বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ১০ মে ২০২৪, ০০:০০

যাকাতের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয় মাসায়েল

মুফতি আহমদ আবদুল্লাহ
যাকাতের গুরুত্ব ও  প্রয়োজনীয় মাসায়েল

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে ঋনের যাকাত :

প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ মূলত তার নিজের। কাজেই যাকাতযোগ্য সম্পদ থেকে এই ঋন বিয়োগ হবে না। সুতরাং প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে ঋন নিলে সে অর্থেরও যাকাত আদায় করতে হবে।

কোম্পানীর রিজার্ভ ফান্ডের যাকাত :

প্রত্যেক কোম্পানী তাদের মুলধনের একটি নির্ধারিত পার্সেন্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংকে রিজার্ভ ফান্ড হিসাবে সংরক্ষিত রাখে। এটাকার ও যাকাত আদায় করতে হবে। যে সকল শেয়ার হোল্ডার ডিভিডেন্ড এর উদ্দিশ্য শেয়ার ক্রয় করেন তারা কোম্পানীর যাকাতযোগ্য সম্পদ হিসাবের সময় রিজার্ভ ফান্ডেরও হিসাব করবেন। এবং তার শেয়ারের আনুপাতিক হারে (অন্যান্য যাকাতযোগ্য সম্পদ সহ) উক্ত রিজার্ভ ফান্ডেরও যাকাত আদায় করবেন।

বীমা বা ইন্সুরেন্স এর যাকাত :

বীমা বা ইন্সুরেন্সের যে কোন স্কীমে প্রদেয় মুলটাকা যাকাতযোগ্য সম্পদ হিসাবে বিবেচিত হবে। অর্থাৎ উক্ত টাকা এককভাবে বা অন্যান্য যাকাতযোগ্য সম্পদের সাথে মিলে যদি নেসাব পরিমান হয় তবে বছরান্তে তার উপর যাকাত ফরজ হবে। এখানে শুধু যাকাতের হুকুম বলা হল। বীমা করার শরঈ হুকুম সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি।

ব্যাংক থেকে পাওয়া সূদের যাকাত :

ব্যাংক থেকে বা অন্য যে কোন ভাবে পাওয়া সূদের টাকার উপর যাকাত আসবে না। সূদী চুক্তিকে আবদ্ধ হওয়া ও সূদী টাকা গ্রহন করা উভয়টিই হারাম । উক্ত টাকা কোন ভাবে হস্তগত হয়ে গেলে মালিককে ফিরিয়ে দেওয়ার সুযোগ থাকলে মালিককে ফিরিয়ে দিবে। অন্যথায় সাওয়াবের নিয়ত ব্যাতীত পুরো টাকা সদকাহ করে দিবে।

বায়নানামার টাকার যাকাত :

জমি, ফ্ল্যাট, বাড়ী ইত্যাদি ক্রয় করার পর বায়না হিসাবে যে আংশিক টাকা দেওয়া হয় তার যাকাত বিক্রেতা আদায় করবে।

ভাড়া বাবদ অগ্রিম প্রদেয় টাকার যাকাত :

দীর্ঘ মেয়াদী ইজারা বা ভাড়ার ভিত্তিতে অগ্রিম যে টাকা দেওয়া হয় তার যাকাত টাকা গ্রহনকারী আদায় করবে।

সিকিউরিটি ও গ্যারান্টি মানির যাকাত :

বর্তমানে বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর জন্য জামানত বা সিকিউরিটি বাবদ কিছু টাকা দিতে হয়। নির্দিষ্ট মেয়াদান্তে প্রতিষ্ঠান তাকে উক্ত টাকা ফেরত দেয়। উক্ত টাকার যাকাত টাকা প্রদানকারী আদায় করবে। গ্রহনকারী আদায় করবে না।অনুরূপভাবে ব্যাংকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সিকিউরিটি হিসাসে গ্যারান্টি মানি প্রদান করতে হয়। উক্ত টাকা একাউন্ট হোল্ডারের মালিকানাধীন থাকে। নির্দিষ্ট মেয়াদান্তে সে উক্ত টাকা উত্তোলন করতে পারে। এটাকাও যাকাতযোগ্য। যাকাতের হিসাবে সময় অন্যান্য সম্পাদের সাথে এটাকারও হিসাব করে যাকাত আদায় করবে।

ব্যাংক একাউন্টে গচ্ছিত টাকার যাকাত :

ব্যাংকের ব্যক্তি মালিকানাধীন সকল প্রকার একাউন্টের গচ্ছিত টাকা যাকাতযোগ্য।চাই কারেন্ট একাউন্ট হোক বা সেভিংস একাউন্ট হোক বা ফিক্সড ডিপোজিট হোক বা দীর্ঘমেয়াদী ডিপোজিট হোক বা স্যালারী একাউন্ট হোক, সর্বপ্রকার একাউন্টের যাকাত আদায় করতে হবে যদি সে নেসাবের মালিক হয়। কাজেই যেদিন তার যাকাতের অর্থ বছর পূর্ণ হবে ঐদিন সে সকল প্রকার একাউন্টের ব্যাংক স্ট্যাটমেন্ট দেখে গচ্ছিত টাকা গুলোর যাকাত হিসাব করে আদায় করবে।

ইম্পোর্টকৃত পন্যের যাকাত :

ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন পণ্য ইম্পোর্ট করে থাকে। এক্ষেত্রে যে সব পন্য তাদের মালিকানায় চলে এসেছে তার বাজার দরের উপর যাকাত আদায় করবে যদিও উক্ত পন্য রাস্তায় থাকার কারনে তার কবজায় না আসে। আর যদি পন্য তার মালিকানায় না আসে বরং টাকা ইনভেষ্ট করেছে কিন্তু এখনো পন্যের ক্রয়চুক্তি হয়নি তবে শুধু ইনভেষ্টকৃত টাকার যাকাত আদায় করবে।

যাকাত হিসেব করার পদ্ধতি :

১. যে সম্পদে যাকাত আসে সে সম্পদের ৪০ ভাগের ১ ভাগ যাকাত আদায় করা ফরজ। মূল্যের আকারে নগদ টাকা দ্বারা বা তা দ্বারা কোনো আসবাবপত্র ক্রয় করে তা দ্বারাও যাকাত দেয়া যায়।

২. যাকাতের ক্ষেত্রে চন্দ্র মাসের হিসাবে বছর ধরা হবে। যখনই কেউ নেছাব পরিমান সম্পদের মালিক হবে তখন থেকেই যাকাতের বছর শুরু ধরতে হবে।

৩. সোনা রুপার মধ্যে যদি ব্রঞ্জ, রাং, দস্তা, তামা ইত্যাদি কোনো কিছুর মিশ্রণ থাকে আর সে মিশ্রণ সোনা রুপার চেয়ে কম হয়, তাহলে পুরোটাকেই সোনা রুপা ধরে যাকাতের হিসাব করা হবে-মিশ্রিত দ্রব্যের কোনো ধর্তব্য হবে না। আর যদি মিশ্রিত দ্রব্য সোনা রুপার চেয়ে অধিক হয়, তাহলে সেটাকে আর সোনা রুপা ধরা হবে না। বরং ঐ মিশ্রিত দ্রব্যই ধরা হবে।

৪. যাকাত হিসাব করার সময় অর্থাৎ, ওয়াজিব হওয়ার সময় সোনা, রুপা, ব্যবসায়িক পণ্য ইত্যাদির মূল্য ধরতে হবে তখনকার ওয়াজিব হওয়ার সময়কার বাজার দর হিসাবে এবং সোনা রুপা ইত্যাদি যে স্থানে রয়েছে সে স্থানের দাম ধরতে হবে।

৫. শেয়ারের মূল্য ধরার ক্ষেত্রে মাসয়ালা হল-যারা কোম্পানীর লভ্যাংশ অর্জন করার উদ্দেশ্যে নয় বরং শেয়ার ক্রয় করেছেন শেয়ার বেচা-কেনা করে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্য, তারা শেয়ারের বাজার দর ধরে যাকাত হিসাব করবেন। আর শেয়ার ক্রয় করার সময় যদি মূল উদ্দেশ্য থাকে কোম্পানী থেকে লভ্যাংশ অর্জন করা এবং সাথে সাথে এ উদ্দেশ্যও থাকে যে, শেয়ারের ভাল দর বাড়লে বিক্রিয় করে দিব, তাহলে যাকাত হিসাব করার সময় শেয়ারের বাজার দরের যে অংশ যাকাতযোগ্য সম্পদের বিপরীতে আছে তার উপর যাকাত আসবে, অবশিষ্ট অংশের উপর যাকাত আসবে না। উদাহরন স্বরূপ শেয়ারের মার্কেট ভ্যালু (বাজার দর) ১০০ টাকা, তার মধ্যে ৬০ ভাগ কোম্পানীর বিল্ডিং, মেশিনারিজ ইত্যাদির বিপরীতে, আর ৪০ ভাগ কোম্পানীর নগদ অর্থ, কাঁচামাল ও তৈরী মালের বিপরীতে, তাহলে যাকাতের হিসাব করার সময় শেয়ারের বাজার দর অর্থাৎ, ১০০ টাকার ৬০ ভাগ বাদ যাবে। কেননা সেটা এমন অর্থ/সম্পদের বিপরীতে যার উপর যাকাত আসে না । অবশিষ্ট ৪০ ভাগের উপর যাকাত আসবে।

৬. যাকাতদাতার যে পরিমান ঋণ আছে সে পরিমাণ অর্থ বাদ দিয়ে বাকিটার যাকাত হিসাব করবে। ঋণ পরিমাণ অর্থ বাদ দিয়ে যদি যাকাতের নেসাব পূর্ণ না হয় তাহলে যাকাত ফরজ হবে না। তবে হযরত মাওলানা মুফতী তাকী উছমানী সাহেব বলেছেন, যে লোন নিয়ে বাড়ি করা হয় বা যে লোন নিয়ে মিল ফ্যাক্টরী তৈরী করা হয় বা মিল ফ্যক্টরীর মেশনারীজ ক্রয় করা হয়, এমনিভাবে যেসব লোন নিয়ে এমন কাজে নিয়োগ করা হয় যার মূল্যের উপর যাকাত আসে না- যেমন: বাড়ি ও ফ্যক্টরী বা ফ্যক্টরীর মেশিনারিজের মূল্যের উপর যাকাত আসে না। এসব লোন যাকাতের জন্য বাধা নয় অর্থাৎ, এসব লোনের পরিমান অর্থ যাকাত থেকে বাদ দেয়া যাবে না। হ্যাঁ, যে লোন নিয়ে এমন কাজে নিয়োগ করা হয় যার উপর যাকাত আসে। যেমন: লোন নিয়ে ফ্যাক্টরীর কাচামাল ক্রয়, এরূপ ক্ষেত্রে এ লোন পরিমাণ অর্থ যাকাতের হিসাব থেকে বাদ যাবে। মুফতী তাকী উছমানী সাহেব তার এ মাসলাটিকে শক্তিশালী যুক্তি দ্বারা প্রমাণিত করেছেন, অতএব তার এ মতটি গ্রহন করার মধ্যেই সতর্কতা রয়েছে।

৭। কারো কাছে যাকাতদাতার টাকা পাওনা থাকলে সে পাওনা টাকার যাকাত দিতে হবে।

পাওনা তিন প্রকার :

ক. কাউকে নগদ টাকা ঋণ দিয়েছে কিংবা ব্যবসায়ের পণ্য বিক্রি করেছে এবং তার মূল্য বাকী রয়েছে। এরূপ পাওনা কয়েক বছর পর উসুল হলে যদি পাওনা টাকা এত পরিমান হয় যাতে যাকাত ফরয হয়, তাহলে অতীত বছরগুলোর যাকাত দিতে হবে। যদি একত্রে উসূল না হয়-ভেঙ্গে ভেঙ্গে উসুল হয়, তাহলে ১১ তোলা রূপার মূল্য পরিমাণ হলে যাকাত দিতে হবে। এর চেয়ে কম পরিমাণ উসূল হলে তার যাকাত ওয়াজিব হবে না-তবে অল্প অল্প করে সেই পরিমাণে পৌছে গেলে তখন ওয়াজিব হবে। আর যখনই ওয়াজিব হবে তখন অতীত সকল বছরের যাকাত দিতে হবে। আর যদি এরুপ পাওনা টাকা নেসাবের চেয়ে কম হয় তাহলে তাতে যাকাত ওয়াজেব হবে না।

খ. নগদ টাকা ঋণ দেয়ার কারণে বা ব্যবসায়ের পণ্য বাকিতে বিক্রি করার কারণে পাওনা নয় বরং ঘরের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, কাপড়-চোপড়, চাষাবাদের গরূ ইত্যাদি বিক্রয় করেছে এবং তার মূল্য পাওনা রয়েছে, এরূপ পাওনা যদি নেছাব পরিমান হয় এবং কয়েক বছর পর উসূল হয় তাহলে ঐ কয়েক বতসরের যাকাত দিতে হবে। আর যদি ভেঙ্গে ভেঙ্গে উসুল হয় তাহলে যতক্ষণ পর্যন্ত সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্য পরিমাণ না হবে ততক্ষন যাকাত ওয়াজিব হবে না। যখন উক্ত পরিমাণ উসূল হবে তখন বিগত বতসর সমূহের যাকাত দিতে হবে।

গ. মহরের টাকা, পুরস্কারের টাকা, খালা তালাকের টাকা, বেতনের টাকা ইত্যাদি পাওনা থাকলে এরূপ পাওনা উসূল হওয়ার পূর্বে যাকাত ওয়াজিব হয় না। উসূল হওয়ার পর এক বছির মজুদ থাকলে তখন থেকে তার যাকাতের হিসাব শুরু হবে। পাওনা টাকার যাকাত সম্পর্কে উপরোল্লিখিত বিবরণ শুধু তখনই প্রযোজ্য হবে যখন এই টাকা ব্যতীত তার নিকট যাকাতযোগ্য অন্য কোনো অর্থ বা সম্পদ না থাকে। আর অন্য কোনো অর্থ বা সম্পদ থাকলে তার মাসয়ালা উলামায়ে কেরাম থেকে জেনে নিবেন।

৮. যে ঋণ ফেরত পাওয়ার আশা নেই, এরূপ ঋণের উপর যাকাত ফরয হয় না। তবে পেলে বিগত সমস্ত বছরের যাকাত দিতে হবে।

৯. যৌথ কারবারে অর্থ নিয়োজিত থাকলে যৌথভাবে পূর্ণ অর্থের যাকাত হিসাব করা হবে না বরং প্রত্যেকের অংশের আলাদা আলাদা হিসাব হবে।

১০. যেসব সোনা রূপার অলংকার স্ত্রীর মালিকানায় দিয়ে দেয়া হয় সেটাকে স্বামীর সম্পত্তি ধরে হিসাব করা হবে না বরং সেটা স্ত্রীর সম্পত্তি। আর যেসব অলংকার স্ত্রীকে শুধু ব্যবহার করতে দেয়া হয়, মালিক থাকে স্বামী, সেটা স্বামীর সম্পত্তির মধ্যে ধরে হিসাব করা হবে। আর যেগুলোর মালিকানা অস্পষ্ট রয়েছে তা স্পষ্ট করে নেয়া উচিত। যেসব অলংকার স্ত্রীর নিজস্ব সম্পদ থাকে তৈরী বা যেগুলো বাপের বাড়ি থেকে অর্জন করে, সেগুলো স্ত্রীর সম্পদ বলে গণ্য হবে। মেয়েকে যে অলংকার দেয়া হয় সেটার ক্ষেত্রেও মেয়েকে মালিক বানিয়ে দেয়া হলে সেটার মালিক সে। আর শুধু ব্যবহারের উদ্দেশ্যে দেয়া হলে মেয়ে তার মালিক নয়। নাবালেগা মেয়েদের বিয়ে-শাদি উপলক্ষে তাদের নামে যে অলংকার বানিয়ে রাখা হয় বা নাবালেগা ছেলে কিংবা মেয়ের বিবাহ শাদীতে ব্যয়ের লক্ষ্যে তাদের নামে ব্যাংকে বা ব্যবসায় যে টাকা লাগানো হয় সেটার মালিক তারা। অতএব সেগুলো পিতা-মাতার সম্পত্তি বলে গণ্য হবে না এবং পিতা-মাতার যাকাতের হিসাবে সেগুলো ধরা হবে না। আর বালেগ সন্তানের নামে শুধু অলংকার তৈরী করে রাখলে বা টাকা লাগালেই তারা মালিক হয়ে যায় না যতক্ষণ না সেটা সে সন্তানের দখলে হয়। তাদের দখলে দেয়া হলে তারা মালিক, অন্যথায় সেটার মালিক পিতা-মাতা।

১১. হিসাবের চেয়ে কিছু বেশি যাকাত দিয়ে দেয়া উত্তম। যাতে কোনো রূপ কম হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে। প্রকৃতপক্ষে সেটুকু যাকাত না হলেও তাতে দানের সওয়াব তো হবেই।

যাকাত কাকে দিবেন :

যাকাত হল কেবল ফকির, মিসকীন, যাকাত আদায় কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদে হক এবং তা দাস-মুক্তির জন্যে-ঋণ গ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের জন্যে এবং মুসাফিরদের জন্যে, এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা: ৬০)। মোট ৮ ধরণের ব্যক্তিকে যাকাত দেয়ার কথা কুরআনে বর্ণিত হয়েছে।

১. গরীব। যার সম্পদ আছে কিন্তু নেসাব পরিমাণ মালের মালিক নয়।

২. মিসকিন। যার একদমই কোন সম্পদ নেই।

৩. ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় কোষাগারের জন্য শরীয়ত নির্দিষ্ট যাকাত আদায়কারী আমেল। এটা ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধান দ্বারা নিযুক্ত হতে হবে। নিজে নিজে মনে করে নিলে হবে না।

৪. নব মুসলিমদের ইসলামের প্রতি মোহাব্বত বাড়ানোর জন্য উৎসাহমূলক যাকাত প্রদান।

এ বিধানটি রহিত হয়ে গেছে। তাই বর্তমানে কোন ধনী নওমুসলিমকে যাকাত প্রদান জায়েজ নয়।

৫. দাসমুক্তির জন্য। যেহেতু বর্তমানে দাসপ্রথা নেই। তাই এ খাতটি বাকি নেই।

৬. ঋণগ্রস্তের জন্য।

৭. ফী সাবিলিল্লাহ। তথা আল্লাহর রাস্তায় থাকা ব্যক্তিদের জন্য। এখন প্রশ্ন হল আল্লাহর রাস্তায় কারা আছেন? ফুক্বাহায়ে কেরাম বলেন এতে রয়েছেন, জিহাদরত মুজাহিদরা। তাদের জিহাদের অস্ত্র ও পাথেয় ক্রয় করার জন্য যাকাতের টাকা গ্রহণ করবে। হজ্বের সফরে থাকা দারিদ্র ব্যক্তির জন্য। ইলমে দ্বীন অর্জনকারী দারিদ্র ব্যক্তির জন্য।

৮. সফররত ব্যক্তিকে। যার টাকা পয়সা আছে বাড়িতে। কোন সফর অবস্থায় অসহায়। তাকে যাকাতের টাকা দেয়া জায়েজ।

উপরোক্ত ক্যাটাগরিতে যাকাত আদায় করলেই কেবল যাকাত আদায় হবে। অন্য কাউকে যাকাত দিলে তা আদায় হবে না। ফুক্বাহায়ে কেরাম যাকাত আদায়ের জন্য একটি শর্তারোপ করেছেন এই যে, যাকাতের টাকার মালিক বানিয়ে দিতে হবে দানকৃত ব্যক্তিকে। যদি মালিক বানিয়ে দেয়া না হয়, তাহলে যাকাত আদায় হবে না।

যেমন কাউকে কোন বস্তু ভোগ দখলের অধিকার দিয়ে নিয়ত করল যাকাতের, তাহলে এর দ্বারা যাকাত আদায় হবে না। সেই হিসেবে কোন প্রতিষ্ঠান, মাদরাসা, মসজিদে যাকাতের টাকা দেয়া জায়েজ নয়, যদিও তাতে গরীব মানুষ থাকে, নামায পড়ে, পড়াশোনা করে। তবে প্রতিষ্ঠানের গরীবদের, মাদরাসা গরীব ছাত্রদের, মসজিদের গরীব মুসল্লিদের যাকাত দিলে তাতে মালিক বানিয়ে দেয়ার বিষয়টি থাকায় তা জায়েজ হবে। (চলবে)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়