প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
(পূর্ব প্রকাশিতের পর) আবু নাঈম এবং ইবনে আসাকির মুসাইয়্যিব ইবনে শরীফ থেকে, তিনি মুহাম্মদ ইবনে শরীফ থেকে, তিনি আমর ইবনে শরীফ থেকে, তিনি নিজ পিতা থেকে, তিনি নিজ দাদা থেকে রেওয়ায়েত করেছেন, মাররুয যাহরানে ঈসা নামক এক সিরীয় রাহেব বাস করত। সে বিজ্ঞ আলিম ছিল। বেশীরভাগ সময়ে সে গির্জার মধ্যেই কাটিয়ে দিত। কখনো কখনো মক্কায় এলে লোকগণ তার সাথে সাক্ষাত করতে যেত! তখন সে বলত যে, তোমাদের মধ্যে এক শিশু ভূমিষ্ঠ হবে, তার সামনে গোটা আরব দেশ শির নত করবে এবং অনারবরাও তার বশ্যতা স্বীকার করবে। এখনই তার আগমনের সময়। যে তার যমানা পাবে এবং তার অনুসরণ করবে সে সফলতা লাভ করবে। আর যে তার অবাধ্যতা প্রদর্শন করবে, ব্যর্থকাম হবে। আল্লাহর কসম, আমি সুখ-সাচ্ছন্দ্য ও শাস্তির দেশ ত্যাগ করে এই অভাব-অনটন ও দুর্যোগপূর্ণ দেশে শুধু তারই তালাসে এসেছি।
উক্ত রাহেব মক্কার প্রতিটি নবজাতক সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে এবং জিজ্ঞেসবাদ করে বলত যে, সে এখনো আসেনি। নবী করীম (সাঃ)-এর জন্মের দিন সকালে আব্দুল মুতালিব ওই রাহেবের গৃহ দরজায় গিয়ে তাকে ডাক দিলেন। সে জিজ্ঞেস করল, কে ডাকছে? আব্দুল মুত্তালিব বললেন, আমি। রাহেব বাইরে এসে বলল, মনে হচ্ছে, তুমিই সেই জাতকের পিতা, আজ যে শিশু জন্মগ্রহণ করেছে। যার সম্পর্কে আমি তোমাকে বলেছিলাম যে, সে সোমবারে জন্মগ্রহণ করবে। নবুয়ত লাভ করবে এবং সোমবারেই ইন্তেকাল করবে তার জন্মলক্ষণযুক্ত তারকা সন্ধ্যায় আসমানে উদিত হয়েছে। তবে তুমি এই সম্পর্কে কাউকে কিছু বলবে না। কেননা এত বেশী হিংসা কেউ কারো প্রতি করেনি, এর সাথে করা হবে এবং এত বেশী শত্রুতাও কেউ কারো সাথে করেনি, এর সাথে করা হবে।
আব্দুল মুতালিব জিজ্ঞেস করলেন, সে কি পরিমাণ বয়সপ্রাপ্ত হবে? রাহেব বলল, তার বয়স সত্তর বছরের কোঠায় পৌঁছবে না; বরং এর নীচে কোন বেজোড় সংখ্যায় পৌছবে। সম্ভবত একষট্টি বা তেষট্টি বছর হতে পারে। তার উম্মতের বয়সও সাধারণত এরূপ হবে।
আবু নাঈম হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, বর্বর যুগে রাতের বেলায় কোন শিশু ভূমিষ্ঠ হলে তাকে একটি হাড়ির নীচে রেখে দেয়া হত এবং ভোর পর্যন্ত কেউ তাকে দেখত না। নবী করীম (সাঃ)-এর ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তাকেও ঐরূপ হাড়ির নীচে রেখে দেয়া হল। ভোর বেলা দেখা গেল যে হাড়িটি দ্বিখণ্ডিত হয়ে গিয়েছে এবং শিশু দু'চক্ষু মেলে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। এ দৃশ্য দেখে সকলেই অবাক হয়ে গেল। এর পর তাকে দুধপান করার জন্য বনু বকরের এক মহিলার নিকট সমর্পণ করা হল। সে তাকে দুধপান করাতে শুরু করলে তার পরিবারে নানাবিধ বরকত এবং কল্যাণ আসতে লাগল। তার কয়েকটি বকরী ছিল। আল্লাহ প্রদত্ত বরকতে তার বকরীর সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেল।
আবু নাঈম, দাউদ ইবনে আবী হিন্দ থেকে বর্ণনা করেছেন, নবী করীম (সাঃ) জন্মগ্রহণ করলে তার নবুয়তের নূরের আলোকে টিলাসমূহ উজ্জ্বল হল। জন্মগ্রহণ করেই তিনি মাটির উপর হাত রেখে ভর দিলেন এবং চক্ষুদ্বয় মেলে আকাশের দিকে তাকালেন। তাকে যে হাড়ির নীচে রাখা হল, তা দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেল।
ইবনে সা’দ হযরত ইকরিমাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, নবী করীম (সাঃ) জন্মগ্রহণ করলে তাঁর মাতা তার উপর হাড়ি রেখে দিলেন, যা ভেঙ্গে দু’টুকরা হয়ে গেল। তাঁর মাতা বলেন যে, হাড়ি রাখার পর যখন আমি তাকে দেখতে গেলাম, তখন দেখলাম যে, সে চক্ষু মেলে ঊর্ধ্বে আসমানের দিকে তাকিয়ে আছে।
ইবনে আবী হাতেম হযরত ইকরিমাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, নবী করীম (সাঃ)-এর জন্মের সময় সমগ্র জগত নূরের আলোকে উজ্জ্বল হয়ে গেল। ইবলীস বলল যে, আজ পৃথিবীতে এমন এক শিশু ভূমিষ্ঠ হয়েছে, যে আমাদের কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বরবাদ করে দিবে। তখন তার এক সহচর তাকে বলল যে, তুমি এখনই গিয়া তার জ্ঞান-বুদ্ধি নষ্ট করে দিবার চেষ্টা কর। সুতরাং ইবলীস নবী করীম (সাঃ)-এর নিকট রওয়ানা করল। যখন সে তার নিকট পৌঁছল, ফিরেশতা জিব্রাইল (আঃ) ইবলীসকে সজোরে পদাঘাত করলেন, যাতে সে আদনে গিয়ে পতিত হল।
জোবায়ের ইবনে বাক্কার এবং ইবনে আসাকির মা’রুফ ইবনে খরবুস থেকে বর্ণনা করেছেন, ইবলীস সপ্ত আকাশ ঘুরে বেড়াত ; কিন্তু যখন হযরত ঈসা (আঃ) জন্মগ্রহণ করলেন, তখন তার তিন আকাশের প্রবেশাধিকার রহিত করা হল।
তারপর যখন নবী করীম (সাঃ) জন্মগ্রহণ করলেন, তখন তার জন্যে সাত আসমানের প্রত্যেকটির দরজাই বদ্ধ করে দেয়া হল। নবী করীম (সাঃ) সোমবার দিন অতি ভোরে জন্মগ্রহণ করলেন।
বায়হাকী, আবু নাঈম, খারায়েতী এবং ইবনে আসাকির আবু ইয়ালা ইবনে ইমরান বাজালী থেকে, তিনি মাখযুম ইবনে ছানী থেকে এবং তিনি স্বীয় পিতা হতে (যার বয়স হয়েছিল দেড়শত বছর) বর্ণনা করেছেন, নবী করীম (সাঃ)-এর জন্মের রাতে পারস্য রাজ প্রাসাদে কম্পন শুরু হল। যার ফলে ওর চৌদ্দটি গম্বুজ সব কয়টিই ভূমিসাৎ হল। হাজার হাজার বছর ব্যাপী যে অগ্নিকুণ্ড জ্বালিয়ে রাখা হয়েছিল, হঠাৎ তা নির্বাপিত হয়ে গেল। তথাকার শ্বেত বর্ণের হ্রদ শুকিয়ে গেল। তখন আতংকিত পারস্য রাজ মনে মনে ভাবলেন যে, এই ঘটনা ছুপিয়ে রাখা ঠিক হবে না ; বরং একথা নিয়ে উজীরদের সাথে পরামর্শ করা প্রয়োজন ; সুতরাং তিনি তার পারিষদবর্গকে দরবারে ডেকে এ ব্যাপার সম্পর্কে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করতে বসলেন। ঠিক এই মুহূর্তে সংবাদ এল যে, অগ্নিকুণ্ড নির্বাপিত হয়ে গিয়েছে। এতে রাজা অত্যধিক সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লেন। তখন দরবারের প্রধান পুরোহিত বলল, ঈশ্বর আমাদের সম্রাটকে নিরাপদ রাখুন। আমিও আজ রাতে এরূপ স্বপ্ন দেখেছি যে, কতকগুলো উট আরবী ঘোড়াগুলোকে টেনে আনছে এবং দজলানদ অতিক্রম করে সারাদেশে ঐগুলো ছড়িয়ে পড়েছে। তখন রাজা পুরোহিতকে জিজ্ঞেস করলেন, বল এখন আমাদের কি করা উচিত এবং এসব ঘটনা কিসের আলামত? সে বলল, মনে হচ্ছে আরবের দিক হতে কোন বিরাট ঘটনা ঘটবে।
অতঃপর পরস্যরাজ নো’মান ইবনে মুনযিরকে লিখে জানালেন যে, তুমি কোন বিজ্ঞ ব্যক্তিকে আমার নিকট প্রেরণ কর। আমি তাকে কিছু প্রশ্ন করব। নো’মান আব্দুল মসীহ ইবনে আমর ইবনে হাসসান গাসসানীকে দরবারে পাঠিয়ে দিল। রাজা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি বলতে পার, আমি তোমাকে কি জিজ্ঞেস করতে চাই? সে বলল, জাহাপনা! আপনি জিজ্ঞেস করুন। যদি আমার সঠিক জবাব জানা থাকে আমি তা বলব। আর জানা না থাকলে যে জানে আপনাকে তার ঠিকানা বলে দিব। তখন পারস্যরাজ তার নিকট সব ঘটনা খুলে বললেন। আবুল মসীহ তা শুনে বলল, হে জাঁহাপনা! আমার মামা সাতীহ এই সম্পর্কে বিশেষ ওয়াকিফহাল। তিনি সিরিয়া সীমান্ত এলাকায় অবস্থান করছেন। রাজা বললেন, তুমি তাকে আমার নিকট নিয়ে আস। আমি তার কাছেই জিজ্ঞেস করব। তখন আব্দুল মসীহ রওয়ানা হয়ে সাতীহের নিকট পৌঁছল। সে তখন প্রায় মুমূর্মু অবস্থায় পৌঁছেছিল। তার নিকট পৌঁছে আব্দুল মসীহ সালাম করলে সে মাথা তুলে বলল, আব্দুল মসীহ দ্রুতগামী বাহনে চড়ে সেই সাতীহর নিকট উপনীত হয়েছে, যার মৃত্যু সমাগত। তোমাকে পারস্যের রাজা প্রেরণ করেছে। কেননা তার রাজপ্রাসাদ কেঁপে উঠেছে। পারস্যের অগ্নিকুণ্ড হঠাৎ নিভে গিয়েছে। প্রধান পুরোহিত স্বপ্ন দেখেছে যে, কতিপয় উট আরবী ঘোড়াগুলোকে টেনে নিচ্ছে এবং দজলা পাড় হয়ে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। হে আব্দুল মসীহ। যখন তিলাওয়াত অধিক হতে থাকে লাঠিবাহক আত্মপ্রকাশ করে, সামাদাহ উপত্যকায় পানি উথলে উঠে।
শ্বেত হ্রদ শুকিয়ে যায় এবং পারস্যের অগ্নিকুণ্ড ঠাণ্ডা হয়ে যায় তখন সাতীহের জন্য সিরিয়া নয় জেনে রাখ, পারস্যের রাজপ্রাসাদের গম্বুজের সমসংখ্যক রাজা হবে এবং যা হবার তা অবশ্যই হবে।
একথা বলার সাথে সাথে সতীহ মৃত্যুবরণ করল আব্দুল মসীহ, পারস্যে প্রত্যাবর্তন করে রাজার নিকট সমস্ত ঘটনা ব্যক্ত করল। শুনে রাজা বললেন, যতদিনে আমাদের চৌদ্দজন রাজা হবে ততদিনে কত কি ঘটবে তা কে বলতে পারে? কিন্তু চৌদ্দজনের মধ্যে দশজন রাজা মাত্র চার বছরের মধ্যেই অতিক্রান্ত হয়ে গেল। অবশিষ্ট চারজন হযরত ওছমান (রাঃ)-এর খেলাফত পর্যন্ত বহাল থাকে। ইবনে আসাকির বলেন, এই হাদীসটি গরীব হাদীসের শ্রেণীভুক্ত। একথা শুধু মাখযুম তার পিতার নিকট হতে রেওয়ায়েত করেছেন। ইবনে আসাকির তার ইতিহাস গ্রন্থে সাতীহের আলোচনায় একথাই উল্লেখ করেছেন। আব্দুল মসীহের আলোচনায় উল্লিখিত সনদে রেওয়ায়েত উল্লেখ করার পর তিনি বলেছেন, একথা মারুফ ইবনে খরবুজ, বিশর ইবনে তাইম মক্কী হতেও বর্ণনা করেছেন। আমি বলি, এই সনদে আবজান ও কিতাবুছ ছাহাবায় বর্ণনা করেছেন। ইবনে হাজার আল ইছাহাবা গ্রন্থে একথাকে মুরসাল বলে উল্লেখ করেছেন।
খারায়েতী এবং ইবনে আসাকির ওরওয়াহ থেকে বর্ণনা করেছেন, ওয়ারাকা ইবনে নাওফেল, যায়েদ ইবনে আমর ইবনে নুফাইল, ওবায়দুল্লাহ ইবনে জাহশ, ওছমান ইবনে হুয়াইরিছু প্রমুখ কুরাইশ নেতা এক রাতে তাদের এক প্রতিমার নিকট উপস্থিত হয়ে দেখল যে, প্রতিটি উপুড় হয়ে মাটিতে পড়ে আছে। তারা তা দেখে প্রতিমাটিকে দাঁড় করিয়ে দিল; কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই এটা আবার পড়ে গেল। তখন ওছমান ইবনে হুয়াইরিছ বলল যে, লক্ষণে মনে হচ্ছে যে, নিশ্চয়ই কোনকিছু ঘটেছে। এই ঘটনা ঘটেছিল নবী করীম (সাঃ)-এর জন্মের রাতে। ঐ সময় ওছমান এই পংক্তিটি আবৃত্তি করেছিল ; ‘হে মূর্তি! তোমার নিকট দূর-দূরান্ত হতে আগত আরব নেতারা এসে উপস্থিত হয়েছে। আর তুমি কিনা উপুড় হয়ে ভূতলে পড়ে আছ। ব্যাপার কি বল! তুমি কি আমাদের সাথে কৌতুক করছ? আমাদের দ্বারা কোন অন্যায় আচরণ হয়ে থাকলে আমরা তা স্বীকার করি, তুমি এভাবে মাথা নীচু করে থেকো না। যদি থাক, তবে নিশ্চয়ই তুমি প্রতিমাদের সরদার নও।’ একথা বলে তারা প্রতিমাটিকে পুনরায় দাঁড় করিয়ে দিল। তখন ওটার মধ্য হতে অদৃশ্য আওয়াজ এল, জেনে রাখ, এই প্রতিমা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে সেই শিশুটির কারণে, যার নূরের আলোকে সমগ্র জগত সমুজ্জ্বল হয়েছে যার আগমনে শুধু এই প্রতিমাই নয়; বরং সব প্রতিমাই ভূমিসাৎ হয়েছে। রাজা-বাদশাহদের অন্তর তার ভয়ে কেঁপে উঠেছে পারস্যের দীর্ঘস্থায়ী অগ্নিকুণ্ড নির্বাপিত হয়েছে। যার ফলে পারস্য রাজ সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। অধ্যাত্মবাদিদের নিকট হতে তাদের জ্বিন সহচরেরা পালিয়ে গিয়েছে। এখন আর কেউ তাদেরকে সত্য-মিথ্যা কোন খবরই জানাবে না। হে বনু কুসাই! তোমরা গোমরাহী বর্জন কর এবং প্রকৃত সত্যের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ কর।
খারায়েতী হিশাম ইবনে ওর ওয়াহ থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি তার দাদী আসমা বিনতে আবুবকর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, যায়েদ ইবনে আমর ইবনে নুফাইল এবং ওয়ারাকা ইবনে নাওফেল বলেন, আমরা মক্কা থেকে ইয়ামানের বাদশাহ আবরাহার প্রত্যাবর্তনের পর আবিসিনিয়ার বাদশাহ নাজ্জাশীর নিকট গমন করলাম। তিনি বললেন, হে কুরাইশগণ! সত্য বল, তোমাদের মধ্যে কি এমন কোন শিশু জন্মগ্রহণ করেছে যার পিতা তাকে কুরবানী করার মানত করেছিল? তারপর কোরার মাধ্যমে উট কুরবানী করে তাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। আমরা বললাম, হ্যাঁ এরূপ শিশু জন্মগ্রহণ করেছিল। নাজ্জাশী জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা জান কি সে পরে কি করেছে? আমরা বললাম, এরপর সে আমিনা না¤œী এক মহিলাকে বিবাহ করেছে এবং তাকে গর্ভবতী অবস্থায় রেখে মৃত্যুবরণ করেছে। বাদশাহ আবার জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা জান কি, সেই মহিলার গর্ভের শিশু জন্মগ্রহণ করেছে কি-না?
বাদশাহর এ প্রশ্নের জবাবে ওয়ারাকা বললেন, এক রাতে আমি আমাদের এক প্রতিমার কাছে উপস্থিত ছিলাম। উক্ত প্রতিমার মধ্য হতে আমি এরূপ আওয়াজ শুনেছি যে, নবী জন্মগ্রহণ করেছেন। রাজা-বাদশাহরা লাঞ্ছিত এবং অপদস্থ হয়েছে। গোমরাহীর অবসান ঘটেছে এবং শিরক ও কুফরী বিলুপ্ত হয়েছে। এর পরই ঐ প্রতিমাটি উপুড় হয়ে পড়ে গেল।
যায়েদ বলল, হে বাদশাহ আমার নিকটও এই ধরনের সংবাদ রয়েছে। আমি সেই পবিত্র রাতে স্বপ্নে দেখলাম যে, আমি আবু কুবাইশ পাহাড়ে পৌঁছে গিয়েছি। ঐ সময় এক ব্যক্তি আসমান হতে অবতরণ করল। তার সবুজ বর্ণের দু’টি পাখা ছিল। সে কিছু সময় আবু কুবাইশ পাহাড়ে অবস্থান করে মক্কায় এসে বলল, শয়তান অপদস্থ হয়েছে। মূর্তিপূজা শেষ হয়ে গিয়েছে। আমীন জন্মগ্রহণ করেছেন। একথা বলে সে একটি কাপড়ের ভাঁজ খুলে তা পূর্ব ও পশ্চিমে ছড়িয়ে দিল। আমি দেখলাম যে, কাপড়টি সমগ্র আসমানের নীচে একটি তাবুর আকৃতি ধারণ করল। এর পর একটি নূরের উদয় হল। যার তীক্ষ্ম কিরণে আমার দু’চক্ষু ঝলসে গেল। এসব ঘটনা প্রত্যক্ষ করে আমি ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লাম। এর পর আর একটি নূরের উদয় ঘটলে মক্কার ভূখণ্ড উদ্ভাসিত হয়ে গেল। তখন বলা হল যে, বিশ্ব জগত পবিত্র হয়ে গিয়েছে। অতঃপর খানায়ে কা'বায় স্থাপিত প্রতিমাগুলো ভূমিসাৎ হয়ে গেল।
বাদশাহ নাজ্জাশী বললেন, এবার তোমরা আমার কথা শোেন। আমি সেই রাতেই আমার শয্যায় নিদ্রাভিভূত ছিলাম। তখন স্বপ্নে দেখলাম যে, সহসা মৃত্তিকা ভেদ করে একটি ঘাড়সহ মাথা বের হয়ে এল এবং সে বলল, হস্তীবাহিনী ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। আবাবীল পাখী তাদেরকে কংকর ছুড়ে বিধ্বস্ত করে ফেলেছে। পাপী অপরাধীদের আস্তানা বিরাণ হয়েছে। মক্কী নবী ভূমিষ্ঠ হয়েছেন। এখন হতে যে তাঁর অনুসরণ করবে, সে কামিয়াবী হাছিল করবে। আর যে তার অবাধ্যতা প্রদর্শন করবে, এই পর্যন্ত বলে সেই মস্তকটি অদৃশ্য হয়ে গেল। আমি তখন চিৎকার করতে চাইলাম; কিন্তু আমার মুখ থেকে আওয়াজ বের হল না। আমি তথা হতে পালাতে চাইলাম; কিন্তু দাঁড়াতেই পারলাম না। এর পর আমার গৃহের লোকজন আমার নিকট উপস্থিত হল। আমি বললাম, হাবশী লোকদেরকে আমার নিকট হতে সরিয়ে দাও। তারা আমার আদেশ পালন করল।
(উস্ওয়ায়ে রাসুল (সাঃ) ও খাছায়েছুল কুবরা)
লেখক : মুফতী মুহা.আবু বকর বিন ফারুক, ইমাম ও খতিব, বিষ্ণুপুর মনোহরখাদী মদিনা বাজার বাইতুল আমিন জামে মসজিদ, চাঁদপুর সদর, চাঁদপুর। (সমাপ্ত)