মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

কবিদের চোখে বঙ্গবন্ধু
অনলাইন ডেস্ক

দেশ-কাল-সমাজকে ঘিরেই গড়ে ওঠে সাহিত্য। সমাজের প্রতিটি ভাঙা-গড়া সাহিত্যে স্পন্দিত হয়। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা আমাদের জাতীয় জীবনের দীপান্বিত একটি অধ্যায়। কিন্তু স্বাধীনতা অর্জনের এই পথ কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। কণ্টকাকীর্ণ এই পথে অনেক আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমাদের অর্জন করতে হয়েছে স্বাধীনতা। চড়াই-উতরাই পেরুনো এই সংগ্রামী পথের সারথি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক, কথা ও কবিতার উপমা।

সময়কে ধারণ করে সাহিত্য। তাই ব্যক্তি মানসে সময়ের প্রভাব অবশ্যম্ভাবী। আবার অনেক সময় ব্যক্তি চরিত্রও সময়কে প্রভাবিত করে নিজেই ইতিহাসের একটি অধ্যায় সৃষ্টি করেন। সভ্যতার ইতিহাসে তার অজস্র উদাহরণ রয়েছে। ইতিহাসের এই নায়কেরা সাধারণত ইতিহাসেই ঠাঁই করে নেন। কিন্তু যুগে যুগে এমন কিছু নায়কের আবির্ভাব হয়েছে যাঁরা ইতিহাস পেরিয়ে সাহিত্যেও স্থান করে নিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু তেমনি একজন মহানায়ক, যিনি ইতিহাসের গণ্ডি পেরিয়ে সাহিত্যেও স্থান করে নিয়েছেন। তবে বাংলা সাহিত্যে ব্যক্তি চরিত্রকে কেন্দ্র করে প্রথম সাহিত্য গড়ে ওঠে মধ্যযুগে। শ্রীচৈতন্যদেব মধ্যযুগের বাংলার সমাজ সংস্কারের ইতিহাসে শুধু একটি নাম নয়, সাহিত্যের ইতিহাসেরও একটি অধ্যায়। যার প্রভাবে সাহিত্যে ‘জীবনী সাহিত্য’ নামে সাহিত্যের একটি ধারা গড়ে ওঠে। বাংলার ইতিহাস, সমাজ ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে চৈতন্যদেবের প্রভাব অপরিসীম। মুসলিম শাসনামলে পিরদরবেশের প্রভাবে অনেক হিন্দু ও বৌদ্ধ দলে দলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। হিন্দু সমাজের এই ধর্মান্তরিত হবার প্রবণতা রোধ কল্পে তিনি এক উদার ধর্মমতের বন্ধনে মানুষকে আকৃষ্ট করেছিলেন। বিশেষ করে পতনোন্মুখ একটি সমাজে নবচেতনার যে সঞ্চার করেছিলেন, তা-ই তাকে ইতিহাসের অমরালোকে নিয়ে গেছে। তাঁর প্রচারিত ধর্মমত বাঙালির চিন্তার জগতে যেমন পরিবর্তন এনেছে, তেমনি বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রেও তার গভীর প্রভাব পড়েছে।

আধুনিক যুগের সাহিত্যেও সমাজ-সংস্কারক ও সাহিত্যিক হিসেবে রামমোহন, বিদ্যাসাগর প্রমুখ ঠাঁই করে নিয়েছেন। কিন্তু এঁদের সবাইকে ছাপিয়ে নতুন উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পূর্বসূরিরা বিশেষ একটি সম্প্রদায়ের সংস্কারক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সংস্কারক হিসেবে নয় একটি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেছেন। তাই বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসের নায়ক তিনি। তাঁকে ঘিরে জন্ম নিয়েছে সাহিত্যের আরেকটি অধ্যায়। যেটি বঙ্গবন্ধুময়। সাহিত্যের প্রতিটি শাখায় তাঁকে নিয়ে রচিত হচ্ছে গল্প, উপন্যাস, নাটক, কবিতা ও প্রবন্ধ।

স্বাধীনতাণ্ডউত্তর বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি শামসুর রাহমান। শামসুর রাহমান তাঁর ‘অভিশাপ’ কবিতায় বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের প্রতি অভিশাপ দিয়েছেন। হত্যাকারীদের নেকড়ের চেয়েও অধিক হিংস্র হিসেবে উল্লেখ করে তাদেরকে বুলেট-বৃষ্টিতে একবারে হত্যা করতে চান না। তিনি চান ঘাতকরা চিরদিন গলিত মৃতদেহ নিয়ে বয়ে বেড়াবে। তারা যখন রুটি চাইবে তখন তাদের থাবা থেকে রুটি দশ হাত দূরে থাকবে, ওদের পানপাত্র কানায় কানায় ভরে উঠবে রক্তে। ওরা আকণ্ঠ বিষ্ঠায় ডুবে থাকবে; নিজের সন্তানও মুখ ফিরিয়ে নেবে; আশ্রয়ের আশায় ওরা যখন ঘুরবে- পৃথিবীর প্রতিটি কপাট ওদের জন্য বন্ধ থাকবে। এভাবে তিনি তাদেরকে তিলে তিলে দগ্ধ করে হত্যা করতে চান। কারণ ওরা কবিকে জনক-জননীর রক্তে পা ডুবিয়ে এগিয়ে যেতে বাধ্য করেছে-

‘আমাকে করেছে বাধ্য যারা

আমার জনক জননীর রক্তে পা ডুবিয়ে দ্রুত সিঁড়ি ভেঙে যেতে

ভাসতে নদীতে আর বনবাদাড়ে শয্যা পেতে নিতে

অভিশাপ দিচ্ছি আজ সেইখানে দজ্জালদের।’

জসীমউদদীন ‘বঙ্গবন্ধু’ কবিতায় মুজিবুর রহমান নামটিকে ‘বিসুভিয়াসের অগ্নি উগারী বান’-এর সাথে তুলনা করেছেন। বিসুভিয়াসের অগ্ন্যুৎপাতের কারণে যেভাবে রোমান শহর পম্পেই এবং হারকিউলানিয়াম লাভার নিচে চাপা পড়ে ধ্বংস হয়েছে, তেমনি মুজিবুর রহমান নামটিও জ¦লন্ত-শিখা রূপ ধারণ করে চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে অন্যায়-অত্যাচারকে বিনাশ করার জন্য। পীড়িত মানুষের নিশ্বাস তাঁকে দিয়েছে চলার গতি, বুলেটে নিহত শহিদেরা তাঁর অঙ্গে দিয়েছে জ্যোতি, দুর্ভিক্ষের দানব তাঁর দেহে দিয়েছে শক্তি। তাঁর হুকুম পালন করার জন্য লক্ষ লক্ষ সেনা তার সঙ্গে চলছে। বঙ্গবন্ধুর হুকুমে জীবনকে তুচ্ছ করে বাঙালি চলছে জয় চিনিয়ে আনতে-

‘তোমার হুকুমে তুচ্ছ করিয়া শাসন ত্রাসন ভয়

আবারো বাঙালি মৃত্যুর পথে চলিছে আনিতে জয়।’

আধুনিক বাংলা কাব্যে কবি সুফিয়া কামাল একটি উজ্জ্বল ও উচ্চকিত উচ্চারণ। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর কবি রচনা করেন ‘ডাকিছে তোমারে’ কবিতা। জীবন-যৌবন কারাবাসে কাটিয়ে বাংলার মানুষকে তিনি মুক্ত করেছেন। অথচ মুষ্টিমেয় কিছু ঘাতকের হাতে তাঁকে প্রাণ দিতে হয়েছে। কিন্তু বাংলার মানুষের হৃদয়ে তাঁর আসন এখনও অম্লান। বাংলার মানুষ বঙ্গবন্ধুর ফিরে আসার অপেক্ষায় আছে। অসহায় মানুষ দেখছে বঙ্গবন্ধুর দেশে কারা যেন ঝেঁকে বসেছে। বঙ্গবন্ধু নেই বলে মুষিকের দল আবার বাংলায় হানা দিয়েছে। বেঈমানগুলো বাংলাকে ছারখার করে ফেলেছে। বঙ্গবন্ধুর রক্তে রঞ্জিত এ মাটি তাঁকে আবার কেঁদে কেঁদে ডাকছে-

‘তোমার শোণিতে রাঙানো এ মাটি কাঁদিতেছে নিরবধি।

তাইত তোমারে ডাকে বাংলার কানন, গিরি ও নদী।’

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানে বন্দি ছিলেন। জান্তা-সরকার বিচার করে বঙ্গবন্ধুকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিলে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ তার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে হানাদার দখলদাররা পরাজিত হয়ে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। বঙ্গবন্ধুর মুক্তির সংবাদে সারাদেশ আনন্দ ও উচ্ছ্বাসের জোয়ারে ভেসে যায়। নতুন দেশের নেতৃত্বকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে যে অনিশ্চয়তার কালো মেঘ জমে তা দূর হয় বঙ্গবন্ধুর মুক্তিতে। উচ্ছ্বসিত জনগণ অপেক্ষায় থাকেন বঙ্গবন্ধুর ফেরার প্রহর গুণে। বঙ্গবন্ধুর ফিরে আসার সংবাদে কবি সিকান্দার আবু জাফর রচনা করেন ‘ফিরে আসছেন শেখ মুজিব’ কবিতা।

‘সাড়ে সাত কোটি বাঙালির কান্নার পাথরে গড়া

সুমসৃণ পথে ফিরে আসছেন তিনি

ফিরে আসছেন বঙ্গ-ভারতের

সম্মিলিত রক্তস্নাত মহাপুণ্য পথে

বাংলাদেশের মরণ-বিজয়ী মুক্তিসেনানী।’

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু লন্ডন হয়ে বিজয়ীর বেশে মুক্ত স্বদেশে ফিরে আসেন। সর্বস্তরের জনতা বঙ্গবন্ধুকে বীরোচিত অভ্যর্থনা জানায়। ১০ জানুয়ারি গার্ডিয়ান পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছিল, ‘শেখ মুজিব ঢাকা বিমানবন্দরে পদার্পণ করা মাত্র নতুন প্রজাতন্ত্র এক সুদৃঢ় বাস্তবতালাভ করে।’

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যুগে-যুগে অনেক বিপ্লব হয়েছে। জাতির কাণ্ডারী রূপে নেতৃত্ব দিয়ে তাঁরা স্মরণীয় হয়ে আছেন। বাঙালির বুকে স্বাধীনতার বীজমন্ত্র পুঁতে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। একটি নিরস্ত্র জাতির মধ্যে যে গণঅভ্যুত্থান তিনি সৃষ্টি করলেন, তা তুলনারহিত। রণেশদাশ গুপ্ত ‘জাগরূক’ কবিতায় বাঙালি জাতির কাণ্ডারী হিসেবে বঙ্গবন্ধু কীভাবে নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে মুক্ত করেছেন সে বিষয়ে তুলে ধরেছেন-

‘সে তাগিদই নিয়ে জাগরূক কাণ্ডারীরা দেশে-দেশান্তরে

একান্তভাবে সাম্প্রতিক শহিদেরা লুমুম্বারা জাগরূক

যেমন জাগরূক সালভাদর আলেন্দে চিলিতে

ওলাফ পালমে সুইডেনে

সামোয়া মাচেল মোজাম্বিকে

বাংলাদেশে শেখ মুজিবুর।’

বাঙালির কান্না-হাসি, দুঃখ-বিলাস সবকিছুতেই বঙ্গবন্ধু। স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণের আগেই তাঁকে হারাতে হয়েছে। তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। কবি আবুল হোসেন বিশ্বাস করেন- আমাদের নায়ক আমাদের ছেড়ে চলে যেতে পারেন না। কারণ তিনি চলে গেলে আমাদেরতো আর কিছুই থাকবে না। আমরা কার ডাকে মিছিলে স্লোগান দিব; হাসতে হাসতে জেলে আস্তানা গাঁড়ব; কে আমাদের দুস্তর রাতে পথ দেখাবে; কার হাত ধরে আমরা পাহাড়ের চূড়ায় উঠব? তাই কবি ‘থাকো, আরো কিছুদিন থাকো’ কবিতায় আকুতি জানিয়েছেন-

‘চিরকাল যদি না-ই থাকো, আরও

কিছুদিন থাকো আমাদের সঙ্গে,

দিয়ে যাও আলো আর কিছু গান,

হাসিখুশিহীন এ স্বাধীন বঙ্গে।’

বাংলাদেশের মুক্তিআন্দেলন এবং স্বাধীনতাণ্ডসংগ্রামে শক্তির প্রধান উৎস বঙ্গবন্ধু। ঔপনিবেশিক শাসন থেকে শুরু করে প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে তিনি কখনো কর্মীর ভূমিকায়, কখনো নেতার ভূমিকায় দায়িত্ব পালন করেছেন। অধিকার বিষয়টা যে আদায় করে নিতে হয়- এই বোধ তাঁর স্কুল জীবনেই হয়েছিল। তাই দেখা যায় গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুলের ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি মুখ্যমন্ত্রী একে ফজলুল হকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাঙালির প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামের সাথে ‘বঙ্গবন্ধু’ নামটি মিশে আছে। তাঁর ঘোষিত ছয় দফা ছিল বাঙালির মুক্তির সনদ এবং স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার প্রধান হাতিয়ার ও মূলমন্ত্র। এ দাবিকে কেন্দ্র করে দানা বেঁধে উঠে দুর্বার আন্দোলন। এই আন্দোলনের সূত্র ধরেই ১৯৬৯- এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০- এর নির্বাচন এবং ৭১- এর মহান মুক্তিযুদ্ধ ও চূড়ান্ত পরিণতি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জিত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষায়- ‘৬ দফা বাংলার শ্রমিক-কৃষক, মজুর-মধ্যবিত্ত তথা আপামর মানুষের মুক্তির সনদ। ৬ দফা শোষকের হাত থেকে শোষিতের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার ছিনিয়ে আনার হাতিয়ার, ৬ দফা মুসলিম- হিন্দু- খ্রিস্টান-বৌদ্ধদের নিয়ে গঠিত বাঙালি জাতির স্বকীয় মহিমায় আত্মপ্রকাশ আর আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের চাবিকাঠি...৬ দফার সংগ্রাম আমাদের জীবন মরণের সংগ্রাম।’ কবিদের কবিতায়ও উঠে এসেছে তার বিবরণ।

মুজিব একটি অবিনাশী সত্তার নাম। যার কোনো লয় নেই। বাঙালির সুখে-দুখে, হাসি-কান্নায়; এমনকি প্রকৃতিতেও মুজিব জড়িয়ে আছে অঙ্গাঙ্গিভাবে। ‘মুজিব ফিরে আসে’ কবিতায় মহাদেব সাহা সেই অবিনাশী সত্তাকে তুলে ধরেছেন। কবি মনে করেন মুজিব মরেননি। আমাদের সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সবকিছুর মধ্যে তাঁর অনুভব। কবি বলেছেন- পাখি ডাকা সকালে মুজিব ফিরে আসে, নদীর বুকে বৃষ্টি নামার পর যখন ঢেউ উঠে তখন মুজিব ফিরে আসে। মার্চে স্বাধীনতার ডাকে মুজিব ফিরে আসে; মায়ের কোলের শিশুর হাসিতে মুজিব ফিরে আসে। আরো আসে-

‘মিষ্টি ফুলের গন্ধে যখন আকুল করে বন

ফিরে আসে মুজিব বড় সবার প্রিয়জন,

সাঁঝ-আকাশে যখন ফোটে লক্ষ কোটি তারা

ফিরে আসে মুজিব যেন হাজার প্রাণের ধারা;’

‘বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর শ্রেষ্ঠ কীর্তি। তিনি আবহমান বাংলার চিরকালের প্রাণপ্রবাহ। বাংলার পাখির গানে, নদীর কলতানে, বাতাসের উচ্ছ্বাসে, আকাশের গরিমায়, সূর্যের শৌর্যে, চাঁদের কিরণে, নক্ষত্রের ছায়াপথে, ভোরের শিশিরে, মসজিদের আযানে, মন্দিরের কাঁসার ধ্বনিতে, গির্জার ঘণ্টায়, জারি-সারি-ভাটিয়ালি সুরে, বসন্তের উল্লাসে, বর্ষার ক্রন্দনে, শরতের শ্যামলিমায়, বৈশাখের ভৈরবীতে, বাঙালির হাসি-কান্না, প্রেম-ভালোবাসা, মিলনে-বিরহে তিনি চিরদিনের জন্য, চিরকালের জন্য জাগ্রত, জীবন্ত। তাঁর মৃত্যু হয়নি। তিনি আরো বেশি জীবিত চিরকালের বাঙালির মনে ও মননে।’ কবি সৈয়দ শামসুল হক ‘মুজিব! মুজিব!’ কবিতায় বঙ্গবন্ধুর সেই অবিনাশী সত্তার কথাই আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন-

‘মুজিব মরে না, মরেনি মুজিব কোনো বুলেটের ঘায়।

বুলেটে পতিত দেহই কেবল, অমর সে আত্মায়।

মুছে ফ্যালো মিছে অশ্রু তোমার, আজো এই বাংলায়

কুটিরে পাথারে নগরে ও গ্রামে পায়ে পায়ে হেঁটে যায়-

অবিরাম হেঁটে চলেছে মুজিব রক্তচাদর গায়।’

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ যেমন তাৎপর্যবহুল; তেমনি সুদূরপ্রসারী। পৃথিবীর ইতিহাসে যেসব ভাষণ বিভিন্ন জাতির মুক্তিসংগ্রামের প্রেরণার মন্ত্র হিসেবে কাজ করেছে- তার মধ্যে ৭ মার্চে দেয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণ অন্যতম শ্রেষ্ঠত্বের আসন লাভ করেছে। এ ভাষণে যেমন ছিল যুদ্ধের দিক নির্দেশনা, তেমনি ছিল মুক্তিকামী মানুষের সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার অনলবর্ষী প্রেরণা। কবিরা ৭ মার্চের ভাষণ ও স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে লিখেছেন অজস্র কবিতা। কবি নাসির আহমেদ তাঁর ‘সাতই মার্চ ১৯৭১’ কবিতায় বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরেছেন এভাবে-

‘মঞ্চে এলেন জাতির নেতা, লক্ষ করতালিতে

বীর-জনতা গর্জে ওঠে, সূর্য যেন বালিতে

ঢাললো আগুন তপ্ত কথার অনন্য এক ভাষণে;

ইয়াহিয়া উঠলো টলে স্বৈরাচারের আসনে।’

ভাষণে তিনি উত্তাল জনসমুদ্রের সামনে দুঃখভরা কণ্ঠে বিগত দিনের শোষণ-বঞ্চনার ইতিহাস তুলে ধরে সমগ্র বাঙালিকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে বলেন এবং ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। বাংলার আপামর জনতা বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বাধীনতাণ্ডযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধুর তেজোদীপ্ত উচ্চারণ ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বাঙালিকে উজ্জীবনী মন্ত্রে দীক্ষা দিয়েছিল। কবি মাযহারুল ইসলামও দীক্ষা নিয়েছেন। ‘আমি মুজিবের কাছে’ কবিতায় কবি লিখেছেন-

‘আমি মুজিবের কাছে দীক্ষা নিয়েই

অস্ত্র হাতে যুদ্ধে নেমেছিলাম

এক সূর্যের কাছে উত্তাপ নিয়ে

মাঠে মাঠে সব ছড়িয়ে দিয়েছিলাম।’

একই বিষয় নিয়ে কবিতা রয়েছে জ্যোতির্ময় মল্লিকের ‘জাতির পিতা’, রবীন্দ্র গোপের ‘শোনো এক খোকার গল্প’।

বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামজিক এবং সাংস্কৃতিক অধিকার আদায়ের প্রেরণামন্ত্র ছিল বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ। তাই শেখ মুজিব কর্তৃক ৭ মার্চের ঘোষণা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা তো বটেই, কোন কোন ইতিহাস গবেষকের মতে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণাও বটে।

কবি রুবি রহমান তাঁর ‘পঁচাত্তরে বিরান বাংলাদেশ’ কবিতায় বঙ্গবন্ধুকে প্রমিথিউস বলে সম্বোধন করেছেন। প্রমিথিউস মানুষকে সৃষ্টিশীল গুণাবলি দিয়ে সৃষ্টি করেন। মানুষের প্রতি দুর্বল প্রমিথিউসের মনে হলো মানব জাতির জন্য পৃথিবীকে উপযোগী করতে হলে আগুনের প্রয়োজন। তিনি দেবতার কাছে আগুনে উপহার চাইলেন কিন্তু দেবতার প্রত্যাখানের পর তিনি স্বর্গ থেকে আগুন চুরি করেন। ফলে তিনি দেবতাদের রোষানলে পড়েছিলেন। দেবতার নির্দেশে তাঁর দেহ পাহাড়ের গায়ে বেঁধে রাখা হয় এবং একটি ঈগল প্রতিদিন এসে তাঁর কলিজা ঠোক্রে ঠোক্রে খেতে থাকে। বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রেও দেখা যায় তিনি বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠায় শোষক শ্রেণির সাথে সংগ্রাম করে অধিকার আদায় করছেন; পরবর্তীতে স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দিয়ে বিশ্বাসঘাতকদের কোপানলে পড়েছিলেন। প্রমিথিউসকে দেবতার রোষ থেকে রক্ষা করে হারকিউলিস, কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে কেউ রক্ষা করতে পারেনি। কবি বিশ্বাস করেন, বঙ্গবন্ধু যে আগুন ছিনিয়ে এনেছেন তার স্ফুলিঙ্গ থেকে আবার আগুন জ¦লে উঠবে-

‘যে অগ্নি একদিন তুমি ছিনিয়ে এনেছ

প্রতিটি স্ফুলিঙ্গ তার জ¦লে উঠবার গূঢ় মন্ত্রগুলি দাও।

কৃপণ হৃদয় নিয়ে ঘাড় গুঁজে বসে আছে বামন সময়।’

সত্য ও ন্যায় পথের সারথি বঙ্গবন্ধু। শত অত্যাচার ও ভীতির মুখেও তিনি তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হননি। মানুষের অধিকার আদায়ে ছিলেন সোচ্চার। ফলে শোষক শ্রেণিকে সবসময় তটস্থ থাকতে হতো। তাঁর বাক রুদ্ধ করতে না পারলেও তারা বঙ্গবন্ধুকে শারীরিকভাবে রুদ্ধ করে রাখে। কিন্তু ‘মুজিব’ এমন একটি শব্দ, যা উচ্চারণে বাঙালির প্রাণে তোলে ঢেউ, মৃত প্রাণে জাগে সাড়া। কবি আবদুস সাত্তার তাঁর ‘একটি অমিয় নাম’ কবিতায় বঙ্গবন্ধুকে এভাবে তুলে ধরেছেন-

‘অমিয় একটি নাম চেতনায় ঢেউ তোলে, রুধিরে জাগায় আলোড়ন সে নামে প্রাণের সাড়া, মৃত ঘাসে জেগে ওঠে উদ্দাম সজীব যৌবন সে নামে সতত ভীত মদমত্ত স্বৈরাচার, গর্বোদ্ধত আস্ফালনকারী ধুলায় লুটায়ে পড়ে রাইফেল, স্টেন আর এজিদের তীক্ষ তরবারি’ বাঙালির হ্যামেলিয়নের বাঁশিওয়ালা বঙ্গবন্ধু। দৃঢ় ব্যক্তিত্ব ও মানবপ্রেমিক বঙ্গবন্ধুর ছিল এক সম্মোহনী শক্তি। তার ডাকে সাড়া দিয়েই লক্ষ বাঙালি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। কিন্তু অকৃতজ্ঞ বাঙালি হত্যা করে মানবদরদি মানুষটিকে। ‘ঘাতক’ কবিতায় কবি মুস্তাফা মাসুদ বলেছেন-

‘ওরা আমার আয়ুষ্মান স্বপ্নকে হত্যা করেছে

আমার জাগ্রত বিবেককে গলা টিপে খুন করেছে

ওরা আমার প্রাণের চেয়ে প্রিয় মানচিত্রের

সত্তায় আঘাত করেছে;’

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাঙালি জাতি নিশ্চুপ ছিল। প্রতিবাদ করতে পারেনি এই অকৃতজ্ঞ জাতি। কবি অন্নদাশঙ্কর রায় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মরণে’ কবিতায় লিখেছেন- নরহত্যা মহাপাপ। কিন্তু সন্তান হয়ে পিতাকে হত্যা আরো বড়ো পাপ। আর সেটা যদি হয় সবংশে নিহত- তার মতো গুরুতর পাপ আর কিছু হতে পারে না। আবার সন্তান পিতাকে হত্যা করে যদি ক্ষমা পেয়ে যায় এবং সঙ্গে পায় সাধুবাদ, তবে একসময় পিতা হত্যার এই পাপ তার উপর অভিশাপ হয়ে বর্ষিত হয়। তাই কবি হত্যাকারীদের শাস্তি দানে নীরব না থেকে প্রতিবাদে মুখর হতে বলেছেন-

‘বাংলাদেশ! বাংলাদেশ! থেকো নাকো নীরব দর্শক

ধিক্কারে মুখর হও। হাত ধুয়ে এড়াও নরক।’

কবি হিমেল বরকত লিখেছেন ‘বিস্মরণের পাপ’। আজকের বাঙালি জাতিসত্তার রয়েছে এক গৌরবমণ্ডিত ঐতিহ্য। সংগ্রাম করেই টিকে থাকতে হয়েছে এই জাতিকে। কিন্তু আজ আমাদের স্মৃতি বিস্মরণের মোহে আত্মবিনাশী ব্যাধিতে আক্রান্ত। তাই চিনতে পারছি না প্রিয় মাতৃভূমি; ভুলেছি পাখিদের স্বরলিপি, মেধাবীদের রক্তদান, একাত্তরের স্মৃতি। আমাদের মগজের নিচে প্রতারকরা ঘুণপোকার চাষ করছে। তাই-

‘আমরা চিনি না পিতার হত্যাকারী

আমরা ভুলেছি হত্যার প্রতিশোধ

অক্ষমতার পাপেরা বাড়ায় বাহু

আমাদের ঘৃণা নিষ্প্রভ নিরাকার’

বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশের নেতা নন, তিনি সমগ্র বিশ্বেই একজন অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে স্বীকৃত। কারণ তিনি শোষিত মানুষের পক্ষে সারাজীবন লড়াই করেছেন। বঙ্গবন্ধুর ভাষায়- ‘বিশ্ব আজ দুই ভাগে বিভক্ত, এক পক্ষে শোষক, আরেক পক্ষে শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।’ কবি বিমল গুহ বঙ্গবন্ধুকে শতাব্দীর বরপুত্র বলে অভিহিত করেছেন। ‘শতাব্দীর বরপুত্র’ কবিতায়-

‘শতাব্দীর বরপুত্র শেখ মুজিবুর-

আঙ্গুলি হেলনে যাঁর দুলে ওঠে আকাশ বাতাস

কেঁপে ওঠে নক্ষত্রমণ্ডল-দশদিক;

তর্জনী উঁচিয়ে সেই শতাব্দী পুরুষ

জাগিয়ে তোলেন এই বাংলার তৃণ মাটি এবং মানুষ।’

কবি ফারুক নওয়াজ বঙ্গবন্ধুকে মহাশিশু বলে আখ্যায়িত করেছেন। কারণ বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। সেই ইতিহাসে মিশে আছে ক্ষোভ আর পরাধীনতার যন্ত্রণা। মুঘল, পাঠান আর ইংরেজদের মালিকানায় ছিল বাংলা। তিতুমির, ক্ষুদিরাম, সূর্যসেন, প্রীতিলতা, সুভাষ বোসসহ অসংখ্য স্বাধীনতাকামী প্রাণপুরুষেরা স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু অধিকার আদায়ে তাঁরা কেউই সফল হতে পারেননি। বাঙালিকে শোষক শ্রেণির হাত থেকে মুক্ত করে স্বাধিকার দিয়েছেন মহাশিশু বঙ্গবন্ধু। ‘সেই মহাশিশু’ কবিতায়-

‘হাজার বছর, দীর্ঘজীবন কাল মহাকাল পরে

জন্ম নিলেন মহাশিশু এক বাঙালির গেঁয়ো ঘরে।

তিনি বললেন, ‘সবই আমাদের, সবই আমাদের, তবে

আমাদের এ অধিকার পেতে লড়াই করতে হবে।’

যুগে যুগে কবিতা মানুষকে আন্দোলন-সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছে। শোষক-শ্রেণি তাই কবি-সাহিত্যিকদের বাকরুদ্ধ করতে চেয়েছেন। কিন্তু কবিদের বাকরুদ্ধ করা সম্ভব হয়নি। জেল-জুলুম সহ্য করেও কবিরা কবিতা লিখেছেন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাংলার মানুষের কবি ও কবিতা। কবি কামাল চৌধুরী ‘বাংলার কবি’ কবিতায় লিখেছেন-

‘একটি কবিতা রক্ত পলাশে লেখা

একটি মানুষ পতাকায় আঁকা ছবি

বুকে একতারা শ্যামা দোয়েলের গান

মুজিব আজ সারা বাংলার কবি।’

বঙ্গবন্ধুকে জাদুকর বলে অভিহিত করেছেন কবি আনজীর লিটন। জাদুকর যেমন জাদুর সাহায্যে সবকিছু সম্ভব করে তোলে, বঙ্গবন্ধু তেমনি বাংলার মানুষের জন্য স্বাধীনতা নামক সোনার হরিণটিকে ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন। কবির ভাষায়-

‘বলল হেসে বঙ্গবন্ধু-

আমি হলাম সেই জাদুকর

বাংলার অন্তরে

রাঙা স্বপন দেই জাগিয়ে

বাঙালিদের ঘরে।’

১৫ আগস্ট বাঙালির জন্য এক দুঃস্বপ্নের দিন। বঙ্গবন্ধু নেই- একথা কবিরা ভাবতে পারেন না। বঙ্গবন্ধু মিশে আছেন এই বাংলার অস্তিত্বের সাথে। কবি শিহাব সরকারও ভাবতে পারেন না বঙ্গবন্ধু নেই। তিনি মনে করেন, বঙ্গবন্ধু জীবিত আছেন তাঁর অস্তিত্বের মায়া ছড়িয়ে কোলাহল থেকে দূরে, নিভৃত কুটিরে। পাখিরা তার হাত থেকে শস্যদানা খুটে খাচ্ছে। তিনি যখন দিঘির কিনারে এসে দাঁড়ান- তখন লাল নীল মাছেরা তাঁর কাছে ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে আসে। তিনি আমাদের স্বপ্ন ও বাস্তবে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন। তাঁকে ছাড়া আমরা অসহায়। তিনি আমাদের শক্তপায়ে দাঁড়াতে শিখিয়েছেন। তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী-পরিতৃপ্ত পিতা। কবির কাছে পনেরো আগস্ট তাই ভীষণ দুঃস্বপ্নের-

‘এমনও হতে পারতো নাকি-

পনেরো আগস্ট পঁচাত্তরের ভোররাতে

ভীষণ দুঃস্বপ্ন নিশ্চুপ বসে থেকে তারপর

এসে দাঁড়ালেন ব্যালকনিতে:

‘এ কী দেখলাম বাংলা মাগো, মানুষ আমাকে মেরেছে?

আমার এ পোড়া বুকে যে মানুষেরই ঠাঁই’

অনেক দিন পর সময় নিয়ে তিনি সূর্য ওঠা দেখলেন।’

বঙ্গবন্ধু ছিলেন গণতন্ত্রের অতন্দ্র সৈনিক, বাঙালির স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রতীক। পাকিস্তানি শোষক গোষ্ঠীর শোষণ-নির্যাতনে অতিষ্ঠ বাঙালির আশ্রয়স্থল ছিলেন বঙ্গবন্ধু। বাঙালিকে ভাবতে শিখিয়েছেন, অধিকার আদায় করতে শিখিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু দ্বারা প্রভাবিত হননি এমন বাঙালি পাওয়া দুষ্কর। কিশোর থেকে যুবক, যুবক থেকে বৃদ্ধ সবাইকে সম্মোহিত করেছেন বঙ্গবন্ধু। কবি ইকবাল আজিজ তার কিশোর বয়সে দেখা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লিখেছেন ‘বঙ্গবন্ধুকে প্রথম দেখার স্মৃতি’ কবিতা। ১৯৬৪ সালে বঙ্গবন্ধু ফাতেমা জিন্নাহর নির্বাচনী প্রচারণা সভায় ভাষণ দিয়েছেন। অধিকাংশ নেতা উর্দুতে ভাষণ দিলেও বঙ্গবন্ধু বাংলায় ভাষণ দিয়েছেন। সেই স্মৃতিকে তুলে ধরেছেন কবি-

‘বেশিরভাগ নেতাই উর্দুতে ভাষণ দিলেন;

কিন্তু মুজিব দাঁড়ালেন বাংলা ভাষার প্রতিটি বর্ণকে সঙ্গে নিয়ে-

সারাদেহে বিদ্রোহের জয়গাথা এক সুদর্শন মহামানব।’

‘শেখ মুজিবুর রহমান একটি মহাকাব্যের নায়ক ছিলেন। এই মহাকাব্য জাতীয়তাবাদের। আরো নির্দিষ্টার্থে এ হচ্ছে পাকিস্তানি রাষ্ট্র-কাঠামোর অধীনে বাঙালি জাতীয়তাবাদের অভ্যুত্থান ও পরিণতিতে নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার। সবাইকে তিনি ছাড়িয়ে গেছেন, ছাপিয়ে উঠেছেন।’ সেই নায়ককে নিয়ে সাহিত্যিকরা কবিতাণ্ডগল্প-উপন্যাস লিখবেন, গীতিকার গান তুলবেন, শিল্পী ছবি আঁকবেন সেটাই স্বাভাবিক। মননশীলের চিন্তায়, শিল্পীর ক্যানভাসে বঙ্গবন্ধু অমলিন আছেন এবং থাকবেন চিরকাল।

সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, চাঁদপুর সরকারি কলেজ, চাঁদপুর, [email protected] ০১৯৩৪৭১০২৭১

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়