শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

যাকাতের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয় মাসায়েল

মুফতি আহমদ আবদুল্লাহ
যাকাতের গুরুত্ব ও  প্রয়োজনীয় মাসায়েল

যাকাত শব্দটি আরবি। এর আভিধানিক অর্থ হলো পবিত্রতা, পরিশুদ্ধি, উন্নয়ন সাধন, বৃদ্ধি লাভ, আধিক্য ও প্রশংসা। শরীয়তের পরিভাষায় দরিদ্র ও অভাবীদেরকে ধনীদের বছর শেষে দেওয়া নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের স্বত্ব অর্পণ করাকে যাকাত বলা হয়। যাকাত কেবল ইসলামি অর্থ ব্যবস্থার একটি প্রধান ভিত্তি নয়, বরং তা ইসলামি জীবন ব্যবস্থারও একটি মৌলিক ভিত্তি। পবিত্র কোরআনে বহু জায়গায় নামাজ ও যাকাত অবিচ্ছিন্নভাবে বর্ণিত হয়েছে। এর তাৎপর্য হলো, নামাজ যেমন ইবাদত তেমনি যাকাতও ইবাদত। নামাজ সরাসরি আল্লাহর ইবাদত আর যাকাত জনসেবার মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত। নামাজ দ্বারা অপরাধ ও দুর্নীতিমুক্ত সুশীল সমাজ বিনির্মিত হয় আর যাকাত দ্বারা দরিদ্র ও ক্ষুধামুক্ত হার্দিক সমাজ গঠিত হয়। বস্তুত ইসলামের মধ্যে নামাজ ও যাকাতের মাঝে পার্থক্য করার সুযোগ নেই। যাকাত আদায় মুমিনদের একটি অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য। যে ব্যক্তির ওপর যাকাত ওয়াজিব সে যদি যাকাত আদায় না করে, তবে যে কোনোভাবেই মুমিন পরিচিত হওয়ার যোগ্য নয়। মহান রব বলেন, 'তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ, তার রাসুল ও ইমানদারগণ। যাদের বৈশিষ্ট্য হলো, তারা নামাজ আদায় করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহর সামনে মাথা নত করে। (সূরা মায়িদা: ৫৫)। যাকাত আদায় না করাকে মুশরিকদের কাজের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ' আর মুশরিকদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ, যারা যাকাত দেয় না। (সূরা হামিম সেজদা: ৬-৭)। যাকাত না দেওয়ার শাস্তির ব্যাপারে রাসুল (সা.) আল্লাহ তাআলা যাকে সম্পদ দান করেছেন আর সে তার যাকাত দেয় না, কেয়ামতের দিন ঐ সম্পদকে দু’টি বিষের থলিবিশিষ্ট মাথায় টাকপড়া বিষধর সর্পে পরিণত করা হবে, যা তাকে পেঁচিয়ে তার চোয়ালে আঘাত করে করে বলতে থাকবে, আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার গচ্ছিত ধন। বুখারী: ১৪০৩)।

যাকাত আদায়ের শর্তাবলী :

১. মুসলমান হতে হবে।

২. বালেগ হওয়া। কাজেই না বালেগ এর উপর যাকাত ফরজ নয়।

৩. বুদ্ধি সম্পন্ন হওয়া। পাগলের উপর যাকাত ফরজ নয়।

৪. স্বাধীন হওয়া। গোলামের উপর যাকাত ফরজ নয়।

৫. নেসাব পরিমান মাল থাকা।

৬. উক্ত মালের পূর্ণ মালিক হওয়া।

৭. উক্ত মাল তার মৌলিক প্রয়োজন সমূহের অতিরিক্ত হওয়া।

৮. উক্ত নেসাবের উপর পূর্ণ এক বছর অতিক্রান্ত হওয়া।

যেসব সম্পদের উপর যাকাত ফরজ :

১. সব ধরনের সম্পদ ও সামগ্রীর ওপর যাকাত ফরজ হয় না। শুধু সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা, পালিত পশু নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী এবং ব্যবসার পণ্যে যাকাত ফরজ হয়।

২. সোনা-রুপার অলংকার সর্বদা বা কালেভদ্রে ব্যবহৃত হোক কিংবা একেবারেই ব্যবহার না করা হোক সর্বাবস্থাতেই তার যাকাত দিতে হবে।

৩. অলংকার ছাড়া সোনা-রুপার অন্যান্য সামগ্রীর ওপরও যাকাত ফরজ হয়।

৪. জামা-কাপড় কিংবা অন্য কোনো সামগ্রীতে সোনা-রুপার কারুকাজ করা থাকলে তা-ও যাকাতের হিসাবের অন্তর্ভুক্ত হবে এবং যে পরিমাণ সোনা-রুপা কারুকাজে লেগেছে অন্যান্য যাকাতযোগ্য সম্পদের সঙ্গে তারও যাকাত দিতে হবে।

সোনা-রুপা ছাড়া অন্য কোনো ধাতুর অলংকার ইত্যাদির উপর যাকাত ফরজ নয়। তদ্রূপ হিরা, মণি-মুক্তা ইত্যাদি মূল্যবান পাথর ব্যবসাপণ্য না হলে সেগুলোতেও যাকাত ফরজ নয়।

৫. মৌলিক প্রয়োজন থেকে উদ্ধৃত্ত টাকা-পয়সা নিসাব পরিমাণ হলে এবং এক বছর স্থায়ী হলে বছর শেষে তার যাকাত আদায় করা ফরজ হয়।

তদ্রূপ ব্যাংক ব্যালেন্স, ফিক্সড ডিপোজিট, বন্ড, সার্টিফিকেট ইত্যাদিও নগদ টাকা-পয়সার মতোই। এসবের ওপরও যাকাত ফরজ হয়।

৬. টাকা-পয়সা ব্যবসায় না খাটিয়ে এমনি রেখে দিলেও তাতে যাকাত ফরজ হয়।

৭. হজ্বের উদ্দেশ্যে কিংবা ঘর-বাড়ি নির্মাণ, ছেলে-মেয়ের বিয়ে-শাদি ইত্যাদি প্রয়োজনের জন্য যে অর্থ সঞ্চয় করা হচ্ছে তা-ও এর ব্যতিক্রম নয়। সঞ্চিত অর্থ পৃথকভাবে কিংবা অন্যান্য যাকাতযোগ্য সম্পদের সাথে যুক্ত হয়ে নিসাব পরিমাণ হলে এবং নিসাবের ওপর এক বছর অতিবাহিত হলে যাকাত ফরজ হবে। বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই তা যদি খরচ হয়ে যায় তাহলে যাকাত ফরজ হবে না।

৮. দোকান-পাটে যা কিছু বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে রাখা থাকে তা বাণিজ্য-দ্রব্য। এর মূল্য নিসাব পরিমাণ হলে যাকাত আদায় করা ফরজ।

৯. ব্যবসার নিয়তে কোনো কিছু ক্রয় করলে তা স্থাবর সম্পত্তি হোক যেমন জমি-জমা, ফ্ল্যাট কিংবা অস্থাবর যেমন মুদী সামগ্রী, কাপড়-চোপড়, অলংকার, নির্মাণ সামগ্রী, গাড়ি, ফার্নিচার, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী, হার্ডওয়ার সামগ্রী, বইপুস্তক ইত্যাদি, তা বাণিজ্য-দ্রব্য বলে গণ্য হবে এবং মূল্য নিসাব পরিমাণ হলে যাকাত দেওয়া ফরজ হবে।

নিসাবের বিবরণ :

১. স্বর্ণের ক্ষেত্রে যাকাতের নিসাব হল বিশ মিসকাল। আধুনিক হিসাবে সাড়ে সাত ভরি।

২. রুপার ক্ষেত্রে নিসাব হল দু’শ দিরহাম। আধুনিক হিসাবে সাড়ে বায়ান্ন তোলা। এ পরিমাণ সোনা-রুপা থাকলে যাকাত দিতে হবে।

৩. প্রয়োজনের উদ্ধৃত্ত টাকা-পয়সা বা বাণিজ্য-দ্রব্যের মূল্য যদি সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমপরিমাণ হয় তাহলে যাকাতের নিসাব পূর্ণ হয়েছে ধরা হবে এবং এর যাকাত দিতে হবে।

৪. যদি সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা কিংবা বাণিজ্য-দ্রব্য- এগুলোর কোনোটি পৃথকভাবে নিসাব পরিমাণ না থাকে, কিন্তু এসবের একাধিক সামগ্রী এ পরিমাণ রয়েছে, যা একত্র করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্য বা তার চেয়ে বেশি হয় তাহলে এক্ষেত্রে সকল সম্পদ হিসাব করে যাকাত দিতে হবে।

কারো কাছে নিসাবের কম সোনা এবং নিসাবের কম রুপা আছে, কিন্তু যে পরিমাণ সোনা আছে তার মূল্য মজুদ রুপার সাথে যোগ করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্য হয় বা তার চেয়ে বেশি হয়। তাহলে সোনা-রুপার মূল্য হিসাব করে যাকাত আদায় করতে হবে। কারো কাছে কিছু স্বর্ণালংকার আর কিছু উদ্বৃত্ত টাকা কিংবা বাণিজ্যদ্রব্য আছে যা একত্র করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্য বা তার চেয়ে বেশি হয়। এর যাকাত দিতে হবে।

কারো কাছে নিসাবের কম রুপা আর কিছু উদ্বৃত্ত টাকা বা বাণিজ্যদ্রব্য আছে যা একত্র করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্য বা তার চেয়ে বেশি হয়। এরও যাকাত দিতে হবে।

৫. নিসাবের অতিরিক্ত সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা ও বাণিজ্যদ্রব্যের যাকাত আনুপাতিক হারে দিতে হবে।

৬. কারো কাছে সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা কিংবা বাণিজ্যদ্রব্য পৃথকভাবে বা সম্মিলিতভাবে নিসাব পরিমাণ ছিল, বছরের মাঝে এ জাতীয় আরো কিছু সম্পদ কোনো সূত্রে পাওয়া গেল এক্ষেত্রে নতুন প্রাপ্ত সম্পদ পুরাতন সম্পদের সঙ্গে যোগ হবে এবং পুরাতন সম্পদের বছর পূর্ণ হওয়ার পর সমুদয় সম্পদের যাকাত দিতে হবে। বছরের মাঝে যা যোগ হয়েছে তার জন্য পৃথক বছর পূর্ণ হওয়া লাগবে না।

৭. বছরের শুরু ও শেষে নিসাব পূর্ণ থাকলে যাকাত আদায় করতে হবে। মাঝে নিসাব কমে যাওয়া ধর্তব্য নয়। অবশ্য বছরের মাঝে সম্পূর্ণ সম্পদ নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয় তবে ঐ সময় থেকে নতুন করে বছরের হিসাব আরম্ভ হবে এবং এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর যাকাত আদায় করতে হবে।

যে সব জিনিসের ওপর যাকাত ফরজ নয়

৮. নিজ ও পোষ্য পরিজনের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও বাহনের ওপর যাকাত ফরজ নয়।

৯. গৃহের আসবাবপত্র যেমন খাট-পালঙ্ক, চেয়ার-টেবিল, ফ্রিজ, আলমারি ইত্যাদি এবং গার্হস্থ সামগ্রী যেমন হাড়ি-পাতিল, থালা-বাটি, গ্লাস ইত্যাদির উপর যাকাত ফরজ নয়। তা যত উচ্চমূল্যেরই হোক না কেন।

তবে এক্ষেত্রে মনে রাখাতে হবে য, যেসব বস্তুর উপর যাকাত আসে না সেগুলোতে যদি সোনা-রুপা সংযুক্ত থাকে তাহলে অন্যান্য যাকাতযোগ্য সম্পদের সাথে এই সংযুক্ত সোনা-রুপারও যাকাত ফরজ হবে।

১০. পরিধেয় বস্ত্র, জুতা যদি প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশিও থাকে তবুও তাতে যাকাত ফরজ হবে না।

১১. দোকান-পাট বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের এমন আসবাবপত্র যা ব্যবসাপণ্য নয়, তার ওপর যাকাত ফরজ নয়। তবে ফার্নিচারের দোকানে বিক্রির উদ্দেশ্যে যেসব ফার্নিচার রাখা থাকে তা যেহেতু বাণিজ্যদ্রব্য তাই এসবের ওপর যাকাত ফরজ হবে।

১২. ঘর-বাড়ি বা দোকানপাট তৈরি করে ভাড়া দিলে তাতেও যাকাত ফরজ নয়। তবে এসব ক্ষেত্রে ভাড়া বাবদ যে অর্থ পাওয়া যাবে। উদ্ধৃত্ত টাকা-পয়সা নিসাব পরিমাণ হলে এবং এক বছর স্থায়ী হলে বছর শেষে তার যাকাত আদায় করা ফরজ হয়।

১৩. ভাড়া দেওয়ার উদ্দেশ্যে ঘর-বাড়ি বা অন্য কোনো সামগ্রী যেমন ডেকোরেটরের বড় বড় ডেগ, থালা-বাটি ইত্যাদি ক্রয় করলে তার ওপরও যাকাত ফরজ নয়। তবে ভাড়া বাবদ প্রাপ্ত অর্থের উপর যাকাত আসবে।

১৪. গরু-মহিষ। নিজের কাজে খাটে এবং বিচরণশীল বা ‘সায়েমা’ নয় এমন গরু-মহিষ বাদ দিয়ে ৩০টি হলেই তার ওপর জাকাত দিতে হবে। যাকাতের হার হবে প্রতি ৩০টির জন্য একটি এক বছর বয়সের গরু এবং প্রতি ৪০টি বা তার অংশের জন্য দুই বছর বয়সের একটি গরু।

১৫. ছাগল-ভেড়া। ছাগল-ভেড়ার সংখ্যা ৪০টি হলে একটি, ১২০টি পর্যন্ত দুটি, ৩০০টি পর্যন্ত তিনটি এবং এর ওপরে প্রতি ১০০টি ও তার অংশের জন্য আরো একটি করে ছাগল যাকাত দিতে হবে।

শেয়ারের যাকাত :

যারা শেয়ার ক্রয় করেন তারা মুলত দুটি উদ্দেশ্যে শেয়ার ক্রয় করে থাকেন। এক. বার্ষিক ডিভিডেন্ড (লভ্যাংশ) গ্রহনের উদ্দেশ্যে স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে শেয়ার ক্রয় করেন। অর্থাৎ কোম্পানির অএগ থেকে যে লভ্যাংশ ঘোষণা হবে তাই তাদের উদ্দ্যেশ্য। দুই. যারা শেয়ারকে অন্যান্য পণ্যের মত লাভের আশায় বেচা-কেনা করেন। তাদের উদ্দ্যেশ্য থাকে আশানুরূপ দর পেলেই তার বিক্রি করে দিবে। বাৎসরিক লভ্যাংশ এদের মুখ্য উদ্দেশ্য থাকে না। এরা মুলত ঈধঢ়রঃধষ এধরহ করে থাকে।

উপরোক্ত দুই শ্রেণীর শেয়ার হোল্ডারদের যাকাতের হুকুম ভিন্ন ভিন্ন। যারা ক্যাপিটাল গেইন করেন তথা শেয়ারকে অন্যান্য পন্যের মত বেচাকেনা করেন তাদের যাকাতের হুকুম হল, তারা শেয়ারের বর্তমান বাজার দর এর উপর যাকাত আদায় করবেন। ফেস ভ্যালুর উপর নয়। অর্থাৎ যে দিন তার যাকাতের অর্থবছর পূর্ণ হবে সেদিন ঐ শেয়ারের মার্কেট ভ্যালু কত? তার উপর যাকাত আদায় করবে। আর যারা বার্ষিক লভ্যাংশের উদ্দেশ্যে শেয়ার ক্রয় করে তাদের যাকাতের হুকুম হল তারা প্রথমে কোম্পানীর ব্যালেন্স শিট দেখে কোম্পানীর স্থায়ী সম্পদ ও যাকাতযোগ্য সম্পদের অনুপাত বের করবেন। কোম্পানির স্থায়ী সম্পদ হল বিল্ডিং, মেশিন, জমি, গাড়ি ইত্যাদি। অর্থাৎ যেগুলো বিক্রি করা হয় না। আর যাকাতযোগ্য সম্পদ হল নগদ টাকা, ব্যবসায়ীক সামগ্রী ও বিভিন্ন পর্যায়ের কাঁচামাল ইত্যাদি। অতঃপর কোম্পানীর মোট সম্পদের পরিমান যত পার্সেন্ট যাকাতযোগ্য হয় সে তার শেয়ারের বাজার দরের ততপার্সেন্ট এর যাকাত আদায় করবে। ধরা যাক একটি কোম্পানীর একটি শেয়ারের ফেস ভ্যালু ১০০ টাকা। আজ তার বাজার দর ২০০ টাকা। এদিকে কোম্পানীর স্থায়ী সম্পদ মোট সম্পদের ২০পার্সেন্ট। আর নগদ টাকা, ব্যবসায়ীক পন্য, কাঁচামাল ইত্যদি তথা যাকাত যোগ্য সম্পদ ৮০ পার্সেন্ট। তাহলে যিনি ক্যাপিটাল গেইন এর উদ্দেশ্য শেয়ার ক্রয় করেছেন তিনি আজ যাকাত দিলে ২০০টাকার যাকাত দিবেন। আর যিনি লভ্যাংশের উদ্দেশে শেয়ার ক্রয় করেছেন তিনি আজ যাকাত দিবেন[২০০-(২০*২)] ১৬০ টাকার। আর যদি কোম্পানীর ব্যালেন্স শীট পাওয়া না যায় বা কোম্পানীর আর্থিক অবস্খা জানা না যায় তবে সতকর্তামুলক পূর্ন বাজার দরের যাকাত দিয়ে দিবে ।

বন্ডের যকাত :

বন্ড মূলত ঋন এর সার্টিফিকেট। বন্ড সহ যবতীয় অর্থনৈতিক সনদ এর যাকাত আদায় করা ওয়াজিব। কেননা এগুলো নগদ অর্থ এর হুকুমে।

প্রভিডেন্ট ফান্ডের যাকাত :

সরকারী বা বেসরকারী চাকুরিজীবীদের বেতন থেকে জি,পি বা সি,পি ফান্ডের জন্য বাধ্যতামুলক যে অংশ কর্তন করা হয় তা উত্তোলনের পূর্বে চাকুরিজীবীর মালিাকানায় আসে না। তাই ফান্ডে থাকাকালীন উক্ত টাকার উপর যাকাত আসবে না।এবং হস্তগত হওয়ার পরেও বিগত বছরের যাকাত দিতে হবে না। তবে হস্তগত হওয়ার পরে পূর্ব থেকে নেসাবের মালিক না থাকলে উক্ত টাকার উপর এক বছর অতিবাহিত হলে তার উপর যকাত ওয়াজিব হবে।আর পূর্ব থেকে নেসাবের মালিক থাকলে যাকাত হিসাবের সময় উক্ত ফান্ড থেকে প্রাপ্ত টাকারও যাকাত দিতে হবে, সেক্ষেত্রে উক্ত টাকার উপর এক বছর অতিক্রান্ত হওয়া জরুরী নয়। এ হল বাধ্যতামূলক ফান্ডের হুকুম।

আর যে সব চাকুরিজীবীরা (সরকারী বা বেসরকারী) বাধ্যতামূলকের পাশাপাশি ঐচ্ছিকভাবে টাকা রাখেন বা পূরোটাই ঐচ্ছিকভাবে রাখেন বা সে নিজ উদ্যোগে ঐ ফান্ডের টাকা অন্য কোন ইন্সুরেন্স কোম্পানীতে স্থানান্তর করিয়ে নেন তাদের উক্ত ফান্ডের টাকা যাকাতযোগ্য সম্পদ হিসাবে গন্য হবে।কজেই সে নেসাবের মালিক হলে উক্ত টাকারও যাকাত আদায় করবে। (চলবে)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়