মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া, স্ত্রীর আত্মহত্যা
  •   ভারতকে কড়া বার্তা শ্রম উপদেষ্টার
  •   আধুনিক নৌ টার্মিনাল প্রকল্প পরিদর্শনে চাঁদপুরে নৌপরিবহণ উপদেষ্টা
  •   ডাকাতিয়া নদী ও সিআইপি অভ্যন্তরস্থ খাল খননসহ ৫ দফা দাবিতে সংগ্রাম কমিটির সংবাদ সম্মেলন

প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২১, ০০:০০

পরিবার গঠনে ইসলামের গুরুত্ব
অনলাইন ডেস্ক

ইসলামে পরিবার একটি উজ্জ্বল দর্পণ। এই দর্পণে ফুটে ওঠে ইসলামের সুমহান শিক্ষা ও আদর্শ। ফলে প্রতিষ্ঠিত হয় শান্তি ও ভালোবাসা, যা করতে আধুনিক সভ্যতা-সংস্কৃতি ও পশ্চিমা বিশ্বের বড় সামাজিক সংগঠনগুলোও প্রায় ব্যর্থ হয়েছে। ইসলামের অনুসৃত পথকে অবলম্বন না করায় পারিবারিক কলহ, পারিবারিক বিচ্ছেদ, আত্মহত্যা প্রবণতা, দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে ব্যাপক হারে। পৃথিবীর নানা দেশের পারিবারিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও সামাজিক অবক্ষয় তা-ই প্রমাণ করে। ইসলামে আদর্শ পরিবার এবং সুস্থ সমাজ বিনির্মাণে ইসলামের গুরুত্ব, সম্মানিত পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো।

স্বামী-স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, মাতা-পিতা ভাই-বোন প্রভৃতি ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে পরিবার। পরিবারকে রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, পরিবারই বিকশিত রূপ রাষ্ট্র। অন্যভাবে বলা যায়, বহুসংখ্যক পরিবারের সমুন্নত রূপ হচ্ছে সমাজ, আর বিশেষ পদ্ধতিতে গঠিত সমাজের অপর নাম রাষ্ট্র। সমাজ জীবনে প্রথম ভিত্তি ও বুনিয়াদ হলো পরিবার, মানব জীবনের সূচনালগ্ন থেকেই পৃথিবীতে কোনো না কোনোভাবে পারিবারিক ব্যবস্থা চালু ছিলো। সব আম্বিয়ায়ে কেরামের জীবন ও তাদের অনুসৃত সময়কালে পারিবারিক জীবনের ইতিহাস রয়েছে। যেমন, সর্বপ্রথম আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ)-কে সৃষ্টি এবং তাদের দাম্পত্যজীবনের মাধ্যমে পৃথিবীতে পারিবারিক জীবনের সূচনা করেন মহান আল্লাহ তা'আলা। পবিত্র কুরআনে এই সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন, 'হে মানব! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন ও যিনি তা হতে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তাদের দুজন হতে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন' (সূরা নিসা)।

এছাড়াও বৈবাহিক জীবনে স্বামী-স্ত্রীর পারিবারিক বন্ধন কেমন হবে এ সম্পর্কে সূরা রুমে মহান আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন, (তাঁর নিদর্শনাবলির একটি হলো, তিনি তোমাদের জন্য স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাদের কাছে তোমরা প্রশান্তি লাভ করো। তিনি তোমাদের উভয়ের মধ্যে তৈরি করেছেন ভালোবাসা ও মায়া-মমতা, নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্য অনেক নিদর্শন আছে)। (সুরা : রুম, আয়াত : ২১) এছাড়াও পবিত্র মভঠ কোরআন এবং হাদীসে, সফল ব্যক্তি, ও পারিবারিক জীবন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা ব্যাপকভাবে আলোকপাত করা হয়েছে।

ইসলামে পারিবারিক জীবনকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়। কোরআন সুন্নাহর আলোকে পারিবারিক বন্ধন, পরিবারের এক সদস্য অন্য সদস্যের প্রতি সৌহার্দের সম্পর্ক, পারস্পরিক সম্মান ও দায়িত্ববোধ বজায় রাখাই ইসলামের মহান সৌন্দর্য এবং প্রতিনিধিত্বমূলক দায়িত্বশীল আচরণ পারিবারিক বন্ধনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এই সৌন্দর্যকে ধারন করেই ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ বিনির্মাণের সমন্বিত রূপকে লালায়িত করে একটি আদর্শ কল্যাণকর রাষ্ট্র উপহার দেয়া সম্ভব। কারণ, ইসলাম সর্বময় একমাএ জীবন ব্যবস্থা, ইনসাফভিত্তিক প্রগতিশীল আদর্শ একটি ধর্ম। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ইসলামের আলোকে একজন মুসলমানের জীবনযাপন করা সম্ভব হবে। ইসলামে রয়েছে সমাজ, রাষ্ট্র ও অর্থব্যবস্থা। এমনকি আরো রয়েছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতিমালা, মানব চরিত্রের উৎকর্ষ সাধন, ন্যায়নীতি ও সুবিচার ভিত্তিক শান্তি-শৃঙ্খলাপূর্ণ গতিশীল সুন্দর সামজব্যবস্থা। এভাবেই জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যদি ইসলামের শিক্ষা-দীক্ষাকে একমাত্র অবলম্বন মনে করি, তবেই পরকালে আমাদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ এবং চিরসুখের আবাসস্থলের ব্যবস্থা। মুমিন তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলে তার জন্য থাকবে মহাপুরস্কার, আল্লাহর দেয়া পুরস্কার মুমিনের জন্যে হবে শ্রেষ্ঠ নেয়ামত। ইসলাম শৃঙ্খলাবোধ দায়িত্বশীল আচরণের মাধ্যমে রাসুল (সাঃ)-এর বিপ্লবী আদর্শিক জীবনকে ধারণ করে, নিজেকে আত্মনিয়োগ করতে হবে ইসলামের পথে, ইসলামের অনুসৃত পথ অনুসরণ করলেই মানবজীবনে বয়ে আসবে পরম শান্তি, জীবনযাত্রার মান হবে সহজলভ্য।

অন্যদিকে ইসলামী শিক্ষার সমন্বয়ে পরিবার গঠন না করা, সামাজিক অবক্ষয়, ঝগড়া বিভেদ, হিংসা, অন্যের ক্ষতিসাধন, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, অপেশাদারিত্ব মূলক আচরণ, দ্বীনহীন সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা, ইসলামের ইতিবাচক পথ পরিহার করে, নেতিবাচক পথ অবলম্বন করা এসবই আদর্শ ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র গঠনের মূল অন্তরায়। মানব জীবনে ধর্মীয় শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে পারলে সর্বজনীন উপকৃত আশা করা যায়। আদর্শ পরিবার গঠন করতে হলে নেতিবাচক পথ পরিহার করতে হবে।

আদর্শ পরিবার গঠনে সহায়ক কয়েকটি মৌলিক করণীয় : আদর্শ পরিবার গঠন করতে হলে প্রথমেই একজন দ্বীনদার পাত্রী নির্বাচন করতে হবে, এ সম্পর্কে হাদীস শরীফে রাসুল (সাঃ) বলেন, চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ রেখে মেয়েদের বিয়ে করা হয় তার সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার সৌন্দর্য ও তার দ্বীনদারি। সুতরাং তুমি দ্বীনদারিকেই প্রাধান্য দেবে, নতুবা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (বুখারি, হাদিস : ৫০৯০)। একজন দ্বীনদারী স্ত্রীর ভূমিকা ইসলামে ব্যাপকভাবে গুরুত্বারোপ করেছে, স্ত্রী যদি দ্বীনদার না হয়, তার প্রভাব সন্তানের ওপর পড়বে। আর সে যদি ব্যভিচারিণী হয়, তাহলে তার প্রভাব তো বংশের প্রদীপেই পড়বে। বংশপরম্পরার পবিত্রতাই সে নষ্ট করে দেবে। তাই উত্তম সন্তানের আশা করলে স্ত্রী নির্বাচনে সতর্ক থাকতে হবে।

সন্তানকে দ্বীনি এলেম শিক্ষা করা : একটি শিশু আগামীদিনের ভবিষ্যৎ, শিশুর আগামীর পথচলা , নৈতিক আচরণ, শিষ্টাচার কেমন হবে সেটা মূলত নির্ভর করবে পারিবারিক শিক্ষার উপর, আর পারিবারিক শিক্ষাই বুঝা যাবে আগামী দিনের সমাজ, রাষ্ট্র ব্যবস্থা কেমন হবে। তাই শিশুর মেধাকে মূল্যায়ন করে সময়ের সাথে দ্বীনি শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী সকল মুসলমানের উপর দ্বীনি এলেম শিক্ষা করা ফরজ। আল্লাহ তাআলার এই আদেশ থেকে কোনভাবেই সন্তানকে বঞ্চিত করা যাবে না, নির্দিষ্ট সময় থেকে দ্বীনি শিক্ষার সাথে সমন্বয় করে দিতে হবে, আলেম তৈরি করার ইচ্ছে না থাকলেও দ্বীনের মৌলিক বিষয়গুলো তাকে শিক্ষা দিতে হবে। যেমন, মাসআলা-মাসায়েল, পবিত্রতা শিক্ষা, নামাজ শিক্ষা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ সন্তানকে শিক্ষা দিতে হবে।

জাহান্নামের কথা স্মরণ করিয়ে দিবে : সন্তান যখন বুঝতে শুরু করবে এবং প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর থেকেই আল্লাহর আযাবের কথা স্মরণ করিয়ে দিবে এবং নাফরমানীর জন্য কেয়ামতের মাঠে আল্লাহর আযাবের ভয়াবহতা কেমন হবে, শাস্তির মাত্রা কত কঠোর হবে, তা সন্তানকে কোরআন হাদিসের আলোকে বিভিন্ন ঘটনাবলীর মাধ্যমে সতর্ক করিয়ে দিবে।

নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে : এটিই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। নৈতিক শিক্ষা দেয়ার পদক্ষেপ শিশুকাল থেকে নিতে হবে। চরিত্র গঠন ও উন্নত জীবনের জন্য ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করার কোন বিকল্প নেই। এতে করে শিশুর মনে যে আল্লাহভীতি সৃষ্টি হয়, তা তাকে যে কোন খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে। বাবা-মাকে সম্মান করা, প্রতিবেশীকে শ্রদ্ধা করা, সৎপথে চলা, ন্যায়ের প্রতি ভালোবাসা, অন্যায়ের প্রতি ঘৃণাবোধ ইত্যাদি বিষয়গুলো একটি শিশুর জীবনকে সুন্দর করে তোলে। তবে স্মরণ রাখতে হবে যে, নৈতিক শিক্ষা দেয়ার জন্য পিতা-মাতাকে সর্বাগ্রে উন্নত নৈতিকতার অধিকারী হ'তে হবে। আর নৈতিক অবক্ষয় থেকে শিশুকে বাঁচানোর একমাত্র পথ তার হৃদয়ে গভীর ধর্মীয় মূল্যবোধ সৃষ্টি করা।

মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া : প্রায় সময় দেখা যায় শিশু খানা খাইতে না চাইলে এবং আনন্দ দেওয়ার জন্য মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া হয়, এটিও গুনাহের কাজ এবং অনুচিত পন্থা, ছোট থেকেই সন্তানকে সত্য বলতে উৎসাহ প্রদান করতে হবে। মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া এবং দেওয়া থেকে উভয়কে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া যেমন ধর্মীয় অপরাধ, ঠিক তেমনি সামাজিক অপরাধও বটে।

নামাজে অভ্যস্ত করা : শৈশব থেকে সন্তানকে নামাজে অভ্যস্ত করে না তুললে ভবিষ্যতে সে নামাজের প্রতি যতœবান হতে পারবে না। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, 'তোমরা সন্তানদের নামাজের প্রতি যতœবান হও এবং তাদের ভালো কাজে অভ্যস্ত করো। কেননা কল্যাণ লাভ অভ্যাসের ব্যাপার। ' (সুনানে বায়হাকি, হাদিস : ৫০৯৪)। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরেও যদি নামাজের প্রতি অযতœবান হয় তাহলে শাসন মাধ্যমে সন্তানকে নামাজে ফিরিয়ে আনতে হবে। এ ব্যাপারে পিতা-মাতা যদি বেখেয়াল হয় তাহলে উভয় গুনাহগার হবে, এবং আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি করতে হবে।

খেলাধুলার জন্য কিছু সময় দেয়া : খেয়াল রাখতে হবে কোনক্রমেই যেনো ক্ষতিকর, ইসলাম বহির্ভূত খেলাধুলার মধ্যে অংশগ্রহণ না করে। শিশুর খেলাধুলার সম্পর্কে ইমাম গাজ্জালি (রহ.) বলেন, শিশু যখন মক্তব (বিদ্যালয়) থেকে ফিরে আসে তখন তাকে খেলাধুলার সুযোগ দেওয়া উচিত, যাতে দীর্ঘ সময়ের পড়াশোনার চাপ দূর হয়ে যায়। শিশুকে যদি খেলাধুলার সুযোগ না দেওয়া হয় এবং সারাক্ষণ বই-খাতা নিয়ে বসে থাকতে বাধ্য করা হয়, তাহলে তার স্বতঃস্ফূর্ততা বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়বে। পড়াশোনা তার কাছে কারাগারের শাস্তি বলে মনে হবে। ফলে সে যেকোনোভাবে এই বন্দিদশা থেকে মুক্তির জন্য অস্থির হয়ে উঠবে। (ইহয়াউ উলুমিদ দিন : ৩/৫৯)।

সর্বোপরি, নিজেকে আদর্শবান মানুষ তৈরি করতে হলে আগে আদর্শের বীজ বপন করতে হবে তবেই আদর্শ মানুষ গড়া সম্ভব হবে। উপরোক্ত আলোচনা অনুযায়ী ইসলামে পরিবার গঠন করার মূল উপকরণ হলো দ্বীনি শিক্ষা । কারণ, ইসলামী শিক্ষার সঠিক লক্ষ্য-উদ্দেশ্যই হচ্ছে 'সত্যবাদী মুমিন' 'রক্ষণশীল প্রতিনিধি' এবং 'দৃঢ়-বিশ্বাসী' মানুষ তৈরি করা। ইসলামকে বুঝে তদনুযায়ী আমল করলে উভয় জাহানে সফলতা অর্জন করা সম্ভব হবে, তাই প্রতিটি ক্ষেত্রেই দ্বীনি শিক্ষা কে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে হবে । আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ইসলামের নিয়ম-নীতি সঠিকভাবে বুঝে পালন করার তৌফিক দান করুক, আমিন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়