প্রকাশ : ২১ জুন ২০২২, ০০:০০
সাহিত্য জীবনের প্রতিচ্ছবি। মানুষের জীবন ও পারিপার্শ্বিকতাকে সাহিত্য ধারণ করে আপন বক্ষে। সাহিত্যের এক আবহমান অনুষঙ্গ হলো নদী। বিশ্বসাহিত্যে নদীর নান্দনিকতা সর্বজনবিদিত। বাংলা সাহিত্যেও নদীর কলতান কান পাতলেই শোনা যায়। বাংলাদেশের প্রধান তিনটি নদীর অন্যতম হলো পদ্মা। বিভিন্নভাবেই পদ্মা আমাদের জাতীয় জীবনে জড়িয়ে আছে। তার ওপরে সেতু প্রতিষ্ঠার মহাকাব্য পদ্মাকে আরও কালজয়ী করে তুলেছে। ভাবতে গেলে, সম্রাট শাহজাহান কর্তৃক তাজমহল নির্মাণের চেয়েও পদ্মাসেতুর প্রতিষ্ঠা মানবজাতির ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকবে। ‘দ্য ব্রিজ অন দ্য রিভার কাওয়াই’-এর কারণে নদীটি যেমন হয়ে গেছে বিখ্যাত, তেমনি পদ্মা নদীও বিশ্বখ্যাত হয়ে গেছে বর্ণিল ও ঘটনাবহুল পদ্মাসেতুর জন্ম-আখ্যানের জন্যে। সেতুর কারণেই বাংলা সাহিত্যে পদ্মা নদীর অবস্থানকে আজ খুঁটিয়ে অধ্যয়নের কৌতূহল তৈরি হয়েছে।
পদ্মা পুরাণ :
পদ্মা কোন সাধারণ নদী নয়। পদ্মা হলো গঙ্গা-তনয়া। বলতে গেলে গঙ্গাই নিম্নদিকে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে পদ্মা নামে পরিচিতা হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ দিয়ে গঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে নামধারণ করেছে পদ্মা। পদ্মা তারপর ছুটতে ছুটতে ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরে এসে নিজেকে সঁপে দেয় বরাক হতে ছুটে আসা মেঘনায়। মেঘনার স্বচ্ছ জল আর পদ্মার ঘোলাজলে তৈরি করে অপূর্ব মেলবন্ধন। দুটো ধারা না মিশে এভাবেই চলে যায় সন্দ্বীপের কাছে যেখানে তারা বঙ্গোপসাগরে সঙ্গমে মিলিত হয়। পুরাণে লক্ষ্মীর একশ’ পাঁচটা নামে মধ্যে একটি হলো পদ্মা। আবার পদ্মফুলে আসীন বলে তাঁর নাম পদ্মালয়া। পদ্মের মতো আঁখি, তাই তিনি পদ্মাক্ষি। সুতরাং পদ্মা নামের উৎস কোথায় তা বলাই বাহুল্য। পদ্মাকে অন্য নামে কীর্তিনাশা বলেও ডাকা হয়। আঠারশ’ সত্তর সালে পদ্মা নদী প্রমত্তা রূপ ধারণ করে বিক্রমপুরের রাজনগরে অবস্থিত রাজা রাজবল্লভের সমস্ত কীর্তি বা নিদর্শন নদীগর্ভে বিলীন করে দেয়। রাজবল্লভের কীর্তি নাশকারী নদী বলেই পদ্মার অন্যনাম কীর্তিনাশা হিসেবে লোকমুখে প্রচারিত হয়ে যায়। কীর্তিনাশা বিক্রমপুরকে উত্তর ও দক্ষিণ এই দুইভাগে বিভক্ত করেছে। পদ্মা খরস্রোতা ও দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী। এটি একশ’ কুড়ি কিলোমিটার দীর্ঘ, দশ কিলোমিটার প্রশস্ত এবং সর্বোচ্চ গভীরতা চারশ’ পঁচাত্তর মিটার। পদ্মা মানুষের মনে মিথের নদী হয়ে আছে আবহমানকাল হতে।
চর্যাপদে পদ্মা :
বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন পদ্মানদী চর্যাপদে পউয়া খাল নামেই উদ্ধৃত হয়ে আছে। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় এখনও নদীকে খালই বলে। ঊনিশশো সাত সালে মহা মহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপাল রাজদরবার হতে যে তিনটি প্রাচীন পুঁথি সংগ্রহ করে আনেন তার একটি ‘চর্যাপদ’ নামে বাংলাভাষার আদি নিদর্শনরূপে চিহ্নিত হয়ে আছে। এই চর্যাপদের এক উল্লেখযোগ্য পদকর্তা ভুসুক পা’-এর সৃষ্টিতে পদ্মা নদী লিপিবদ্ধ আছে। নিজেকে বাঙালিরূপে গৌরবজনকভাবে ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেছেন,
‘বাজ ণাব পাড়ি পউয়া খালে বাহিউ
অদঅ বঙ্গাল দেশ লুডিউ
আজি ভুসুকু বঙ্গালি ভইলি
ণিএ ঘরিণী চণ্ডালে লেলি।’
এই চর্যায় ভুসুকু পা’ বাঙালিয়ানার শাশ্বত সত্যকে তুলে ধরেছেন। পদ্মা নদী দিয়ে বজরা বেয়ে অদ্বিতীয়া বাংলাদেশ লুটে নিতে আসে বাইরের বেনিয়ারূপী লুটেরারা। নিজের দেশকে লুটে নিতে দেখেও বাঙালিরা থাকে নির্বিকার। কিন্তু যেই মাত্র নিজের ঘরণীর ওপর কারও নজর পড়ে, অমনি বাঙালি বাহাদুর হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ভুসুকু পা বাঙালির এই মনোজাগতিক দর্শনকে তুলে ধরতে গিয়ে সেই আটশতকের সামাজিক বাস্তবতায় পদ্মা নদীর উল্লেখ করেছেন। তখন হয়তো পদ্মা নদী এতো প্রশস্ত ছিলো না, খালের মতোই তার সোঁতা ছিলো। কালক্রমে পদ্মা তার প্রমত্তা রূপ লাভ করে দুই তীর গ্রাস করতে করতে দানবীয় আকার ধারণ করেছে।
মুক্তিযুদ্ধের স্লোগানে পদ্মা :
মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির জন্যে অনন্য গৌরবের। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের ছয়-ছয়টা আগুন ঝরানো জাগরণী স্লোগান ছিল। এদের মধ্যে অন্যতম হলো ‘তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা।’ এটা কেবল স্লোগান নয়, এটা বাঙালির আবেগ ও বাংলাদেশের মানচিত্রকে ফুটিয়ে তোলে। পদ্মা-মেঘনা-যমুনা এই তিন নদী কেবল আমাদের নৌপথকে বিধৃত করে না, বরং আমাদের ভৌগোলিক ব্যাপ্তিকে, আমাদের শেকড়কে মনে করিয়ে দেয়। বিখ্যাত গীতিকবি গোবিন্দ হালদারের লেখায় আমরা গানের যে অমর কবিতা পেয়েছি, তার প্রথম লাইনটি আমাদের জন্যে আগুন ঝরানো স্লোগানে পরিণত হয়ে গেছে। গোবিন্দ হালদারের গীতিকবিতা হতে প্রথম লাইনকে স্লোগানে পরিণত করেন মুক্তিযুদ্ধকালীন ছাত্রনেতাদের বিখ্যাত নিউক্লিয়াস।
পদ্মার রাজনীতি :
আন্তর্জাতিক নদীগুলোর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলোকে একটা নিয়ম সাধারণত মেনে চলতে হয়। বিশেষ করে উজানের দেশগুলো নদীতে একতরফা কোন বাঁধ নির্মাণ করে নদীর প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না যাতে ভাটির দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পদ্মা একটা আন্তর্জাতিক নদী যা ভারতে গঙ্গা নামে প্রবহমান। হুগলী-ভাগীরথী নদীকে মরণাপন্ন অবস্থা হতে বাঁচানোর নাম দিয়ে ভারত পশ্চিমবঙ্গের মালদহ ও মুর্শিদাবাদে গঙ্গার ওপরে বাঁধ দেয়, যা ফারাক্কা বাঁধ নামে পরিচিত। ঊনিশশো একষট্টি সালে শুরু হওয়া ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ শেষ হয় পঁচাত্তরের এপ্রিলে। এই বাঁধ দেয়ার ফলে বাংলাদেশের পদ্মায় শুকনো মৌসুমে যেমন পানি প্রবাহ হ্রাস পায়, তেমনি এতে মাছের খাদ্য তথা ফাইটোপ্লাঙ্কটনও কমে গেছে। পাশাপাশি নদীর জলের লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় এখানে বিখ্যাত ইলিশের দেখা আর মেলে না। উজানে গঙ্গায় বাঁধ দেয়ায় পদ্মার নাব্যতা গেছে কমে এবং শুকনো মৌসুমে পদ্মার কোন কোন জায়গায় হেঁটে পার হওয়া যায়।
ছোটগল্পে পদ্মা :
বাংলা ছোটগল্পে পদ্মার উল্লেখ বিভিন্নভাবেই বিধৃত আছে, তবে পদ্মাকে উপজীব্য করে ছোটগল্পের হদিস নেই বললেই চলে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ শীর্ষক ছোটগল্পে অনুকূল নামের এক সরকারি সম্ভ্রান্ত চাকুরেকে পদ্মাপাড়ের এক গ্রামে টেনে এনেছেন। গৃহভৃত্য রাইচরণের সাথে তার খোকাটি বেড়াতে বের হলে অতি কৌতূহলে শিশুটি পদ্মা নদীর তীরে গেলে মুহূর্তেই ক্ষুধার্ত পদ্মা যেন তাকে গ্রাস করে ফেলে। এ দৃশ্য কেউ অবলোকন না করলেও সবারই বদ্ধমূল ধারণা, পদ্মাই এ কাজ করেছে। বর্ষায় পদ্মার রুদ্রমূর্তি এঁকে গল্পকার বলেছেন, ‘এই সময়ে অনুকূল পদ্মাতীর বর্তী এক জিলায় বদলি হইলেন।...বর্ষাকাল আসিল। ক্ষুধিত পদ্মা উদ্যান গ্রাম শস্যক্ষেত্র এক-এক গ্রাসে মুখে পুরিতে লাগিল। বালুকাচরের কাশবন এবং বনঝাউ জলে ডুবিয়া গেল। পাড় ভাঙার অবিশ্রাম ঝুপ্ঝাপ্ শব্দ এবং জলের গর্জনে দশ দিক মুখরিত হইয়া উঠিল, এবং দ্রুত বেগে ধাবমান ফেনরাশি নদীর তীব্র গতিকে প্রত্যক্ষগোচর করিয়া তুলিল।’
উপন্যাসে পদ্মা :
বাংলা উপন্যাসে পদ্মা বেশ গুরুত্ব পেয়েছে। উপন্যাসের ভেতরে পদ্মা যে কতবার এসেছে নাম নিয়ে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে উপন্যাসের শিরোনামে পদ্মার নাম এসেছে হাতে গোণা কয়েকটিতে। এর মধ্যে পদ্মানদীর মাঝি- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, পদ্মার পলিদ্বীপ- আবু ইসহাক, পদ্মা প্রমত্তা নদী- সুবোধ বসু, পদ্মা- প্রমথ নাথ বিশী, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা-আবু জাফর শামসুদ্দিনের উপন্যাসের কথা উল্লেখ করা যায়। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মানদীর মাঝি’ এবং সুবোধ বসুর ‘প্রমত্তা পদ্মা নদী’ নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ উপন্যাসে জেলে জীবনের আখ্যান নির্মিত হয়েছে। ‘পদ্মার পলিদ্বীপ’ উপন্যাসে চরের মানুষের সংগ্রাম ও প্রেমের চিত্র ফুটে উঠেছে। ‘পদ্মা প্রমত্তা নদী’ উপন্যাসে নদীর রাক্ষুসে থাবায় বীরগঞ্জের হেমাঙ্গিনীর ভিটেমাটি জলে তলিয়ে যাওয়ার করুণচিত্র ফোটানো হয়েছে। এখানে বর্ণিত হয়েছে, রজত নামের নায়ককে বাংলার বিপ্লবী পূর্ণচন্দ্র চেয়েছিলেন বিপ্লবের রক্তাক্ত পথে টেনে নিতে। কিন্তু রজত দেশপ্রমী হলেও বিপ্লবের রক্তাক্ত পথকে পছন্দ করতো না। তাই ওই পথে সে সাড়া দেয়নি। ঊনিশশো তিরিশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে নিয়েই নির্মিত হয়েছে সুবোধ বসুর এ উপন্যাস। প্রমথ নাথ বিশীর ‘পদ্মা’ উপন্যাসে নদীর শীতকালের শীর্ণ অবস্থাকে তুলে ধরা হয়েছে। বিনয় নামের পদ্মাপাড়ের মাঝি শীতকালে নৌকা চালাতে গিয়ে দেখে, পদ্মার বুকে জেগে ওঠা চর যেন রোদ পোহাচ্ছে। নৌকা থেকে নেমে ঠেলে ঠেলে এগিয়ে যাওয়ার ছবি যেন বর্ণনায় জীবন্ত হয়ে উঠেছে। রাজশাহীর পদ্মায় জেগে ওঠা বিশাল চরকে নিয়েই যেন প্রমথ নাথ বিশীর ‘পদ্মা’ অবয়ব পেয়েছে। উপন্যাসের দীর্ঘ ভূমিকায় তিনি বলেছেন, উপন্যাসের গল্পটি ঘুষ আর দীর্ঘ ভূমিকাটি ঘুষি। মূলত ভূমিকার কথাগুলো বলবার জন্যেই গল্পের অবতারণা। আবু জাফর শামসুদ্দিনের উপন্যাস ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’ তাঁর সাত বছরের দীর্ঘ অধ্যবসায়ের ফসল। এতে সামাজিক ইতিহাসের শিল্পরূপ মহাকাব্যের আখ্যানরূপে পরিস্ফুটিত হয়েছে। বাংলাদেশ নামক জাতিরাষ্ট্রের সংগ্রামের আগাম ভাষ্য নিয়েই যেন উপন্যাসটি অবয়ব লাভ করেছে যদিও সূচনার ঢংটি ‘লালসালু’ উপন্যাসের মতোই অনেকটা।
কবিতায় পদ্মা নদী :
বাংলা কবিতায় পদ্মা নদীকে নিয়ে বেশি কবিতা লিখিত না হলেও যা লেখা হয়েছে তাই-ই বিখ্যাত হয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই রবীন্দ্রনাথ এগিয়ে। আমরা তাঁর লেখা দুটো কবিতার সন্ধান পাই। ঊনিশশো সাঁইত্রিশ সালে বত্রিশটি কবিতা নিয়ে প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থে আমরা ‘পদ্মায়’ নামে একটি কবিতা পাই। এই কবিতায় তিনি বলেছেন,
‘আমার নৌকো বাঁধা ছিল পদ্মানদীর পারে,
হাঁসের পাঁতি উড়ে যেত মেঘের ধারে ধারে-
জানি নে মন-কেমন-করা লাগত কী সুর হাওয়ার
আকাশ বেয়ে দূর দেশেতে উদাস হয়ে যাওয়ার।
......................................
একটা পালের ’পরে ছোটো আরেকটা পাল তুলে
চলার বিপুল গর্বে তরীর বুক উঠেছে ফুলে।
মেঘ ডাকছে গুরু গুরু, থেমেছে দাড় বাওয়া,
ছুটছে ঘোলা জলের ধারা, বইছে বাদল হাওয়া।’
বাংলা তেরশ’ তিন সালে আটাত্তরটি কবিতা নিয়ে প্রকাশিত হয় কবিগুরুর ‘চৈতালি’ কাব্যগ্রন্থ যার চৌত্রিশ নম্বর কবিতা হলো ‘পদ্মা’। এই কবিতায় কবি পদ্মাকে ডেকে যেন তাঁর প্রেম নিবেদন করছেন, এভাবেই কবিতার সূচনা করেছিলেন। তিনি বলেছেন,
‘হে পদ্মা আমার,
তোমায় আমায় দেখা শত শত বার।
একদিন জনহীন তোমার পুলিনে,
গোধূলির শুভলগ্নে হেমন্তের দিনে,
সাক্ষী করি পশ্চিমের সূর্য অস্তমান
তোমারে সঁপিয়াছিনু আমার পরান।
অবসানসন্ধ্যালোকে আছিলে সেদিন
নতমুখী বধূসম শান্ত বাক্যহীন;
সন্ধ্যাতারা একাকিনী সস্নেহ কৌতুকে
চেয়ে ছিল তোমাপানে হাসিভরা মুখে।
সেদিনের পর হতে, হে পদ্মা আমার,
তোমায় আমায় দেখা শত শত বার।’
রবীন্দ্রনাথ হতে আমরা চলে যাই গ্রাম বাংলার মৃত্তিকালগ্ন কবি জসীমউদ্দীনের কাছে। ‘নিমন্ত্রণ’-এর কবি এবার ‘পূর্ণিমা’ কবিতায় পদ্মার আংশিক রূপ ফুটিয়ে তুলেছেন। কবিতাটি ‘এক পয়সার বাঁশি’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত। কবি পূর্ণিমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে আমাদের বলছেন,
’পূর্ণিমাদের আবাস ছিল টেপাখোলার গাঁয়,
একধারে তার পদ্মানদী কলকলিয়ে যায়।
তিনধারেতে উধাও হাওয়া দুলতো মাঠের কোলে,
তৃণফুলের গন্ধে কভু পড়তো ঢলে ঢলে।
সেখান দিয়ে পূর্ণিমারা ফিরতো খেলে নিতি,
বাঁকাপথে বাজতো তাদের মুখর পায়ের গীতি।
পদ্মানদীর মাঝিরে কেউ ডাকত ছড়ার সুরে,
শিশুমুখের কাকলিতে গ্রামটি যেত ভরে।’
পদ্মা নদীর সাথে বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত নিবিড়। এ নদীর বুকে চড়ে তিনি যেতেন টুঙ্গিপাড়া আর টুঙ্গিপাড়া হতে আসতেন ঢাকায়। তাঁকে নিয়েই ঊনিশশো সাতানব্বই সালে তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে অমর একুশের কবি গাফ্ফার চৌধুরী লিখেছেন এক অসাধারণ কবিতা। কবিতার শিরোনাম, ‘বঙ্গবন্ধু আবার যখন ফিরবেন’। এ কবিতায় অবধারিত ভাবেই এসেছে পদ্মা নদীর নাম। কবি আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন, পদ্মাপাড়ে জাতির জনক নৌকা দিয়ে ভিড়বেন। আমরা তাঁর বয়ানেই শুনতে পাই,
’বঙ্গবন্ধু আবার যখন ফিরবেন
পদ্মাপারে নৌকা করে ভিড়বেন
নকশীকাঁথার পাড়ের মতন
সব হারানোর দুঃখ ভুলে
রক্তমাখা আঁচল তুলে
শিশির ধোয়া ঘাসের মতন
মায়ের মতন হাসবেন।’
লোকছড়ায় পদ্মা নদী :
বাংলাদেশের মানুষের শোণিতপ্রবাহে মিশে আছে লোকছড়ার ছন্দ। সেই শেকড়ের টানের কারণেই লোকছড়াগুলো মানুষকে বিমুগ্ধ করে দেয়। সন্দ্বীপের আঞ্চলিক লোকছড়ায় পদ্মা নদী প্রকাশিত হয়েছে আপন যোগ্যতায়। আমরা কোন এক মাকে দেখেছি তাঁর সোনামণিকে পদ্মা নদীর উল্লেখ সম্বলিত লোকছড়ায় ভুলিয়ে রাখতে। খুব চমৎকার করেই এই মায়ে ছড়া কাটেন,
’আঙ্গো মণি কোনানে
হদ্মানদীর বিছখানে
হিঁয়ানে কীয়ারে?
টক্কি টক্কি মাছ ধরে
স্বর্ণের নৌকা বানামু
তই মণিরে আনামু।’
ভাষান্তর :
আমাদের মণি কোনখানে
পদ্মা নদীর মাঝখানে
সেখানে সে কী করে
টপকে টপকে মাছ ধরে
স্বর্ণের নৌকা বানাবো
তবে মণিকে আনাবো।
পদ্মার ইলিশ :
পৃথিবীতে ইলিশ আছে পাঁচ প্রজাতির। এর মধ্যে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা অববাহিকায় তিন রকমের ইলিশ পাওয়া যায়। টেনুয়ালোসা ইলিশা, টেনুয়ালোসা টলি এবং টেনুয়ালোসা কেলি। এদের মধ্যে টেনুয়ালোসা ইলিশাই সবচেয়ে বেশি স্বাদযুক্ত। এতে তুলনামূলক কাঁটা কম এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের পুর বেশি, যা হৃদরোগে উপকারী, রক্তে এইচডিএল বাড়ায় ও স্বাদের অনন্যতা তৈরি করে। পদ্মার ইলিশ খায় ফাইটোপ্লাঙ্কটন। পদ্মার ইলিশ নিয়ে হাল আমলে একটি চটুল গান খুব জনপ্রিয় হয়েছে। গানটির কয়েকটি চরণ নিম্নরূপ :
’ওরে বাংলাদেশের মেয়ে রে তুই
হেইলা দুইলা যাস
.............................
পদ্মা নদীর ইলিশ খাইয়া
রূপ খানা কি ঝকঝকে বানাস...।’
রবীন্দ্রনাথ পদ্মার ইলিশ নিয়ে বেশি কিছু না লিখলেও তিনি ছেলেবেলার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আব্দুল মাঝির সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন, ‘হালের কাছে আবদুল মাঝি, ছুঁচলো তার দাড়ি, গোঁফ তার কামানো, মাথা তার নেড়া। তাকে চিনি, সে দাদাকে এনে দিত পদ্মা থেকে ইলিশ মাছ আর কচ্ছপের ডিম।’ গানে গানে পদ্মা নদী :
পদ্মা নদী নিয়ে নজরুলের বিখ্যাত বিচ্ছেদধর্মী ভাটিয়ালি গানটি আজও শ্রোতার মনে দুঃখ জাগিয়ে তোলে। গানটির কথা নিম্নরূপ :
‘পদ্মার ঢেউ রে
মোর শূন্য হৃদয় পদ্ম নিয়ে যা যারে
এই পদ্মে ছিল রে যার রাঙ্গা পা
আমি হারায়েছি তা’রে ॥
.................................
ও পদ্মা রে ঢেউয়ে তোর ঢেউ ওঠায় যেমন চাঁদের আলো
মোর বঁধুয়ার রূপ তেমনি ঝিল্মিল করে কৃষ্ণ-কালো...’
কবিবন্ধু শৈলজারঞ্জন মুখোপাধ্যায় তার ‘নন্দিনী’ চলচ্চিত্রের জন্যে ‘চোখ গেল চোখ গেল’ গানটি নজরুলকে দিয়ে লিখিয়ে নিলে পরবর্তীকালে রেকর্ড প্রকাশের নিমিত্তে উল্টোপিঠের আরেকটি গানের প্রয়োজন হয়। নজরুল তখন এই গানটি লিখে দেন। ঊনিশশো একচল্লিশ সালে গানটি প্রথম প্রকাশিত হলেও ঊনিশশো ঊনষাট সালে কবির জন্মদিনে কবিপত্নী প্রমীলা ‘বুলবুল’ নামের সংকলনের দ্বিতীয় অংশে তা পুনঃ প্রকাশ করেন। গানটি প্রথম শচীন দেব বর্মণই দাদরা তালে পরিবেশন করেন।
সুবোধ বসুর উপন্যাস ‘পদ্মা প্রমত্তা নদী’র গান লেখকদের মধ্যে প্রসিদ্ধ লেখক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় অন্যতম। তাঁর হাতে লিপিবদ্ধ হওয়া গান সংযুক্ত হয়েছে চলচ্চিত্রে। গানের কথা নিম্নরূপ :
’(ওরে ও)! পদ্মা মোদের মা জননী আমাদের মা জননী রে।
পদ্মা মোদের প্রাণ ও ভাই আমাদের মা জননীরে।
সর্বনাশা পদ্মা নদীর রূপ তুলে ধরে গান লিখেছেন পুঁথিপাঠক ও গায়ক আব্দুল লতিফ। এই গানটিকে চমৎকারভাবে কণ্ঠে ধরেছেন কিংবদন্তির শিল্পী আব্দুল আলীম। এ গানের কথা সবার জানা। কথাগুলো নিম্নরূপ :
’সর্বনাশা পদ্মা নদী তোর কাছে শুধাই
বল আমারে তোর কি রে আর
কুল কিনারা নাই, কুল কিনারা নাই
ও নদীর কুল কিনারা নাই।।
................................
পদ্মারে তোর তুফান দেইখা
পরান কাঁপে ডরে
ফেইলা আমায় মারিসনা তোর
সর্বনাশা ঝড়ে।’
পল্লীকবি জসিমউদদীনের গানের কবিতায় বেদেসমাজের শেকড়হীন জীবন আর পদ্মা নদীর মর্মস্পর্শী আখ্যান ফুটে উঠেছে। এই গীতি কবিতায় আমরা পাই, ‘ও বাবু সেলাম বারে বার আমার নাম গয়া বাইদ্যা, বাবু বাড়ি পদ্মার পাড়।’ বাইদ্যার গানের পাশাপাশি পদ্মাকে নিয়ে গান বেঁধেছেন আরেক মানবতাবাদী
প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী ভূপেন হাজারকিা। তাঁর গানে আমরা পাই, ‘গঙ্গা আমার মা, পদ্মা আমার মা... ও আমার দুই চোখে দুই জলের ধারা মেঘনা যমুনা।’
পদ্মা নদী নিয়ে আরেকটি বিখ্যাত দেশপ্রেমের গান আছে, ‘এই পদ্মা এই মেঘনা এই যমুনা সুরমা নদী তটে...।’ গানটি লিখেছেন আবু জাফর সিদ্দিকী ও কণ্ঠ দিয়েছেন ফরিদা পারভীন। গানটি গীত হলে আপনা আপনিই গায়ের রোম দাঁড়িয়ে যায়। আবার পদ্মা নদীর ইলিশ খাইয়া বাংলাদেশের মেয়েদের রূপখানা ঝকঝক করার চটুল গানের কথাও জনপ্রিয় হয়ে গেছে।
রবীন্দ্রনাথ, ছিন্নপত্র ও পদ্মা নদী :
রবীন্দ্রনাথের সাথে নদীর সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। তিনি ছোটনদী কোপাইকে যেমন কাছে পেয়েছেন, তেমনি কাছে পেয়েছেন খরস্রোতা পদ্মা নদীকেও। পদ্মা নদীর বুকে পদ্মা নামের হাউসবোটে চড়ে তাঁর কেটে যেত দিনরাত। এই পদ্মার তীর হতেই তিনি চিঠি লিখেছেন তাঁর প্রিয় ভ্রাতুষ্পুত্রী ইন্দিরা ঠাকুরকে। এইসব চিঠি নিয়েই প্রকাশিত হয়েছে ‘ছিন্নপত্রাবলী’। এইসব চিঠিতে পদ্মার কথা যে কতো ভাবে কতো বার এসেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পদ্মা নদী যেন তাঁর দর্শনের সূতিকাগার। ‘ছিন্নপত্রাবলী’কে প্রাজ্ঞ রবীন্দ্রবেত্তা শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ‘পদ্মাতীরের পত্রকাব্য’ অভিধায় তাই যথার্থই ভূষিত করেছেন। পদ্মার বুকে বসে আধ্যাত্মিক দর্শনে মগ্ন হয়ে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘...নদী আর এই দিগন্ত বিস্তৃত চর আর ওই ছবির মতন পরপারধরণীর এই উপেক্ষিত প্রান্তভাগ-এই বা কী বৃহৎ নিস্তব্ধ নিভৃত পাঠশালা।’ কবিগুরু রঙতুলির শিল্পী হলেও কলমে তিনি পদ্মার অসাধারণ রূপ ফুটিয়ে তুলেছেন ছিন্নপত্রেও। তাঁর বর্ণনায় পাই, “নদীর যে রোখ। যেন লেজ-দোলানো কেশর-ফোলানো তাজা বুনো ঘোড়ার মতো।” এই পদ্মার সঙ্গে যেন কবির জন্মজন্মান্তরের অচ্ছপদ্য বন্ধন। তিনি নিজভাষ্যে বলেছেন, “আমাদের দুজনকার মধ্যে একটা খুব গভীর এবং সুদূরপ্রসারী চেনাশোনা আছে। বাস্তবিক পদ্মাকে আমি বড়ো ভালোবাসি। ইন্দ্রের যেমন ঐরাবত আমার তেমনি পদ্মা-আমার যথার্থ বাহন। আমি যখন শিলাইদহে বোটে থাকি তখন পদ্মা আমার পক্ষে সত্যিকারের একটি স্বতন্ত্র মানুষের মতো।"
’ভানুসিংহের পত্রাবলী’তে রাণু অধিকারীকে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, “যখন আমি পদ্মার কোলে বাস করতুম তখন পাশাপাশি আমার দুইরকম বাসাই ছিল। ঘরের মধ্যে আমার অন্তরাত্মার নিশ্বাস, আর চরের মধ্যে তার প্রশ্বাস। একদিকে তার অন্দরের দরজা, আর একদিকে তার সদর দরজা।"
অন্যদিকে রবীন্দ্র চর্চায় ধীমান লেখক প্রমথনাথ বিশী ‘শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথ’ গ্রন্থে’ বলেন, ‘পদ্মাকে যে দেখেনি বাংলাদেশকে দেখেনি সে, পদ্মাকে যে জানে না বাংলাদেশকে জানে না সে, পদ্মাকে যে বোঝেনি, বাংলাদেশকে বোঝেনি সে; যা কিছু দেখা জানা বোঝা সমস্ত সংহত এই নদীটির মধ্যে। পদ্মাতীরে বসে কবি তাঁর অন্তর্নিহিত কবিধর্মকে যেমন আবিষ্কার করলেন, তেমনি পদ্মার কলধ্বনিতে শুনলেন বাংলার জনজীবনের কোলাহল।’
নজরুল ও পদ্মা নদী :
গোয়ালন্দ ঘাটে স্টিমার থেকে নেমে নৌকাযোগে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে মানিকগঞ্জ যাওয়ার পথে নজরুল পদ্মা নদীর এক চমৎকার উপমা ও চিত্রকল্প এঁকেছেন। তিনি দুপুরের পদ্মাকে দেখে বলেছেন, ‘রোদে-পোড়া দুপুরটা তৃষ্ণার্ত যমকাকের মতো হাঁপাচ্ছে আর কা-কা করছে; তখন তরী আমাদের পদ্মার বুকে ভাসল! দেখলাম পদ্মার শুকনো ধু ধু করা চরটা নির্জলা একাদশীর উপবাসক্লান্ত বিধবা মেয়ের মতো উপুড় হয়ে পড়ে পড়ে ধুঁকছে। ও-পারে মানিকগঞ্জের সীমানা সবুজ রেখায় আঁকা। এ-পারে ফরিদপুরের ঘন বনছায়া। এ-পারে ও-পারে দুটি সাথীহারা কপোত-কপোতী কুজন-কান্নায় তখন যেন সারা দুপুরটার কান্নায় দুপুরে মাতন জুড়ে দিয়েছিল। কী এক অকূল শূন্যতার ব্যথায় বুকটা আমার যেন হো হো করে আর্তনাদ করে উঠল।’
পদ্মার বুকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার অসাধারণ বর্ণনা দিয়েছেন নজরুল। তিনি যেন বিষাদের এক কালজয়ী ছবি এঁকে গেছেন ছোট্ট বর্ণনায়,
‘পদ্মার বুকেই ধোঁয়ার মত ঝাপসা হয়ে মলিন-সন্ধ্যা নেমে এল! সন্ধ্যা এল ধূলি ধূসরিত সদ্য বিধবার মতন ধূমল কেশ এলিয়ে, দিগ্বালাদের মেঘলা অঞ্চলে সিঁথির সিঁদুরটুকুর শেষ রক্তরাগ মুছে! ধানের চারায় আর আমার চোখে অশ্রু-শীকর ঘনিয়ে এল।’
পদ্মা সেতু ও সাহিত্য :
খরস্রোতা বলেই দীর্ঘদিন পদ্মা ছিল সেতুবিহীন। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নয়ন ও নদীশাসনের উন্নত কৌশলের কারণে খরস্রোতা পদ্মা নদীর ওপরও এখন সেতু প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে। এ অসম্ভবকে সম্ভব করার একক স্বপ্নদ্রষ্টা মুজিব-তনয়া শেখ হাসিনা। বাঙালির জীবনে দেশভাগ, ভাষা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন ছিল সাহিত্যের উর্বর প্রপঞ্চ। অজস্র সাহিত্য রচিত হয়েছে এসব মাইলফলক গুলোকে কেন্দ্র করে। এইসব ইভেন্টের সাথে আজ যুক্ত হয়েছে পদ্মাসেতু-সাহিত্য। ইতোমধ্যেই পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন গল্প ও কবিতা সংকলন প্রকাশের উর্বর যাত্রা শুরু হয়েছে। ভবিষ্যতে এ প্রয়াসে আরও অধিক সাহিত্যশস্যের ফলন হবে বলে আশা করা যায়। পদ্মাসেতুকে নিয়ে গান বানানো হয়ে গেছে ইতোমধ্যেই। গানের দুটো মুখ্য কলি হলো, ‘ উন্নয়নের মাইল ফলক বাঙালি ছুঁইলো, হইলো রে হইলো বাঙালির পদ্মাসেতু হইলো।’
কবি ফারুক নওয়াজের সম্পাদনায় জিনিয়াস পাবলিকেশন হতে এরই মধ্যে পদ্মাসেতু বিষয়ক দুটো সংকলনগ্রন্থ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। একটি হলো ‘ছড়াগুলো পদ্মাসেতুর’ এবং ‘গল্পগুলো পদ্মাসেতুর’। ‘হুলিয়া’র কবি নির্মলেন্দু গুণও বসে নেই। পদ্মাসেতু নিয়ে তিনিও রচনা করেছেন কাব্যশস্য যার নাম ‘এই স্বর্ণসেতুহার ‘। শেখ হাসিনাকে উৎসর্গ করা এ কবিতায় কবি তাদের হারানো গরুর মতো খ্জুঁছেন,
‘যারা ভেবেছিলেন ‘পদ্মার ঢেউরে
শাসন করার নাই কেউরে....।’
..........................................
যারা বলেছিলেন বিশ্বব্যাংকের অনুগ্রহ এবং অর্থভিক্ষা ছাড়া অসম্ভব এই সেতুর কল্পনা’। কবি সন্তুষ্ট কারণ, ‘আমরা দুরন্ত দুর্বার পদ্মাবতীর কণ্ঠে
পরিয়ে দিয়েছি এই স্বর্ণসেতুহার।’