিতা দিয়েছেন উজ্জ্বল হোসাইন, শাহেদুল হক মোর্শেদ, মোঃ আল আমিন, রাজন চন্দ্র দে ও এইচএম জাকির। গ্রন্থটির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। সংশ্লিষ্ট সবাইকে হৃদয়খোলা অভিনন্দন। মূল কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক অসিত বরণ দাশ (অধ্যক্ষ, চাঁদপুর সরকারি কলেজ) এবং সদস্য সচিব মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল (মেয়র, চাঁদপুর পৌরসভা) তাদের যোগ্য পথনির্দেশ করেছেন বলেই প্রতীয়মান।

প্রায় তিন শতাধিক পৃষ্ঠার রয়াল সাইজের বইটি প্রথম দর্শনেই হাতে নিয়ে প্রেমে পড়তে হয় তার অবয়ব ও বলিষ্ঠতায়। বইটির মলাট ও পুস্তানি, ভেতরের কাগজের মান ও ঝকঝকে ছাপায় মনে হোলো কাজটিতে আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্বের সমন্বয় ঘটেছে পূর্ণমাত্রায়। শিল্পী তাপস সরকারের হাতে লেখা নামলিপি ও কলেজের আদি ভবনের মায়া জাগানিয়া ছবির সমন্বয়ে গড়ে ওঠা প্রচ্ছদটি দেখামাত্রই পাঠক নস্টালজিক হয়ে উঠতে পারেন বিগত সময়ের স্মৃতিভারাতুরতায়।

লেখক তালিকা কেবল কলেজের শিক্ষার্থীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল এবং লেখা আহ্বান ছিল উন্মুক্ত। যে কেউ লেখা দিতে পারতেন যদি তিনি চাঁদপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী কিংবা শিক্ষক হয়ে থাকেন। মোট আটচল্লিশটা স্মৃতিচারণমূলক লেখা, একটি ছোটগল্প ও সাতটি ছড়া-কবিতায় গ্রন্থটি সমৃদ্ধ। এতে শুরুর দিক এক নজরে 'চাঁদপুর সরকারি কলেজ' নামে একটি অধ্যায় ও শেষের দিকে পরিশিষ্ট যুক্ত হয়েছে, যাতে কলেজের উল্লেখযোগ্য অর্জন, দাতা সদস্যদের তালিকা, কলেজের অধ্যক্ষক্রম, ভাষা আন্দোলনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর বিবৃতি, কলেজ ছাত্র সংসদ ও ছবি সন্নিবেশিত হয়েছে। বইটি উৎসর্গীত হয়েছে মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী এবং প্রয়াত শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে। প্রকাশনাটি দশটি মূল্যবান বাণী ও তিনটি শুভেচ্ছা কথা-প্রসঙ্গ কথায় সমৃদ্ধ। মহামান্য রাষ্ট্রপতির বাণী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকারের বাণী এবং মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা উপমন্ত্রীর বাণী প্রকাশনাটির মর্যাদা বাড়িয়ে তুলেছে। ভর্তির শিক্ষাক্রম অনুযায়ী লেখকক্রম সাজানো হয়েছে বিধায় স্মৃতিচারণের ধারাবাহিকতা রক্ষিত হয়েছে বিজ্ঞানসম্মতভাবে। 'স্বর্ণস্মৃতির প্রভা' শিরোনামের সম্পাদকীয়তে বাঁশের বেড়া দিয়ে কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম চালু হওয়ার কথা উল্লেখিত আছে। ঊনিশশো আশি সালের পহেলা মার্চ কলেজটি সরকারিকরণ হয়।

স্মৃতিচারণমূলক লেখায় মোঃ লুৎফুর রহমান ও কামরুজ্জামান চৌধুরীর লেখা দুটির কথা উল্লেখ করতেই হয়। মোঃ লুৎফর রহমানের লেখাটি অনুলিখিত হয়েছে। তিনি ১৯৫০-৫১ সালের শিক্ষার্থী এবং সম্প্রতি তিনি পঁচানব্বই বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন। লেখাটি মূল্যবান এজন্য যে, উনিই লেখক তালিকায় সর্ব অগ্রজ জীবিত শিক্ষার্থী ছিলেন 'স্বর্ণস্মৃতি' প্রকাশিত হওয়া অবধি। তাঁর নাতিদীর্ঘ লেখায় কলেজ প্রতিষ্ঠায় পুরাণবাজারের ব্যবসায়ীদের আন্তরিক ভূমিকা জীবন্ত হয়ে আছে। তাঁদের প্রত্যেক মেমোতে কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ থাকতো বলে জানা যায়। প্রয়াত কামরুজ্জামান চৌধুরী সাহেব এই কলেজের ছাত্র ছিলেন ১৯৫৬-৬০ শিক্ষাবর্ষজুড়ে। তাঁর লেখাটি কলেজের বাষট্টি বছর পূর্তি উপলক্ষে লেখা। তিনি জানান, 'চাঁদপুর কলেজ' নামাঙ্কিত ইট দিয়ে কলেজের প্রতিষ্ঠা কার্যক্রম শুরু হয়। সৈয়দ আব্দুস সাত্তারের স্মৃতিচারণে শিক্ষা আন্দোলনে এই কলেজের শিক্ষার্থীদের ভূমিকার কথা উঠে আসে। স্বাধীনতার সাঁতারু অরুণ নন্দী খুব চমৎকার করে তাঁর সময়ে জোড় পুকুরে সাঁতারের স্মৃতিকথা ব্যক্ত করেন। আজকের প্রজন্ম হয়তো নামেই জানবে জোড় পুকুর কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। খান মোঃ বেলায়েত হোসেনের (শিক্ষাবর্ষ ১৯৬১-৬২) স্মৃতিচারণ হতে আমরা 'নবারুণ' দেয়াল পত্রিকার কথা জানতে পারি। 'সোনালি স্মৃতি'র জীবন কানাই এখন চলৎশক্তিহীন এক মানুষ। বয়স তাঁকে শিশুই বানিয়ে দিয়েছে বলা যায়। তাঁর লেখাটি 'স্বর্ণস্মৃতি'র অমূল্য সম্পদ। তাঁর লেখায় অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন করিমউদ্দীন সাহেব ফিরে এসেছেন যথা সম্মানে। শহিদ উদ্দিন আহমেদ স্মৃতিচারণায় বিজ্ঞান মেলাকে তুলে ধরেছেন উল্লেখযোগ্যভাবে। সফিউদ্দিন আহমেদ মোনায়েম খাঁ-এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভের স্মৃতি নিয়ে আসেন পাঠকের দরবারে। অজয় ভৌমিকের লেখায় কলেজ মাঠে শেখ মুজিবুর রহমানের জনসভার স্মৃতিচারণ জীবন্ত হয়ে উঠে। প্রার্থী না হয়েও তিনি ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সাতশ’ আশি ভোট পাওয়ার মজার স্মৃতিতে ভারাতুর হয়ে পড়েন। বীর মুক্তিযোদ্ধা মমিন উল্লাহ পাটোয়ারী বীর প্রতীক ছাত্র সংসদে হারুণ-বোরহান পরিষদের বিপুল ভোটে বিজয়কে স্মরণ করেন। মুক্তিফৌজের প্রয়াত সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন ক্লাসে ডরষষরধস ডড়ৎফংড়িৎঃয-এর ঝড়ষরঃধৎু জবধঢ়বৎ কবিতার পাঠ গ্রহণের স্মৃতিতে কাতর হয়ে ওঠেন। ডাঃ সৈয়দা বদরুন্নাহার চৌধুরী ছিলেন ১৯৬৫-৬৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁর সময়ে কোন ড্রেসকোড না থাকলেও তাঁরা সাদা পোশাক পরে ক্লাসে যেতেন। লেখক তালিকায় দুজন লেখক তাদের নামের বানানে ভিন্নতা বহন করেন। একজন হলেন রতন দত্তগুপ্ত ভূলন যেখানে ভূলন বানানে চোখ আটকে যায়। আরেকজন হলেন অরুন চন্দ্র পাল, যিনি মূর্ধন্য নয় বরং দন্ত্য ন দিয়ে নিজের নামকে বহন করেন। রতন দত্তগুপ্ত ভূলন গীতিকার মুখলেসুর রহমান মুকুলকে স্মরণ করেছেন তার লেখায়। অধ্যাপক দেলোয়ার আহমেদ অত্যন্ত চমৎকার করে শিক্ষার্থীদের দ্বারা স্যারদের সংক্ষিপ্ত কিন্তু মজাদার নামকরণ তুলে ধরেন। যেমন : রচপো দিয়ে রমেশ চন্দ্র পোদ্দার স্যার, জব দিয়ে জয়সেন বড়ুয়া ইত্যাদি। বিপদে পড়ে বাসেত স্যারের বাসায় রাত যাপন ও স্যারের মমতার কথা স্মরণ করে অধ্যাপক দেলোয়ার আহমেদ ফিরে যান পুরোনো দিনে। অণুজীববিজ্ঞানী ড. সমীর কুমার সাহা সারা গায়ে আঠাণ্ডতুলো মেখে নীল আর্মস্ট্রং সেজে তখনই জানান দিয়েছিলেন তাঁর বিজ্ঞানের প্রতি ঝোঁকের কথা। মাহবুবুর রহমান সেলিমের দীর্ঘ লেখায় কলেজ ও উক্ত সময়ের রাজনৈতিক ইতিহাস লিপিবদ্ধ হয়েছে। আজকের নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান তাঁর অধ্যক্ষ দবির উদ্দিন আহমদের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা নিবেদন তুলে ধরেন। মোঃ তোফায়েল হোসেন জোসেফ তার লেখায় সহপাঠীদের স্মরণ করে স্মৃতিচরণ করেন। একুশে পদকজয়ী প্রফেসর ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ সকালের ট্রেনে চাঁদপুর কলেজের শিক্ষার্থীর স্রোতকে জীবন্ত করে তুলেছেন তাঁর লেখায়।' ‘মেঘনা পাড়ের বালক’ শিরোনামের লেখায় প্রণব মজুমদার আর্থিক টানাপড়েন সত্ত্বেও মধ্যবিত্ত বাঙালির শিক্ষার প্রতি অনুরাগের ছবি এঁকে তুলেছেন। রতন কুমার মজুমদার শিক্ষার্থী হয়ে একই কলেজে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন তাঁর লেখা ‘বিম্বিত বীক্ষণে’। একদা বামপন্থী রাজনীতির সেবক হাসান আলী তার লেখায় কলেজের প্রতি প্রগাঢ় প্রেম ব্যক্ত করেছেন। ড. অরুন চন্দ্র পালের লেখায় একজন পরিতোষ চন্দ্র রায়কে আবিষ্কার করে আমাদের তারা শংকরের ‘সপ্তপদী’ উপন্যাসের কৃষ্ণেন্দুকে মনে পড়ে যায়। এ ছাড়াও স্মৃতিচারণ করেছেন এম.টি. ইসলাম তাফু, তৃপ্তি সাহা, ড. মোঃ সবুর খান, প্রফেসর অসিত বরণ দাশ, ড. মোঃ বিল্লাল হোসেন, মোঃ আনোয়ার হাবিব কাজল, রাশেদ শাহরিয়ার পলাশ, শেখ মহিউদ্দিন রাসেল, কাজী মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, রোটারিয়ান শাহেদুল হক মোর্শেদ, আমির হোসেন রাজু, অ্যাডভোকেট মোঃ আতাউর রহমান পাটোয়ারী, মোখলেছুর রহমান ভূঁইয়া, শরীফ মাহমুদ চিশতী, উজ্জ্বল হোসাইন, রহিম বাদশা, রাজন চন্দ্র দে, এইচএম জাকির, মোঃ আল-আমিন, সুমন কুমার দত্ত, কাদের পলাশ, মোঃ নাছির আলম, অ্যাডভোকেট মোঃ খোরশেদ আলম সোহাগ, নুরুন্নবী চৌধুরী (হাছিব) প্রমুখ। শহিদ রাজুকে নিয়ে একটি অধ্যায় সংযুক্ত হয়েছে 'শহিদ রাজু স্মারকগ্রন্থ' থেকে।

'স্বর্ণস্মৃতি'তে একটি মাত্র ছোটগল্প স্থান পেয়েছে যার নাম 'কুুসুম'। গল্পটি লিখেছেন প্রফেসর ড. আনোয়ারুল হক। গল্পটিতে রবীন্দ্রনাথের 'গল্পগুচ্ছ'র প্রভাব লক্ষ্যণীয় হলেও গল্পটি পাঠকের মনে দাগ কাটতে পেরেছে। কুসুমের চিরকুটে 'জায়গা আছে' ছোট বাক্যটি আমাদের ধাঁধায় ফেলে দেয়। পরে অবশ্য জানতে আর বাকি থাকে না, এ জায়গা আসলে হৃদয়ে প্রেমিকের স্থান ব্যতীত আর কিছুই নয়। নতুন প্রেমের নব আনন্দে জেগে ওঠার আহ্বান ছিল সেই চিরকুটে। কবি ইলিয়াস ফারুকী, ছড়াকার ফারুক হোসেন, গীতিকবি মিলন খান, আবৃত্তিকার সামীম আহমেদ খান, মোঃ মশিউর রহমান, এস. এম. চিশতী ও পারভেজ খানের লেখা সাতটি ছড়া-কবিতা প্রকাশনাটিকে পূর্ণতা দিয়েছে। তবে শরীফ মাহমুদ চিশতীর স্নাতক শিক্ষার্থী হিসেবে একটি স্মৃতিচারণ গদ্য এবং উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী হিসেবে একটি পদ্য সন্নিবেশিত হয়েছে, যা লক্ষ্য করার মতো।

বাংলা একাডেমি প্রণীত প্রমিত বানানবিধি মেনে চলায় অনভ্যস্ত পুরোনো পাঠকের কাছে বানানগুলো বিসদৃশ মনে হতে পারে। তবে বইটিকে শুরু হতে শেষ অবধি বানান-নির্ভুল রাখার আন্তরিক চেষ্টা করা হয়েছে। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে বর্তমানে বেঁচে আছেন সেরকম বেশ কয়েকজন সমাজবিদিত ব্যক্তির কয়েকটি লেখা যুক্ত করা গেলে বইটি আরো সমৃদ্ধ হতো বলা যায় নির্দ্বিধায়। কিন্তু অনেক সময় আপ্রাণ চেষ্টা করেও সবকিছু এক বিন্দুতে নিয়ে আসা সম্ভবপর হয় না।

'স্বর্ণস্মৃতি' কেবল একটি গ্রন্থমাত্র নয়, এটি একটি কালের দলিল। এটি আগামীকালের কাছে বর্তমানের ভাষ্য। এখানে যারা লিখেছেন তাদের অনেকেই শতবর্ষ পূর্তিতে আকাশবাসী হয়ে যাবেন। কাজেই গ্রন্থটির আবেগীয় মূল্য এবং তথ্যমূল্য অপরিমেয়। নির্মোহ দৃষ্টিতে দেখলে গ্রন্থটি এক অসাধারণ কর্মকুসুম যার সৌরভ ছড়িয়ে পড়বে কালে কালে চারদিকে। এরকম একটি সমৃদ্ধ 'স্বর্ণস্মৃতি' উপহার দেওয়ার জন্যে প্রকাশনা উপ-পরিষদকে কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানাতেই হয়। কাব্য করে আশাবাদী হয়ে বলতেই হয়,

পঁচাত্তরের জীবনখানি 'স্বর্ণস্মৃতি'র পাতায়

বাঁচুক যেন হাজার বছর ভাবীকালকে মাতায়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়