প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০
হাসি-কান্না
হাসি-কান্না যমজ দুবোন খুব বেশি নেই মিল
হাসির পরে কান্না আসে অশ্রুতে ঝিলমিল
হাসির যখন আসর বসে কান্না তখন ধায়
কান্না এলে একটু হাসির দেখাই পাওয়া দায়।
সুখের হাসি হাসে মানুষ শোকের কান্না কাঁদে
কান্না পেলে হাসি তখন বোঁচকা নিজেই বাঁধে
খুব বেদনায় যখন শোকের মুখখানি না ফোটে
হাসি তখন পাগল হয়ে মুখ জুড়িয়ে ছোটে।
মায়ের মুখে হাসির মোতি জ্যোতির প্রহর আনে
আকাশ যেন রয় তাকিয়ে পবিত্র মুখ পানে
কান্না এলে মেঘের বুকে কষ্ট জমে খুব
ধূসর মেঘে বৃষ্টি হলে অশ্রু মারে ডুব।
হাসি-কান্না একসাথে নয় পৃথক হয়ে থাকে
দুয়ের মাঝে সুঁইয়ের মতো বৈরিতা কে রাখে
হাসি এলে কান্না থাকে মুখ লুকিয়ে আড়ে
ফন্দি কেবল কখন সে যে আসতে আলোয় পারে।
আজকে যারা নিত্য হাসে ছল-চাতুরি করে
জীবন শেষে কান্না তাদের বসবে গায়ে চড়ে
কান্না যাদের জীবন জুড়ে ঝরায় নয়ন জলে
মরণ শেষে হাসবে তারা সবাই যে তা বলে।
হাসি-কান্না যমজ দুবোন দারুণ যাদু জানে
একটা গেলে অন্যটাকে কেমন মায়ায় টানে
জীবন হলো কান্না-হাসির সঠিক সমন্বয়
কেবল হাসির জীবন হবে মোটেই অমন নয়।
অনাহারীর কান্নাগুলো হাসির তোড়ে উড়ে
যাবেই যাবে সূত্র বলে অজানা কোন্ দূরে
দীন দুখিনীর অশ্রু ঠিকই মুক্তোমালা হবে
হাসি সেদিন তার বুকেতে কলকলিয়ে রবে।
হাসি-কান্না হীরে-পান্না রত্ন পৃথিবীতে
একটি যদি লুকায় তবে একটি আসে চিতে
হাসির দেখা চাইলে পেতে কান্না সহ্য করে
থাকতে হবে অবিচল আর অটুট ধৈর্য ধরে।
সুখ-দুঃখ
সুখ-দুঃখের দুইটি ভেলায় এই পৃথিবীর দম
দুঃখের ভেলার পথ হলে শেষ সুখ হয় উদ্গম
দুঃখবিহীন জীবন যাদের অপার সুখের রেশ
তাদের ঘরেও জীবন-পাতার স্বস্তি নিরুদ্দেশ।
দুঃখ যেমন পরশ পাথর ইহজীবনের মায়া
সুখের তেমন নিখাদ কদর স্বর্গের প্রচ্ছায়া
দুঃখ হলো লবণ যেমন সুখ স্বাদে হয় চিনি
কেবল সুখের দিনগুলো তাই দুখের নিকট ঋণী।
সুখ হলো এক মায়ার হরিণ পশ্চাতে তার ছুটে
এই জীবনের দম হয় শেষ শান্তি যে তার টুটে
দুঃখ মানেই ধৈর্য শেখা এই জীবনের হাটে
সুখ-দুঃখের মিলন মেলায় অমল সময় কাটে।
দুঃখ নদীর তরঙ্গ আর সুখ হলো তার তরী
দুঃখ জয়ের শেষেই সুখের অনাবিল গড়াগড়ি
মায়ের দুঃখের সফল পাওয়া সন্তানদের ডাক
মধুর ডাকের সুখের পরশে দুঃখ রয় নির্বাক।
দুঃখকে যারা তুচ্ছ করেছে সুখ তারা পায়নিকো
সুখের নহর ভুলেও তাদের মনঘরে যায়নিকো
দুঃখবিহীন সুখের নজির এই পৃথিবীতে নাই
দুঃখ যখন বাজায় ঢোলক সুখ বাজায় সানাই।
চিরসুখিজন পায়নি দুঃখের পরশ জীবনে যারা
তাদের সুখের ঘাটতি রয়েছে যেন ঝোলে নুন ছাড়া
ক্ষুধার কষ্ট জানেনি যে জন কীভাবে বুঝবে তারা
শূন্য উদর ভর্তি হবার খুশি যে বাঁধন হারা।
নিজের শ্রমের ঘামের নহরে ভিজিয়ে গতর খানি
করে সিঞ্চন ফসলের ক্ষেতে গাছের গোড়ায় পানি
সে ফসল যদি পেকে হেসে ওঠে অফুরান তার সুখ
এমনি করেই অমূল্য হয় ছোট ছোট শত দুঃখ।
সুখ ও দুঃখের দুইখানি ভেলা পৃথিবীর সিন্ধুতে
জীবনের নদে আছে তারা বাঁধা অভিন্ন বিন্দুতে
দুঃখকে যারা করেনি নিবীত সুখ তার কীসে আসে
চিরসুখি তারা দুঃখকে যারা রেখেছে সুখের পাশে।
দুর্নীতি রুখো
আগামীর পৃথিবীতে ভালো যদি চাও
দুর্নীতির দানবের পায়ে তালা দাও
নীতিহীন দিন হোক একেবারে শেষ
সমৃদ্ধির পথে যাবে প্রিয় বাংলাদেশ।
সরকারের পদে থেকে ঘুষ নয় আর
আর নয় এদেশের সুযোগ ছারখার
দুর্নীতিহীনতায় যে পেরেছিল চলতে
সে পেরেছে জোর দিয়ে সব কথা বলতে।
জনতার টাকা মেরে যারা খায় নিত্য
তারা হলো মনেপ্রাণে শ্বাপদ দুর্বৃত্ত
যেখানেই পাবো কোন দুর্নীতি আভাসে
সেখানেই প্রতিবাদ রাজপথে-আবাসে।
ঘুষ দিয়ে আর কোন করাবো না কাজ
দুর্নীতি হঠাতে চাই শক্ত আওয়াজ
রাষ্ট্রের সকল পদে সুনীতির চর্চা
সুশাসন পেতে হলে নয় ঘুষ খরচা।
পথঘাট নির্মাণে আর নয় কমিশন
দুর্নীতি মুক্তির হোক কঠোর মিশন
নকলের আয়োজনে নয় কোন শিক্ষা
মেধা দিয়ে চাকুরির এই হোক দীক্ষা।
আর নয় হরিলুটে নিজদেশী সম্পদ
ঘুষহীন আহারে খাবো তবু কম পদ
রোধ হলে ক্ষমতার অপব্যবহার
দেশে হবে আগামীতে সুখের বাহার।
দুর্নীতি যে করে আর যারা সয়ে যায়
মানুষের গুণ হতে তারা ক্ষয়ে যায়
ধীরে ধীরে লোভে তারে চারিদিকে ঘিরে
নিয়ে যায় পতনের নরক শিবিরে।
সুদিনের পথ চেয়ে এদিন শপথে
দুর্নীতিকে দূর করি পরতে পরতে
সামাজিক ভাবে তারে করি বয়কট
এভাবেই মোকাবেলা করি সঙ্কট।
মাদককে না বলি
পৃথিবীতে মানুষের যত অরি আছে
তারা সব কিছু নয় মাদকের কাছে
একবারই যে পড়েছে মাদকের ফাঁদে
সারাটা জীবন ধরে সে কেবলই কাঁদে।
মাদকের কাজ হলো ধীরে ধীরে খুন
অকালে ঝরিয়ে দেয় মানব-প্রসূন
মাদকের ব্যবহারে লোপ পায় হুঁশ
নিমেষেই পশু হয় মাটির মানুষ।
মাকে করে খুন আর বাবাকে প্রহার
মাদকসেবীর এ গুণ সাথে আছে আর
মাদকের প্রয়োজনে করে রাহাজানি
কাগজে-খবরে পড়ে সব তাহা জানি।
মাদকের রসায়নে লিভারের রোগ
হার্টের জটিলতায় শরীরে দুর্ভোগ
কিডনি বিকল হয় বিকল মস্তিষ্ক
মনোরোগে আত্মহত্যা আছে সেই রিস্কও।
সাজানো বাগান আর সুখি সংসার
মাদকের ছোবলেই হয়েছে অঙ্গার
মাদক গ্রহণ করে মেধাবী তরুণ
মরণের পথে হাল হয়েছে করুণ।
আজকের এ শিশুদের চাই অঙ্গীকার
এসব কুপথে কেউ মাড়াবে না দ্বার
খেলাকে পড়াকে বলি বার বারই হাঁ
শৃঙ্খলা বজিয়ে বলি মাদক আর না।
দূর হোক ভিক্ষা
ভিক্ষা করা পেশা নয় হলো অভিশাপ
দ্বারে দ্বারে হাত পেতে শেষে ছাড়ে হাঁপ
ভিক্ষাজীবীর সম্মান নেই আছে দুখ
ভিক্ষা করা খাসলত কারো বা অসুখ।
ভিক্ষাবৃত্তি মানুষকে করে তুচ্ছ আর
উচ্চ করে না মনের নীতির দুয়ার
খুঁজে মেগে খেয়ে খেয়ে ভুলে যায় মূল
কোন অনীতিতে আর জাগে নাকো শূল।
শরীরের শ্রমে যার দৈনিক অনীহা
নেই তার জীবনের প্রমিত সমীহা
ছোট মন ছোট পণ পথের সে খড়
হিসেবের খাতা তার সদা গড়বড়।
ভিক্ষার দুইহাত আজ কর্মবীর হোক
উঁচু হোক দৃষ্টি তার দূরদর্শী চোখ
তার শ্রমে ভরে যাক স্বদেশের গোলা
দূরে যাক উড়ে যাক ভিখ্ মাগা ঝোলা।
দ্বার হতে দ্বারে আর নয় কোন ঘোরা
আর নয় জীবনের পাতা কাঁথা মোড়া
নিজেদের শ্রমে হোক নিজেদের মান
স্বদেশের উন্নয়নে হোক অবদান।
অলসতা যার নেই তার নেই ভয়
ভিক্ষায় দুহাত তার আর নয় ক্ষয়
ছোট হোক বড় হোক শ্রম যার ধন
কখনো হয় না তার মলিন বদন।
সঞ্চয়
দুর্দিনে কাজে আসে যত সঞ্চয়
বিপদে তা বল দেয় এনে দেয় জয়
অভাবের হত দিনে নত সে না করে
সঞ্চয় জীবনকে মনোবলে গড়ে।
সঞ্চয় হতে পারে টাকা কড়ি কিছু
হতে পারে ভালো কাজ কিছু উঁচু-নীচু
হতে পারে পুণ্যের বালিকণারাশি
জীবনের প্রয়োজনে ওঠে উদ্ভাসি।
আজ যারা আছে ভালো হয়তো বা কাল
কেটে যেতে পারে তার জীবনের তাল
সঞ্চয় এ বিপদে হতে পারে সাঁকো
না পড়ে সে খাদে তারে পায় না পাঁকও।
সঞ্চয় হতে পারে বিদ্যার বল
হতে পারে কতিপয় চিন্তার ফল
আকালের কালে যাতে ত্রাণ হতে পারে
সঞ্চয় দোয়া কিছু হয় ধারে-ভারে।
জ্ঞানী লোকে সময়কে করে সঞ্চয়
সময়ের কাজ তার সময়েই হয়
আগামীর কাজ কিছু আজকেও করে
এভাবেই যায় জিতে জীবন-সমরে।
ব্যয় যার বেশি আর হয় অপচয়
পরিণামে হবে তার ক্ষয় নিশ্চয়
সঞ্চয়ী হলে শেষে জীবনের ফুল
ফোটায় সে অবশেষে বাগানে অতুল।