রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ৩০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   বয়ারচর সংযোগ ব্রিজ ও বেড়িবাঁধ রক্ষায় এলাকাবাসীর মানববন্ধন
  •   জার্মানিতে কঠিন হচ্ছে রাজনৈতিক আশ্রয়
  •   ইতালির দ্বীপে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ ২১
  •   অভিভাবকহীনতায় দিশেহারা চাঁদপুরের আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা
  •   আহতদের দেখতে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

শুধু ৬১ হিজরীর ১০ মহররম-ই নয় বরং উমাইয়া শাসনের ৮৯ বছরই কারবালা!

অনলাইন ডেস্ক
শুধু ৬১ হিজরীর ১০ মহররম-ই নয় বরং উমাইয়া শাসনের ৮৯ বছরই কারবালা!

ইমাম জয়নুল আবেদীন রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু কারবালা থেকে ফিরে রাজনীতি করেন নাই। সম্পূর্ণ জুহুদে ইবাদতে চলে যান। তবুও তো তাঁকে শহীদ করা হয়েছে।

ইমাম হোসাইন (রাদিঃ)’র শাহজাদা ইমাম জয়নুল আবেদীন (রাদিঃ)। তিনি কারবালা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। ১০ মহররমের সেই নৃশংস ভয়াল দিনে মারাত্মক অসুস্থ থাকায় তিনি জিহাদে যোগ দিতে পারেননি। ইয়াজিদের সেনারা হত্যা করতে গিয়েও ফুফু হযরত জয়নাব (রাদিঃ)’র প্রতিরোধের মুখে ফিরে যেতে বাধ্য হয়।

কারবালার ঘটনার পর ইমাম জয়নুল আবেদীন ও ফুফু সাঈয়্যিদা জয়নাব (রাঃ) যদি জীবিত না থাকতেন, তাহলে কারবালার শহীদদের আত্মত্যাগ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংঘটিত ঐ বিপ্লবকে নিছক একটা দুর্ঘটনা বলে প্রচার করার ইয়াজিদী চক্রান্ত সফল হতো। মহান আল্লাহর ইচ্ছায় হযরত ইমাম জয়নুল আবেদীন ও সাঈয়্যিদা জয়নাব (রাদিঃ) কারবালা থেকে বন্দী অবস্থায় কুফা ও দামেস্কে যাবার পথেই স্বল্প সময়ে জনগণকে জানিয়ে দেন যে, কারবালায় কি ঘটেছিল এবং কারা ছিল ইসলামের জন্যে নিবেদিত-প্রাণ ও কারা ছিল ইসলামের লেবাসধারী জালেম শাসক।

কুফায় ইবনে জিয়াদের দরবারে এবং দামেস্কে ইয়াজিদের দরবারে ইমাম জয়নুল আবেদীনের তেজোদৃপ্ত ও সাহসী ভাষণ জনগণের মধ্যে এমন জাগরণ সৃষ্টি করে যে, পরবর্তীকালে সে জাগরণের জোয়ারে ভেসে গিয়েছিল তাগুতি উমাইয়া শাসকদের তাখতে তাউস।

ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ ও ইয়াজিদের দরবারে তেজোদৃপ্ত বক্তব্য রেখেছিলেন হযরত জয়নাব(রাদিঃ)। একই ধরনের বক্তব্য রেখেছিলেন নতুন ইমাম হযরত জয়নুল আবেদীন (রাঃ)। কুফায় ফুফু জয়নাব (রাঃ) ও বোন ফাতিমার ভাষণ শুনে জনগণ যখন মর্মাহত হয় ও কাঁদতে থাকে, তখন তাদের সমাবেশে নতুন এই ইমামও বক্তব্য রেখেছিলেন।

তিনি বলেছিলেন, হে মানুষেরা, আমি হোসাইন ইবনে আলী (রাঃ)’র সন্তান। আমি তাঁর সন্তান, যার সব কিছু লুট করা হয়েছে, যার পরিবারের সবাইকে বন্দী করে এখানে আনা হয়েছে। আমি তাঁর সন্তান, যে ফোরাতের কিনারায় মর্মান্তিক ও নৃশংসভাবে শহীদ হয়েছেন। হে লোকেরা! তোমরা কিয়ামতের দিন কিভাবে নবী (সাঃ)’র সামনে দাঁড়াবে? রাসূল (সাঃ) যখন তোমাদের বলবেন, ‘তোমরা আমার পরিবারবর্গকে এভাবে কতল করেছ! আর আমার মর্যাদাও অক্ষুণ্ণ রাখনি, তাই তোমরা আমার উম্মত নও।’

নতুন ইমামের এ বক্তব্য শুনে কুফাবাসী চিৎকার ধ্বনি দিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে এবং একে-অপরকে তিরস্কার করে বলতে থাকে, আমরা এতই দুর্ভাগা, নিজেরা যে ধ্বংস হয়ে গেছি তাও জানি না।

ইমাম জয়নুল আবেদীন (রাদ্বিঃ) তাঁর পিতার শাহাদাতের পর প্রায় ৩৪ বছর হায়াতে ছিলেন এবং সমগ্র জীবনকাল নিবেদিতচিত্তে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি ও শুহাদায়ে কারবালার স্মরণের মধ্যে অতিবাহিত করেন। তিনি অধিক সময় সেজদারত থাকতেন বিধায় ‘সাজ্জাদ’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

১৮ মহররম ৯৩ হিজরি, মতান্তরে ২৫ মহররম ৯৫ হিজরি ইমাম জয়নুল আবেদীন ইবনে হোসাইন ইবনে আলী (রাদিঃ) এঁর ওফাত লাভ করেন। উমাইয়া শাসক আল-ওয়ালিদ ইবনে আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ানের (হিশাম বিন আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ান) নির্দেশে বিষপ্রয়োগের মাধ্যমে উনাকে শহীদ করা হয়।

পরবর্তীতে -

সাঈয়্যিদ হাসান আল মুসান্না; ইমাম বাকের; ইমাম জাফর আস সাদিক; ইমাম মুসা কাজিম; ইমাম তাকী; ইমাম নাকী; সাঈয়্যিদ জাকিয়া;

আহলে বাইতের এই ফুলগুলোর কাকে রেহাই দিয়েছে উমাইয়ারা?

সাঈয়্যিদা সুকাইনা, শিশু বয়সী, তাঁকেও কারাগারে দিলো ওরা! সাঈয়্যিদা জয়নব বিনতে জাহরা! উনাকেও মিশরে নির্বাসন!! সাঈয়্যিদা নাফিসা আৎ তাহিরাকেও মদীনায় থাকতে দেয়া হয় নাই। আহলে বাইতের এই পবিত্র ফুলগুলো এখন মিশরে আরাম করছেন!

রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামার আহলে বাইতের সদস্যদের প্রায় শত বছর ধরে জুলুম নির্যাতন করেছে উমাইয়া ও আব্বাসীরা।

উমাইয়াদের জুলুমের শিকার হয়ে আলে রাসুলরা মক্কা, মদীনা, এমনকি জাজিরাতুল আরব ছাড়তে বাধ্য হন। উমাইয়াদের ধারাবাহিকতায় আব্বাসীরাও আহলে বাইতের সদস্যদের প্রতি জুলুম নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে।

এরপরও যারা বলে, কারবালার ঘটনা রাজনৈতিক ছিলো, ক্ষমতা দখলের জন্য ছিলো, অনাকাঙ্ক্ষিত ছিলো, ইয়াজিদের অজান্তে হয়েছে...তাদের চিনে রাখুন।

যদি তা-ই হতো, তবে সে ঘটনা ওখানেই সমাপ্ত হলো না কেন? ক্ষমতা দখল বা রাজনৈতিক হলে বা যুদ্ধের জন্য হলে ইমাম হোসাইন সৈন্য বাহিনী নিয়ে যাননি কেন? কেন পরিবার ও শিশুদের নিয়ে গিয়েছিলেন? শহীদের মস্তক ছিন্ন করে ইয়াজিদের দরবারে কেন নেয়া হলো? লাশগুলোর উপর কেন ঘোড়া দৌঁড়ানো হলো? কেন নারী ও শিশুদের বন্দি করে হাতে কোমরে রশি বেঁধে টেনে হিঁচড়ে দামেস্ক নেয়া হলো? কেন এহেন ঘৃণ্য কাজের জন্য দায়ীদের শাস্তি না দিয়ে পুরস্কৃত করা হলো এবং কেন-ই-বা আহলে বাইতে আতহারগণের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে জুলুম নির্যাতনের শিকার হতে হলো?

এমন হাজারো প্রশ্নের কোন জবাব তারা দিতে পারবে না। কারণ তারা যা বলে বেড়ায়, তা হাকিকত নয় বরং হাকিকত ছিলো আহলে বাইতে আতহারগণের প্রতি বিদ্বেষ ও নবী পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়