প্রকাশ : ০৬ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০
গড়িয়ে গড়িয়ে যায় রাত
গড়িয়ে গড়িয়ে যায় রাত
ঘুম নেই অসুস্থ শরীরে,
শরীর গ্রন্থি ছেঁড়া কাগজের মত ওড়ে
জানালায় চোখ রেখে দেখি
গলির মোড়ে বুড়ো পাহারাদারের ঝিমুনি।
এঘর ওঘর করি অনায়াসে
বইয়ের পাতায় কালো পিঁপড়ের সারি
মনের ভিতরে বৃথা বৃষ্টি সুখময় কিছু স্মৃতি
তার মুখের বিন্যাস হোগল ফুলের রেণুর মতো
কি মিহি সুরভিত ঘ্রাণ অস্ফুট শিশিরের মতো ঝরে।
অচিরাৎ ঘূর্ণি ল্যাম্প পোস্টের নিচে উড়ানি হাওয়া
নিজেকে হারিয়ে ফেলি, মনে হয় এইমাত্র বুঝি জন্ম নিয়েছি আবার,
উঁচু নিচু ব্যবধান মানুষের, অদ্ভুত আলোর মোড়কে
ডুবে গেছে মানুষের সভ্যতার অহংকার
মিথ্যে ভাষণ প্রতারণার প্রতিবিম্ব মাঠে ঘাটে
উপেক্ষা প্রহসনের চক্রব্যুহ নীল নির্জন কোণে কোণে।
অকারণ প্রতিশোধ জাত ধর্মের খোলসে খোলসে,
ঈশ্বর ক্রুদ্ধ হলে জোটে ক্ষমা,
কেন যেন মানুষের কাছে কেঁদে মরে
ক্ষমাহীন অক্ষমতা,
তবুও
কিছু মানুষ মহতের মত উঠে আসে যুগে যুগে
খুলে দেয় আবরণ দু'চোখের, আঁধার রাতের।
নির্ঘুম রাতে তুমি যখোন ঘুমাও নিভৃতে
অলক্ষ্যে চাঁদের আকাশে উঠে দেখি
কী অপূর্ব নীলদ্যুতির নক্ষত্র আছে জ্বলে
কী সুন্দর শুশ্রূষায় ভরা তোমার মুখের বিন্যাস
খুব অসুখের শেষে এতটুকু বুঝি ঘুম চাই
দুঃখের ওপারে অণুকণাটির অতলান্তে
যে আছো জেগে অনন্ত চরাচরে
প্রভু আমার প্রিয় আমার অপূর্ব বিস্ময়ে।
রচনাকাল : ১৫/০৭/২০২২, ঢাকা।
দেবদারু দ্বীপে
সেই সব দিন পিছে ফেলে আমি যতটা এসেছি,
জানালায় অনিমেষ চেয়ে দেখি সেই রেখা পথ
ফিরে আসে মনে শাদা পাখির পালকে ভেসে,
আমার উন্মেষ দেহে উঠেছিল বেড়ে যে মাটি ঘাস।
যখন নীলাভ আকাশ দেবদারু দ্বীপে
বেলুয়ার জলে ডুবে উঠেছি ভেসে বারবার,
এখন যা মৃত হাট একদিন ছিল তা সাজানো অক্ষরে
মনে পড়ে সন্ধ্যায় মাঠ ফেরা কৃষকের সেই উৎসব
রাত জেগে যাত্রার পালা কী আনন্দের অবসর।
সেই পায়ের শব্দে শুনি কতো হারানো পুরানো কথা
জানালার ফাঁকে গভীর নিশীথে লুকানো যা কিছু
কিশোর মনের উচ্ছ্বাসে নীরব রাতের ঘ্রাণ
খুব মনে আছে তারে
সহস্র মন্বন্তরে-তার কথা।
বানে ডোবা জলে নৌকায় ভেসে শুনেছি রূপকথা তার
জল ছোঁয়া কোমল বিকেলে আখের ক্ষেতের কাছে
জল থৈ থৈ দূরে ফাগের রঙের মতো কী অপূর্ব আকাশ।
এমন শ্রাবণ বিকেলে সূর্যের আঁচ পরে আসে ধীরে
সুপারী পেয়ারার বনে নামে আঁকাবাঁকা বাদুরের ডানা,
গভীর চুলের ভীড়ে ঢেকে যায় তার লাজুক কোমল মুখ
শুধু মুখ নয় রূপ নয় দেহ নয় যেন অচেনা কোনও ছায়াঢাকা পথ,
দাঁড়ায় সে খুব কাছ ঘেঁষে, দেহে তার খুব চেনা কোনো ঘ্রাণ,
রাখে সে চোখে চোখ রহস্যের ঘোরে
যখন জাগে চরাচরে অতল বিকেল,
খসে যায় খোঁপা তার, জাগে চাঁদ দেবদারু দ্বীপে।
কেন যেন ছায়া পড়ে চোখের আঁধারে
ভেসে যায় জলে তার গাঢ়তম চোখ
মিশে যায় বনে সেই মুখের সুচিত্র রেখা,
জীবন দেবতা! যখন জাগে চাঁদ দেবদারু দ্বীপে নক্ষত্রের পাশে।
রচনাকাল : ২৬/০৬/২০২২, ঢাকা, ১২ আষাঢ়-১৪২৯।
ঠিকানা
হেলিয়ে আকাশ বিকেল যখন যাচ্ছে আলোর রথে
বেরিয়ে এলাম একলা আমি পিচঢালা এই পথে
পথ চলেছে এঁকেবেঁকে বিজন গাঁয়ের মাঝে
অচেনা কোন ধ্বনি যেন আমার বুকে বাজে,
আম নারিকেল চালতা তেঁতুল বুনো ঝোপের ধারে
নানান রকম পাখির গানে মুখর নদীর পাড়ে।
বিদ্যাপীঠের পাশটি ছুঁয়ে দেবালয়ের মাঠে
তিলে ঘুঘু নীরব মনে বসছে যেন পাঠে
কল থেকে জল কলসি ভরে যাচ্ছে দুজন নারী
সাঁঝের হাওয়ায় ভুবন চিল দিচ্ছে আকাশ পাড়ি।
সোনালী ধান মাঠ জুড়ে যে বইছে হাওয়া ধীরে
সকল পাখি ক্লান্ত ডানায় ফিরছে যে যার নীড়ে
ভীমরুলি আর কুড়িয়ানা স্বরূপকাঠির কাছে
হারিয়ে ফেলি নিজ ঠিকানা পথ হারিয়ে পাছে।
নাও পেরিয়ে নদীর ওপার ছিলো আমার বাড়ি
পথভোলা এই পথের শেষে ছিঁড়ছে আমার নাড়ি
গাঁও জোড়া এই সন্ধ্যা আকাশ জ্বলছে হাজার তারা
মা যে আমায় ডাকে না আর নেই তো কোনো সাড়া।
আমার চেনা সন্ধ্যা নদী বইছে একই ভাবে
বালক বেলার দিনগুলি আর কেবা ফিরে পাবে,
চির নতুন ধারায় জীবন চলছে নিরবধি
ফেরে না আর অতীত কারো হাজার ডাকো যদি
পুরান হারায় ধূলির নিচে নতুন হাসে পাশে
নতুন বাতাস ঢেউ খেলিয়ে দোলে নতুন ঘাসে।
রচনাকাল : ১৩/০৬/২০২২ ঢাকা।
নীল মাছি
মাঠের সমস্ত বুক জুড়ে একদিন ছিলো বুনো ঘাস
কখনো নিস্তব্ধতার আঁধারে ইঁদুরের চোখ ছিলো জ্বলে
দল বেঁধে নেশাতুর মানুষেরা শুয়েছে এখানে,
নগরীর মাঝখানে ল্যাম্প পোস্টের কোণায় কী করুণ আঁধার।
যখোন অসার আকাশ বায়ুহীন তাপদাহে ছিলো রেগে
সেই কৃষ্ণ প্রবাহে অমল আলোয় কে এলো বুঝি নেমে
হঠাৎ যুগপৎ প্রার্থনা নারী পুরুষ বৃদ্ধ যুবা সকলের,
সংসার সাগরে শত সংকট দুঃসহ বীতশোকে,
না পাওয়ার বেদনা, কতো তৃষ্ণা, দাও প্রভু আরো মোরে
উদ্বাহু নৃত্য বায়ুভেদী কলরোলে পোড়ে চন্দন ধূপ
উপাসনালয়ের দান বাক্স ভরে আরো লোভাতুর দানে।
এমন ঘোরালো সন্ধ্যায় আসে নতুন চতুর মানুষ
এই তো উর্বর ক্ষেত, ছড়ায় সে মন্ত্র কানে কানে,
আছে তার অভুক্তের লুটে নেয়া ধন, চাই আরো যশ মান
স্তাবকবৃন্দ ঘিরে ধরে তারে, ভক্ত শোনে তার দম্ভের গান,
দেয়াল উঠেছে জেগে ওপাশে ভুখল কাঁদে,
এপাশে কতো নৈবেদ্যের নিবেদন,
সুগন্ধ পেয়ে নীল মাছি ওড়ে, ধোঁয়ার আড়ালে ঢাকে বিগ্রহ,
বিধায়কের স্তুতি কথা শুনে বিধাতা হারান ধ্যানে।
ভেসে ওঠে দূরাগত সেই তান “তোমার কথা
হেথা কেহতো বলে না করে শুধু মিছে কোলাহল,
সুধা সাগরের তীরেতে বসিয়া পান করে শুধু হলাহল”
ভুলে যায় তার কথা যে ভরেছে জীবন অফুরন্ত দানে।
পৃথিবীর গায়ে তবু জ্বর আসে, আসে আলো, নীল মাছি পায় রাত্রির গন্ধ,
ওড়ে মৃত্যু বিনাশী আঁধারে,
বেজে চলে মহাকালের নক্ষত্র সংগীত অনন্ত মহাশূন্যে।
রচনাকাল : ২১/০৫/২০২২, ঢাকা।