সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০২২, ০০:০০

ইতিহাসের অমোচনীয় স্মারক ‘মহাত্মা গান্ধী ও চাঁদপুর’
অনলাইন ডেস্ক

উপমহাদেশের একজন মহাত্মা গান্ধী ছিলেন বলেই অহিংসাও যে আন্দোলনের কার্যকর হাতিয়ার হতে পারে তা বিশ্ব জেনেছিল তাঁর জীবনপ্রভার বিচ্ছুরিত আলোক হতে। সেই অহিংস আন্দোলনের দিব্যদ্যুতিকে ছড়িয়ে দিতেই বাংলাদেশের চাঁদপুরে এসেছিলেন ইতিহাসখ্যাত অহিংসাবাদী নেতা মহাত্মা গান্ধী। তাঁর চাঁদপুরে আসা মানেই ইতিহাসের জন্ম হওয়া, ইতিহাসের প্রসার হওয়া। ১৯২১, ১৯২৫, ১৯৪৬-১৯৪৭ সালে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে গান্ধীজি চাঁদপুরে আসেন ও অবস্থান করেন। তিনি সর্বসাকুল্যে বিশ দিনের মতো চাঁদপুরে ছিলেন। অবশ্য তাঁর একনিষ্ঠ কর্মী সতীশ দাসের মতে গান্ধী ১৯৪০ সালেও চাঁদপুরে আসেন।

১৯২১ সালে চাঁদপুরে চা-শ্রমিক হত্যাকাণ্ডের নৃশংস ঘটনায় গান্ধী যে বক্তব্য রেখেছেন, তা মহাকালের বিবেকের কাছে তাৎপর্যপূর্ণ। ১৯৪৭ সালে চাঁদপুরে গান্ধী বিধবাদের পুনর্বিবাহ দানে স্থানীয় অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে মর্মজয়ী বক্তব্য রেখেছিলেন।

চাঁদপুরের গান্ধী নামে পরিচিত কংগ্রেসী হরদয়াল নাগের সঙ্গে গান্ধীজির কয়েকটি পত্র আদান-প্রদান হয়েছে। তাঁর এক চমৎকার সাক্ষাৎকারও হরদয়াল নিয়েছিলেন। পূর্ব বাংলায় গান্ধীর চরকা ও স্বদেশী আন্দোলন এবং সত্যাগ্রহ জনমনে বেশ উদ্দীপনা তৈরি করেছিল। ছেচল্লিশের দাঙ্গার সময় গান্ধীজি পূর্ব বাংলায় না এলে এখানে আরো দীর্ঘকাল রক্তগঙ্গা বয়ে যেত। চাঁদপুর জেলার হাইমচরের কাটাখালী থেকে শুরু করে ফরিদগঞ্জের সীমান্তবর্তী গ্রাম আলোনিয়াও গান্ধীর পদরেণু পেয়ে ধন্য হয়েছে। গান্ধীকে নিয়ে এসব তথ্যের সমাহারে সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে ‘মহাত্মা গান্ধী ও চাঁদপুর’ বইটি। এমনকি, চাঁদপুরে মহাত্মা গান্ধীর প্রয়াত স্ত্রী কস্তুরবা বাই-এঁর তৃতীয় প্রয়াণবার্ষিক পালনের সংবাদটিও আমরা এ গ্রন্থের মারফতে অবহিত হই।

পুরোপুরি দশফর্মার বইটিতে গান্ধীর লেখা বিভিন্নজনের প্রতি চিঠির দলিল সংযোজিত হয়েছে। বিহারের উদ্দেশ্যে গান্ধীর নৌপথে চাঁদপুর ত্যাগের ছবি, চাঁদপুরের হাইমচরে বিশকাটালি গ্রামে পদযাত্রা, মহাত্মাগান্ধীর পল্লিপরিক্রমার দ্বিতীয় পর্যায়ের মানচিত্রের ছবি ও নকশা এখানে সংযুক্ত আছে। মহাত্মা গান্ধীকে চাঁদপুর পৌরসভাও সংবর্ধনা দিয়েছিল। সংবাদভাষ্য, স্মৃতিকথাসহ মূল্যবান দলিলাদির সমাবেশে বইটিতে তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থার এক ঐতিহাসিক রূপ ফুটে উঠেছে। ইউনুস নাজিমের নান্দনিক প্রচ্ছদ ও সুন্দর নামলিপি গ্রন্থটির অবয়বকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে তুলেছে।

লেখক, গবেষক মুহাম্মদ ফরিদ হাসান ‘মহাত্মা গান্ধী ও চাঁদপুর’ বইটিকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে সর্বাংশে চেষ্টা করেছেন। আলোচ্য গবেষণা গ্রন্থটি বিস্মৃতির ধুলো ঝেড়ে মূল্যবান ঐতিহাসিক সত্যকে আলোয় তুলে এনেছে। এ বইতে সন্নিবেশিত গান্ধীজির ভাষণ, নোট ও চিঠিপত্র থেকে পাঠক যেমন গান্ধীর অহিংসাবাদকে জানতে পারবেন, তেমনি জানতে পারবেন তাঁর অসহযোগ ও স্বদেশী আন্দোলনের মৌল চেতনাকে। বইটি নিরেট ইতিহাস আর ঐতিহাসিক দলিলে ঠাসা হলেও চিঠিপত্রের সমাহারের কারণে এর সাহিত্যিক মূল্যও তৈরি হয়ে গিয়েছে। ভবিষ্যতের গবেষকদের জন্যে এ বইটি এক অনন্য আকরগ্রন্থ হয়ে উঠবে বলে অনুমেয়।

‘মহাত্মা গান্ধী ও চাঁদপুর’ বইটির প্রকাশক চাঁদপুর পৌরসভা। ১৬০ পৃষ্ঠা। মূল্য ৪০০ টাকা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়