প্রকাশ : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০
অহঙ্কার-বিনয়
অহঙ্কারের পা পড়ে না মাটিতে
বিনয়কে সে ডেকে করে তুচ্ছ আর
তুই তো হলি নীচু জাতের দেখ আমি
খানদানি খুব বংশে অতি উচ্চ ভার।
বিনয় শুধু মুখ তুলে কয় সত্যি রে
বংশে আমি তোদের ছোট সর্বদা
তুই হলি ভাই খুব বনেদী মিথ্যে নয়
তোর কারণে না হয় যেন খর্ব তা।
অহঙ্কারের চড়ল গলা সপ্তমে
বললো হেঁকে গর্ব মেখে ফস্ করে
আমাকে কে দিচ্ছে রে জ্ঞান গর্ধভে
ছাড়ায় সীমা সে বড় কোন তস্করে?
বিনয় বলে তোমরা হলে কালের বীর
তোমার জ্ঞানে ঘাটতি আছে বললো কে
আমরা হলাম কামলা খাটা সাধারণ
ক্ষুদ্র অতি পড়ি কি আর বল্ চোখে?
অহঙ্কারের গলার স্বরে বাড়লো ঝাঁঝ
বিনয়কে সে দেখিয়ে বলে তর্জনী
তুই আমাকে বললি কানা কোন্ বলে
করছি তোকে সকল কাজে বর্জনই।
বিনয় বলে রাগিস্ কেন বন্ধুরে
তুইতো থাকিস্ সব ধনীদের অন্তরে
তুই না হলে এই দুনিয়ার সব লোকে
আমার মতো নীচুকে কেউ গণতো রে?
অহঙ্কারের ফুটলো হাসি মুখজুড়ে
বললি বটে সত্যি খানা মন ভরে
তোদের জন্যে আজ আমাদের রমরমা
তোর কারণে আজও জনগণ স্মরে।
দুজন শেষে চললো পথে একসাথে
কেউ এলো না অহঙ্কারের খোঁজ নিতে
সবাই এসে বিনয়কে নেয় বুক ভরে
মনের মায়া চায় তারা সব রোজ দিতে।
দোষী-নির্দোষ
দোষী আর নির্দোষ দুইজন সখা
নির্দোষ পার পায় দোষী খায় বকা
দোষী যারা চিরকাল থাকে গালাগালে
নির্দোষ পায় সদা ভাগ্য কপালে।
একবার করে দোষ চিহ্ন সে পায়
বার বার তাই তারে সকলে চাপায়
একবার হলে দোষী ওঠে না সে দাগ
দোষহীন থেকে তবু দোষে পড়ে ভাগ।
যে করেনি দোষ কভু সে পায় আদর
লোকে তারে প্রতি ক্ষণে করে সমাদর
দোষী যারা চিরকাল সিল মারা গায়ে
জনগণ রাখে তারে সর্বদা পায়ে।
দোষী হলে বিচারের রায়ে সাজা পায়
কারাগারে আটকালে বের হতে দায়
নির্দোষ মুক্তির খেতে পারে বায়ু
খুব সুখে থাকে তার বাড়ে পরমায়ু।
পরিবারে বাবা-মার চোখে হলে দোষী
ছাড় নেই তার আর রয় সে খামোশি
যত ভালো আছে সারা পৃথিবীর গায়
কোন কিছু ভাগ তার দোষীরা না পায়।
নির্দোষ যদি কোন কাজ নাও করে
তবু তার লোকে দোষ মোটেই না ধরে
একবার যদি নাম লেখায় খাতায়
নির্দোষ তবে পায় যখন যা চায়।
দোষীদের আচরণে সন্দেহ মাখা
মুখে থাকে অপরাধী মার্কাটা আঁকা
ভালো কাজ করে যদি ভাবে তবু সব
নিশ্চয় আছে তাতে বদ মতলব।
পৃথিবীও পেটে ধরে দোষী-নির্দোষ
ইঁদুরের দশা কারো কেউ খরগোশ
তাই বলি যদি কারো মনে ভাব জাগে
দোষী নয় নির্দোষ হতে হবে আগে।
লোভী-নির্লোভ
একদিন পথে ছিল কিছু টাকা পড়ে
লোভী দেখে চুপচাপ নিলো টুপ করে
যেতে যেতে পথে তার ঘামে ভিজে যায়
মনে মনে কথামালা সে নিজে সাজায়।
আড়ে ঠারে দেখে পিছু মনে জাগে ভয়
যদি কেউ জেনে যায় টাকা তার নয়!
পথে আসে সম্মুখে পুলিশের লোক
ভয়ে লোভী থুথু গিলে দুই-চার ঢোক।
তার পাশে হাঁটছিলো নির্লোভ কেউ
তার মনে সুখ যেন তুলে চলে ঢেউ
খুশি তার গায়ে-মুখে ছড়ালো আলোক
বাতাসের জাগে শখ তার মিতা হোক।
রাতে ঘুমে লোভী জন কেবল গড়ায়
কথা তার জিভে এসে শুধুই জড়ায়
দরোজায় হলে ঘাত বুক ধড়ফড়
ঘুম গেলো উবে আর ভয় করে ভর।
নির্লোভ লোকে ঘরে এসে দেয় ঘুম
ভোরবেলা রোদ তারে চোখে দেয় চুম
ঝরঝরে দিন তার হলো সূচনায়
সারাদিন কাটে সুখে ভেসে উঁচু নায়।
টাকা নিয়ে লোভী জন রাখে বিছানায়
বালিশের নিচে যাতে হাতালে সে পায়
দুপুরের পরে ঘেমে ঘরে এসে দেখে
টাকা নেই জায়গায় খাপ গেছে রেখে।
সন্ধ্যের হলো শুরু বাড়ে কোলাহল
গলি জুড়ে নেমে এলো পুলিশের দল
চুরি করা টাকা নিয়ে পালালো যে বুয়া
জাল টাকা ছিলো তাই ধরা খেলো ভুয়া।
জেরা শেষে লোভীজন শিকে আটকায়
ছারপোকা ভরা ভাঙা পোড়া খাট পায়
নির্লোভী লোকটাকে দেখা গেলো রাতে
নির্ভয়ে ঘরে ছাদে স্নানে জোছ্নাতে।
আলো-আঁধার
আঁধারের রূপে জাগে আলোকের ভয়
দিনশেষে আলো করে সর্বদা ক্ষয়
ক্ষয় পেতে পেতে আলো নেমে আসে রাত
সাথে নামে আঁধারের নিঠুর প্রপাত।
আলোহীন ফুলগুলো ঝরে পড়ে যায়
আঁধারের কারসাজি তারে না ফোটায়
চারিদিক জমে যায় জলের প্রবাহ
জীবনের প্রয়োজনে রোদের প্রদাহ।
আঁধারের পেটে যায় দিবসের দেহ
নিশীথের অবিরাম পেয়েছে সে স্নেহ
আলো এলে প্রভাতের আঁধার পালায়
দূরে গিয়ে জমা হয় মেঘের মালায়।
আলো পেয়ে হিমালয় ঝলসায় রূপে
বোকা বাঘ নিজেকেই দেখা পায় কূপে
আলো হলো জীবনের সত্যের যান
সৎ পথ নিতে আলো করে আহ্বান।
মনে যার আঁধারের হয় নাকো ঠাঁই
তার মতো মানুষেরা খুব বেশি নাই
আলো তার অন্তরে ছোটায় ফোয়ারা
ফুল হয়ে ফোটে যেন আলোর ছোঁয়ারা।
সৃষ্টির আদি ছিল আঁধারের ঘর
আলো তারে দিলো রূপ শহর-নগর
গুহা ছেড়ে লালফুলে ছড়িয়েছে জ্যোতি
আঁধারের তাতে হলো শত অবনতি।
আলো জ্বালে মনঘরে জ্ঞানে ঠাসা বই
আরো আলো জ্বালে দীপ রূপে পই পই
চোখে আলো না থাকিলে মনে যদি থাকে
কেউ তারে কোন কালে অন্ধ না ডাকে।
সূর্যের আলো আর বই রাঙা দীপ
সাগরের বুকে যেন সে অন্তরীপ
আঁধারের বৈরিতে অমানিশা এলে
মনঘরে প্রদীপেরা ওঠে আলো জ্বেলে।
মূর্খ-জ্ঞানী
মূর্খ যে চিনি তারে করে বক বক
আভরণে আচরণে জ্বলে ঝকমক
জগতের সবকিছু বোঝে তারা বেশি
যুক্তির নাই ধার, অবিনত পেশি।
জ্ঞানী যারা বলে কম শোনে বেশি আর
কথা আর কাজে থাকে অতি হুঁশিয়ার
নিজেদের জাহিরের থাকে না প্রয়াস
সর্বদা ভাবে নিজে বিদ্যার দাস।
মূর্খের হাবভাব মাটিতে পা হীন
মুখে মুখে উল্টিয়ে রাত করে দিন
সব কাজ তার কাছে পান্তার জল
ফাঁপা এক মাথা নিয়ে করে কল কল।
জ্ঞানী হলো বিনয়ের ধরা-অবতার
চিন্তায় আনে কাছে নীল নভো তার
মুখ যেন মন্দির মন থাকে সাদা
সকলের কল্যাণে তিনি শাহাজাদা।
মূর্খের কাছে মুড়ি মুড়কি সমান
খাদহীন জ্ঞানীদের করে হীনমান
চারদিকে নিজেদের নিয়ে যত ঢোল
পিটে আর মুখে তোলে প্রচারের বোল।
জ্ঞানী থাকে নিভৃতে সাধনে মগন
ভূমিতেই বসে উড়ে নীলাভ গগন
চুপে চুপে জগতের করে কল্যাণ
ঢোল নয় বল তার বিদ্যার ধ্যান।
মূর্খের কলরবে শান্তি পালায়
জ্ঞানীরাও দূরে থাকে ত্যক্ত জ্বালায়
জীবনের আয়োজনে পড়ে গুড়ে বালি
মূর্খরা খুশি তাতে হাতে দেয় তালি।
জ্ঞানীদের যদি দেশে না-ই থাকে দাম
দেশ যায় রসাতলে হয় বদনাম
মূর্খের দল যত ভারী হয় হোক
তারা হলো ঘনঘোর জ্ঞানীরা আলোক।
সাদা-কালো
মন যার সাদা তার দৃষ্টিও সাদা
সকলের ভালো দেখে, ছোড়ে না সে কাদা
সাদা মন আছে যার তার কাছে কিছু
কালো নয় ছোট নয় কেউ নয় নীচু।
যার মন কালো আর বিষাদ নজর
তার কাছে রাত শেষে হয় না ফজর
অন্যের ভালো তার দুচোখের বিষ
হিংসায় মন শুধু করে হিশ্ হিশ্।
সাদা মন আছে যার সে খাঁটি মানুষ
কভু শত প্রলোভনে হারায় না হুঁশ
অহিংসা মৈত্রী তার যত গুণ
শীত নয় মনে থাকে নিত্য ফাগুন।
কালো মনে হতাশার আগুনের তাপ
মনভরা কুভাবনা জগতের পাপ
মানুষকে ঘৃণা করে প্রতি পলে পল
ছলনায় আছে তার নিবিড় দখল।
সাদা টাকা আছে যার বুকে থাকে বল
আইনের চোখে সাদা না পায় ধকল
কালো টাকা আছে যার অগণিত আর
জেলে যেতে হয় তাকে নতুবা ফেরার।
চেতনায় সাদা লোক মননেও সাদা
ভালো কাজে তারা কভু হয় নাকো বাধা
প্রগতির পথে তারা অমূল্য ধন
সকলের প্রিয় তারা শ্রদ্ধার জন।
কালো মন যারা পায় তারা না আগায়
সু-গীতকে বাদ দিয়ে কুণ্ডগীত সে গায়
তলে তলে খোঁড়ে তারা ফন্দির গাত
আঁধারে লুকিয়ে থেকে হানে সে আঘাত।
সাদা আর কালো ভরা এই পৃথিবীতে
কে আপন কেবা পর হবে চিনে নিতে
সকলের ভালো চেয়ে নিজের ভালো
যারা চায় তারা হয় জগতের আলো।