প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
স্বপ্নিল সন্ন্যাস
ঠায় দাঁড়িয়ে থাকবো আমি
নিজের আড়ালে চুপ
কোথাও যাবো না আর
প্রেমের জন্য রমণীর কাছে না
যাবো না সুবাসের খোঁজে বনপুষ্পলোকে
সুর খুঁজে রাখালের পিছে না
যাবো না বাতাসের টানে সাগরে
আমি আর কোথাও যাবো না
কোথাও যাবো না আমি
আমার হৃদয়ে প্রেম ফাল্গুন মধুমাস
আমার হৃদয়ে চির উৎসব সুধা-রাস
কেউ এসে খুলবে বুকের খিল-
ভাঙবে মোহন-জটা
গান হবে তার সাথে, হবে চিন-পরিচয়
জেগে আছি পথ চেয়ে আমি তার স্বপ্নিল সন্ন্যাসে...
টিকাটুলি/১১ মার্চ ২০২২
প্রেমে নেই
প্রেমে নেই বহুদিন
বহুদিন শুষ্কমরুতে একা একা গান করি প্লাবনের
বহুদিন নেই কারো সজল চাহনী- নবীন ইশারা
বহুদিন দিনগুণি প্রতীক্ষার
পায়ে পায়ে আনন্দ জাগাতে এসে বলবে কেউ গোপন কথাটি
বহুদিন অন্বেষার আঁখি করুণ সজল-
বাঁধবে কেউ হৃদয়ের নদী- প্রেমের কমল বুনে
বহুদিন আসেনি কেউ
বহুদিন স্নেহছায়াহীন
বহুদিন পুড়ছে মন পরবাসী
কেউ এসে না বলেই ফিরে যাবে ভেবে ঘুম নেই বহুদিন
বহুদিন আর্ত কেটেছে
বহুদিন পারের পিপাসা বুকে
বহুদিন তপ্তমরুতে একা
বহুদিন প্রেমে নেই
প্রেমহীন আর কতদিন...
স্বামীবাগ/ ০২.০৯.২০২২
দূরে কোথাও
দূরে কোথাও মাঝিদের গানে নাও হাঁকিতেছে চর ঈশানের দিকে, সেখানে ঝোঁপের আড়ালে আছে
কলমি-কমল মধুহরমতি, সেখানে আমণ্ডজামের বাসে শিশুদের উৎসবে জাগে নিদাঘের মাস।
দূরে কোথাও পুঁথি-গানে ঢুলুঢুলু তীব্র বোধনে মজে আছে পাড়া, আগাম ভাবনার চেয়ে সত্য যেখানে কোনো পরদেশী জানকীর জীবনের গানে-গল্পে ডুবে নিশীথে সাদা উঠোনের কোণে বসে পাখি-উড়ালের সুরে ভাসা!
দূরে কোথাও, দখিন হাওয়ার রাসে মেতে আছে ফসলের ক্ষেত, কুঁজ-হিজলের মূলে বসে একাকী রাখাল নব-ভাসানের গীত করছে রচনা...
কবে ছুটি হবে, কবে দেখে নেবো সেইসব উড়োউড়ি জাল-জল ধীবরের নায়ে ভেসে ভেসে-
কবে নেবো লিখে হৃদয়ের অপরূপ আর্শিতে...
চাঁদপুর অভিমুখে লঞ্চে বসে/ ২০.০৪.২০২২
এই নিদাঘে
যেদিন তুমি চলে গেছো সেদিন থেকে শহরে কাকের উৎপাত বেড়ে গেছে; যেদিকে তাকাই শুধু অনিয়মণ্ডঅধপাত, পথে-ঘাটে কর্দমের স্তূপ- কা কা কলহ-করাল, চারিদিকে ভনভন-সারা খিণ্ন মাছির ঝাঁক!
এই হলাহলে, এই নিদাঘের নিদানে তোমার প্রতীক্ষার দায়ে অস্থির বিবমিষা চেপে আমি কোনোমতে পড়ে আছি- শহরের নগ্ন চোয়ালে...
স্বামীবাগ, ঢাকা/ ১৩ এপ্রিল ২০২২
শুক্রবারে
একদল জমানো ঘুমগুলো পুষিয়ে নেয়
একদল সতেজতা নিয়ে জেগে উঠে খুব ভোরে
একদল টুকিটাকি কাজগুলো করে ফেলে
একদল সপ্তাহের কেনাকাটা সেরে নেয়
একদল নগর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে দূরগাঁয়ে
একদল আয়েশ করে খেতে বসে
একদল খোদার কাছে কী কী প্রার্থনা জানাবে তার সূচি সাজিয়ে নেয়
এভাবে ব্যস্ত জীবনে শুক্রবার আসে শান্তি ও শুভাশিস বয়ে
শুধু একদল আছে সময়ের কাছে যারা বিকিয়েছে সবকিছু
অবকাশ পালিয়েছে, বিপন্ন ওরা-
কী বিষণ্ন দেখো মুখ!
শিল্পকলা একাডেমি, রমনা / ০৪.০৫.২০১৮
মন জ্বেলে
এখন ভাঙার কিছু নেই
যা ছিল গুঁড়িয়েছে
অনাহুত শীতের শাসনে
এখন গড়ার কিছু নেই
যা ছিল ধসে গেছে
সীমাহীন পীড়নে পেষণে
অব্যাকুল অধিরাত;
মাঘের মহিমা শুধু জেগে
হাড় নেই, খড় নেই
মন জ্বেলে মাংস পোড়াও!
টিকাটুলি, ঢাকা/ ১৫.১২.২০২২
রাজশকুনীর মৃত্যু
নতুন শিশুটি তার আকাশে মেলবে পাখা
চোখে শ্যেন দৃষ্টি, কুড়াবে আহার
জন্ম দিবে নব নব জীবনের শাঁস
আকাশ পূর্ণ হবে কান্তারের অমেয় আশ্বাসে
ওর স্বপ্নসার জমা ছিল একটিমাত্র ডিমের চারপাশে- বন্ধনে-কুসুমে
সেই সার গুঁজে রেখে বৃক্ষবাকলে একদিন উড়ে চলে স্বপ্ন ও সংশয়ের শূন্যতায়
পরদিন দৃষ্টি ফেলে খালের কিনারে দেখে সে মৃতপ্রাণ, নতুন খাদ্যের খোঁজ;
মাংস নিলো, যতটা সম্ভব ছিল
তারপর ঘরমুখে উড়ালের পালা
অকস্মাৎ কোথা থেকে এলো বাজ
তীক্ষè বুলেটের ঘাতে- উড়ে গেলো মু-ুটি
মু-ুহীন দেহ তড়পায় মাটি খুঁড়ে
আপন জীবনের জন্য যত ব্যথা, তারোধিক ব্যথায় সে ঝাপটায় ডানা
শকুন যে লুপ্ত হবে এইবার-
তাই সহস্র-চেতনার বরে মৃত্যুকে ফিরাতে সে চায়
তবু দুরাশায়- তৃষ্ণার হলাহলে তবু সে মরে যায়!
ফেনী, এপ্রিল ২০২১
ঋতুহারা
সন্ধানে আছি কোন্ হাওয়া গ্রীষ্মে বয় পোড়ায় পত্রালি
মধুমাসে কোন্ বায়ু ছড়ায় সুবাস
বজ্রঝড়ে নাচায় চরাচর
জ্যৈষ্ঠের উগ্র আগুনে পোড়াবো হৃদয়!
ঝুম বর্ষায় ভিজে পাহাড়ের দিকে যাবো
ঢালে বসে দেখবো খেলা সবুজের
হলুদ পাখির সাথে মিতালি গড়ে
অরণ্যের বার্তা পাঠাবো তোমাদের!
শরতে সাদা মেঘের দিশা ধরে উত্তরে যাবো
যেখানে কাশবন স্বর্গের শুভ্রতায় জ্বলে
প্রভাতে শিউলি ঝরে জানায় স্বাগত!
নদী প্রশান্ত হলে ছুটে যাবো তার কাছে
মেঘনা-মুহুরী-সোনাই-লহর আরও কত নদী ছুটে দক্ষিণে
না’য়ে বসে শুনবো পারের গান
নিথর হেমন্ত-রাতে শিশিরের শিহরণে;
তারপর সুস্থির আবাহনে কোনো এক চাষির উঠোনে যাবো
নতুন ধানের দেশে কাটাবো অঘ্রান।
শীতে উষ্ণ হতে দিব ছুট্ সাগরের দিকে
শরীরে বালুকা মেখে মগ্ন হবো গভীর নিনাদে
বনপত্র জড়ো করে জ্বালাবো আগুন
জলফুঁড়ে উঁকি দিবে সূর্যের লাল
উবু হয়ে সেই দৃশ্য দেখবো একাকি!
রাজঋতু এলে দিকে দিকে ফোটে ফুল, আনন্দ ছড়াতে লাগে বনের পাখিরা
এ’ফুলে ও’ফুলে মন দিশেহারা মৌতাতে-
মধুবাসে, পক্ষিনীর শীসে আর বসন্তের নগ্ন-প্রাপনে
ফুল ও মধুপের রণে পরাজিত আমি হারাবো চৈতি রাতে
আর ফিরবো না লোকালয়ে!
স্বামীবাগ, টিকাটুলি/ ০৩.০১.২০২৩
দীর্ঘশ্বাস
স্রোতে মিশে ফিরে না দীর্ঘশ্বাস
তবু কিছু শোক জমা রাখে নদী-
বাঁকে বাঁকে কলকণ্ঠ নেচে!
যে ছানাটি ভুলেছিল বাসা, কোনো ভুলে, অনাদরে-
উদাসীন হাওয়া লেগে
দিন গেলে, গত জীবনের মোহে
গোপন গন্ধ চিনে আপন মমতাডোরে ফিরে সে আসে না;
কেবল গায় সে নীরব ছলে- দিন আছে, দিন আছে বলে...
যে বাতাস বেঁধেছিলে পথে
কথাকলি রাতে- ঊর্ধ্বে তোলে জোড়হাত;
নীল সে বেদনা গীতে
আর কি দিবে না ডাক:
চলো সাথী সমুখ-সাঁতারে...
ত্রিনদীতীর : চাঁদপুর/ ২২ মে ২০১৬
বৃক্ষে সলিলে
হৃদয় ছড়িয়েছিল বৃক্ষে সলিলে
আমায় ফেলেছে ঝড় ভাঙনের কূলে
আমার কেটেছে ছায়া ছিঁড়েছে মুকুল
আমার ঝরেছে পুষ্প ডুবেছে দুকূল
আমার পুড়েছে আশা পুড়েছে স্বপন
জীবন বিকিয়ে তাই বইছি দহন!
ভেবেছি প্রাণের সুখ বনের কুজনে
ভেবেছি মিলাবো মন স্বজনে-সুজনে
সুরের বদলে আমি পেয়েছি যে হেলা
পণ্যের বাজারে যেনো আমি এক খেলা
খেলছে বণিক-বালা খেলছে মাছিরা
খেলছে আমায় নিয়ে চতুর পাখিরা
হৃদয় ছড়িয়েছিল বৃক্ষে সলিলে-
আবার ভাসব কবে নীল-নৌকা-পালে!
মৎস্যভবন ওভারব্রিজ- ০৪ মার্চ ২০২২
যাবো যখন
যাবো যখন চলেই যাবো আমি
আর কিছুক্ষণ সহ্য করো না
কেনও এই অস্থির অবহেলা
কেনও এত ছল-চাতুরি হেলা
নাচো তুমি সঙ্গোপনে নাচো
ভালোবেসে অর্থ-কড়ি খেলা!
যাবো যখন চলেই যাবো তো
একটুখানি ভালোবাসা দেখাও
মনে তোমার থাক বাসনার পীড়া
সেসব আমি দেখতে যাবো না
সেসব দেখে মন্দ হবো কেনো
কিছু মানুষ স্বপ্নচারী যখন!
যাবো যখন হারিয়ে যাবো দূরে
বয়ে নিয়ে গোপন কথামালা
তোমার পথে রবে না আর কাঁটা
মুক্ত বায়ে উড়বে তোমার ঘুড়ি
আমার ভূমে নামবে কালো রাত
তোমার ঘরে পান্না-মোতির-ঝাড়!
এই কিছুদিন আর কিছুদিন সহো
আর কিছুকাল সঙ্গে থাকো না
সদাই কেনো বিমন তুমি থাকো
চিরজীবন দেবো না তো হানা!
স্টারলাইন বাসে বসে, ফেনী থেকে ঢাকা অভিমুখে/ ০৪ অক্টোবর ২০২১
সাড়া
আমার প্রাণে জাগলো যখন ঢেউ
তোমার কোলে নিভু নিভু তারা
আমি যখন ছিলাম দিশাহারা
তোমার মতো দেখলো না আর কেউ
আমার হলে জাগতে তুমি রাত
হতে আমার উড়াল মেঘা-নাও
ফাগুন বনে মিলিয়ে নিতে হাত
অকালে আজ এ কোন্ হানা দাও!
গোঁয়ার ভীষণ আমার হাওয়াই-পাল
ছিন্ন করে মোহ-নদীর জাল
তুমি যখন ধনিক ঘরের দাসি
থাকবো একাই আমি আদিম-চাষি।
চাঁদপুর/ ১০.১২.২০১৩