প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০
মিথ্যুক আবশ্যক
বিধিমোতাবেক একজন মিথ্যুক নিয়োগ করা হবে
বেজন্মার মতো যার কথা হবে জন্মপরিচয়হীন
যে নিয়ম করে অসংখ্য মিথ্যা বলবে রোজ রোজ
ছাই দেবে বিন¤্র লোকের মুখে মুখে
মিথ্যের ভেলকিতে পাড়া মাৎ হবে
কুপোকাৎ হবে ভদ্র-সুধিজন,
শুয়োরের বাচ্চাতুল্য এমন একজন
খাঁটি মিথ্যুক জরুরি ভিত্তিতে আবশ্যক।
আগ্রহী মিথ্যুকগণ আবেদন করুন কুৎসিত ছবিসহ
খুব দ্রুত করুন, সময় যে খুব কম
বেতন নিয়ে ভাববেন না একদম
বিশ-ত্রিশ-চল্লিশ, হীরে-মুক্তো-মানিক যা প্রয়োজন
বাড়ি-গাড়ি মদণ্ডবেশ্যা যার যা প্রয়োজন অকাতরে দেবো
বিনিময়ে আমি কেবল একজন জাতমিথ্যুক চাই
বেজন্মার মতো যার কথা হবে জন্মপরিচয়হীন...
.
মুখ
মূলত আমি একা নই
অবিকল আমার মতো দেখতে
আমার কণ্ঠস্বর, হাসি-কান্নার রঙে
পৃথিবীর অসংখ্য প্রান্ত জুড়ে ঘুরে বেড়ায়
আরো অসংখ্য মানুষ।
আমি এখানে কবিতা লিখি
অ্যামাজনের গহীনে যে থাকে
আদিম জীবন আর শ্বাপদ স্পর্শে
তার সাথে আমার মুখ, চোখণ্ডচুল
মিলে যায় হুবহু জমজের মতো।
অথবা একদিন পিরামিডের ভেতরে থাকা
জংধরা মমির মুখ আচমকা
আমাকে দেখে হেসে উঠে
জড়াতে চেয়েছে নিবিড় আলিঙ্গনে-
আমি নাকি তারই ভাই- তুতেনখামেন!
আমার মুখ নিয়ে চলে গেছে সহস্র জন
গতকালও ফিরেছি সৃষ্টির আদি-নক্ষত্রে
উ™£ান্ত আমি ঘুরেছি প্রান্তরে
জেনেছি খেয়ে গেছে গন্ধম আমারই মতো কেউ!
আমি আমার সবগুলো মুখ ফেরত চাই
অতিক্রান্ত দিন ও রাত ফেরত চাই
অথচ তখনো দেখি অসংখ্য মানুষ
হুবহু আমারই মুখের মতো, হেঁটে যাচ্ছে
আদি থেকে অনন্তে...হেঁটে যাচ্ছে...
.
কাছের বাঁশি
সমুদ্র কাছে এলে
আঁচল কেন দূরে রাখো মেয়ে
কী অত ভয়
কী বিস্ময়
ফেরি করে ফেরো অচেনা বন্দরে?
আমি তো প্রাচীন রাখাল
বাঁশি ফেলে দূরে
বেজে যাই তীব্র একা
প্রতিরাতে না-ফেরা ঘরে!
আমাকে কাছে রাখো চুড়ি, কপালের টিপ
অলসদুপুর রাখো, জলেভাসা দীপ
রাখো স্পর্শ- অনন্ত মদিরায়
রাখো আকণ্ঠ ডুবে যেতে যেতে
অতল গহীনে...
সমুদ্র কাছে এলে
ফিরে এসো মেয়ে, অনন্ত দহন রেখে...
.
বিলুপ্ত পুরুষ
একটি পাতার ওপর দাঁড়ালেই
ঘোর বৃষ্টি নামে সুঠাম শরীরে
ঝুম শব্দে কাঁপে নদী
দিগন্ত গিলে নেয় শ্বাস
জেগে ওঠে হন্তারক চোখ
হাঁটে লক্ষ্যহীন, উন্মত্ত ক্ষীপ্রতায়-
চারদিকে জমে আমারই মৃতদেহ!
যুগান্তর ডাক দিলে
একটি পাতার ওপর দাঁড়াতেই
প্রতিটি যুদ্ধ থামে
প্রতিটি নারী তখন ফলবতী
সংসারে-প্রতিটি সন্তান দুধে ও ভাতে!
আমি এক বিলুপ্ত পুরুষ
খুন করি নিজেরই শরীর
যুগান্তর-প্রতীক্ষায়...
.
এলোমেলো
মনে করো কেউ তোমাকে ডাকেনি,
অথচ তুমি শুনতে পাচ্ছো অতল গান, প্রিয় কথামালা
মনে করো একদিন কোথাও হারাওনি,
হারিয়েছে কেউ একজন, খুব গোপনে- একাকী।
মনে করো, তীব্র রোদ- শুয়ে আছো
আর ঝিরঝির বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে শরীর
ভরদুপুর জলে ভাসছে চাঁদ,
তুমি ডুবে আছো আকণ্ঠ, জ্যোৎস্নায়...
মনে করো, তুমি ঠিক তুমি নও- রবীন্দ্রনাথ,
কবিতা লিখছো পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা,
অথচ একদিন হয়ে উঠছো তররু পিকাসো,
কবিতা সব ছবি...ছবিরা সব পাখি, উড়ছে...
মনে করো তুমি সুচিত্রা সেন সাদাকালো,
উত্তমকুমার কেউ নেই ...
আমি ক্রমশ নায়ক, পৃথিবী ভাসছে...
মনে করো... মনে করো।
.
মানুষ অথবা পাতার সংসার
পাতাদের জীবন থাকে না
তবু তার বৃক্ষের সংসার
হাওয়ায় দোল, বৃষ্টি মাখামাখি
এ জীবন কেবল উড়ে যাওয়া...
তীব্র্র ঝড় এলে নিয়ে যায় শরীর
কাঁপে পৃথিবী প্রলয়ে
কোথায় যাবে কেউ জানে না
বিচ্ছেদ শুধু বিষণ্ন ধুলো!
পাতাদের বৃক্ষও রাখে না
ঘুরপাক সময়ে ক্রমশ হলুদ দেহ
পতনের প্রতীক্ষা শেষে
অতঃপর মাটির কাছাকাছি
পায়ে পায়ে পিষ্ট জীবন...
বড় বিরূপ এ সময়
পাতাদের কেউ থাকে না
পাতাদের কেউ রাখে না।
.
আলাদিনের দুঃখ
ধীর-পায়ে যে রাত নেমে গেছে অনন্তে
তার পিছু হাঁটি সর্বত্র
আমি আর সেই গল্পের আলাদিন
প্রদীপ নিয়ে ঘুরি জলে-জঙ্গলে
মানুষ হৃদয়ে-
কাছে থাকি প্রতিটি মন্ত্রে
শুনি জাদুধ্বনি- ‘আদেশ করুন জাঁহাপনা!’
আমি আদেশ করতে পারি না
অগণিত শকুন খেয়ে নেয় চোখ
কুকুর স্বভাবে বাড়ে দাঁতাল মানুষ,
আর যান্ত্রিক চিৎকার...
ক্ষয়িষ্ণু মানুষ ছায়াশরীর হলে
আমি নীরব-নক্ষত্রে হারাই
আলাদিন ফেরে না গ্রামে!
.
ভুল মানুষ
ভুল মানুষ প্রায়ই হারায়
গোলকধাঁধা, মিথ্যা বারান্দায়
সহজেই কতজন ডুবে আকণ্ঠ
ভুল মানুষ বেদনা ওড়ায়।
অলিগলি ভরা শ্বাপদণ্ডশ্বাস
মৃতরা হাঁটে, সাঁতরায় প্রাণপণ
ঠিকানা নেই, পৌঁছে না তীরে
উড়ে যায় পাখি, শূন্যতায়...
ভুল মানুষ নদী রাখে দূরে
না মেঘ না পাতা
না কেউ জানে নাম
ভুল মানুষ প্রায়ই হারায়
যে হারায় সে জানে না
যে আছে সেও জানে না
চারদিকে ঢেউ বাড়ে,
আর ডুবন্ত মানুষ...
.
আত্মকথন
নিজেকে রাখি নির্মম অথবা প্রজাপতি ডানায়
নগ্ন পায়ে, বিক্ষত কোলাহলে
আত্মহননে রাখি বুক, প্রতিদিন...
ভালোবেসে গেঁথে নিই বিষমাখা ছুরি।
নিজেকেই ডাকি সযতনে অথবা বিরাগ মুখে
বৃষ্টির ফোঁটায়, আগুন আঁচে
এবং মহাপ্লাবনের প্রতি ক্ষণে ক্ষণে
সযতনে নিত্য চুমু আঁকি মৃত্যুর ঠোঁটে।
নিজেকে রাখি গোপনে অথবা পতন বিচ্ছেদে
রক্তের শিহরণে, চিৎকারে আর্তনাদে
এবং সক্রেটিসের হেমলকে...
নিজেকে রাখি সবটুকু ঘৃণা ও ভালোবাসায়।
.
আদিম
চোখের কার্ণিশে বসা বসন্ত রোদ
আর সকৌতুক নিহত এক গোলাপের নিচে
মেয়েটির ঠোঁটে জ্বলে প্রগাঢ় চুম্বন
প্রাচীন সুরার পাশে পতিত পেয়ালা
ঢের নেশা তার চিবুকে জমা
নির্লজ্জ দেহ ছোটে হরিণী পিছে
নীলের সীমানা ছোঁয়া অসংখ্য ফানুস
খোদাই করে মন উল্কি আগুনে
মাতাল শরীর রাখে আদিম কিরিচে