বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে 'আল্লাহু চত্বর'
  •   চাঁদপুর কণ্ঠৈর কলামিস্ট এএসএম শফিকুর রহমানের ইন্তেকাল
  •   নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পেল সেনাবাহিনী
  •   জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে’ প্রধান উপদেষ্টার ১০০ কোটি টাকার অনুদান
  •   মেঘনায় নিখোঁজ দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশ : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

কুরআন ও হাদীসের আলোকে ঈদে মিলাদুন্নাবী (সাঃ)

মুফতি মুহাঃ আবু বকর বিন ফারুক
কুরআন ও হাদীসের আলোকে ঈদে মিলাদুন্নাবী (সাঃ)

বছর ঘুরে মু’মিনের দ্বারে এলো রবিউল আউয়াল মাস। এ মাসের ১২ তারিখ সোমবার, সোবহে সাদেকের সময় উম্মতের কান্ডারী, মানবতার মুক্তির দূত, মুহাম্মাদ (সাঃ) এ পৃথিবীতে জন্ম গ্রহণ করেন। প্রিয় নবিজীর আগমনে সহগ্র জগৎ আলোকিত হয়েছে। এ আগমন তথা জন্মকে মিলাদুন্নাবী (সাঃ)বলা হয়।

আর সীরাত হলো রাসূল (সাঃ) এর জীবন চরিত। এ জন্যে রাসূল (সাঃ) এর মিলাদ ও সিরাত উভয়টাই আমাদের পালন করা উচিত। প্রিয় নবীর জন্মই যদি না হতো, তাহলে সিরাত আসতো কোথা থেকে। এ জন্যে মিলাদ যার, সিরাত তাঁর।

মিলাদুন্নাবী (সাঃ) পালনে আপত্তি করে সিরাতুন্নাবী পালন করে থাকে। সিরাতুন্নাবী (সাঃ) ও নবীর জীবনীই আলোচনা হয়। জীবনী আলোচনাতে জন্মের পূর্বেই, জন্মের ও জীবন চরিত, ফুটে উঠে। তাহলে সিরাতুন্নাবী (সাঃ) তে ও মিলাদুন্নাবী (সাঃ) পালন করা হয়ে থাকে এবং মিলাদুন্নাবী (সাঃ) এর মধ্যেও সিরাতুন্নাবী (সাঃ) পালন করা হয়ে থাকে।

ইসলাম এবং ইসলামের এমন কোন দিক নেই যেখানে রাসূল (সাঃ) এর সুন্নাহ নেই। আমরা মিলাদুন্নাবী (সাঃ) পালন করে থাকি, কারণ! রাসূল (সাঃ) এর জন্মে আমরা খুশি।

নিম্নে মিলাদুন্নাবী (সাঃ) বিষয়ে আলোকপাত করা হলো -

অভিধানের দৃষ্টিতে মীলাদ : মীলাদ, মওলেদ এবং মওলুদ এই তিনটি শব্দের আভিধানিক অর্থ নিম্নরূপ। আরবী ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ অভিধান লেসানুল আরব ও বৃহত্তম অভিধান তাজুল আরুছ, কামুছ, মুহকাম, তাহজীব, আছাছ, ছেহাহ ও জওহরী এবং মিছবাহ প্রভৃতি লোগাতে ( অভিধানে ) বর্ণিত আছে যে, অলীদ, মওলুদ শব্দের অর্থ নবজাত শিশু। মওলুদূর রেজাল অর্থ মানুষের জন্মকাল, জন্মস্থান, মীলাদুর রেজাল মানুষের জন্মকাল, জন্মদিন। মীলাদ শব্দটি জন্মকাল ও জন্মদিন ব্যতীত অন্য কোন অর্থে ব্যবহৃত হয় না। সুতরাং মীলাদুন্নবী, মাওলেদুন্নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা এর জন্ম কাহিনী ও তৎসংশ্লিষ্ট ঘটনাবলী আলোচনা করা। ঐ মজলিসটি ঈদে মীলাদুন্নবী নামে খ্যাতি অর্জন করেছে।

ইসলামী পরিভাষায় প্রচলিত মীলাদ শরীফের রূপরেখা :

নূরে মুহাম্মদী সৃষ্ট জগতের শ্রেষ্ঠ ও প্রথম সৃষ্ট। এ নূর কিভাবে সৃষ্টি হয়ে ‘প্রথম কোথায় কিভাবে ছিল, অন্যান্য সৃষ্ট জগত এ নূর হতে কিভাবে সৃষ্টি হলো, এক কথায়, এ নূর মুবারক দেহ পিঞ্জিরের মাধ্যমে ইহজগতে প্রত্যক্ষ আগমন করার পূর্বেকার ঘটনাবলী সংক্রান্ত আলোচনা আহুত অনুষ্ঠানকে মীলাদ মাহফিল বলে। এর জলন্ত প্রমাণ কুরআন পাকে বহু আয়াত ও হাদীছ সমূহে উল্লেখ রয়েছে। হযরত রাসূল মকবুল (সাঃ) স্বয়ং মজলিস কায়েম করত নিজের সৃষ্টি, নছবনামা ও তাঁর নূর মোবারক হতে জগত সৃষ্টির কথা উল্লেখ করেছেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে মজলিস কায়েম করে বিজাতির সামনে হুজুরের প্রশংসা করার অনুমতি প্রদান করেছেন। এটি সুন্নাতে রাসূল ও সুন্নাতে সাহাবার অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং মীলাদ শব্দের অর্থ প্রসব করানোর যন্ত্র বলে যারা মন্তব্য করেছেন, ইহা তাদের ধৃষ্টতা ও মূর্খতা ব্যতীত আর কিছুই নয়। সত্যিকার কুরআন হাদীছের জ্ঞানী ব্যক্তিগণ এ ধরণের জঘন্য উক্তি করতে পারেন না। বিশেষতঃ নবী প্রেমিকরা সর্বদাই মুহাম্মাদ (সাঃ) জন্ম - লগ্ন কাহিনী , ঐ সময়কার আশ্চর্যজনক ঘটনাবলী প্রকাশ করে প্রীত ও আনন্দিত হন। ধৃষ্টতা পোষণকারী ব্যক্তিগণের হুযুর পাক এর সাথে আন্তরিক শত্রুতা থাকার ইঙ্গিত বহন করছে যার পরিণাম অত্যন্ত খারাপ। ইয়া আল্লাহ! তাদেরকে সুমতি প্রদান করুন এবং মীলাদ পাঠ ও মীলাদ মাহফিল কায়েম করার তাওফীক দান করুন।

পবিত্র কুরআনুল কারীমে নবী হযরত ইয়াহইয়া ইবনে জাকারিয়া (আঃ) সম্পর্কে বলেন-

তার উপর শান্তি যেদিন সে জন্মেছে, যেদিন তার মৃত্যু হবে আর যেদিন সে জীবন্ত হয়ে উত্থিত হবে।(১৯ সূরা মারইয়াম -১৫)

এ আয়াত দ্বারা এটাই প্রমানিত, নবীরা যেদিন জন্ম গ্রহন করেন, যে দিন ইন্তেকাল হয় এবং হাশর ময়দানে যেদিন পুনরায় উদিত হবেন। এ অবস্থাগুলোতে মহান আল্লাহর রহমত শান্তি নাযিল হয়।

তাই আমাদের নবী (সাঃ) এর জন্ম দিনেও শান্তি রহমত নাযিল হয়। ঐ সময়টা বরকতময় সময়।

ঈসা (আঃ) এর জন্ম সম্পর্কে কুরআনে এসেছে -

আমার উপর আছে শান্তি যেদিন আমি জন্মেছি, ‘যেদিন আমার মৃত্যু হবে আর আমি যেদিন জীবিত হয়ে উত্থিত হব’। (১৯ সূরা মারইয়াম - ৩৩)

ঈসা (আঃ) নবীর বেলায় ও একই কথা। নবীদের জন্মে শান্তি নাযিল হয়।

মারইয়াম-ত্বনয় ঈসা বললেন, ‘হে আল্লাহ্ আমাদের রব! আমাদের জন্যে আসমান থেকে খাদ্যপূর্ণ খাঞ্চা পাঠান; এটা আমাদের ও আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তি সবার জন্যে হবে আনন্দোৎসব স্বরুপ এবং আপনার কাছ থেকে নিদর্শন। আর আমাদের জীবিকা দান করুন; আপনিই তো শ্রেষ্ঠ জীবিকাদাতা।’(৫ মায়িদাহ -১১৪)

ঈসা (আঃ) এর উম্মতের জন্য আকাশ থেকে খাদ্যপূর্ণ খাঞ্চা পাঠালে এটা তাদের জন্য খুশির কারণ হবে।

এজন্য ঈসা (আঃ) বললেন এটা আমাদের ও আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তি সবার জন্যে হবে আনন্দোৎসব স্বরুপ এবং আপনার কাছ থেকে নিদর্শন।

তাহলে আমাদের কাছে আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ) কে যেদিন পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন সেদিন উম্মতের জন্যে সবচেয়ে বেশি খুশির কারণ।

তাই আমরা খুশি হিসেবে এদিনকে ঈদে মিলাদুন্নাবী (সাঃ) বলি।

উম্মত হয়ে নবীর আগমনে খুশি হবেনা, তাহলে কি হবে?

শয়তান নবীর জন্মে খুশি হতে পারেনা।

সে সেদিন বিকট ভাবে চিৎকার করে।

ইমরান নবীর স্ত্রী হান্নাহ বিনতে ফাকুদকে বিবি মরইয়াম ও তৎপুত্র ঈসা নবীর জন্মের সুসংবাদ জানালেন। ইমরান নবীর স্ত্রীর গর্ভধারণ ও প্রসবের কথা উল্লেখ এবং মরইয়াম ও তৎপুত্র হযরত ঈসাকে শয়তানের হাত হতে রক্ষার জন্যে দোয়া প্রার্থনা করা, তদুপরি সন্তানের নাম রাখার কথা কুরআন পাকে উল্লেখ রয়েছে। যেমন, সূরা আল ইমরান ৩৪/৩৫ নং আয়াত-

অনুবাদ : ইমরান নবীর স্ত্রী হান্নাহ বিনতে ফাকুদ বললেন, ওহে প্রভু! আমি তোমার জন্যে আমার পেটে যে সন্তান রয়েছে উহা মান্নত করলাম এবং মুক্ত ও আজাদ করলাম। ওহে প্রভু! আমার মান্নত কবুল কর। তুমি একমাত্র শ্রবণকারী ও অর্ন্তযামী। অতঃপর ইমরান - স্ত্রী যখন সন্তান (মরইয়াম) কে প্রসব করেন, অথচ আল্লাহ যথেষ্ট জানেন ; ইমরান-স্ত্রী কি প্রসব করেছেন। তখন সে আল্লাহকে জানান; ওহে প্রভু! আমি কন্যা সন্তান প্রসব করেছি, পুরুষ সন্তান তো মেয়ের ন্যায় নয়। আমি ঐ কন্যা সন্তানটির নাম মরইয়াম রেখেছি। ঐ মেয়ে সন্তানকে এবং ঐ মেয়েটির (সন্তানটির) সন্তানকে শয়তানের প্রতারণা হতে বাঁচার জন্যে তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থী।

সুরায়ে মরইয়ামের ৭ম আয়াতে যাকারিয়া (আঃ)-এর বিবির গর্ভধারণ ও সন্তান লাভের কথা এবং সন্তানের নামকরণ ব্যাপারে উল্লেখ রয়েছে। অনুবাদ : ওহে যাকারিয়া! আমি তোমাকে ইয়াহ-ইয়া নামক সস্তানের সুসংবাদ দিচ্ছি। এ নাম ইতিপূর্বে কারো জন্যে স্থির করিনি। হযরত যাকারিয়া (আঃ) এতে বিস্মিত হয়ে বললেন; ওহে প্রভু! আমার কি করে সন্তান লাভ হবে? অথচ আমার স্ত্রী বাঁঝা, এদিকে আমি বৃদ্ধলোক। আল্লাহ পাক বললেন- তোমার প্রভুর জন্যে ইহা অতি সহজসাধ্য। তোমাকে পূর্বে যখন সৃষ্টি করেছি তখন তুমি কিছুই ছিলেন। তিনি বললেন, প্রভু! আমার জন্যে এ ব্যাপারে একটি নিদর্শন প্রদান করুন। তদুত্তরে মহান আল্লাহ বললেন, নিদর্শন হলো তুমি একাধারে ৩ রাত ব্যাপী মানুষের সাথে কথাবার্তা বলতে পারবেনা। তাছাড়া হযরত মরইয়ামের গর্ভধারণ ও প্রসব বেদনার কথা কুরআন পাকে উল্লেখ রয়েছে।

সূরায়ে মরইয়াম ১৬-২২ আয়াতগুলোতে ঘোষণা করা হয়েছে- অনুবাদ : বিবি মরইয়ামের কথা কুরআন পাকে স্মরণ করুন। যখন বিবি মরইয়াম আপনজন হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পূর্ব দিকে গেলেন এবং তাদের মধ্য হতে নিজেকে পর্দায় রাখলেন। তখন আমি মহান আল্লাহ তাঁর নিকট আমার রুহুল আমিন (জিব্রাঈল) কে পাঠালাম। জিব্রাঈল বিবি মরইয়ামের নিকট একজন যুবক বেশে উপস্থিত হলেন। এতে বিবি মরইয়াম বললেন, আমি পরম দয়াময়ের নিকট তোমার থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি, যদিও তুমি মুত্তাকী পরহেজগার হওনা কেন? তদুত্তরে রুহুল আমীন (ফেরেশতা) বললেন, নিশ্চয়ই জেনে রেখো আমি তোমার প্রভুর দূত। আমাকে তোমাকে একটি পবিত্র সন্তান প্রদানের জন্যে পাঠানো হয়েছে। মরইয়াম বললেন, আমার কি করে সন্তান লাভ হবে? অথচ আমাকে কোন মানুষ এযাবত স্পর্শ করেনি এবং আমি ব্যভিচারিনী, যিনাকারীনী নই। রুহুল আমীন (ফেরেশতা) বললেন, সন্তান প্রদান করা হবে। তোমার প্রভু বলেন, উহা আমার জন্যে সহজ সাধ্য। আমি উক্ত কাজটিকে মানুষের জন্যে নিদর্শন ও আমার রহমত হিসেবে করতে চাই এবং ইহাই করা সাব্যস্ত হয়েছে। সুতরাং মরইয়াম গর্ভবর্তী হলেন, উক্ত গর্ভাবস্থা নিয়ে বায়তুল মুকাদ্দাস হতে বহু দূরে বাসস্থান বানালো। অতঃপর বিবি মরইয়ামের প্রসব বেদনায় তিনি খেজুর গাছের তলায় পৌঁছালো। মরইয়াম বেদনায় অস্থির হয়ে বলতে লাগল, হায়রে এঘটনার পূর্বেই যদি আমি মৃত্যুবরণ করতাম তাহলে আত্মভোলা হতাম।

উপরন্ত কুরআনপাকে হযরত মূসা (আঃ) এর মায়ের গর্ভ প্রসব করার কথা ও দুধ পান করানোর কাহিনী বর্ণিত আছে। অনুবাদ : মহান আল্লাহ বললেন, আমি মূসা নবীর মায়ের নিকট বার্তা পাঠিয়েছি যে, তুমি মূসাকে দুধ পান করাও।

উল্লেখিত আয়াতে হযরত ইসহাক, ইসমাঈল, মরইয়াম, ঈসা, ইয়াহইয়া ও হযরত মূসা এবং আমাদের নূর নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সংক্ষিপ্ত নছবনামা সহ বেলাদত (জন্ম) হতে নবুওয়াতের পূর্বের, বরং জন্মণ্ডপূর্ব ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে। যদি এ বর্ণনা অনাবশ্যক বস্তু হতো, তাহলে কুরআন পাকে ইহা বর্ণনার কারণ কি?

মূসা নবীর সম্পর্কে কুরআনে এসেছে -

মূসাকে আমি আমার নিদর্শনাবলীসহ প্রেরণ করেছিলাম এবং বলেছিলাম তোমার সম্প্রদায়কে অন্ধকার হতে আলোতে বের করে আনো এবং তাদেরকে আল্লাহর দিনগুলি স্মরণ করিয়ে দাও।

এতে তো নিদর্শন রয়েছে প্রত্যেক পরম ধৈর্যশীল ও পরম কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্যে। (১৪ সূরা ইব্রাহীমণ্ড৫)

স্মরণ কর, যখন মূসা তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, ‘তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর নি’মাতের কথা স্মরণ কর যখন তিনি তোমাদেরকে ফির’আওনী গোষ্ঠী থেকে রক্ষা করেছিলেন যারা তোমাদেরকে জঘন্য রকমের শাস্তিতে পিষ্ট করছিল। তোমাদের পুত্রদেরকে তারা হত্যা করত আর তোমাদের নারীদেরকে জীবিত রাখত। এটা ছিল তোমাদের জন্যে আল্লাহর পক্ষ হতে এক কঠিন পরীক্ষা।(১৪ সূরা ইব্রাহীমণ্ড৬)

“তাদেরকে আল্লাহর দিনগুলি স্মরণ করিয়ে দাও।” (কুরআন)

এ আয়াত দ্বারা কতিপয় স্মরণীয় দিন, রহমত পূর্ণ দিন। আল্লাহ করুনা করেছেন এমন কতিপয় দিনের কথা স্মরণ করার কথা কুরআনে আছে।

তাই নবী (সাঃ) যেদিন পৃথিবীতে তাশরীফ এনেছেন, উম্মতের জন্যে ঐ দিন স্মরণ করা ঈমানের দাবী।

আল্লাহর নেয়ামতের স্মরণ করা।

পবিত্র কুরআনে এসেছে - আর স্মরণ কর, ‘আদ জাতির (ধ্বংসের) পরে তিনি তোমাদেরকে (তোমাদের আগের লোকদের) স্থলাভিষিক্ত করেছেন। আর তিনি তোমাদেরকে যমীনে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন যে, তোমরা সমতল ভূমিতে প্রাসাদ নির্মাণ ও পাহাড় কেটে ঘরবাড়ি তৈরী করছ। কাজেই তোমারা আল্লাহ্র অনুগ্রহ স্মরণ কর এবং যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়িও না।’(৭ সূরা আ'রাফ-৭৪)

আল্লাহর নেয়ামত বেশি বেশি স্মরণ করা -আর তুমি তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহের কথা ব্যক্ত কর। (৯৩ সূরা দুহা-১১)

নবী (সাঃ) সবচেয়ে বড় নেয়ামত -

আল্লাহ ঈমানদারদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন নবীকে পাঠিয়ে।

কুরআনে এসেছে - আল্লাহ মুমিনদের প্রতি অবশ্যই অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি তাদের নিজেদের মধ্য থেকে তাদের কাছে রাসূল পাঠিয়েছেন, যিনি তাঁর আয়াতসমূহ তাদের কাছে তেলাওয়াত করেন, তাদেরকে পরিশোধন করেন এবং কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দেন, যদিও তারা আগে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতেই ছিল। (৩ সূরা আলে ইমরান -১৬৪)

ইব্রাহীম (আঃ) এর দোয়া -

‘হে আমাদের রব! আর আপনি তাদের মধ্য থেকে তাদের কাছে এক রাসূল পাঠান, যিনি আপনার আয়াতসমূহ তাদের কাছে তিলাওয়াত করবেন; তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দেবেন এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন আপনি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’। (২ সূরা বাকারা -১২৯)

হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি আমার সূচনা বলে দিচ্ছি, আমার পিতা ইবরাহীম আলাইহিস সালামণ্ডএর দোআ, ঈসা আলাইহিস সালামণ্ডএর সুসংবাদ এবং আমার মা স্বপ্নে দেখেছিলেন যে, তার থেকে একটি আলো বের হল, যে আলোতে সিরিয়ার প্রাসাদসমূহ আলোকিত হয়েছে। [মুসনাদে আহমাদঃ ৫/২৬২] ঈসা আলাইহিস সালামণ্ডএর সুসংবাদের অর্থ তার এ উক্তি, কুরআনের ভাষায় -

“আমি এমন এক নবীর সুসংবাদদাতা, যিনি আমার পরে আসবেন। তার নাম আহমাদ”। [সূরা আস-সাফঃ ৬] তার জননী গর্ভাবস্থায় স্বপ্নে দেখেন যে, তার পেট থেকে একটি নূর বের হয়ে সিরিয়ার প্রাসাদসমূহ আলোকোজ্জ্বল করে তুলেছে। কুরআনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আবির্ভাবের আলোচনা প্রসংগে দু’জায়গায়, সূরা আলে-ইমরানের ১৬৪তম আয়াতে এবং সূরা জুমুআয় ইবরাহীম আলাইহিস সালামণ্ডএর দোআয় উল্লেখিত ভাষারই পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। এভাবে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যে নবীর জন্যে দোআ করেছিলেন, তিনি হচ্ছেন শেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

অনুগ্রহে আনন্দ প্রকাশ :-

নবী কারীম (সাঃ)এর আগমনে খুশি -

বলুন, ‘এটা আল্লাহ্র অনুগ্রহে ও তাঁর দয়ায়; কাজেই এতে তারা যেন আনন্দিত হয়।’ তারা যা পুঞ্জীভুত করে তার চেয়ে এটা উত্তম।(১০ সূরা ইউনুস-৫৮)

নবী (সাঃ) উম্মতের কাছে সবচেয়ে বড় অনুগ্রহ এটা কোন উম্মত অস্বীকার করতে পারেনা।

তাই নবী (সাঃ) আমাদের কাছে অনেক বড় নেয়ামত এজন্য আমরা এদিনকে ঈদে মিলাদুন্নাবী (সাঃ) হিসেবে পালন করি।

নবীজি (সাঃ) রহমতের নবী -

কুরআনে এসেছে - ‘আর আমরা তো আপনাকে সৃষ্টিকুলের জন্য শুধু রহমতরূপেই পাঠিয়েছি।’ (২১ সূরা আম্বিয়া -১০৭)

নবী কারীম (সাঃ) সমগ্র জগতের জন্যে রহমত। তাই নবী (সাঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা তাঁকে ভালোবাসার মাধ্যমে রহমত লাভ করা যায়।

রাসূল ও নবীদের বৃত্তান্ত শুনলে অন্তর দৃঢ় হয় -

রাসূলকে নবীদের বৃত্তান্ত শুনানো হয়েছে অন্তর দৃঢ় হওয়ার জন্যে।

রসূলদের যে সব সংবাদসমূহ আমি তোমার কাছে বর্ণনা করলাম, এর দ্বারা আমি তোমার দিলকে মযবুত করছি, এতে তুমি প্রকৃত সত্যের জ্ঞান লাভ করবে আর মু’মিনদের জন্যে এটা উপদেশ ও স্মারক। (১১ সূরা হুদণ্ড১২০)

নবীদের বৃত্তান্ত শুনলে দিলে ঈমান মযবুত হয়, তাই আমাদেরকে আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ) এর জন্মে তাঁর শুরু থেকে সমগ্র জীবনী আলোচনার মাধ্যমে উম্মতের দিলে ঈমান মযবুত হবে।

এ জন্যে মিলাদুন্নাবী (সাঃ) এ আমরা প্রিয় নবী (সাঃ) এর জীবনী আলোচনা করে ঈমানী শক্তি জামিল করি।

আল্লাহ ও ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি সালাত পড়েন এবং ঈমানদারদেরকেও সালাত ও সালাম পড়ার তাগিদ দেন।

নিশ্চয় আল্লাহ নবীর প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁর ফিরিশতাগণও নবীর জন্যে অনুগ্রহ প্রার্থনা করে। হে বিশ্বাসীগণ! তোমরাও নবীর জন্যে অনুগ্রহ প্রার্থনা কর এবং তাকে উত্তমরূপে অভিবাদন কর। (দরূদ ও সালাম পেশ কর।) (৩৩ সূরা আহযাব-৫৬)

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রতীয়মান হয় যে,

নবী রাসূলদের জন্মের কথা পবিত্র কুরআনুল কারীমে আছে।

নবী রাসূলদের জন্মে আল্লাহ শান্তি নাযিল করেন।

নির্দিষ্ট দিনকে স্মরণ করা যায়।

কোন নিয়ামত লাভ করলে খুশি হওয়া যায়।

মীলাদ শরীফ হাদীছ শরীফ হতে প্রমাণিত :

তিরমিজী শরীফ ২/২০৪ পৃষ্ঠায় মীলাদুন্নবী অধ্যায়ে হযরত মুত্তালিব বিন আব্দুল্লাহ আপন দাদা কায়েস বিন মাখরিমা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। অনুবাদ : আব্দুল্লাহর পুত্র মুত্তালিব নিজ দাদা কায়েস বিন মাখরিমা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, আমি ও হযরত নবী করীম (সাঃ) হাতী সালে জন্ম গ্রহণ করেছি। হযরত ওছমান (রাঃ) কিবাছ বিন আশইয়ামকে প্রশ্ন করেন, আপনাদের উভয়ের মধ্যে বয়সে কে বড়? তিনি উত্তরে বলেন, বয়সের দিক দিয়ে আমি হযরত নবী করীম (সাঃ) হতে বড়, কিন্তু সম্মানে ও মর্যাদার দিক দিয়ে তিনি আমার চেয়ে বড়।

অত্র হাদিস হতে প্রমাণিত হলো সাহাবায়ে কেরাম হযরত নবী করীম (সাঃ) এর জন্ম কাহিনী পরস্পরের মধ্যে আলোচনা করতেন।

ছহীহ বুখারী শরীফ ১/২০ পৃষ্ঠায় উমাইয়্যা খলীফা হযরত ওমর বিন আব্দুল আযীয হতে বর্ণিত আছে , তিনি বিজিত রাষ্ট্র প্রধানের নিকট এ মর্মে পত্র লিখে পাঠিয়েছেন। যথাঃ অনুবাদ : হযরত নবী করীম (সাঃ) এর হাদিসগুলির প্রতি যত্নবান হও ও সমুদয় হাদীসগুলি লিপিবন্ধ কর। কেননা, আমার ভয় হচ্ছে ইলমে দ্বীন ধ্বংস ও বিলীন হওয়ার এবং ওলামায়ে কেরামের ইহলোক ত্যাগ করার। তাই তোমরা হাদীছ শরীফের আলোচনা মজলিস কায়েম কর যাতে অজ্ঞ লোক বিজ্ঞ হতে পারে। কেননা, হাদীছ শরীফ ধ্বংসের মূল কারণ হলো, তাবলীগ ও প্রচার বন্ধ করে দেয়া।

ইহা ধ্রুব সত্য যে, মীলাদ অনুষ্ঠান হাদীস শাস্ত্র প্রচার করার একটি অন্যতম মাধ্যম ও এতে ফায়দা ব্যাপক। (চলেবে)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়