মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০

পল গগ্যাঁর চোখে এদগার দেগা

মুহাম্মদ ফরিদ হাসান

পল গগ্যাঁর চোখে এদগার দেগা
অনলাইন ডেস্ক

শিল্পের জগৎ বর্ণিল ও বহু বিচিত্র। শিল্পীদের যে পরম গন্তব্য তা উপলব্ধি করাও সাধারণ মানুষের পক্ষে দুরূহ বিষয়। শিল্পী শিল্পী বন্ধু হন, মন ও মতের অমিলে কখনো শত্রুতেও পরিণত হন। যেমনটা আছে চিত্রকর ভ্যান গঘ ও পল গগ্যাঁর সম্পর্কের উত্থান-পতন, দ্বন্দ্ব ও সংঘাত। কিন্তু এদগার দেগা (১৮৩৪-১৯১৭) ও পল গগ্যাঁ (১৮৪৮-১৯০৩)-এর সম্পর্ক? এ সম্পর্কে গগ্যাঁই লিখেছেন তাঁর ডায়েরিতে প্রায় ১২০ বছর আগে, ১৯০৩ সালের ১০ জানুয়ারি। দেগা সম্পর্কে তাঁর মূল্যায়ন মনোমুগ্ধকর।

গগ্যাঁ তাঁর ডায়েরিতে দেগা সম্পর্কে বিশদভাবে বলার আগেই জানাচ্ছেন, তিনি তাঁকে ভালোভাবে চেনেন, জানেন এবং বুঝতে পারেন। দেগা তখন জনসাধারণে বিপুল জনপ্রিয় নন, অল্প মানুষই তাঁকে জানেন। তাঁকে উপলব্ধি করতে পারা মানুষের সংখ্যা আরও অল্প। গগ্যাঁর ভাষ্যে : ‘অনেক শিল্পী তাকে এড়িয়ে চলে, তাকে ভয় পায়, এছাড়া অন্য যারা আছে তারা তাকে সম্মান করে, তার সম্পর্কে প্রশংসা করে। কিন্তু তারা কি দেগাকে খুব ভালোভাবে জানে বা চিনতে পেরেছে? সন্দেহ আছে।’ অর্থাৎ দেগাকে চেনা সহজ বিষয় নয়।

কেমন মানুষ দেগা? যিনি এঁকেছেন ‘দি ড্যান্সিং ক্লাস’ (১৮৭১), ‘দি ড্যান্স ক্লাস’ (১৮৭৪), ‘ওমেন আয়রনিং’ (১৮৭৩), ‘ড্যান্স প্র্যাকটিসিং এট দ্য বার’ (১৮৭৭)-এর মতো জনপ্রিয় বহু চিত্রকর্ম। গগ্যাঁর মতে, অনেক শতবর্ষী মানুষ আছেন ‘গঠন ও মনের পরিধি’র কারণে তাদের বয়স চিরকালই ত্রিশের কোঠায় আটকে থাকে, দেগাও তেমন মানুষ। যেন কখনই বৃদ্ধ হবেন না, সবসময় চিরযুবক থেকে যাবেন। কিছুক্ষণ স্থিরভাবে দেখলেই দেগাকে শিল্পী মনে হবে--এমনই বেশভূষা ও যাপন ছিল তাঁর। গগ্যাঁ ডায়েরিতে লিখেছেন,‘তিনি যখন পথে পথে ঘুরে বেড়ান তখনও তাকে অসাধারণ বলে মনে হয়, মনে হয় কোনো দেশের রাষ্ট্রদূত, ভালো স্বভাবের মানুষ।’ এ ভাষ্য থেকে বুঝা যায়, দেগার প্রতি গগ্যাঁর মুগ্ধতা ছিল সীমাহীন।

এই মুগ্ধতার কারণ শিল্পীদের প্রতি দেগার আন্তরিক ব্যবহার ও নির্মোহ স্নেহ। কোনো শিল্পী ধার করলেও তিনি জামিনদার হতে কুণ্ঠাবোধ করতেন না। নবীন শিল্পীদের কাজের প্রশংসা করতেন অকৃপণভাবে। গগ্যাঁ জানতেন তাঁর ‘উৎসাহ প্রদানের ক্ষমতা ছিল অসীম’। কেননা, শিল্পকর্ম দেখে তিনি শিল্পীর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে উপলব্ধি করতে পারতেন। যেমনটা পেরেছিলেন গগ্যাঁর বেলায়। গগ্যাঁ তখন স্টক ব্রোকার, অবসরে ছবি আঁকেন। তাঁর প্রাথমিক পর্বের একটি কাজ দেখে দেগা জানিয়েছিলেন চিত্রকর্মটি ভালো হয়েছে। গগ্যাঁ তখন নিজেকে ‘অপেশাদার’ বললেও দেগা বলেছেন, যার কাজ খারাপ, তিনি অপেশাদার। যার কাজ ভালো তিনি অপেশাদার নন। সেসময়ে দেগার এই প্রশংসাসূচক বাক্যটি গগ্যাঁর জন্যে ছিল বিপুল আনন্দের কারণ।

গগ্যাঁ ডায়েরিতে লিখেছেন, দেগা নতুন শিল্পধারার সূত্রপাত ঘটিয়েছেন। তিনি কারো সঙ্গে তাঁর শিল্প পদ্ধতি নিয়ে আলাপ করতেন না। গগ্যাঁর মনে হয়েছে দেগা ভাল্লুকের মতো স্থির। তিনি সহজে কারো কাছে চিন্তার কথা, হৃদয়ের কথা বলতেন না। তাঁর ফ্যাশন যেন আবরণ, সেই আবরণ ভেদ করে দেগার হৃদয়ের নাগাল পাওয়া দুরূহ ছিল।

দেগার বিশ্রামস্থল ছিল অপেরা হাউজ। অপেরার নর্তকীরা নানারূপে এসেছে তাঁর চিত্রকর্মে। গগ্যাঁর মতে, ‘দেগার নর্তকীরা ঠিক যুবতী নয়, তারা যন্ত্র; দেগা গতিশীল রেখা এবং ছন্দময় রেখার লাবণ্যে তাদের সৃষ্টি করেন এবং সেই সঙ্গে থাকে দেগার ভারসাম্যবোধ, কিন্তু দেগা তাদের দৃশ্যমান করেন সুন্দরী হিসেবে, অভ্যন্তর থেকে ফুটে ওঠে তাদের নকল নাচ...।’ তিনি যুবতীদের বহু ন্যুড ছবি এঁকেছিলেন। কিন্তু তাদের সঙ্গে ওই অর্থে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন না। তাঁর সম্পৃক্ততা ছিলো নর্তকীদের সঙ্গে। গগ্যাঁর মতে, মানুষ হিসেবে দেগা যেমন মানবিক ছিলেন, তেমনি শিল্পী হিসেবেও। তিনি চিত্রকলায় সরাসরি বলতেন, ঘুরিয়ে বলা ছিল অপছন্দ। তাঁর চিত্রকর্ম এতোটাই স্বতন্ত্র যে, গগ্যাঁর মতে, চিত্রকর্মের নিচে তাঁর স্বাক্ষর করার দরকার পড়ে না। দেখেই বুঝা যায় এটা দেগার চিত্রকর্ম।

দেগার চিত্রকর্মের অন্যতম অনুষঙ্গ রেসের ঘোড়া ও জকি। কিন্তু রেসের যে গতি ও টান টান উত্তেজনা, চিত্রকর্মগুলো তা বহন করতো না। গগ্যাঁ লিখেছেন, দেগার চিত্রে রেসের ঘোড়া ও জকির উপস্থিতিতে দুঃখবোধের সৃষ্টি হয়। ‘যুবতীগুলো এত ক্লান্ত যেন চড়ে আছে বাঁদরের ওপর। এখানে কোনো পদ্ধতিগত গঠনতন্ত্র ব্যবহার করা হয় না, কেবল থাকে রেখার জীবনচক্র, রেখা, পুনরায় রেখা, এইসব দিয়েই তাদের সৃষ্টি করা হয়।’

পল গগ্যাঁ তাঁর লেখায় দেগাকে যে রূপে উপস্থাপন করেছেন তা আন্তরিকতায় পূর্ণ ও অসামান্য। গগ্যাঁর ডায়েরি পড়ে যেমন এদগার দেগাকে জানা যায়, তেমনি গগ্যাঁর চিন্তাধারার একটি পরিচ্ছন্ন চিত্রও তাতে ধরা পড়ে।

উদ্ধৃতিভাষ্য ও সূত্র : পল গগ্যাঁ (গদ্য, চিঠিপত্র ও অন্তরঙ্গ ডায়েরি), অনুবাদ : শান্তি নাথ, কলকাতা : প্রতিভাষ, প্রকাশকাল ২০১৭।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়