রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ৩০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   বয়ারচর সংযোগ ব্রিজ ও বেড়িবাঁধ রক্ষায় এলাকাবাসীর মানববন্ধন
  •   জার্মানিতে কঠিন হচ্ছে রাজনৈতিক আশ্রয়
  •   ইতালির দ্বীপে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ ২১
  •   অভিভাবকহীনতায় দিশেহারা চাঁদপুরের আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা
  •   আহতদের দেখতে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

সন্তানের নামকরণে ইসলামি দৃষ্টিকোণ

মুফতি আহমদ আবদুল্লাহ
সন্তানের নামকরণে ইসলামি দৃষ্টিকোণ

লোটাস, পিংকী, পান্থ, বিহৌস, বেবী, টুম্পা, বন্যা, বিজলী রীতেশ, হাসি, কান্না ইত্যাকার নামের বাহার দেখে সত্যিই বিশ্বাসী মুসলিমের অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে। মহা ভাবনায় পড়ে যায়। এগুলো মুসলমানের নাম, নাকি হিন্দু-বৌদ্ধ কিংবা খ্রিষ্টান-ইহুদির নাম; সে আঁচ করতে পারে না। এগুলো ছেলে না মেয়ের নাম, তাও সে বুঝে ওঠতে পারে না। অথচ ইসলাম এবং ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ মহীয়ান আমাদের প্রিয়নবী (সাঃ) নবজাতকের সুন্দর, অর্থবহ, শ্রুতিমধুর নাম রাখার জন্য কি-না গুরুত্বারোপ করেছেন। মুসলমানিত্ব ফুটে ওঠে এমন নামকরণে যত্নবান হতে কতই না জোর তাগিদ দেয়া হয়েছে সর্বজনীন ইসলামে। উপরন্তু মাতা-পিতা, অভিভাবকদের প্রতি অতীব তাৎপর্যময় গুরু দায়িত্ব হলো সন্তানের ভালো অর্থপূর্ণ ভারি মিষ্টি নাম রাখা।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, 'সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! মাতা-পিতার হক কি, তাতো আমরা জানলাম। কিন্তু মাতা-পিতার ওপর সন্তানের হক কি? রাসুল (সাঃ) বললেন, 'মাতা-পিতা সন্তানের সুন্দর নাম রাখবে এবং তাকে সুশিক্ষা দিবে। ( আবু দাউদ: ৪৮৭০ )। অন্য এক হাদিসে হজরত আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, 'রাসুল (সাঃ) বলেছেন, 'কিয়ামতের দিন তোমাদের ডাকা হবে তোমাদের স্ব-স্ব নাম ও পিতার নাম সহকারে। অতএব তোমরা ভাল নাম রাখবে।' (আবু দাউদ: ৪৮৬৪ )। প্রিয়নবী (সাঃ) আরও বলেন, 'কারো সন্তান হলে তার ভালো নাম রাখবে। তাকে উত্তম শিক্ষা দিবে। প্রাপ্ত বয়সে বিবাহ দিবে। (মেশকাত: ১৪৮৯)। তাই অভিভাবকরা এ গুরুদায়িত্ব পালনে সামান্যতম গাফলতি করলে কেয়ামত দিবসে তাদেরকে এর জবাবদিহি করতে হবে।

সর্বাপেক্ষা সুন্দর নাম : সর্বাপেক্ষা সুন্দর, পছন্দনীয় নাম হলো, আম্বিয়া, আউলিয়া বুজুর্গানে দীনের নামে সদ্যজাত শিশুর নামকরণ করা। তাহলে ঐ পুণ্যাত্মা মহামানবদের আলোকজ্বল আদর্শমালা শিশু জীবনকেও ছুঁয়ে যাবে। আলোয় উদ্ভাসিত হবে শিশুজীবন। রাসুল (সাঃ) বলেন, 'তোমরা নবীদের নামে নামকরণ করো, ফেরেশতাদের নামে নামকরণ করো।' (আদাবুল মুফরাদ: ৮৪৩)। সাহাবায়ে কেরাম সন্তানদের নাম নবী ও নেক্কার বুজুর্গদের নামে রাখতে পছন্দ করতেন।

উল্লেখ্য যে, কুরআন-হাদিসের বিপুল বর্ণনা থেকে সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে, মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে সর্বাধিক ফজিলতপূর্ণ, বরকতময় নাম হলো, 'আবদুল্লাহ', আবদুর রহমান'। যখন বনী ইসরাইলের লোকেরা মহীয়সী নারী হজরত মারয়াম (আঃ)- এর ওপর মিথ্যা ব্যভিচারের অপবাদ দিলো, তখন হজরত ঈসা (আঃ) দোলনার তুলতুলে শয্যা থেকে ঘোষণা করলেন, 'ইন্নি আবদুল্লাহ' আমি তো আল্লাহর বান্দা। এ মর্মে প্রিয় নবীজি (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, 'আল্লাহ তায়ালার কাছে সর্বাধিক সুন্দর ও প্রিয় নাম হলো, আবদুল্লাহ, আবদুর রহমান।' (সহিহ মুসলিম: ৩৯৭৫)। বিশ্ববরেণ্য হাফেজুল হাদিস আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রাহ.) 'আল-ইসরায়' লিখেছেন, 'ইসলামের স্বর্ণযুগে আরবে প্রায় ৪৩৭ জন ব্যক্তির নাম আবদুল্লাহ ছিলো। এ নামের সুফলে সবাই ইসলামে দীক্ষিত হয়েছিলেন। আমাদের চারপাশ দৃষ্টি মেললে এ নামের অনেক লোকই খুঁজে পাই আমরা। হাদিসে এসেছে, 'তোমাদের সন্তানদের নাম মুহাম্মদ রাখলে তার মুখমণ্ডলে প্রহার করবে না। তাকে বঞ্চিত করবে না। তার প্রতি বিরক্তও হবে না। মুহাম্মদ নাম বড়ই বরকতময়। সে ঘর বরকতময়, যে ঘরে মুহাম্মদ নামের লোক আছে। সে মজলিস বরকতময়, যে মজলিসে মুহাম্মদ নামের মানুষ আছে।' (কানজুল উম্মাল, কিতাবুল আদব)।

সর্বাধিক ঘৃণ্য নাম : কিছু কিছু নাম মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে খুবই ঘৃণিত। সেগুলো পরিহারের নির্দেশ দিয়েছেন প্রিয়নবী (সাঃ)। বস্তুত এ নিষেধাজ্ঞা বাজে ও খারাপ অর্থবোধক নামের ক্ষেত্রে ছিলো। হারব (যুদ্ধ), মুররা (তিক্ত), আছরাম (কর্তনকারী) ইত্যাদি বাজে নামের কথা হাদিস শরিফে এসেছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) আসিয়া (বিদ্রোহী) নাম পরিবর্তন করে বললেন, 'তোমার নাম জামিলা (সুন্দরী) রাখো।' (আদাবুল মুফরাদ: ৮২৭)। সম্প্রতি বাংলা, সংস্কৃতি, হিন্দি, ইংরেজি শব্দের সঙ্গে আরবি, ফারসি শব্দযোগে মুক্তচিন্তার দাবীদার প্রগতিবাদীরা বিভিন্ন নাম যেমন: লেলিন আহমদ, ঝিনুক মাহমুদ, উর্মী রহমান, জুয়েল হাসান, এলস মুহাম্মদ ইত্যাদি নাম রেখে গর্ববোধ করে থাকেন। ভেবে দেখার বিষয়, আদৌ এসব নাম ইসলামি আদর্শানুকূল কি না? এভাবে একে একে অমুসলিম কৃষ্টি-কালচার বরণ করতে থাকলে একদিন হয়তো মুসলিম আদর্শ-স্বকীয়তাই বিলীন হয়ে যাবে বিশ্বচরাচর থেকে। আজকাল সংক্ষেপ নামের প্রবণতাও বেড়ে যাচ্ছে। অনেক সন্তানের আসল নামটি রাখে চমৎকার অর্থব্যঞ্জক। আর ডাকনামটি রাখে অর্থহীন ও সংক্ষিপ্ত। আসল নাম রেজাউল করিম কিন্তু ডাকনাম সেন্টু। অধিকন্তু, এমন নাম যা দ্বারা কাফের মুসলিমের মাঝে পার্থক্য ফুটে ওঠে না কিংবা সরাসরি অমুসলিম জাতির প্রতি ইঙ্গিতবাহী হয়, মুসলিম উম্মাহর জন্য কখনও কাম্য নয় সেসব নাম রাখা। চাই অর্থ যতই সুন্দর হোক। হাদিস শরিফে এসেছে, 'যে ব্যক্তি যে জাতির অনুকরণ করবে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত গণ্য হবে।' (মুসনাদে আহমদ: ২/৫০, আবু দাউদ: ৪০৩১)।

ভালো নামের সুফল : ভালো ও সুন্দরকে কে না ভালোবাসে! মনে কার না ঢেউ তোলে! নামটাও যদি নিদারুণ অর্থপূর্ণ হয়, তাহলে যেনো অসম্ভব কিছু লুফে নেয়া। সুন্দর নাম তো সুন্দর জীবনেরই শুরু। ইমাম মালেক (রাহ.) সূত্রে বর্ণিত রাসুল আকরাম (সাঃ) একটি দুগ্ধবতী ছাগলের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, 'কে দোহন করবে এটাকে?' একজন ওঠে দাঁড়ালো এবং বললো, 'আমি'। প্রিয়নবী (সাঃ) বললেন, 'তোমার নাম কি? সে বললো, 'হারব' (যুদ্ধ) তিনি তাকে বসতে বললেন। পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, এটাকে কে দোহন করবে? অন্য একজন বললো, আমি। রাসুল (সাঃ) বললেন, তোমার নাম কি? সে উত্তরে বললো, মুররা (তিক্ত)। তাকেও বসিয়ে দিলেন। এরপর আবারও বললেন, 'কে এটাকে দোহন করবে? অপর একজন দাঁড়িয়ে বললো, আমি দোহন করবো। তিনি বললেন, তোমার নাম কি? সে বললো, ইয়াঈশ (সুখি জীবন-যাপনকারী)। রাসুল (সাঃ) তাকে বললেন, 'তুমি দোহন করো।' (মুয়াত্তা ইমাম মালেক, কিতাবুল আদব)। বলা বাহুল্য, চমৎকার অর্থপূর্ণ নামের বরকতে একজন নববি-নির্দেশ পালনের বিরল সৌভাগ্য অর্জন করলেন। অন্য দুজন বঞ্চিত হলেন অর্থ সুন্দর না হওয়ার কারণে।

হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবি (রাহ.)- এর মজলিসে একবার জনৈক ব্যক্তি তার রুগ্ন সন্তানকে নিয়ে এলো। বললো, 'হুজুর! ছেলেটি চিররোগা। কখনও সুস্থতার মুখ দেখেনি। একটু দোয়া করে দিন, যেনো আল্লাহ দ্রুত সুস্থতা দান করেন।' থানবি (রাহ.) ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বললেন, 'এর নাম কি? লোকটি কালিমুল্লাহ (যার অর্থ জখমি, আঘাতপ্রাপ্ত) বললো। থানবি (রাঃ) মাথা নাড়ালেন, যেনো কিছু খোঁজে পেয়েছেন। বললেন, 'নাম সালিমুল্লাহ (সুস্থ) রাখো। ইনশা আল্লাহ সুস্থ হয়ে যাবে।' সত্যিই নাম পরিবর্তনের পর থেকে দ্রুত তার স্বাস্থের পরিবর্তন ঘটে এবং ব্যাধিমুক্ত সু-স্বাস্থের অধিকারী হয়। ব্যক্তির নাম তাঁর স্বভাব চরিত্রের উপর ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

মন্দ নামের কুফল : মন্দ নামের পরিণতি ভয়াবহ বলেই তো কোনো মুসলমান বরং হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান পর্যন্ত কেউই আপন সন্তানের নাম শয়তান, ফেরআউন, হামান, কারুন, শাদ্দাদ, নমরুদ, আবু জাহেল, আবু লাহাব রাখে না বা রাখতে উৎসাহ বোধ করে না। প্রখ্যাত তাবেই সাইদ বিন মুসাইয়্যাব (রাহ.) স্বীয় পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তারা দাদা হুজুর (সাঃ)- এর দরবারে উপস্থিত হলে রাসুল (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, 'তোমার নাম কি?' জবাবে তিনি বললেন, 'আমার নাম হুজন (বিষণ্ণতা)।' প্রিয়নবী (সাঃ) বললেন, 'তোমার পরিবর্তন করে সাহল (সুখি) রাখো।' তিনি বললেন, ' ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি তো আমার পিতার নাম পরিবর্তন করতে পারি না। সাইদ ইবনে মুসাইয়্যাব বলেন, 'এরপর থেকে বিষণ্ণতা আমাদের লেগেই থাকতো। (তাসমিয়াতুল মাওলুদ: ১/১৮)।

মুহাম্মদ ইবনে আমর ইবনে আতা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, 'একদা যায়নব বিনত আবূ সালামা (রাঃ) তাকে জিজ্ঞাসা করেন, তুমি তোমার মেয়ের নাম কি রেখেছে? তিনি বলেন, আমি তার নাম রেখেছি বাররা। তখন হজরত জায়নব (রাঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) এ ধরনের নাম রাখতে নিষেধ করেছেন। আগে আমার নাম ছিল বাররা। তখন প্রিয়নবী (সাঃ) বলেন, তোমরা নিজেদের প্রশংসা করো না, আল্লাহ্ তোমাদের মধ্যে কে ভাল তা খুবই জানেন। তখন কেউ জিজ্ঞাসা করে, তাহলে আমরা তার কি নাম রাখবো? তিনি বলেন, তোমরা তার নাম রাখ জায়নব। (আবু দাউদ: ৪৮৬৯)। মন্দ নামের একটি জ্বলন্ত পরিণতি হলো, হাসি সর্বোত্তম উপহার, যাতে পয়সা খরচ হয় না। যাদের নাম অসুন্দর, তারা এই উপহার থেকে হয় বঞ্চিত। খুলে বলতে গেলে, সুন্দর অর্থযুক্ত ইসলামি ভাবধারা সম্পন্ন শ্রুতিমধুর নাম না হলে লোকেরা পরম মমতাভরে আদুরে স্বরে ডাকে না। স্বভাবতই একটু-আধটু বিরক্তিস্বরে ডাকে। খোদ প্রিয়নবী সম্পর্কে আছে, ভালো নাম শুনলে তার মুখে হাসি ফুটে ওঠতো। মন্দ নামে কপোল মুবারক বিষাদে মলিন হয়ে যেতো।

নামের বিকৃতি সাধন : কারো নাম অসুন্দর খারাপ অর্থবোধক হলে, সেটা বদলিয়ে সুন্দর অর্থপূর্ণ নাম রাখা মুস্তাহাব। এটা ফিকাহ শাস্তবিদদের অভিমত। উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়শা (রাঃ)- এর মতে সুন্নাত। আর কুফরি ধরণের নাম হলে পরিবর্তন করা ফরজ। আমাদের প্রিয়নবী (সাঃ) কারো মন্দ নাম দেখলে বদলে দিতেন। কিন্তু ভালো নামকে ব্যঙ্গ-বিকৃতি করে ডাকা কিংবা আংশিক নামে ডাকা মারাত্মক গুনাহ। তিক্ত হলেও সত্য, আমাদের সমাজে এ পাপেরই মহামারী দেখা দিয়েছে। অনেকে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় এহসানুল হককে এহচানুল, আইয়ুব আলীকে আইবালী, আবদুর রহমানকে রেমন, ইবরাহিমকে ইবরাহিম্যা, আশরাফুলকে ইসলামকে আশরাফুল বলে ডাকে বা ডাকতে শোনে। তবুও শোধরাতে সচেষ্ট হয় না। রাসুল (সাঃ) চরম হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। বলেছেন, 'যে ব্যক্তি কাউকে তার নাম ছাড়া অন্য কিছু বলে ডাকে, ফেরেশতা তার প্রতি অভিশাপ করেন। (কানজুল উম্মাল, কিতাবুল আদব)। সুরা হুজুরতের ১১নং আয়াতে এ সত্যেরই প্রতিধ্বনি করা হয়েছে। মহান রাব্বুল আলামিন বলেন, 'তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। ঈমানের পর মন্দ নামে ডাকা গর্হিত কাজ। যারা এ ধরণের আচরণ হতে নিবৃত হয় না, তারাই জালিম।' অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা তার সুন্দরতমণ্ডসৌকর্য মণ্ডিত নাম সমষ্টিকে যারা বিকৃত করে, তাদেরকে বর্জনের নির্দেশ দিয়েছেন। এ সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, 'উত্তম নামসমূহ আল্লাহরই। তোমরা তাকে সে নামেই ডাকো। আর যারা নাম বিকৃত করে, তাদেরকে বর্জন করো। তাদের কৃতকর্মের ফল অতিশীঘ্র তাদের দেয়া হবে। (সুরা আরাফ: ১৮০)। তাই নাম বিকৃতির গুনাহ থেকে নিজেরা বাঁচতে হবে এবং বাঁচাতে হবে সমাজ ও জাতিকে।

নাম হবে আরবিতে : রাসুল (সাঃ) আমোঘ কণ্ঠে ঘোষণা করেছেন, 'আমি আরবদের ভালোবাসি (আরবিভাষী)। কারণ আমি আরবি, কুরআনের ভাষা আরবি, জান্নাতির ভাষা আরবি। (তাবরানি ১১/১৮৫)। উপরন্তু কুরআন-হাদিস মন্থন করে আল্লাহ ও তার রাসুল (সাঃ)- এর যে সব নামের উল্লেখ পাওয়া যায় সবগুলোই আরবি। অতএব, সহজেই অনুমেয় যে, মহান রাব্বুল আলামিন তার এবং তদীয় নবীর নাম আরবি রেখে বিশ্ব মুসলিমকে এ দীক্ষাই দিয়েছেন, মুসলমান যে দেশের অধিবাসী হোক না কেনো বা যে ভাষীই হোক, তার নামকরণ আরবি হওয়াই কাম্য। সুতরাং আরবি নাম অনুকরণ করে আল্লাহর প্রিয়ভাজন হওয়া প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অপরিহার্য নয় কি? কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আজকাল নাম বিলুপ্তি পথে। বাংলা ইংরেজি নামের কলেরা শুরু হয়েছে এখন। একাণ্ডরেখা, আখি-রাখি, পপি-পলি, ডাব্লু-ডিপজল, বধুমিয়া-শুকুরমিয়া ইত্যাদি নাম দিন দিন গজিয়ে ওঠছে। নামের মাহাত্ম্য, মাধুর্য ক্রমে ক্রমে হারিয়ে যাচ্ছে।

মজার ব্যাপার হলো, অনেকে আরবি নাম রাখেন বটে, কিন্তু নামটার অর্থ কি? ছেলে বা মেয়ের জন্যে এই নামটা যুৎসই হবে কি না, বিজ্ঞ আলেমদের শরণাপন্ন হওয়া ছাড়াই রেখে দেন। ফলে নাম শুনলে অবাক হতে হয়। একজন তার ছেলের নাম রেখেছেন মাউন মাহিন। জনৈক বিজ্ঞ আলেম রসাত্মক স্বরে বললেন, কি মিয়া! যে পানি দিয়ে ওকে জন্ম দিয়েছেন, ওই পানি দিয়েই আবার নাম রেখেছেন? (মাউন মাহিন শব্দের অর্থ বীর্য)। আরেকজন তার মেয়ের নাম রেখেছেন শাহরিয়্যাহ যার অর্থ মাসিক। মাসিক শব্দটি নারীদের ঋতুর প্রতি ইঙ্গিতবহ। অনেকের নামে বৈচিত্র্য সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এরূপ করে থাকেন। অর্থ বুঝলে হয়তো এ রকম নাম কিছুতেই সে নিজের সন্তানের জন্য পছন্দ করতেন না। এ ধরণের ত্রুটি থেকেও সমাজকে সযত্নে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সকলের।

লেখক: প্রিন্সিপাল, শ্যামপুর কদমতলী রাজউক মাদরাসা ঢাকা-১২০৪

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়