মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০

দেবদাস কর্মকারের কবিতা
অনলাইন ডেস্ক

ডেকেছি যখোন তারে

ডেকেছি যখোন তারে মেঠো সন্ধ্যার গানে

হেমন্ত নেমেছে অপরূপ সাজে মাঠ জুড়ে থাকা ধানে

শিষের পাতা চোখ বুঁজে আছে হাওয়া দোলা দেয় তারে

বাসকের পাশে মিলেছে আকন্দ খুব যেন চুপিসারে।

মুছে যায় রোদ গোধূলি আকাশে বুলিয়ে রঙিন তুলি

আঁধার ডাকিছে মৃদু বৈভবে বুকের কপাট খুলি

নদী বয়ে যায় ধীর ক্ষীণ স্রোতে আঁচলে জড়ায়ে দেহ

চরার উপরে কুয়াশা নেমেছে দেখে নাই তারে কেহ।

বৈচির ঝোঁপ নুয়ে আছে জলে পাশে পাটিতার বন

জোনাকির আলো জ্বলে আর নেভে দুলিয়ে নিবিড় শন

পুকুরের পাড়ে নারকেল বনে এসেছে আঁধার ঘিরে

ভালোবাসা জাগে নিরবে নিভৃতে ঘুঘুদের ছোট নীড়ে।

এই সব রূপ দেখো নাই তুমি নাগরিক কোলাহলে

জানি জাগে ছবি বাল্য বেলার তোমার বুকের তলে

এখানে ঘুমায় শান্তির ঘাস শিয়রে বিছিয়ে পাটি

সারারাত ওড়ে কতো পতঙ্গ হৃদয়ে জড়ায়ে মাটি।

এমনি হেমন্ত কতো আসে যায় মুছে যায় ধরাতলে

কতোটা আকাশ ছাড়ে নিঃশ্বাস কাহার অশ্রুজলে

কতো মুহূর্ত কেটে যায় একা মনের আড়ালে তুমি

পাতা ঝরে পড়ে জীবন বৃক্ষের মৃত্যুরে যায় চুমি।

রচনাকাল : ২৮-১০-২০২২, ১২ কার্তিক ১৪২৯, ঢাকা।

তুমি মৌন হলে

তুমি মৌন হলে

আকাশ থামিয়া যায় ধীরে

বুকের পাঁজরের নিচে নামে নদী,

পাঁজর খুলে দাঁড়ালে কতো না বাতাস

কতো কালো পিঁপড়ের সারি।

বনের উপরে আসে মেঘ নিচে তার শিরাবৃক্ষ

একপাশে পলি নিয়ে বয়ে যায় বুনো খাল

হেমন্তে জল চাতকেরা দল বেঁধে নামে তার জলে

সবুজ ছায়ার মাঝে তোমার বেদনাগুলি যায় বুঝি ভেসে

বিকেলের চোখ বেয়ে নামে সন্ধ্যার সুর,

কতো আবর্তন, তুমি অতিক্রম করো সেই সব ছায়া।

তোমার কুন্তলে লাগে কতো সন্ধ্যার রঙ

অনেক পতঙ্গের পাখা পালক ঝরে যায় মাঠে

মানুষের অলীক হৃদয় নীল হয় একদিন

আমিও হারাবো সেই জ্যোৎস্নায় ভেসে যাওয়া রাতে।

অর্থহীন এই সব কথা বলা গল্পের শেষে

ছায়া ঢাকা গৃহবাস থেকে যাবো ফিরে কার কাছে!

অলক্ত অঙ্কনে আকাশ আড়াল করি

যে হাসে অনায়াসে,

তুমি মৌন হলে কোথায় দাঁড়াই আমি

শিরাবৃক্ষের কাছে নয়, চাই হে মুগ্ধ তোমাকে।

রচনাকাল : ২৩-১০-২০২২ ঢাকা, ৭ কার্তিক ১৪২৯

শিশিরের কণা ফুটেছে যখোন ঘাস

এসেছো যখোন পেলব গোপনে,

চোখ মেলে দেখি তরুণ প্রভাত

শিশিরের কণা মাকড়ের মিহি জালে,

ধীরে ধীরে ফোটে সকালের রোদ কুয়াশা জড়ায়ে বুকে।

এপাশে ধানের ক্ষেত মাঝে মধুমতি নদী

কাচের ওপাশে দাঁড়িয়ে তুমি খুব একাকী মনে,

লালাভ ঝিলের লতার আড়ালে যেন ক্ষীণকায় আলো

ঢেকে আছে গ্রীবা ঘন কালো চুলে আবছায়া শাড়ী নীল।

আকাশ সেজেছে অপরূপ যেন শরতের সাদা মেঘে

অপূর্ব বিপুলে পাখি পতঙ্গ কতো উদ্ভাসিত স্বর,

কী সবুজ নির্জনতা, মৃদু আলো পিয়ালের তাজা বনে

তাকাই সুদূরে অবাক আকাশ তুমি ডুবে ঘন নীলে।

যখোন এতোটা মুখর সব

সুদূরের সুন্দর অনুভব

তুমি কেন তারে বিষণ্নতা বলো!

ডেকেছে রূপালি নদী, ডেকেছে শ্যামল বন

বাতাস ঝাড়িছে ডানা মৃদু মধু আহ্বানে

শ্যামলী ছিঁড়েছে ঘাস নাকে পাই তার ঘ্রাণ

শ্যাম সৌরভে জাগে যেন কে হৃদয়ে জাগায়ে সুর

রাই ডুবে যায় ক্ষীণ স্রোতে ভেসে চন্দ্রাবলী জলে।

কাল কোজাগরী রাতে ছিলো ভাঙা মেঘ

ছিলো জ্যোৎস্নার ফাঁকে

যেন সেই মুখ দেখি বারবার ঠিক ঘুমাবার আগে।

যেন ছিলে তুমি পেলব গোপনে কাচের আড়ালে,

তোমারে চিনিনি একটি জীবনে, কাল কেটে গেছে কতো

তবু জানি হে প্রিয় তুমি আছো ঐ মেঘ লোক ছেড়ে

আকাশ ছাড়িয়ে দূরে,

এইটুকু বলি তোমার আছে তো আলো,

কিছু আলো দাও

মনোবীজ দাও বপন করি,

শিশিরের কণা ফুটেছে যখোন ঘাসে।

রচনাকাল : ১৫-১০-২০২২,ঢাকা, ৩০ আশি^ন ১৪২৯

রঞ্জনা এখনো আসে

রঞ্জনা এখনো আসে ধীর পায়ে

বাঁকানো নদীর পাড়ে যেখানে আছে বুনো ঝোঁপঝাড়

জড়ায়ে জড়ায়ে কাঁটা পায়লার বনে,

হয়তো সে খোঁজে তরুণী বেলা সবুজ জলের তলে।

সেই নদী কতো প্রশান্ত হৃদয়ে তোলে ঢেউ বাতাসে বাতাসে

মেঘে মেঘে রূপালি হাঁসের ছায়া দেখে একা

নাম তার সন্ধ্যা, পাশাপাশি হেঁটে দেখে মুখ বেলুয়ার জলে,

কতোটা ক্লান্ত সে, ঘুমের গভীরে হারায় যেন নিরিবিলি মনে।

তবু কেন বিরহ দিবসে নিজেকে লুকায় সে বহু দূরদেশে

কে তাকে ভাসায় কোনো আর্দ্র কালিদহে!

এখোন হৃদয়ে তার কতো স্বপ্ন কথা,

তখোন কিশোরী বেলা হয়েছিল দেখা কোনও এক তরুণের সাথে,

জলের উপরে,

এমন অবাক সে,

যে অকারণে হাসে, ঠেলে দুঃখ আঁধারে আঁধারে,

তারপর জ্বালে আলো আকাশ গঙ্গায়।

কোনও একদিন পুরানো নগরে শিথিল শিলার কাছে জেগেছিল বুঝি প্রেম,

সারারাত পাশাপাশি বসে শুনেছে কতো তারার গল্প,

হৃষ্ট হৃদয়ে কতোটা দেহের ঘ্রাণ,

ঠিক যেন দুজনের মনের গভীরে উদাসী রহস্য ঘোর।

এখোন ছোটে না মন আর জুঁই চাপা বনে

যেন মরণের পারাপারে ডাকে মায়াবী বৃক্ষের ছায়া,

কতো চেনা মুখ শরৎ জ্যোৎস্না, পুরানো গাঁয়ের ছবি

মনের আকাশে রাত জাগা সেই তারাটির কথা,

বিষের পাথরে লেখা নাম,

রঞ্জনা ভাসে নদী হয়ে, এখনো আসে কোন পুলকিত রাতে।

রচনাকাল : ২৯-০৯-২০২২, ঢাকা।

প্রতীক্ষা জাগে প্রাণে

শুনেছি তার প্রথম ভোরের কথা

কল কল স্বরে যখোন যেতেছে বয়ে মধুছন্দা

অনায়াসে শরীর ঢেকেছে মেঘ বনের উপরে

ভেঙে গেছে ঘাট তবু সে দাঁড়ায় একা তৃণের প্রাণের কাছে।

তানিমা এসেছে নেমে ঠিক পাশে তার ফসলের মাঠ

মৃদু পায়ে মাড়িয়ে আঘাত ছায়া পড়ে চোখে মুখে চুলে,

সহস্র বছর ধরে এ মৃত্তিকা ভালোবেসে আছে বুঝি ধ্যানে,

তরুণ রোদের কাছে অর্জুনের মগ ডালে সুঁই চোরা পাখিটির মতো।

এসেছে গোধূলি বেলা আকাশের নীল গেছে ভেসে

এখোন শরীরে স্নায়ু শিরার ভিতরে জাগে ইচ্ছা কথা কহিবার,

হৃদয় ফেলেছে তার সন্ধ্যার ছায়া চন্দ্রাবলী জলে,

সারাজীবনের সব কথা দুঃখ রোমাঞ্চকর ইতিহাস।

তাহার আপত্তি জেনে কেটে দেই নিস্তব্ধ অপেক্ষার কথা

শুধু পড়ে থাকে চুপচাপ, প্রতীক্ষা, হৃদয়ের খামে

পড়ে থাকে সব নির্মাণ রাতভর নক্ষত্র আকাশে।

সময় ফুরিয়ে আসে ধীরে ফিকে হয় অরব বারতা

গভীর ঘুমের ভিতরে রাতভর কতো স্বপ্ন কুহক,

যেন পাড় ভাঙা কুলে যেখানে এখনও ঘাসে লেগে আছে

তার আঙুলের ছাপ, অপার্থিব প্রেমে,

মধুছন্দা জাগে মৃদু স্রোতে বটের ছায়ার পাশে

এই বুঝি শেষ হয় প্রতীক্ষার পালা, জীবন অথবা মৃত্যু

পাথর বাটির মতো, বাদুরের ডানা ছুঁয়ে ছুঁয়ে

রাত শেষে আসে মৃদু জ্যোৎস্না কুয়াশায় মোড়া নীলে।

রচনাকাল : ১৯/০৯/২০২২ ঢাকা, ৪ আশ্বিন ১৪২৯

বেড়ী

টিলার উপরে কুয়াশা এসেছে যখোন

রাত্রি এসেছে হাওয়া মেখে ধীরে নেমে

পুরানো টিনের চালে পা-ুর কোন পাখি

ডেকে চলেছে ভৌতিক কোন স্বরে।

এপাশ ওপাশ করে ঘুম নেই চোখে তার

ওপাশে ঘুমায় মা অসার ঘুমের মতো

অভাব ক্লিষ্ট ঘরে রাত দিন শুধু জ্বালা

তবুও স্বপ্ন জাগে কিশোরী করুণ বুকে

সুদূরের কোন দেশে মেঘ হয়ে যাবে ভেসে।

রাতের আঁধার ভাল, দিনের তাপের চেয়ে

দুরু দুরু কাঁপে বুক মোরগ বুঝিবা ডাকে

সকাল ফোঁটার আগে দল বেঁধে ওরা ছোটে,

পিছনে ঝোলে ঝাঁপি শত জনমের শাপে

দুহাতের আঙ্গুলে, চায়ের পাতার দাগ

মিশে আছে কতো ক্ষত নিরব ব্যথার ঘায়ে।

ক্ষুধাতুর এই দেহে তবু যৌবন উঠে ফুটে

হয়তো বেসেছে ভালো অবাক তামাটে ছেলে,

হয়তো ভেবেছে মেয়ে এই জীবনের মানে

কীটের দেহের মতো, দারুণ অর্থহীন।

ভাঙা জানালার ফাঁকে, মরা জ্যোৎস্নার আলো

জামের পাতার আড়ে, কে যেন ডেকেছে তারে

শ্রাবণের শেষ রাতে কেউ দেখেনি সে মৃত রূপ

ওড়না দুলিছে ধীরে, শন শন বুনো হাওয়া

নীল জ্যোৎস্নার ভেসে হারিয়ে গিয়েছে মেয়ে।

রচনাকাল : ১২/০৯/২০২২, ঢাকা। ২৮ ভাদ্র ১৪২৯

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়